আমি বুঝিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে কি সমস্যা? পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন থাকাটা তো নিজের জীবনের জন্য অপরিহার্য। প্রায় সব ধর্মে বা ধর্ম গ্রন্থে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশদ ভাবে বলা হয়েছে। আমাদের ইসলাম ধর্মে তো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ বিশেষ বলা হয়েছে। খাবারে হোক কিংবা চলাফেরা হোক বা পরিবেশ কিংবা পোশাক, পরিচ্ছেদ সর্বত্রই পরিষ্কার থাকলে যেমন সৌন্দর্য প্রকাশ পায় তেমনি মর্যাদা ও পাওয়া যায়। তাই সবক্ষেত্রেই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি গভীর হচ্ছে, এ ছাড়া হারিয়েছে সব সবকিছুর সাথে মূল যে জিনিস, যা আমার পরিচয়ের সনদ-পাসপোর্ট। যদি তার বিকল্প কিছু না পাই বৃটিশ হাইকমিশন থেকে তা হলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বৃটিশ হাইকমিশনে আমাকে যেতে হবে সকাল ১০টার মধ্যে। হারুন ভাইকে নিয়ে গেলাম হোটেলে। অভিযোগ পত্রটাই আমার সম্বল তাই যত্নে রাখলাম।
এবং ভাবলাম আজকে আমার বৈধ কাগজ পত্র হারানোর পরে যে ধরণের সমস্যার সম্মুখিন আমি, তা হলে যাহারা অবৈধ তাদের অবস্থা কতটুকু ভয়াবহ তা ভাবতেই ভয় পেলাম। এরমধ্যে খবর রটে গেছে আমার যে পাসপোর্ট হারিয়েছে। হোটেল ব্যবসা্য়ীক প্রতিষ্ঠানের যে মূল ব্যক্তি চেয়ারম্যান নিজে এসে উপস্থিত, দুঃখ প্রকাশ করে ভদ্রলোক আমাকে সান্তনা দিলেন এবং তিরষ্কার করলেন কেন উনাকে সাথে সাথে জানালাম না বলে। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব যে তাহার সম্পর্কে বলতে গেলে আলাদা ভাবে লিখতে হবে। তিনি আমার শুভ কামনা করে বিদায় নিলে পরে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু ঘুম কই? এপাশ ওপাশ করে রাত্রি পার করলাম। ভোরে তন্দ্রাছন্নভাব কিন্তু হারুন ভাই জেগেই আমাকে ডাক দিলেন। বৃটিশ হাইকমিশন যেতে হবে, বিলম্বে হলে আমার যাত্রা হবে নাস্তি। তাই হোটেলের রাজকীয় নাস্তা সেরেই বের হলাম। কিন্তু যে যানযট অবাক কান্ড, এতো জট যে আধ ঘন্টা সময়ে ও আমরা মূল সড়ক পর্যন্ত পৌছালাম না।
এথেন্সের রাস্তাঘাট সম্পর্কে পারদর্শী হারুন ভাই এরপরেও তিনি দেখলাম হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি ডান বাম করে শেষ পর্যন্ত পৌছালাম। বৃটিশ হাইকমিশনে পৌছে ভিতরে প্রবেশ করতে যে কড়াকড়ি অবস্থা তা দেখে তো আমি অবাক। তিন স্তরের নিরাপত্ত্বা বেষ্টনির পর মূল ফটক ভিতরে প্রবেশ করলাম। যে ভদ্র মহিলা আমাকে সেবা দিতে এগিয়ে এলেন তিনি আমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করে একটি ফরম দিলেন।
এবং ঘটনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমি ফরমটি যথারীতি পূরণ করে দিলাম। তিনি আধ ঘন্টা সময় নিবেন বললেন এবং চাইলেন ফি। ফি বাবদ টাকা দিয়ে বসলাম, অপেক্ষা এবার আমার ভ্রমনের পাসের জন্য ফি যে এতো টাকা হবে ভাবিনি। যাক, তবু সস্তি যদি কাজ হয়ে যায়।
তাদের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ, একজন নাগরিক হিসেবে সে ধরণের সেবা ও ব্যবহার আমাদের কাম্য, সেই ব্যবহার দেখে হারুন ভাই বললেন, আফসোস বাংলাদেশীদের জন্য, আমরা ব্যবহার নিয়ে আলাপ করছিলাম, তখনি ডাক দিলেন ট্রাভেল ডকুমেন্ট হাতে নিয়ে আনন্দে আলহামদুলিল্লাহ বলে হারুন ভাইকে বললাম ব্যবহারে বংশের পরিচয়। এবার চলুন যেতে হবে ভাই।
এথেন্সের বিড়ম্বনা ভুলে আবার রওয়ানা দিলাম এয়ারপোর্টের দিকে। যেতে যেতে ভাবলাম বিপদ আসে কত বড় হয়ে ধৈয্য ও সাহস না থাকলে বিপদ যে কত ভয়াবহ। আমি ঝামেলার মধ্যেও সঙ্গী নিয়ে যা যা দেখলাম তাহাতে আমাকে পীড়া দিল সেই সব ব্যক্তিদের মূল্যায়ন নিয়ে।
আমরা যাহারা গ্রীক সভ্যতা নিয়ে জানি বা যাদের মাধ্যেমে তাদের সাহিত্য সম্পর্কে অবগত হয়েছি তাদের ব্যাপারে সম্পূর্ন উদাসিন জনগোষ্ঠি। প্লেটো, এরিষ্টেটল,সক্রেটিস, জার্জিয়াসসহ আরো কত। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দেখে একদম হতবাক। আজ নিজ দেশে ওরা পরবাসী। বাহির থেকে যত কিন্তু ভিতর শূন্য।
থিও সিলভাসস্টো অনেকটা আক্ষেপ করে বললেন, এখানের ডেমোক্রেসী এখন আনার্কী। মনচাহী অবস্থার দরুণ তাদের সভ্যতা আজ বিলুপ্তির দিকে। অর্থনৈতিক অবস্থা মুখ থুবরে পরে আছে। বেকারত্ত্ব আকাশ ছোয়া। তাদের প্রধান আকর্ষন হল পর্যটন।
আয়ের উৎসের সিংহভাগ আসে এই খাতে। আরো আছে কৃষি, মৎস এবং শিপিং ও বেটি ব্যবসা। বিশ্ব মন্দায় এসবে এখন আর আগের মত জোয়ার নেই। মানুষ যখন মন চাহি জীবনকে চিরস্থায়ী ভেবে মদ. জুয়া, যেনা,ব্যভিচার, অশ্লীলতা লুঠে পুঠে খায় এবং সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে নিজের ইচ্ছাকে কর্তা মনে করে তখন না থাকে বিবেক কিংবা গতিপথ। আজকের গ্রীসের অবস্থা দেখে তাই মনে হল।
বেহায়াপনার সীমাহীন দম্বে এখন ওরা অসহায়। তাবত বিশ্ব গণতন্ত্রের জোয়ার ভাসিয়ে দিয়ে এখন নিজেরাই দিশেহারা। কাউকে মিথ্যা অপবাদ ও জবরদস্তীমূলক আচরন দিয়ে অপদস্ত করে নিজের ভাগ্যের যে পরিবর্তন আনা যায় না তা সমগ্র গ্রীক বাসীকে দেখে সহজেই অনুমেয়। তুর্কী খেলাফতের কঠোর সমালোচক। মুসলমানদের কচুকাটা করে যেখানে উন্নয়নের পাহাড় গড়ে তোলার কথা সেখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত হয়েও অপারগ তাহারা।
যাক ইতিহাস পর্যালোচনা করে কলেবর বৃদ্ধি না করাই ভালো। এথেন্সের দ্বিতীয় বারের ভ্রমণে যা দেখলাম এবং শিখলাম তাহা আমার জীবন চলার পথে আগামীতে অনেক সহায়ক হবে। ভ্রমনে এথেন্সে এসে আমি একদিকে যেমন তৃপ্ত অপর দিকে ব্যতিত ও বটে। জীবনের কাংখিত স্বপ্ন পূরণেন পথে আমি এখন অনেক দূর এগিয়ে, জানি না সেই স্বপ্ন আদৌ পূরন হবে কি না। কামনা করছি প্রভু পানে তিনি যেন চালান আমাকে কল্যাণের পথে।
তবে যে কথা বলছিলাম যে কথা বলব বৃটিশ হাইকমিশনের ভদ্র মহিলা এথনাকে তা আর বলা হয়নি। ইংল্যান্ড আসার পর ই-মেইল করে ধন্যবাদ জানালাম বটে। কিন্তু জবাবে সেই কথাটাই লিখলেন, যা আমার বলার ছিলো। তাই এখন বলছি, সকল গ্রীসবাসীদের লক্ষে আর তা হলে-ব্রাবো।
রচনাকাল-২০০৮ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।