আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সফল মন্ত্রি আর কোথাকার কোন মানিক

When you become detached mentally from yourself and concentrate on helping other people with their difficulties, you will be able to cope with your own more effectively. Somehow, the act of self-giving is a personal power-releasing factor. ৯ বছরের মানিক একটু হতভম্ব হয়ে তার চারপাশ দেখছে। সাধারনত ঈদ এর সময় বাড়ি এলে মা চেয়ারম্যান বাড়ির কাজ শেষ করে এসে তার পাশে বসে। এই ১ মাসে কত টাকা কামাই হলো, ঢাকা শহরটায় নতুন কি ঘটলো, এক মাস সে কেমন ছিলও এসব জানার জন্য কোলের মধ্যে বসিয়ে বার বার প্রশ্ন করে। কিন্তু মা এবার এমন কেন করছে? মার কোলে মানিক শুয়ে আছে ঠিকই। কিন্তু মা এমন ভাবে কাঁদছে যে মনে হচ্ছে কেউ মারা গেছে।

মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ দেখলো, নাহ! এটা তো তার ই মা, অইতো কালামের আম্মা বসে আছে, রইসুদ্দিন ও তো দেখি এখানে। মুখ ভার করে মাথা নিচু করে বসে আছে। এদের হয়েছে টা কি!! শরীর ঝাকিয়ে উঠতে চায় মানিক। কি আজব, উঠতে পারছে না! হঠাৎ বুঝতে পারলো সবাই কেন কাঁদছে, কেন সে উঠতে পারছে না। রাজ্যের আতঙ্ক এখন মানিকের বুকে এসে ভর করছে।

খিমচে মাকে ধরতে চাচ্ছে তাও পারছে না। প্রত্যেক বছর ঈদের আগে ১ মাস মা তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। এই টুকু ছেলেকে একা ঢাকা পাঠানো যায় কিনা সেটা নিয়ে হয়তো অনেক বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু পেটে টান পরলে সব ই সম্ভব। এক মাস মানিক টুক টাক কাজ করে, কখনও সিগ্নালে গাড়ি মুছে, ২৭ রোজায় হাইকোর্টের মাজারে ভিক্ষা করে, কখনও নিউমার্কেটের সামনে পাতিল ধরার ন্যাকড়াও বিক্রি করে।

এক মাস এইসব কাজ করে বাড়তি কিছু টাকা পাওয়া যায়। এই টাকাটা মানিক আর তার মার জন্য খুব দরকারি। যেসময় কাজ পাওয়া যায় না, তখন এই টাকা ভাঙ্গিয়ে তাদেরকে চলতে হয়। মাকে ছেড়ে থাকতে মানিকের একটুও ভালো লাগে না। রাস্তায় মানুষ জনের দূর দূর ছে ছে আরও ভালো লাগে না।

কিন্তু টাকাগুলো পেলে মায়ের কিছু দিনের অশান্তি দূর হয় ভেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মানিক ঢাকায় চলে আসে। ও কিন্তু একেবারে বাজে ছেলে না। বছরের বাকি সময় স্কুলে যায়। গ্রামের এনজিওর স্কুলে গত তিন বছর ধরে ফার্স্ট হয়। সে যখন বড় হয়ে অফিসে যাবে সে জানে তখন তার আর তার মায়ের কনো দুঃখ থাকবে না।

ওরা অনেক ভালো থাকবে। সে যাই হোক। বরাবরের মত এবার ও ২৯ রোজার রাতে হাচড়ে পাচড়ে বাসের ছাদে উঠে যায় মানিক। ৩০ রোজা পর্যন্ত শহরে থাকলে অনেক বেশি রোজগার হতো, কিন্তু ঈদের আগের রাতে মায়ের গলা ধরে না ঘুমালে তার হবে না। এবার কয়েক দিন ধরে শহরে শুনছিল রাস্তা ঘা্ট নাকি ভালো নেই।

কে জানে হবে হয়তো। রাস্তা ঘাটের আবার ভালো মন্দ কি! বাড়ি যেতে পারলেই তার হলো। পিচ্চি মানুষ দেখে বাসের কন্ট্রাক্টারকে কোন টাকা পয়সাও এবার তার দিতে হয় নি। বাসের উপরে মাল রাখার জায়গায় পায়ের উপর পা দিয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখেতে মার কথা ভাবছিল আমাদের মানিক। একটু বোধহয় ঘুম ঘুম ও পাচ্ছিল।

কিন্তু ঘুমালে হবে না, পরে যেতে পারে। একটা তো মোটে রাত। কালকে গিয়ে মায়ের বুকে ঘুম দেওয়া যাবে। চোখ দুটো বড় বড় করে আবার আকাশ দেখে মানিক। ধাআআআআআআআআআআআআম.................................আমাদের মানিক ছাদ থেকে পরে যায় কোন একটা নদীতে।

নদীর উপরের কাল্ভারটটা ভেঙ্গে পুরো বাস পানিতে ডুবে যাচ্ছে। আমাদের মানিক সাতার জানেনা। মাকে কত্ত দিন বলেছিল সাতার সেখানোর কথা কিন্তু মা পানি ভয় পায় বলে মানিক্কেও পানিতে নামতে দিত না। পানিতে হাবুডুবু খেতে থাকে মানিক। এক সময় ছোট্ট ছোট্ট হাত পায়ের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।

আর ঘণ্টা খানেক পর, মানিকের রোদ জলা শরিরটা পানির ভারে ফুলে উপরে ভেসে আসে। বাসটা মানিকদের গ্রামের স্ট্যান্ডের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলো। গজ খানেক গেলেই তাদের গ্রামের বাস স্ট্যান্ডে নেমে পড়তো মানিক। তার আগেই সে চলে গেলো, মায়ের কোল থেকে অনেক দূরে। না ফেরার দেশে।

মানিকের চলে যাওয়ার পর, সবাই তাকে নিয়ে খুব কথা বলতে লাগলো। 'সফলতম' মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সারা দেশ মুখর হয়ে গেলো। মন্ত্রি তার জবাবে কি বললেন জানেন?? মুখের জমে থাকা খানিকটা থুতু গিলে বললেন,"যাত্রীদের সুবিধার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আমি। আমি তো বলেছিলাম যাত্রীদের পৌঁছে দিতে পারলেই আমি সফল। মানিক তো তার ঘরে ফিরে এসেছে।

হ্যাঁ, বেচে ফেরে নি সেজন্য দুঃখিত। কিন্তু লাশটা তো ঘরে না ও আসতে পারত' । মানিকের মায়ের কান পর্যন্ত এসব কথা পৌঁছে না। মানিকের মা মানিকের কাপড়গুলো বুকে চেপে খালি ভাবে কি হতো ছেলেটাকে না পাঠালে। মানিকটা কি সুন্দর তার কোলে ঘুমিয়ে আছে, আহারে! থাক আরেকটু ঘুমাক।

মানিক বুঝলো মা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। কিছুটা শান্তি লাগলো তার মনে। হঠাত্ত ইদ্রিস চাচা এসে মাকে বলল, সময় হয়ে গেসে ভাবি। মা হতভম্বের মত তাকিয়ে রইলো চাচার দিকে, মানিক চিতকার করতে গিয়েও করতে পারছে না। কাউকে বলতে পারছে না, সে যাবে না।

মাকে একা রেখে কত্থাউ যাবে না সে। (সম্পূর্ণ ঘটনা, চরিত্র এবং তাদের সংলাপ কাল্পনিক) যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, যাত্রীদের পৌঁছে দিতে পারলেই নিজেকে সফল মনে করবেন তিনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.