আমি অতি সাধারণ মানুষ
আমি একটা ভয়ানক কাজ করেছি।
আমি একটা মানুষকে খুন করেছি!
আমি যাকে খুন করেছি সে আমার সামনে মাটিতে পরে আছে। লোকটার নাম সামির চৌধুরী, বয়স ৫০ এর মত। মাথায় টাক, গায়ের রঙ ফর্সা, নাকটা কিছুটা থেবড়ানো, উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ৮-৯ ইঞ্চি হবে। লোকটার গায়ের সাদা পাঞ্জাবী লাল রঙে রঙিন হয়ে গেছে।
ফ্লোরের কার্পেটে ছোপ ছোপ রক্ত লেগেছে। আমার হাতে, শার্টে, প্যান্টেও রক্ত লেগেছে। গরম রক্ত। একেবারে তাজা রক্ত।
আমি যেই ছুড়িটা দিয়ে খুন করেছি তা এখনো আমার হাতে ধরা।
মাঝারি ধরণের ফল কাটার ছুড়ি। ছুড়ির গা বেয়ে এখনো ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত কার্পেটে পড়ছে। খুব ধারাল ছুড়ি। পেটের মধ্যে খুব সহজেই ঢুকে গেছে। বেশ কয়েকবার ছুড়িটা দিয়ে পেটের মধ্যে মোচড়ামুচড়ি করলাম, লোকটার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে গেল।
মাত্র দুইশ টাকা দিয়ে আমি ছুড়িটা কিনেছি মালিবাগের একটা দোকান থেকে। ছুড়ির পারফর্মেন্সে আমি মুগ্ধ।
আমার পানির তেষ্টা পেয়েছে। আমি ডাইনিং রুমের দিকে হাঁটা ধরলাম। বেশ বড় একটা ফ্ল্যাট এটা।
তিনটা বেড, ড্রইং-ডাইনিং। সামির সাহেব তার ফ্যামিলি নিয়ে এখানে থাকেন। কিন্তু আজকে তিনি বাড়িতে একা। তার ছেলেমেয়ে আর বউ কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছে। আর আমি তার এই একা থাকার সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছি।
আমি ডাইনিং রুমে এসে ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানি বের করলাম। বোতল থেকেই ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলাম। প্রায় আধ লিটার পানি একেবারে খাওয়ার পর আমি বোতলটা টেবিলে নামিয়ে রাখলাম। হঠাৎ করে আমি প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম।
রাত একটা বাজে। গত ১২ ঘন্টা ধরে আমার পেটে কিছু পরেনি। এতক্ষণ খুনের চিন্তায় ক্ষিধে অনুভব করিনি। এখন ক্ষিধেটা জানান দিচ্ছে।
আমি আবার ফ্রিজ খুললাম।
কি খাবার আছে দেখা যাক। একটা একটা করে বাটি বের করলাম। গরুর মাংস, মুরগির মাংস, বোয়াল মাছ, খিচুড়ি, চিংড়ির তরকারি। আমি সবগুলো খাবার ওভেনে গরম করলাম। তারপর একটা প্লেট নিয়ে গোগ্রাসে খেতে লাগলাম।
খাওয়া শেষ করে আমি ফ্রিজ থেকে কোক বের করে একটা গ্লাসে কোক ঢাললাম। ঘড়ির কাঁটা দেড়টা ছাড়িয়েছে। আমি কোকের গ্লাস হাতে নিয়ে ড্রইং রুমে আসলাম। সোফায় বসে টিভি ছাড়লাম।
আমি আয়েশ করে ছোফায় বসলাম।
চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে স্পোর্টস চ্যানেলে আসলাম। এল ক্লাসিকো দেখাচ্ছে। আমি চ্যানেল ঘুরানো বন্ধ করে খেলা দেখতে লাগলাম।
**********
এল ক্লাসিকো দেখা শেষ করে আমি সোফা থেকে উঠলাম। রাত প্রায় পৌনে চারটা বাজে।
জমজমাট একটা ম্যাচ হয়েছে। খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। তুমুল প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ একটা ম্যাচ দেখলাম। আজকে রাতটাকে যেন পরিপূর্ণতা দিয়েছে এই ম্যাচ!
আমি লাশ যেখানে পরে আছে সেই রুমে আবার আসলাম। প্রায় আড়াই ঘন্টা আগে খুন করেছি।
লাশ জমে শক্ত হয়ে গেছে। রক্ত শুকিয়ে গেছে। আমি রুমের জানালাগুলো আবার চেক করলাম। সবগুলো জানালাই বন্ধ। লাশটাকে আমি সেভাবেই রেখে দরজা লক করে দিলাম।
তারপর আমি ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
রাস্তা একদম জনশূন্য। এই তীব্র শীতে রাত প্রায় চারটায় অবশ্য কারো বাইরে থাকার কথা না। আমি হেঁটে সামনের নর্দমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার হ্যান্ড গ্লাবস আর ছুড়িটা ফেলে দিলাম নর্দমায়।
তারপর খুব ধীর পায়ে বাসার দিকে এগোলাম। অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। এত রাতে এই শীতের মধ্যে কিছু পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।
[দুই দিন পর]
আমি পেপার পড়ছি। সামির চৌধুরীর খুনের ব্যাপারটা বিশাল করে ছাপানো হয়েছে পেপারে।
লাল রঙের হেডলাইন-বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সামির চৌধুরী নিজ বাড়িতে খুন।
আমি পুরো খবরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। ডিবির ওপর এই হত্যা রহস্যের তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। ডিবি ইতিমধ্যেই তাদের তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। তারা হত্যার মোটিভ কি তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
তবে তারা ধারণা করছে ব্যবসায়িক কোনো কারণ থাকতে পারে, কিংবা পূর্ব শত্রুতার জের ধরেও কেউ এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।
আমি পেপার রেখে রান্নাঘরে আসলাম। কফি খেতে ইচ্ছা করছে। ব্ল্যাক কফি। আমি চুলায় পানি বসালাম।
তাক থেকে কফি নামিয়ে মগে কফি ঢাললাম। চিনি মিশালাম কফির সাথে। তারপর পানি ফুটতে শুরু করলে পানি চুলা থেকে নামিয়ে মগে ঢাললাম।
কফি বানানো শেষ করে আমি রান্নাঘর থেকে এসে আবার ড্রইংরুমে সোফায় বসলাম। ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিতে দিতে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম।
সকাল নয়টা বাজে। নিতুদের ওখানে রাত দশটা বাজে। নিতু এত তাড়াতাড়ি ঘুমাবে না। আমি নিতুর নাম্বারটা ডায়াল করলাম।
বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর নিতু ফোন ধরল।
-হ্যালো বাবা, কেমন আছো তুমি?
-আমি ভাল আছি মা। তুই ভাল আছিস? বাসার সবাই ভাল আছে?
-হ্যাঁ বাবা, সবাই ভাল আছে। তুমি কবে আসবে বাবা?
-এইত আর তিনদিন পর ফ্লাইট। চলে আসব মা। তুই ডিনার করেছিস?
-হুম করেছি।
তুমি করেছো?
আমি হেসে বললাম- আমাদের এখানে এখন সকাল ৯টা বাজে।
নিতু হেসে ফেলল। -ওহ, আমি তো ভুলেই গেছি যে তুমি বাংলাদেশে আর আমি অ্যামেরিকা।
কলিং বেল বাজল। আমি বললাম-নিতু আমি এখন রাখি।
দরজায় কেউ এসেছে। পরে কথা বলব। আল্লাহ্ হাফেজ।
-আল্লাহ্ হাফেজ বাবা।
আমি বসা থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।
দরজার সামনে চারজন অপরিচিত লোক দাঁড়িয়ে আছে। সবার সামনে দাঁড়ানো লম্বা লোকটা আমাকে প্রশ্ন করল-আপনি কি মবিন আহমেদ?
আমি মাথা নাড়লাম। -হ্যাঁ।
-আমরা ডিবি থেকে এসেছি। সামির চৌধুরীকে খুনের জন্য আমরা আপনাকে অ্যারেস্ট করছি।
********
আমি বসে আছি একটা জানালাবিহীন ঘরে। ঘরে একটা মাত্র দরজা। আমি বসে আছি একটা চেয়ারে। চেয়ারের সাথে আমার হাত-পা বাঁধা। আমার সামনে একটা টেবিল।
টেবিল থেকে কিছুটা ওপরে একটা লাইট ঝুলছে। ঘরের মধ্যে একমাত্র আলোর উৎস হচ্ছে এই লাইট।
ঘরটা খুব একটা বড় নয়। দশ ফুট বাই আট ফুট হবে। দেয়ালে চুনকাম করা।
মাথার ওপর একটা লক্কর-ঝক্কর মার্কা ফ্যান ঘুরছে। এতে ঘরের ভিতরের ভ্যাপসা ভাবটা দূর হচ্ছে না।
আমি দরজা দেখতে পাচ্ছি না। দরজা আমার পিছন দিকে। দরজা আটকানো কিনা তাও বুঝতে পারছি না।
দরজা আটকানো হলে বাতাস কিভাবে ভিতরে ঢুকবে বুঝতে পারছি না। বাতাস ঢুকার আর কোনো পথ নেই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে দরজা আটকানো। আর মনে হওয়ার সাথে সাথে টের পেলাম আমার কিছুটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছে!
এখন ঠিক কয়টা বাজে বলতে পারব না। তবে আন্দাজ করছি রাত দশটার বেশি বাজে।
আমাকে ধরে আনার পর প্রথমে ছিলাম জেলখানায়। তারপর আদালতে আমার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আজকে সেই রিমান্ডের প্রথম দিন।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি।
আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি একটু ঘুমিয়েই পড়েছিলাম, হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে জেগে উঠলাম।
আমার সামনের চেয়ারে বসল সেই লম্বা মতন লোকটা। বসে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। জিজ্ঞেস করল-কেমন আছেন মবিন সাহেব?
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম-আমার ঘুম পাচ্ছে।
লম্বা মতম লোকটা বলল- ঘুম পাওয়ারই কথা। রাত তো কম হয় নাই। বারোটা বাজে।
আমি আবারো হাই তুলতে তুলতে বললাম- ও।
-আচ্ছা মবিন সাহেব, আপনি সামির চৌধুরীকে খুন করেছেন কেন?
-আমি খুন করেছি এটা আপনি জানলেন কি করে? আমি কি আপনাকে বলেছি?
-দেখুন মিস্টার মবিন, আমি খুব ভাল করেই জানি আপনিই সামির চৌধুরীর খুনি।
-ক্যান ইউ টেল মি হাউ ইউ নো দ্যাট?
লম্বা মতন লোকটা হাসল। বলল- আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন যে আজকে এখানে আপনাকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।
আমি দৃঢ়তার সাথে মাথা নেড়ে বললাম- না আমি ভুলিনি।
-আপনার কাছে কি আমার কৈফিয়ত দিতে হবে কিভাবে আমি শিওর হলাম আপনিই খুনি?
-কৈফিয়ত চাচ্ছি না, জানতে চাচ্ছি। আপনার না জানাতে ইচ্ছা করলে জানাবেন না।
পুলিশ অফিসার কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল- যদিও ব্যাপারটা আমার জানানো উচিৎ না, তারপরও আমি আপনাকে জানাচ্ছি কিভাবে আমি শিওর হয়েছি আপনিই সেই খুনি। আমরা সামির সাহেবের বাসায় আপনার হাতের ছাপ পেয়েছি।
আমি কিছুটা চমকে উঠলাম। আমার হাতের ছাপ পাওয়ার কথা না।
আমি সব সময় গ্লাভস পড়ে ছিলাম। এমনকি খাওয়ার সময়ও গ্লাভস হাত থেকে খুলিনি। চামচ দিয়ে খেয়েছি। তাহলে আমার হাতের ছাপ এরা পেলো কিভাবে?
আমার অভিব্যক্তি দেখে পুলিশ অফিসার বলল- আপনি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন কি করে আমরা আপনার হাতের ছাপ ঐ বাসায় পেলাম, তাইনা? আপনি ঐ বাসায় যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণই সম্ভবত গ্লাভস ইউজ করেছেন। আপনি খাওয়া দাওয়া করেছেন, টিভি দেখেছেন- সব সময় গ্লাভস ইউজ করেছেন।
কিন্তু বাথরুমের বেসিনের কলে আপনার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে!
আমি মনে করার চেষ্টা করলাম কিভাবে বাথরুমের বেসিনের কলে আমার হাতের ছাপ পাওয়া যাবে। আমি খাওয়ার পর মুখ ধোয়ার জন্য বাথরুমে যাই। মুখ ধোয়ার জন্য আমি হাত থেকে গ্লাভস খুলি। তারপরই সম্ভবত মনের ভুলে আমি বেসিনের কলটা ছাড়ি।
পুলিশ অফিসার খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন- দেখুন, আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন আমি জানি যে খুনটা আপনি করেছেন।
আর কেন করেছেন তাও আন্দাজ করতে পারি।
আমি অবাক হলাম লোকটার কথা শুনে। বলে কি এই লোক! আমি কেন খুন করেছি তা ও কিভাবে জানবে?
-মবিন সাহেব, সামির চৌধুরী কি আজ থেকে ৬ বছর আগে আপনার পাশের ফ্ল্যাটে থাকত?
আমি ভীষণভাবে চমকে উঠলাম। আমার আর বুঝতে বাকি নেই এই পুলিশ ইন্সপেক্টর সবকিছু জেনে গেছে। কিভাবে জেনেছে তা জানিনা, তবে সব জেনেশুনেই সে আমার কাছে এসেছে।
তার কাছে কিছু লুকিয়ে রেখে আর লাভ নেই। আমি ধরা পরে গেছি!
আমি দূর্বলভাবে মাথা নাড়লাম। -হ্যাঁ।
-সামির চৌধুরী আপনার ছোট্ট মেয়ের ওপর জঘন্য অত্যাচার চালায়, রাইট?
এত বছর পরও আমার চোখ পানিতে ভরে উঠল। নিতুর ওপর চালানো সেই পাশবিক ঘটনার কথা আমি কখনই ভুলতে পারি না।
আমার মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা!
-তখন কি আপনার মেয়ে, আই মিন নিতুর বয়স দশ ছিল?
আমি মাথা নাড়লাম।
-নিতু কি এখন অ্যামেরিকায় ওর মামার কাছে থাকে?
-হ্যাঁ। ঐ ঘটনা নিতুর মনোজগতে বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছিল। অপ্রকৃতস্থর মত আচরণ করত নিতু। আমার ওয়াইফ নিতুর সেই অবস্থা সহ্য করতে না পেরে ঐ বছরই অসুস্থ হয়ে পরে।
অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন পরই ও মারা যায়। আমি পুলিশ কেস করি। কিন্তু সামির চৌধুরীর হাই লেভেলে কানেকশন থাকার কারণে তার কিছুই হয়নি। নিতুর উন্নত চিকিৎসার জন্য ওকে অ্যামেরিকায় ওর মামার কাছে পাঠিয়ে দেই আমি। এরপর থেকে ও সেখানেই থাকে।
আমিও আস্তে আস্তে আমার ব্যবসা গুটিয়ে অ্যামেরিকায় সেটল হয়ে গেছি। মাঝে মধ্যে কিছু কাজের জন্য দেশে আসতে হয়।
পুলিশ ইনস্পেক্টর মাথা নাড়লেন। -হুম।
আমি প্রশ্ন করলাম- কিন্তু আপনি এতসব জানলেন কি করে?
হাসলেন পুলিশ ইনস্পেক্টর।
-আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন এটা রিমান্ড। আমি আপনাকে প্রশ্ন করব। আপনি আমাকে নয়।
আমি চুপ করে রইলাম।
হাসতে হাসতে লম্বা মতন সেই পুলিশ অফিসার বললেন- তাও আপনার উত্তর দিচ্ছি।
আমাদের একটা সার্ভার আছে। আমরা সেটা প্রতিনিয়ত আপগ্রেড করছি। গত ১০ বছরে এদেশে যত পুলিশ কেস হয়েছে সব ঐ সার্ভারে আছে। আমি শুধু সার্চ অপশনে গিয়ে সামির চৌধুরীর নাম দিয়ে সার্চ করেছি ওনার নামে কোন কেস ফাইল হয়েছে কিনা দেখতে। তখনই আমি ব্যাপারটা জানতে পারি।
আমার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না।
তারপর সেই পুলিশ অফিসার উঠে এসে চেয়ার থেকে আমার হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে দিতে লাগলেন। আমি তার কাজকর্ম কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে এবার উনি আমার পায়ের বাঁধনও খুলে দিলেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন- আপনি এবার পালান!
আমি তার কথা শুনে হতভম্বের মত তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
বলে কি এই লোক! একজন খুনিকে পালাতে বলছেন উনি! আমার মাথা কাজ করছে না।
আবার আমাকে তাগাদা দিলেন উনি- কি হল, বসে আছেন কেন? পালান।
আমি বোকার মত প্রশ্ন করলাম- কোথায় পালাবো?
-আপনি অ্যামেরিকায় আপনার মেয়ের কাছে যাবেন না? আপনার প্লেন তো মিস হয়ে যাবে। এখন বাজে একটা। আপনার প্লেন ভোড় ছয়টায়।
আপনি জলদি এয়ারপোর্টে যান।
আমি তাও চুপচাপ বসে আছি। আমাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে না তো? আমি লোকটার কাজকর্মের আগামাথা কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছি না।
ডিবির অফিসার তার চেয়ারে বসে পড়লেন আবার। -শুনুন মবিন সাহেব, আপনাকে আমি পালাতে সাহায্য করছি কারণ আমি চাই না আপনার কিছু হোক।
আপনি যে কাজটা করেছেন তা করা উচিৎ ছিল রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র তার কাজটা করেনি বলে আপনি নিজেই কাজটা করেছেন। আমার নিজের ৮ বছর বয়সী একটা মেয়ে আছে। গত দুইদিন ধরে মেয়েটার জ্বর। আমি আর আমার ওয়াইফের গত দুই রাত নির্ঘুম কেটেছে মেয়ের জ্বরের কারণে।
একজন পিতা হিসেবে আমি আপনার ব্যথা বুঝতে পারি। আমি চাই না আপনার কিছু হোক। আমি চাই আপনি আপনার মেয়ের সাথে জীবনের বাকি দিনগুলো আনন্দে কাটান। আমি তাই রিমান্ডে একা এসেছি। আপনার জন্য একটা সিএনজি ঠিক করে রেখেছি।
এখান থেকে বের হয়ে বড় রাস্তায় উঠবেন। তারপর ডানদিকে কিছুদূর গেলে দেখবেন দুইটা গলি। দ্বিতীয় গলিটার মাথায় একটা সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে আপনার জন্য। সিএনজিতে আপনার জন্য একটা ছোট্ট ব্যাগ রাখা আছে। ঐ ব্যাগে আপনার পাসপোর্ট, টিকেট, মোবাইল, টাকা আর কিছু ডলার রাখা আছে।
এখন আপনি বলেন আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন যেন আমি আপনাকে নিরাপদে এখান থেকে বের করে দিতে পারি?
আমার দুই চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আমি চেয়ার থেকে উঠে ডিবি অফিসারের দিকে এগিয়ে গেলাম। ভদ্রলোকও উঠে দাঁড়ালেন। আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। বললাম- আপনার কিছু হবে না যদি আমি এখান থেকে ভেগে যাই?
উনি বললেন- ও আমি ম্যানেজ করতে পারব।
-আপনার নামটা এখনো জানা হল না। কি নাম আপনার?
-ইকবাল হাসান।
-আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা একটু দিবেন?
-০১৭১............। এবার শুনুন এখান থেকে কি করে বের হতে হবে। প্রথমে এই রুম থেকে বের হয়ে বামদিকে যাবেন।
তারপর...........................
***********
আমি যখন সিড়ি দিয়ে প্লেনে উঠছি, তখন ইকবাল হাসানের একটা টেক্সট ম্যাসেজ পেলাম। ম্যাসেজে লেখা- উইশ ইউ এ সেফ জার্নি। ইউ আর অ্যা গ্রেট ফাদার।
আমি পাল্টা ম্যাসেজ করলাম- ইউ আর এ গ্রেট ম্যান ঠু।
©Muhit Alam
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।