আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘাতকের হলো পরাজয়..... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

আল্লাহর নবী (সা) মদীনায় হিজরত করছেন। চারজনের ছোট্ট একটি কাফেলা। মক্কার মাটি ছেড়ে মদীনার পথ ধরে ছুটে চলছে সে কাফেলা। অত্যন্ত সাবধানে চলছেন নবীজি।

মক্কার কাফের কুরাইশরা যাতে টের না পায় এ জন্যই তাদের এই সতর্কতা। মহানবীর (সা) কাফেলায় আছেন হযরত আবু বকর, আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকাত এবং আমের। ডানে লোহিত সাগরের বিশাল জলরাশি। বাঁয়ে মরুময় অন্তহীন পাহাড়ের সারি। মহানবীর কাফেলা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে তারই মাঝ দিয়ে।

বাহন হিসেবে রয়েছে মাত্র তিনটি উট। কাওছার নামক উটের পিঠে চড়েছেন মহানবী (সা)। আমের ও আবু বকর চড়েছেন একটিতে আর উবাইকাত তার নিজস্ব উটের পিঠে। কাফেলাটি সওর গিরি গুহায় গিয়ে পৌঁছল। ইতোমধ্যেই রাতের আঁধার কেটে গেছে।

এদিকে মহানবীর (সা) হিজরতের খবরও মক্কায় রটে গেছে। নবী (সা) ও তাঁর সাথীদের খুঁজে বের করার জন্য পাগলপারা হয়ে উঠেছে কুরাইশরা। মহানবী (সা) ও আবু বকরকে হত্যার জন্য একশ উটের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। সওর গুহায় আশেপাশের পল্লীতেও পুরস্কারের খবর দ্রুত এসে ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে গিরি গুহা হতে কাফেলাটি বের হবার সময় একজন পল্লীবাসী তা দেখে ফেললো।

আর যায় কোথায় তড়িঘড়ি করে লোকটি এ খবর সবাইকে অবগত করল। এমন সময় সেখানে চলছিল এক বৈঠক। বিষয়টি সভায় আলোচনা হলে সুরাকা নামক এক যুবক চালাকি করে বলল, ‘না, না, এ কাফেলা সেটা নয় যার কথা তোমরা অনুমান করছ। আমি জানি ওরা উট খুঁজতে বেরিয়েছে। অতএব কাফেলাকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

’ সুরাকা গোটা পুরস্কার পাবার লোভেই সভায় এই মিথ্যা কথা বলেছিল। তার কথা বিশ্বাস করে বৈঠকের লোকজন অন্য আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন সুরাকা ধীরে ধীরে সভাস্থল ত্যাগ করল। তারপর দ্রুত বেরিয়ে পড়ল তার মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য। বলবান ঘোড়ায় চড়ে তীর বেগে ছুটে চলছে সুরাকা। পুরস্কার পাবার তীব্র আকাংখায় সে উঁচু-নীচু পাহাড়িয়া পথে ছুটে চলছে।

ইতোমধ্যেই কাফেলার লোকজন তার নজরে পড়ল। বেশ দূরে সেই কাফেলাকে ধরার জন্য সুরাকা তার ঘোড়ার গতি আরো বাড়িয়ে দিল। কিন্তু খানিক পরই পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘোড়া মারাত্মক ব্যথা পেল। এতে সুরাকার মনেও হোঁচট খেল। এ অভিযানে সাফল্যের ব্যাপারে তার সন্দেহ সৃষ্টি হলো।

তবুও পুরস্কার পাবার মোহে সে যে আচ্ছন্ন। আরবের নীতি অনুযায়ী তীর দিয়ে লটারী করেও না সূচক জবাব পেয়ে সে ক্ষণিকের জন্য হতাশ হলো। তারপরও সে বিশ্বাস করতে পারছিল না লটারীর ফলাফলকে। তাই শিকারের খোঁজে পুনরায় রওনা হলো সুরাকা। ঘোড়া তার ছুটছে তীর গতিতে।

কাফেলার খুব কাছাকাছি এসে পড়ল সে। হঠাৎ হযরত আবু বকরের চোখে ধরা পড়ল শত্রুর ছায়া। তিনি খুব আশংকা বোধ করে বললেন, ‌আমরা এখন শত্রুর কবলে। ওরা সহসাই আমাদের ধরে ফেলবে। কিন্তু মহানবী (সা) মোটেও উদ্বিগ্ন হলে না।

তিনি বললেন, ভয় পেয়ো না; আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন। সুরাকা কাছাকাছি এসে পড়েছে। সুরাকার চোখে-মুখে উল্লাসের বন্যা যেন উপচে পড়ছে। কিন্তু তার ঘোড়াটি সহসাই আবারো দুর্ঘটনায় পড়ল। এবার ঘোড়ার পা দু’টি মাটিতে গেড়ে গেল।

অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়ার পা উঠাতে পারল না সুরাকা। মনটা তার ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সুরাকা আবারো তীর দিয়ে লটারী করল। এবারও ফল হল উল্টো- ‘না সূচক। ’ সুরাকা ভয়ে ও গ্লানিতে হতাশ হয়ে পড়ল।

এদিকে ঘোড়াটি পা তুলতে না পেরে চিৎকার শুরু করলো। সুরাকা আরও হতাশ হয়ে পড়ল। এ অবস্থায় মহানবীর (সা) কাফেলাকে লক্ষ্য করে সুরাকা বললো, শুনুন! আমি সুরাকা। একটু দাঁড়ান। আমি কিছু কথা বলতে চাই।

আমার দ্বারা আপনাদের কোন ক্ষতি হবে না। কাফেলা সুরাকার অসহায় অবস্থা দেখে ঘুরে দাঁড়াল। সুরাকা নবীর (সা) নিকট ছুটে গেল এবং সে তার কাজের জন্য ক্ষমা চাইল। অতপর নবীজিকে বলল, আপনারা আমার খাদ্য এবং অস্ত্রশস্ত্র সবকিছু গ্রহণ করুন। মহানবী (সা) তার কথা শুনে হেসে বললেন, ‘তাই! তোমার এসবের কোন প্রয়োজন নেই।

বরং তুমি আমাদের হিজরতের কথা গোপন রেখো। সেটাই যথেষ্ট। এবার সুরাকা মহানবীর (সা) নিকট তাকে কোন একটা পরওয়ানা লিখে দেবার অনুরোধ জানাল। মহানবী (সা) আমেরকে আদেশ দিলেন। নির্দেশ পেয়ে চামড়ায় আমের ঐ রকম একটা পরওয়ানা লিখে দিল।

এটাই সুরাকার জন্য যথেষ্ট হলো। মহানবীকে (সা) হত্যা করে পুরস্কার পাবার মোহে উন্মাদ সুরাকা এবার তার ভুল বুঝতে পারল। সে তার ঘোড়া নিয়ে মক্কার পথে ফিরে গেল। মহানবী (সা) তাঁর কাফেলা নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলেন মদীনার পথে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.