ডিং ডং! শব্দটা শুনেই এডিটিং বন্ধ করে লাইভ মেসেঞ্জারের উইন্ডোতে ফোকাস নিয়ে আসল পার্থ। অবশেষে তিনি এসেছেন! ঘন্টা খানেক আগে নক করেছে পার্থ। এতক্ষণে সময় হল বর্ষা আপুর! পার্থ লিখলঃ
-আপু! এতক্ষণে সময় হল তোমার!
-হ্যাঁরে! আর বলিসনা! খুবই ব্যস্ত ছিলাম!
-আপু শুনেছো? তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর দুর্ঘটনায় নিহত?
-শুনলাম! খুবই খারাপ লাগল!
-এই দুর্ঘটনাগুলোর শেষ যে কোথায়? প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে!
-সবাই ত আর বিখ্যাত নয়! তাই সব দুর্ঘটনা খবরে সেই ভাবে আসে না!
-কি করা উচিত তোমার মনে হয় আপু?
-আমার মনে হওয়াতে কিছু এসে যায়?
-তা যায়না বটে! অবশ্য আমি যদি মন্ত্রী হতাম, তাহলে সবচেয়ে বেশী এসে যেতো
- ভালই বলেছিস! তবে তুই মন্ত্রী হলে ইনশা-আল্লাহ্ এত দুর্ঘটনা হত না। আর হলে তুই তৎক্ষণাত পদত্যাগ করতিস!
-বলা যায় না। মন্ত্রী হলে আমার মাথা ঠিক থাকত কীনা আল্লাহ্ই জানেন! কোটি কোটি টাকার এক্সপ্রেস ওয়ে, ফ্লাই ওভার করাতেই হয়ত মন দিতাম!
-আর কাজ যেহেতু শেষ হয়নি, সেই অজুহাতে বাধ্য হয়ে পদত্যাগও করতে পারতিস না, তাই না?
-ঠিক বলেছ! আসলে আমাদের মন্ত্রী মিনিস্টার দের অভিধানে পদত্যাগ কথাটা নাই বোধহয়।
-ঠিক! পদত্যাগ কথাটা শুধু বিরোধী দলের অভিধানেই থাকে!ক্ষমতায় গেলে শব্দটা হারিয়ে যায়!
-আছছা আপু! আমার কি মনে হয় জান?
-কী?
-আমাদের এমপি আর মন্ত্রী মিনিস্টারদের যোগ্যতার মধ্যে কয়েকটা জিনিষ থাকা দরকার।
-যেমন?
-যেমন, তার আচার আচরণ, চলাফেরা, পারিবারিক ইত্যাদী বিষয়ে কতগুলো restriction থাকতে হবে।
-বুঝলাম না। বাংলাতে বল
-এই ধর, সে কোনো এসকর্ট নিয়ে বা নিরাপত্তা নিয়ে চলতে পারবে না।
-কেন?
-যাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা সে নিজে বুঝতে পারে।
প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম এর দুঃসহ কষ্ট সে বুঝতে পারে;
-ভালই বলেছিস! আর কিছু?
-যেমন, তাঁদের ছেলেমেয়ে কেউ বিদেশে পড়তে পারবে না, অবশ্যই দেশে পড়তে হবে!
-এ্যাঁ!এইটা আবার কেন? মন্ত্রীদের পুত্র/পোষ্যরা আবার কি দোষ করল?
-আসলে কোনো দোষ নাই। কিন্তু এইটা হবে মন্ত্রীত্বের Acid Test !
-কী রকম?
-তাঁরা আসলেই আত্মত্যাগে ব্রতী কিনা! তাদের পরিবার/পুত্র/পোষ্য, তাঁরা সকলেই আত্মত্যাগে সচেষ্ট কিনা! তাঁরা আসলেই বাবার মন্ত্রীত্বের সুযোগে অবৈধ কিছু সুযোগ পেলে করবে কিনা---
-একটু বেশী হয়ে গেল না?
-হ্যাঁ হল! কিন্তু এই নিয়মটা থাকলে, তুমি দেখো, তাঁরাই রাজনীতিতে আসবেন যারা নির্লোভ, ত্যাগী। যাদের পরিবারেও সেই spirit টাই প্রতিষ্ঠিত!
-হুঁম!
-খেয়াল করে দেখ, বেশির ভাগ এমপি/মন্ত্রী/মিনিস্টার দের ছেলেরা দেশের বাইরে পড়ে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নাই।
-হয়ত তুই ঠিকই বলেছিস।
-হয়ত কেন? তুমি দেখ, নোংরা ছাত্ররাজনীতির প্রভাবে কত সমস্যা আমাদের শিক্ষাঙ্গনে! তাও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? এক পার্টির ছাত্ররা তারই সহপাঠীকে ছাদ থেকে লাফ দিতে বাধ্য করছে; জুনিয়র সিনিয়র কে মারছে, আরও কত কী!
-কোথায় হল এইগুলা?
-বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানেওতো এগুলো ঘটতে শুনলাম! তুমি শুনোনি?
-নিশ্চই শুনেছি! ভুলে গেছি হয়ত!
-এই একটা ভাল জিনিস করেছো। ভুলে গেছো। ভুলে যাওয়াই এখন সবচেয়ে ভাল
-খোঁচা তো ভালই দিলি!
-নারে আপু। খোঁচা না। এটা ছাড়া এখন উপায় নাই।
এই দেখনা তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর মারা গেল। আমরা আর কয়দিন এটা মনে রাখবো? ৪১ জন ছাত্রের দুর্ঘটনার কথা আমরা ভুলে গেছি কিনা তুমি বল?
-ঠিক। ঠিক বলেছিস। আচ্ছা একটা কথা বলতো? তোর এই এমপি/মিনিস্টারদের যোগ্যতার মাপকাঠিটা থাকবে কোথায়? সংবিধানে?
- সম্ভবত সেটাই উচিৎ। সংবিধানে থাকবে।
এর জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনীর ব্যাবস্থা করতে হবে।
- হুঁ। কিন্তু সংশোধনীতো আবার বাতিল হতে পারে।
- তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা, এই ব্যাপারটি আমি ঠিক বুঝি না।
আমার ধারনা ছিল, সংবিধান সংশোধনী শুধুই এমপিদের এখতিয়ার। কিন্তু আদালত এটা বাতিল করেন কেমন করে?
-আমিও ঠিক জানি না। কিন্তু মনে হয় কোনো সংশোধনী যদি মূল নীতি এর বিপক্ষে যায় তাহলে বিজ্ঞ আদালত সেটা অবৈধ ঘোষনা করতে পারেন।
-তাহলে মূলনীতি গুলোকি কখনোই সংশোধন করা যাবে না?
-জানি না, অনেক কিছুই আমরা জানি না, বুঝি না।
- হুঁ।
আচ্ছা জনগনের সবার যে সমান অধিকার এইটা তো মূলনীতিগুলোর একটা হওয়া উচিৎ তাই না?
-অবশ্যই।
-আচ্ছা! তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একজন খুনী আসামীকে ক্ষমা করার অধিকার দেয়া হয়েছে সেইটা কি যাকে খুন করা হল তার ও তার পরিবারের ন্যায়বিচার পাবার অধিকার এর পরিপন্থি হল না?
-সর্বনাশ! তুই তো মহাপন্ডিত হয়ে গেছিস!
-না, তুমি একটু চিন্তা কর! একজন খুনীকে রাষ্ট্রপতি প্রানভিক্ষা দিতে পারেন...
-হ্যাঁ, প্রানভিক্ষা দিবেন, কিন্তু তার মানে তো যাবজ্জীবন কারাদন্ড, তাই না?
-LoL ! তুমিতো বোকার স্বর্গে রয়েছো! প্রানভিক্ষা মানে বেকসুর খালাস!
-কী বলিস? এটা তো অবিশ্বাস্য! আমি তো ভেবেছি অন্যরকম।
-তুমি ওইটাই ভাবতে থাকো। আচ্ছা আপু এখন উঠতে হচ্ছে। আসরের আজান দিলো…
-আচ্ছা, তাইলে পরে কথা হবে।
পার্থ sign out করে উঠে গেলো চেয়ার থেকে। বর্ষা আরও কতক্ষন বসে থাকলো কম্পিউটার এর সামনে। কথোপকথনের শেষ অংশটা তাকে খুব ভাবাচ্ছে। সংবিধানের অনেক কিছু নিয়েই তো নিয়মিত আলাপ চলছে। সকলের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারটা এই আঙ্গিকে কেউ কেন আলাপ করছে না! বিভিন্ন বিষয়ে মাননীয় বিজ্ঞ বিচারপতিগণ রুলজারী করেন।
এই ব্যাপারে কিছু করা কি উচিৎ নয়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।