আমি এক ভবঘুরে; ঘুরি এ জগত জুড়ে নরমানদের বিজয়ের পূর্বে ব্রিটেন
ব্রিটেন: ইংলিশদের বিজয়ের পূর্বে
১. গুহাবাসী: হাজার বছর আগের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও আয়ারল্যান্ড ছিল বর্তমান ব্রিটেনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গরমে ছিল অত্যন্ত উষ্ণ আর শীতে তীব্র ঠাণ্ডা। সিংহ আর ভাল্লুকের মতো হিংস্র প্রাণীরা শিকারের সন্ধানে এই দ্বীপের নির্জন পাহাড়ে ও জলময় উপত্যকায় সর্বত্র ঘুরে বেড়াত। বামুনের চেয়ে বড় কিছু আদিম মানুষ তাদের সাথে প্রাণপণে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকত। তারা এতটাই অজ্ঞ ছিল যে তারা জানতোনা জমি চাষ করতে; তারা পারতোনা কোন ধাতুর ব্যবহার করতে।
তাদের একমাত্র যন্ত্রপাতি ও অস্ত্র ছিল রুক্ষ-ভাবে কাটা ধারালো কিছু পাথরের টুকরো। এজন্যই তাদের সে সময়কে Paleolithic বা পুরাতন পাথুরে যুগ নামে অভিহিত করা হয়। এসব আদিম মানুষরা বসবাস করত পাহাড়ের গুহায় যেখানে তাদের ধ্বংসাবশেষ আজও খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের সবচেয়ে বেশি দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় সমতল হাড়ের ওপর দাগ কেটে আঁকা প্রাণীর চিত্রে। আমরা জানিনা কোথা থেকে এসব মানুষ আমাদের দেশে এসেছিল; কত দিন তারা সেখানে বসবাস করেছিল এবং কোন ভাষায় তারা কথা বলত।
বর্তমান ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা তাদের থেকে উদ্ভূত এমনটি হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই। তবুও আমরা তাদেরকে স্মরণ রাখব কারণ এই গুহাবাসীরাই ছিল আমদের দেশে বসবাসকারী প্রথম মানব জাতি।
২.ইবারিয়ান: সময়ের বিবর্তনে গুহাবাসীরা হারিয়ে গেল। তাদের স্থান দখল করল অন্য মানব জাতি। তাদেরকে বলা হত ‘ইবারিয়ান’ কারণ তারা স্পেনের প্রাচীন অধিবাসীদের মত ছিল।
আর এক সময় স্পেনকে বলা হত ‘ইবারিয়া’। এসব মানুষরা ছিল খাট, কাল চামড়া, কাল চুল ও লম্বা সঙ্কীর্ণ খুলির অধিকারী। এই ইবারিয়ানদের মতো অনেক খাট কাল মানুষ আজও ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে বসবাস করছে এবং সম্ভবত সে ইবারিয়ানদের রক্ত আজও তাদের শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। সম্ভবত Salisbury’র Stonehenge এর মতো বিরাট পাথরের বিশাল বৃত্ত যা আজও দেখা যায় তা তাদেরই তৈরি। এরা তাদের পূর্বের জাতির চেয়ে কিছুটা সভ্য ছিল।
তারা ধাতুর ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেও তাদের পাথরের আসবাবপত্র ছিল সুন্দরভাবে তৈরি ও ব্যবহার উপযোগী। তাদের সময়টাকে বলা হয় ‘Neolithic’ বা নতুন পাথুরে যুগ। তারা শস্য চূর্ণ করতো, উল দিয়ে কাপড় বুনত এবং মাটির পাত্র তৈরি করত।
৩. কেল্ট: এর পরবর্তীতে ব্রিটেনে এসেছিল কেল্টরা। তারা ছিল লম্বা, ফর্সা চামড়া, উজ্জ্বল চুল ও গোলাকার খুলির অধিকারী জাতি।
তারা যে ভাষায় কথা বলত তা এখন আমাদের অনেকেরই মাতৃভাষা। তারা খর্বকায় কালো চামড়ার ইবারিয়ানদেরকে পরাজিত এবং তাদেরকে তাদের মাতৃভাষা ও রীতি-নীতি শিখতে বাধ্য করেছিল। আমাদের মধ্যে অনেকেই কেল্ট অথবা কেল্ট ও ইবারিয়ানদের মিশ্রিত বংশ হতে উদ্ভূত। আইরিশ, ম্যনক্স, স্কটিশ হাইল্যান্ডার এবং ওয়েলসরা হয় খাঁটি কেল্ট নাহয় মিশ্র বংশোদ্ভূত। বেশির ভাগ ওয়েলস এবং কিছু কিছু আইরিশ ও হাইল্যান্ডার স্কটস এখনো কেল্ট ভাষায় কথা বলে।
এমনকি অবশিষ্ট ব্রিটেনের অনেক মানুষও এই জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। কেল্টরা ব্রিটেনের পূর্ববর্তী অধিবাসীদের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী ও সভ্য ছিল। তারা ধাতুর ব্যবহার করতে শুরু করে এবং তাদের হাতিয়ার ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে প্রথমে ব্রঞ্ঝ ও পরে লোহার ব্যবহার করে। তারা কাপড় পরিধান করত এবং রুপার চুড়ি ও অলংকার তাদের প্রিয় ছিল। মৃৎশিল্পেও তাদের ভাল দক্ষতা ছিল।
তাদের সম্পদ ছিল প্রধানত ভেড়ার পাল ও গবাদি পশুর দল। তারা ছিল দক্ষ ঘোড়সওয়ার। যদিও এরা অত্যন্ত সাহসী, নম্র ও উদ্যমী ছিল তবুও এরা ছিল অস্থির, সন্দেহ-প্রবণ ও অনধ্যবসায়ী প্রকৃতির। যখন শত্রুরা তাদের দেশে আক্রমণ করত তখন দেশের সর্বত্র ছড়ানো কেল্টরা উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত বিশাল ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করত এবং মাটির পুরো দেয়াল ও গভীর পরিখার মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করতো। তারা ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ এবং অনেক দেব-দেবতার পূজারী।
তাদের পুরোহিতকে (Druid) তারা অত্যন্ত সম্মান করতো। তারা গান অত্যন্ত পছন্দ করতো এবং এ গানসমুহে তাদের বীরযোদ্ধাদের কীর্তি বর্ণনা করতো। তারা গোত্রে বিভক্ত ছিল এবং প্রত্যেক গোত্রের একজন করে পৃথক দলপতি ছিল। এসব গোত্রগুলো সবসময়ই একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। দক্ষিণে বসবাসকারী কেল্টদেরকে বলা হত ব্রিটন।
আর এই ব্রিটন থেকেই আমাদের দ্বীপ ব্রিটেন নাম পরিচিতি লাভ করে।
৪. রোমান: দুই হাজার বছর আগে এ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি ছিল রোমানরা। তারা ছিল মূলত ইটালির রোম নগরীর অধিবাসী। তারা প্রথমে সমস্ত ইটালি জয় করে এবং পরবর্তীতে নিজেদেরকে সমগ্র সভ্য জগতের অধিপতিতে পরিণত করে। তারা ব্রিটনদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী, শক্তিমান ও বিত্তশালী ছিল।
তারা এ দ্বীপের অধিবাসীদেরকে পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম মানুষদের চেয়ে কিছুটা সভ্য হিসেবে গণ্য করত।
৫. জুলিয়াস সিজার ও রোমান সাম্রাজ্য: সর্বাধিক সুবিদিত রোমান সেনাপতি ও রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন জুলিয়াস সিজার। তিনি তার দেশের শাসন ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন এনেছিলেন। তার সময়ের পূর্বে রোম ছিল অভিজনদের দ্বারা শাসিত একটি প্রজাতন্ত্র। কিন্তু সিজার রোমানদেরকে একজন সেনানায়ক হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেকে রোমের নৃপতিতে পরিণত করেন।
আর এভাবে তিনি রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিলেন।
৬. সিজারের ব্রিটেন অভিযান: সিজার ছিলেন একজন শক্তিমান বিজেতা যিনি তার সাম্রাজ্যে বহু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বর্তমান ফ্রান্স (যা পূর্বে গল Gaul নামে পরিচিত ছিল) বিজয় ছিল সিজারের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিজয়। কিন্তু ফ্রান্সের এই লোকেরা ছিল ব্রিটনদের মত কেল্ট। যখন তারা সিজারের চাপে পড়ল তখন তাদের রক্ত সম্পর্কীয় ব্রিটনরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসল।
এ জন্য ব্রিটনদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য ব্রিটেনে দুটি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এর প্রথমটি সংগঠিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৫ সালে। প্রথম বার সিজার তার সাথে যথেষ্ট পরিমাণ সৈন্য আনেননি; তাই তিনি তাড়াতাড়ি ফ্রান্সে ফিরে যাওটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করলেন। পরের বছর তিনি বিপুল পরিমাণ সৈন্য নিয়ে আসলেন এবং ব্রিটনদেরকে পরাজিত করে কর প্রদানে বাধ্য করলেন। একজন সেনানায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পাশাপাশি সিজার একজন প্রখ্যাত লেখকও ছিলেন।
তিনি ব্রিটেনে যা দেখেছিলেন এবং করেছিলেন তার সুন্দর একটি বর্ণনা লিখে গিয়েছেন যেটি আমাদের পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে এবং সেটি থেকে আমরা আমাদের দেশ ও আদিবাসীদের পূর্ণ একটি বিবরণ পেয়েছি। এ সময়ের পূর্বে কি ঘটেছিল তা আমরা শুধু মাত্র অনুমান করতে পারি সমাধি খুড়ে এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। সিজারের অভিযানের পরবর্তী থেকে আমরা ব্রিটেনের লিখিত ইতিহাস পেয়েছি।
৭. রোমানদের দক্ষিণ ব্রিটেন জয়: সিজারের অভিযানের পর প্রায় শত বছর পর্যন্ত ব্রিটনরা তাদের নিজেদের মতই চলেছিল। এটা ছিল বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিখ্যাত সময় কারণ এ সময়ই সিজার প্রতিষ্ঠিত রোমান সাম্রাজ্য এতটাই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে পুরো বিশ্ব তখন রোমানদের দ্বারা শাসিত হত।
অধিকন্তু এ সময়েই যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে এসেছিলেন; ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন এবং খ্রিস্টান ধর্ম উত্থান হয়েছিল। যদিও সে সময় খুব কম মানুষই এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল অথবা এ সম্পর্কে শুনেছিল। এ সময়টাতে রোমানরা ব্রিটেনদের কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিল এবং ব্রিটনরাও ফ্রান্সকে রোমানদের বিরুদ্ধে সাহায্য করার মত যথেষ্ট সাহসী হয়ে উঠেছিল। সে পরিস্থিতি অনুযায়ী রোমানরা ভাবল এটাই ব্রিটেনকে রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করার সেরা সময়। ৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লাডিয়াস (Claudius) একদল সৈন্যকে ব্রিটেন জয় করার উদ্দেশে পাঠালেন।
কিন্তু ব্রিটনরা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করল ফলে রোমানদেরকে ব্রিটেনের দক্ষিণ অংশ জয় করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল। তারা Firths এবং Clyde নামক স্থানের মাঝামাঝি একটি বিরাট উঁচু মাটির বাঁধ তৈরি করল যা তাদের শাসনের সীমানা নির্দেশ করত। এছাড়া স্কটিশ হাই-ল্যান্ডের কেল্টরা তখনও স্বাধীন ছিল। এই উত্তরের কেল্টদেরকে তখন কালেডোনিয়ান (Caledonian) এবং তাদের দেশকে কালেডোনিয়া ((Caledonia) নামে অভিহিত করা হত। পরবর্তীতে তাদেরকে বলা হত ‘পিক্টস’ (Picts) যার অর্থ অনেকে ‘রঞ্জিত মানুষ’ বলে মনে করেন কারণ তারা অল্প কাপড় পড়ত এবং তাদের দেহতে উজ্জ্বল রং এর প্রলেপ দিত।
সময় যাওয়ার সাথে সাথে রোমানরা উত্তর ব্রিটেন জয়ের সকল প্রচেষ্টাই পরিত্যাগ করল। তারা পিছু হটে সলওয়ে (Solway) থেকে নিউক্যাসলের নিচে টিন (Tyne) এর কাছাকাছি পর্যন্ত বিস্তৃত একটি প্রাচীন সীমানা প্রাচীরের কাছে আসল । এই প্রাচীরটি অত্যন্ত কঠিন-ভাবে পাথরের তৈরি। রোমান দক্ষতা ও শক্তির নিদর্শন এই প্রাচীরটি নর্দামবারল্যান্ডের বিশাল বিস্তৃত বুনো পতিত-ভূমিতে তুমি এখনও দেখতে পাবে।
৮.দক্ষিণ ব্রিটেনে রোমান শাসন: দক্ষিণ ব্রিটেনে রোমান শাসন তিন শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী ছিল।
এটি দেশের জন্য অনেক ভালোর পাশাপাশি কিছু মন্দও বয়ে নিয়ে এসেছিল। রোমানরা তদেরকে এত সুন্দর শান্তি ও শাসন ব্যবস্থা দিল যা তারা এর আগে কখনো দেখেনি। রোমানরা ব্রিটেনকে চমৎকার শহর ও সুন্দর গ্রামে ছেয়ে দিল। তারা তাদের দুর্গের চারপাশ শক্ত ইট পাথরের তৈরি দেয়ালে ঘিরে দিল এবং দেশের বিভিন্ন স্থানকে সংযুক্ত করতে কঠিন মসৃণ সড়ক তৈরি করল। সে সড়কগুলো এত ভালভাবে তৈরি ছিল যে রোমানরা চলে যাওয়ার শত শত বছর পরেও সেগুলো এখনও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রোমানরা ব্যবসা বাণিজ্য উৎসাহিত করেছিল, খনি খুঁজে বের করেছিল, মৎস্য শিকার এলাকা তৈরি করেছিল, আঙ্গুর ও ফলের বাগান করেছিল, জলাভূমিতে নালা কেটেছিল, ঘন বনাঞ্চল কেটে পাতলা করেছিল। তারা এত বেশি শস্য উৎপাদন করেছিল যে ব্রিটেনকে বলা হত ‘ইউরোপের শস্যভাণ্ডার’। তারা ব্রিটিশ প্রধানদেরকে রোমান ও ল্যাটিন ভাষা এবং রোমান জীবনাচরণ শিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
৯. রোমান ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের খ্রিস্টান হওয়া: ব্রিটেনে রোমান শাসনের শেষ দিকে রোমানরা প্রায় সবাই খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছিল। তারা ব্রিটেনে নতুন ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে এসেছিল।
ব্রিটিশ চার্চ তার নিজস্ব যাজক ও পুরোহিত সহ অনেক দেব দেবীর উপাসনা বন্ধ করল যাতে এক সময় ব্রিটনরা অভ্যস্ত ছিল। আজকের ওয়েলস চার্চ সেদিনের ব্রিটিশ চার্চ হতে উদ্ভূত। আনন্দ সংবাদ প্রচারের জন্য রোমান প্রদেশের বাইরে প্রেরিত ধর্ম প্রচারক দল হতেই আইরিশ চার্চ উদ্ভূত । সবচেয়ে বিখ্যাত সাধক যিনি পুরো আয়ারল্যান্ডে নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছিলেন তিনি হলেন “ব্রিটন পেট্রিক” যাকে আজো আইরিশরা ত্রাণকর্তা হিসেবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। যদিও আয়ারল্যান্ড কখনো রোমানদের দ্বারা বিজিত হয়নি তবুও তারা রোমান ব্রিটেনের কাছ থেকেই প্রথম খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করে।
১০.ব্রিটেনে রোমান শাসনের সমাপ্তি: রোমানরা কখনোই ব্যাপক সংখ্যায় ব্রিটেনে বসতি স্থাপন করেনি। আর ব্রিটনরা তাদের সুপ্রাচীন প্রথানুযায়ী তাদের পুরনো ভাষাতেই কথা বলতে থাকে। কিন্তু কালের প্রবাহে ব্রিটনরা তাদের পুরাতন যুদ্ধাভ্যাস ও দেশ-শাসন-নীতি ভুলে যায়। সবশেষে রোমানরা যখন দেখল তারা আর ব্রিটেনকে শাসন করতে পারছেনা তখন এটা ব্রিটনদের কাছে এক বিরাট ঝামেলা বলে প্রতীয়মান হল। হিংস্র যাযাবর উপজাতিগুলো রোমান সাম্রাজ্যর অত্যন্ত সন্নিকটে লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল।
তাই শুধু ইটালিকেই এই আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য রোমানরা তাদের সকল সৈন্যকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। এখন থেকে যতটুকও সম্ভব তারা নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে; এ কথা বলে ৪১০ খ্রিস্টাব্দে রোমfনরা ব্রিটেন থেকে তাদের সকল সৈন্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নিল।
১১. স্কট ও ইংলিশ হামলাকারী: এভাবে ব্রিটনরা আগের চেয়ে আরো বেশি স্বাধীন হল; কিন্তু তারা সে স্বাধীনতা বেশি দিন ধরে রাখতে পারলনা। বর্বর ও সাহসী শত্রুদের দ্বারা তারা চারদিক হতে আক্রান্ত হতে থাকল। পশ্চিম থেকে আসল আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী কেল্টরা।
সে সময় আইরিশদেরকে সাধারণত স্কট নামে ডাকা হত। উত্তর থেকে আসল কালেডনিয়ান তথা পিক্টরা যারা ব্রিটেনেরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত লুটতরাজ চালিয়েছিল। এর চেয়ে ভয়ংকর ছিল উত্তর জার্মানির হিংস্র জলদস্যুর ঝাঁক। ব্রিটনরা এসব হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করল। কিন্তু তারা ঠিক মত পেরে উঠলনা কারণ তাদের খুব অল্প পরিমাণই ভাল নেতা ছিল।
ধীরে ধীরে তারা বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হল। এরই মধ্যে পূর্ব পশ্চিম থেকে আগত উভয় শত্রুরাই ব্রিটেনে তাদের নতুন বসতি স্থাপন করে। স্কটরা বসতি স্থাপন করে উত্তর-পশ্চিমে আর জার্মানরা করে দক্ষিণ-পূর্বে। এসব হামলাকারীদের আগমনে ব্রিটেনের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়।
১২.ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের সূচনা: এপর্যন্ত আমরা শুধু ব্রিটেনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছি।
কিন্তু ব্রিটিশ দ্বীপের বিভিন্ন অংশ পৃথক পৃথক নাম পেতে শুরু করল। এ নামগুলো আজ আমাদের কাছে এতটাই পরিচিত যে এটা মনে করা খুবই কঠিন যে একটা সময় ছিল যখন এ নামগুলোর কোনই অস্তিত্ব ছিলনা। আয়ারল্যান্ড থেকে আসা স্কটরা উত্তর ব্রিটেনের একটা অংশের নাম দিল স্কটল্যান্ড তথা স্কটদের দেশ। দক্ষিণে বসবাসকারী জার্মানদেরকে বলা হত ইংলিশ; আর তাদের থেকেই দক্ষিণ ব্রিটেনের নাম হয় ইংল্যান্ড বা ইংলিশদের দেশ। অধিকন্তু ইংলিশরা ব্রিটনদেরকে বলত ওয়েলশ (Welsh ) এবং তাদের দেশকে বলত ওয়েলস (Wales)।
আজ আমরা জানি যে, ব্রিটেন বিভক্ত হচ্ছে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস এ। এই ভাগ শুরু হয় তখন থেকে যখন প্রাচীন ব্রিটন অথবা ওয়েলশ, স্কট ও ইংলিশরা ব্রিটেনে পাশাপাশি বসতি স্থাপন করে। কিন্তু সে সময়ের ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস আকৃতি ও সীমানা তার পরবর্তী সময়ের চেয়ে অনেক ভিন্ন ছিল। ইংলিশ, ওয়েলশ ও স্কট এই তিন জাতির আজকের দিনের মত পাশাপাশি বসতি স্থাপন করতে অনেক সময় লেগেছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।