আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘাতকের শাস্তি

***** কোনো খুনিকে বিচারে ফাঁসি দিলে সে শাস্তি পেলো না-কি সে মুক্তি পেলো, --সেই খুনিটা জানলেও জানতে পারে, তবে তা কেবল ঐ ফাঁসিতে সে মৃত হবার পর এবং কখনোই পরে ছাড়া আগে নয়, --যখন জীবিতদের সঙ্গে ঐ ঘাতক খুনির যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। বিচারে ফাঁসিপ্রাপ্ত সেই ঘাতকের বরাদ্দে ‘শাস্তি না-কি মুক্তি’ জোটে, এটা জানা না-গেলেও, যে-কেউ তা’ বুঝতে চাইলে নিজেকে খুনির অবস্থানে দাঁড় করিয়ে ভাবলে তার জন্যে বিষয়টা অনেকাংশে সহজবোধ্য হবে বলেই আমার বিশ্বাস। যেমন, পেশাদার অথবা অপেশাদার যা-ই হই, আমি একাধিক খুনের প্রমাণিত খুনি হলেও, --যাদেরকে আমি হত্যা করেছি, আমার ফাঁসিতে তাদের বিদেহী আত্মা তৃপ্তি পাবে কি-না, ঐ মৃতদেহগুলো কিম্বা দেহত্যাগী আত্মাগুলো কখনো জীবিতদেরকে তা’ জানাতে পারবে না। কেউ যদি একটা পাগলা কুকুরকে মৃত্যুতে ঠেলে দিয়ে ভাবেন যে, ওটার কামড়ের ফলে জলাতঙ্ক নিয়ে মৃত আপনার আত্মীয়টির মৃত্যুর প্রতিশোধ আপনি নিতে পেরেছেন কিম্বা একটা অভিভাবকহীন কুকুরের মৃত্যুতে আপনার মৃত আত্মীয়টি জীবন্ত হয়ে উঠবে কখনো যদি ভাবেন তো! --কারো ভাবনার স্বাধীনতায় কউ বাধা দিতে পারে না, তবে কি-না আপনার কাছে আপনার আত্মীয়ের মূল্য কতখানি, তা আপনি প্রকাশ্যে না-জানালেও, --এখানে নিশ্চয়ই জলাতঙ্কের জীবানুবাহী কুকুরটা যে কখনোই আপনার আত্মীয়ের সমতুল্য নয়, তা’ এমনিতেই বোঝা যায়। এবং সব বুঝেও যদি কেউ এটাকে প্রতিশোধ বলেন! --তবে তো, নিঃসন্দেহে খুনিরা অভাবনীয় মূল্য পেয়ে যাচ্ছি।

নিরপেক্ষ বিচারে আমি শাস্তিযোগ্য খুনি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বন্দি থাকা কালে সহজে যেন মরতে না-পারি, তেমনভাবেই যেন সাজানো হয় মুক্ত পরিবেশটাকে, এটাই আমার দাবি। প্রত্যেকেই যেখানে মরণশীল, কোনো মৃত্যুকেই আমরা কখনো দণ্ড বা শাস্তির তালিকায় রাখতে পারি না। জীবন থেকে কাউকে সরিয়ে ফেললে কিম্বা জীবন থেকে কেউ নিজে পালিয়ে গেলে এখানে বিচার বিভাগ কোনো মৃতকে তার প্রাপ্য শাস্তি বুঝিয়ে দিতে পারে না। কোনো মানবসন্তানকে হত্যা করা জঘণ্যতম অপরাধ। যাকে হত্যা করা হয়েছে, যদি প্রমাণিত হয় যে, সে ছিল নিরস্ত্র, --আমি তার ঘাতক হলে, আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতেই হবে।

প্রমাণিত কোনো খুনিকে নিদর্শন হিসেবে দেখাতে চেয়ে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে চাইলে, কখনোই ফাঁসি বা কোনো ধরনের মুক্তি নয় বরং ঐ খুনিকে বেঁচে থাকতে দিয়ে তার গণযোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে, প্রকাশ্যে কোনো চিড়িয়াখানায় খাঁচার ভেতরে খুনিটাকে উলঙ্গ অবস্থায় ঢুকিয়ে আমরণ বন্দি করে রাখাই এখানে যথার্থ মনে করি। দড়ি, আগুন, ধারালো অস্ত্র, বিষাক্ত রাসায়ানিক পদার্থ তথা সহজে আত্মহত্যা করার সহযোগী কোনো উপকরণ কোনো খুনি যেন কোনোভাবেই তার নাগালে না-পায় এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সাবধানতা চাই। নিদর্শনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে দূর থেকে খাদ্য ছুড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা যেমন রাখা চাই, তেমনি কংক্রিটের মেঝেতে একটুখানি গর্তে, ভিতর থেকে আসা পানি সরবরাহের নলের মুখ, কেবল পিপাসা মেটানোর জন্যে যতটুকু প্রয়োজন,দূর-নিয়ন্ত্রণাধীন পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও যেন থাকে। খুনি যেন ফাঁস বানিয়ে আত্মহত্যা করতে না-পারে, সেজন্যে খাঁচায় ঢুকানোর আগেই তার পোশাক সরিয়ে নেওয়াটা ছিল বাধ্যতামূলক। তীব্র শীতের কারণে সাজাধীন কোনো বন্দি খুনি যেন মরে যেত না-পারে, সেজন্যে খাঁচার বাহির থেকে উষ্ণবায়ু-প্রবাহের ব্যবস্থা থাকা চাই।

আদালতের ফাঁসি বা মৃত্যুদানের আয়োজনও সরিয়ে ফেলার দাবি করা হচ্ছে না, তবে ফাঁসিতে যদি কাউকে ঝুলাতই হয়, অবশ্যই খুনি হিসেবে রায়প্রাপ্ত আমাকে নয়, কিম্বা প্রমাণিত কোনো খুনিকেও নয়, বরং, -যেই ব্যক্তি কোনো খুনিকে আত্মহত্যা বা আত্মগোপন করার সুযোগ করে দেয়, তাকেই ঝোলানো হোক। করণিক : আখতার ২৩৯ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.