কি জানি খুঁজছি!..পাইতাছি না জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ঘন কাল মেঘে ঢাকা আকাশ। অন্য সময় হলে মন খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু আজকের কথা আলাদা।
আজ মনটা ভাল। actually অনেক ভাল। রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে কোনার টেবিলটাতে আমরা বসে আছি। জীবন এর সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলো সাধারণত একলাই কাটে। আর তাই সেটার ব্যতিক্রম হলে মন ভাল না হয়ে উপায় আছে??!
-এই,ওদিকে তাকিয়ে আছো কেনো?কি দেখো?
-বৃষ্টি দেখি।
আমি উত্তর করলাম। উফ্,আমি ও কি বোকা!চোখের সামনে এহেনও অপ্সরী রেখে কেউ বৃষ্টি দেখি বলে!ধুর...কিচ্ছু হচ্ছে না। সব গুবলেট পাকিয়ে যাচ্ছে!রিয়া কি ভাবছে কে জানে!এমনিতেই যা ভাব এই মেয়ের!লাস্ট ২বছর ধরে ঘুরছি এই মেয়ের পিছনে!আর তাই এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না-টেবিলের ওপারের ওই পরীটি সত্যি রিয়া তো!!?সত্যি বলতে কি-অসাধারন লাগছে আজ রিয়া কে!ঠিক যেন স্বপ্নের মতো। আর কপালের লাল টিপটি যেন সহস্র নক্ষত্রের দ্যুতি ছড়াচ্ছে!তাই ভাবনার ঝুলি দূরে সরিয়ে আমি বাস্তবে ফেরত এলাম।
-তুমি কি জানো,এই মুহূর্তে তোমাকে ঠিক ক্লিওপেট্রার মত লাগছে?
-তাই! রিয়া হাসল।
ঠোটের কোনের সেই হাসি আমার হৃদপিণ্ডটাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে গেলো।
-হুমম...ঠিক তাই।
-শুভ্র...তুমি পারোও। yup…আমি পারি। আমি এই মেয়ের জন্য অজস্র শব্দের মালা গাঁথতে পারি,জীবনভর এমনি করে তার চোখে তাকিয়ে থাকতে পারি,সব...সব পারি!!!
......................................................................................................
বাইরে বৃষ্টি কমে এসেছে।
আমরা বেরিয়ে পড়লাম।
টিপ-টপ বৃষ্টি,ছইঢাকা রিক্সা,পাশে বসা প্রিয়জন...আমার কল্পনাকেও হার মানতে হল। কিছু কিছু জিনিষ লাইফ-এ প্রথম বার হয়......আমি বাজি ধরে বলতে পারি,প্রথম বার girlfriend এর হাতে হাত রেখে রিক্সায় চড়া সেগুলোর মধ্যে টপ রেটিং এ থাকবে!!
রিয়া আমার হাত ধরে আছে। আর আমার Heart-beat ২০০ ছুই ছুই!!!মাথাটা ঘুরছে...আমি কি শক-এ চলে যাচ্ছি!...আমি আরও শক্ত করে রিয়ার হাতটা চেপে ধরলাম।
-এই,তুমি ঠিক আছো তো?
-হুম।
–আমি উত্তর করলাম।
-তোমার হাত কাপছে কেনো???ঠান্ডা লাগছে?-রিয়ার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ!
-নাহ...মোটেই না। –রিয়াকে আশ্বস্ত করার জন্য আমি দাত কেলিয়ে একটা হাসি দিলাম। কতটুকু কাজ হলো ঠিক বুঝলাম না!
...এরপর কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা। বৃষ্টির মধ্যে আমাদের রিক্সা পক্ষীরাজের স্পিডে ছুটছে!মাঝে মধ্যে রিক্সা-ওয়ালা মামা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাচ্ছে...ওনার দোষ নাই।
আমরা বাঙালি সিনেমা-পাগল জাতি। আর লাইভ সিনেমা দেখতে কার না ভাল লাগে!দেখতে দেখতে রিয়ার হোস্টেল-এর কাছাকাছি চলে আসছি। এবার আমিই নীরবতা ভাঙলাম...
-এই রিয়া,রাতে ওয়ার্ড-এ যাবা?
-নাহ...এই বৃষ্টির দিনে ওয়ার্ড-এ যেতে ভাল-লাগে না...
-দিন নয় তো...রাতে বলছি-আমার মুখে দুষ্টুমির হাসি
-অই হলো আর কি...
-তাহলে কাল সকালে ক্লাস-এ দেখা হচ্ছে...আমি বলতে বলতে রিয়ার হোস্টেল-এর সামনে চলে এসেছি আমরা। রিয়া চলে যাচ্ছে,আর আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি...স্তম্ভিত...ভালবাসার আবেগে আলোড়িত...!!!আচ্ছা...রিয়া কি এই পুরোটা সময় I love u বলেছে?ধুর...আমিও তো বলি নি। কিছু কথা সবসময় বলতে হয় না...বুঝে নিতে হয়!
......................................................................................................
হঠাৎ-ই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল!আমি যার পর নাই বিরক্ত।
মোবাইলে বিরক্তিকর অ্যালার্ম বাজছে। মাঝে মাঝে মনে হয় মোবাইলের অ্যালার্মগুলো ইচ্ছে করেই এতটা বিরক্তিকর বানানো হয়েছে;যাতে করে পাবলিক অফ করার জন্য হলেও ঘুম থেকে ওঠে!কোনোরকম হাতড়ে চশমাটা পরে উঠে বসলাম। কি সুন্দর স্বপ্নটাই না দেখছিলাম!রিয়ার সঙ্গে affair টা almost হয়েই যাচ্ছিলো!’শালার অ্যালার্ম’-জড় পদার্থ বলেই হয়তো মৃদু একটা গালি মুখ দিয়ে বের হয়ে এল!!!
বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে দেখি মুশুল-ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। no wonder, আজ সারাদিন আয়েশ করে ঘুমানো জেতো!আর স্বপ্নের কথা ভেবে মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে জাচ্ছে। ইশসস...এতটা বাস্তব কোনো স্বপ্ন হয় কিভাবে!!!যারা ডি-কাপ্রিও-র Inception দেখেছেন তারা আমার দুঃখ বুঝবেন।
আর যারা দেখেননি তাদের জন্য একটু explanation দেই-বিজ্ঞান বলে মানুষ স্বপ্ন দেখে REM sleep-এর সময়। আমাদের বাস্তবের ১ঘন্টা আর ঘুমের ৫মিনিট নাকি সমান!!!সেই থিওরি অনুযায়ি রিয়ার সাথে আমার ১০/১৫ মিনিটের সুমধুর(!) স্মৃতিটুকুই এতদিনের সাফল্য!!!এটুকুই বা কম কিসে!!!
রিয়ার সাথে আমার পরিচয় ঠিক ২ বছর। স্বপ্নের সাথে বাস্তবের এত মিল! (actually উল্টা!) রিয়াকে দেখার আগ পর্যন্ত আমার প্রেম-ট্রেম এইসব jokes লাগতো। কত বন্ধুদের যে এইসব ভাঙাগড়ার খেলা দেখেছি!তাই বলে যে আমি চুপচাপ বসেছিলাম-তা না। দুই-একবার মিসকল আর বার কয়েক ফেসবুকে friend request পাঠিয়ে reject খাওয়া...এর বেশি সাহস কখনই হয়নি!কিন্তু তাই বলে কাল রাতে রিয়াকে নিয়ে স্বপ্ন-পর্যন্ত দেখে ফেললাম!- ব্যাপারটা নিয়ে seriously ভাবতে হবে।
যাই হোক,একটু পরে আবার ক্লাস-এ যেতে হবে-ভাবতেই মনটা বিষিয়ে উঠলো।
কাধে বাগ...ছাতা মাথায় কলেজে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছি।
-‘এই শুভ্র...’ডাক শুনে পেছন ফিরে তাকালাম। নাহ...আজকের দিনটাতো অন্নেক lucky!!!-আপন মনে বলে উঠলাম...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।