মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতাকামী জনগণের উপর বর্বরতা চালানোয় জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত নামের সংগঠনটি পাক-সেনাদের সহায়ক বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। দলটির সদস্যরাই রাজাকার বাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, আল-মুজাহিদ বাহিনী ও শান্তি কমিটির মতো সশস্ত্র আধাসামরিক বাহিনী গঠন করে স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। বিশেষ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ছিল বীভৎস।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গত সোমবার জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী সক্রিয়ভাবে ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে বাংলাদেশে ভূমিকা পালন করে। রায়ে সরকারি চাকরিতে থাকা সকল স্বাধীনতাবিরোধীদের সরিয়ে দিতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে মত দেন ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াতের রাজনীতি ‘প্রতারণার’ উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়- এটা পরিহাসের বিষয় যে পাকিস্তান-ভারত বিভাজনের সময় তারা পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে, আর বাংলাদেশের জনগণ যখন স্বাধীনতা চাচ্ছে তখন তারা ‘মুসলিমদের স্বার্থে পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষায় ছিল সক্রিয়’। এখন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার নামে দেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। জামায়াত কখনো জনগণের চিন্তা-চেতনাকে আমলে নেয়নি।
তারা জনগণের পালস বুঝে না। এর কারণ হতে পারে তাদের মধ্যে দূরদর্শিতার অভাব। কাল্পনিক চিন্তায় মোহাবিষ্ট থাকার কারণে তাদের মধ্যে দূরদর্শিতা নেই।
রায়ে বলা হয়- সব দালিলিক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতের প্রায় সব সদস্য ও দলটির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করেছে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও দেখা যাচ্ছে যে, স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই জামায়াতের তরুণদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে যা একটি জাতির জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই সক্রিয় স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীরা মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান এখনো পরিবর্তন করেনি। এ ব্যাপারে তারা কোনো অনুশোচনা বা ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বলে জাতির কাছে কোনো প্রমাণ নেই।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার, সামাজিক দল, রাজনৈতিক দল ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ব্যক্তিকে বসানো উচিত নয়। আমরা মত দিচ্ছি যে, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এ ব্যবস্থা নিতে হবে সেই গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, যে কারণে লাখ লাখ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।