সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
গ্রীসের সমুদ্র বন্দর পেরিযাস এ আমার আর আমার বন্ধুর জন্যে অপেক্ষা করছিল বাহার। বাহারকে আগে কখনও দেখিনি। কিন্তু ইস্তাম্বুল থেকে গ্রীসে আসার অপেক্ষায় আছি, এই খবরটি আমদেরই এক বন্ধু জানিয়েছিল ওকে। আমরা কখন আসছি সেটাও জানিয়েছিল বাহারকে। সেইমত ইয়থ হোস্টেলে দেখা হলো আমাদের।
প্রথমে আমাদেরকে ও শ্রীলংকার বলে পরিচয় দিল। আমারা ঘাবড়ে গেলাম দেখে ও হাসল অনেক। হাসি শেষ হলে আমাদের সাথে বাংলা বলা শুরু করল।
বাহারের সাথে সকাল সকালই পেঁৗছে গেলাম জাহাজ কোম্পানীর অফিসে। অফিসের কর্মকর্তার সাথে সামান্য কিছু আলাপের পরই আমাদেরকে ডাক্তারী পরিক্ষার জন্যে নিয়ে যাওয়া হলো।
তারপর চুক্তিপত্রে সই করলাম। সামন্য বেতন, আমরা তাতেই সন্তুষ্ট। আমাদের জাহাজ গ্রীসেরই আরেক সমুদ্র বন্দর 'ভলসে' নোঙ্গরে ছিল। হাতে দুজনের জন্যে দুটো প্লেন টিকেট ধরিয়ে দেয়া হলো। আমার এক বছরের খালাসী জীবনের শুরু এখানেই।
পকেটে টাকা থাকলে আরো ভাল জাহাজে ভাল বেতনে চাকুরী পাওয়া যেত, কিন্তু আমাদের পকেট তো ধু ধু মরুভুমি!
চুক্তিপত্রে সই করেই পেরিয়াস থেকে একটু দুরে বাসে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে রওয়ানা হয়ে গেলাম। এ্যকরোপোলিস এর কথা অনেক শুনেছি। স্বচক্ষে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। বাহারও আমাদের সাথে চলল।
এ্যকরোপোলিসে এসে আমারা ভুলে গেলাম যে আমরা ভবিষ্যত খালাসী জীবন কাল সকাল থেকেই শুরু করতে যাচ্ছি।
এর শ্বেত মর্মরের স্তম্ভের গোড়ায় বসে আমরা প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেলাম। নিজের কাছে নিজেকেই অপরিচিত মনে হলো। আমাদের গত একটি বছরের উত্তাল সময়, দিল্লী, কাবুল, তেহরান ও ইস্তাম্বুলের ছন্নছাড়া দিনগুলো একমুহুর্তেই একরোপোলিসের মোহিনী মুর্ছণায় মিলিয়ে গেল শুন্যে।
প্রাচীন সভ্যতায় শহরের কেন্দ্রস্থল সবচে' উচু এলাকায় গড়া হতো। পৃখিবীর অন্যতম প্রাচীর নগরী এথেন্সের শুরু খ্রীষ্টজন্মেরও অনেক আগে এখানেই।
প্রধান গীর্জাটি পারসীরা খ্রীষ্টপুর্ব 480 সনে ধ্বংস করে। গ্রীক রাজা পেরিকেস খ্রীষ্টপুর্ব 488 সনে স্থপতিবিদ পিডিয়াস, ইকনস ও কালিত্রাটেস কে প্রায় পুরো এলাকাটি নতুন করে তৈরীর নির্দেশ দেন। নতুন একরোপোলিস তার মোহীনি রূপ নিয়ে প্রাচীর গ্রীসের শৌযর্, শিল্পের সাী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান নেয়।
বাহারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একঘন্টা ওড়ার পর পরদিন সকাল এগারোটায় পৌছলাম ভলসে। জাহাজ কোম্পানীর একজন লোক অপেক্ষা করছিলেন বিমান বন্দরে।
আমাদেরকে পৌছে দিলেন জাহাজে। আমাদের জাহাজের নাম বাক্কিস। সমুদ্র পাড়ির জন্যে ছোট জাহাজ, 26 বছরের পুরোনো, বহনক্ষমতা 3500 টন। আমাকে ডেকে খালাসীর ও আমার বন্ধুকে মেসবয়ের কাজ দেয়া হলো। ঘুমানের জন্যে বরাদ্ধ হলো জাহাজের পেছনের অংশে দুটো কেবিন।
সেদিন বিকেলেই জাহাজ ছাড়ল সাইপ্রাসের রাজধানী লারনাকার উদ্দেশ্যে। আমার প্রথম সমুদ্রযাত্রা। ডেকে কাজ করতে করতে দেখলাম ডলফিন সাতার কাটছে আমাদের সাথে সাথে। একবার ডুবছে, পরমুহুর্তেই লাফিয়ে উঠছে শুন্যে। কিছু কিছু উড়ন্ত মাছও দেখতে পেলাম।
সমুদ্রের বুকে যেন চুমু খাচ্ছে বিকেলের অস্তগামী সুর্য। পৃথিবীর প্রান্তের কাছাকাছি এরচে' সুন্দর সময় আরো কিছু আছে বলে মনে হলোনা আমার। নিজেকে পরিপুর্ন, সার্থক ও খুব বেশী ভাগ্যবান মনে হলো। এ সুখের অনুভুতি আমার বর্ননাক্ষমতার ভেতর পড়ে না।
রাত দশটার দিকে সে সুখানুভুতি আর রইল না।
আমার ডিউটি ছিল ব্রিজে ক্যাপ্টেনের সাথে। অনেক দুরে একটা বাতিঘর দেখিয়ে জাহাজের গতিপথ কিভাবে সেদিকে রাখা যায়, তা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন। এরই মাঝে শুরু হলো একটু বৃষ্টি আর সামান্য দমকা বাতাস। জাহাজ দুলতে শুরু করলো । পেটের নাড়ীভুড়ি হঠাৎই যেন উল্টে উঠলো।
রাতের সমস্ত খাবার একযোগে বেরিয়ে আসতে চাইল। আমার চোখের ঘোলাটে দৃষ্টি দেখে ক্যাপ্টেন কেবিনে যাবার অনুমতি দিলেন। আমি প্রচন্ড কষ্টে আমার কেবিনের বেসিনে হালকা হলাম।
চলবে..........
(এর আগের কাহিনী অনেক বিস্তারিত। তাই গোড়া থেকে শুরু করা সম্ভব হলো না।
জাহাজের জীবন থেকেই শুরু করলাম তাই। হয়তো কখনো পুরোটাই শেষ করে উঠবো। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।