আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিরামিড - শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ

ভরা পূর্ণিমা! ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশে চোখ রাখলে জ্বলজ্বলে তারার বাতি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। চাঁদ তার ধার করা আলোর ছটা ছড়িয়ে তৃপ্তি পায়। কারো কারো ইচ্ছা হতে পারে তারাগুলো গুনে দেখার। কিন্তু কই! এক, দুই তিন …. খেই হারিয়ে ফেলা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। ইচ্ছা হয় ইস্ ছাদটা যদি আরো অনেক উচু হতো তাহলে হয়তো গুণে ফেলা যেতো সব।

লক্ষ্য করা যেতো নক্ষত্ররাজির গতিবিধি। এরকম সুপ্ত ইচ্ছা কেবল ছোটদেরই হয় তা না বড়দের মনেও এ আবেগ ভর করতে পারে। হ্যা, প্রাচীন মিশরীয় ফারাও রাজাদের মধ্য থেকে একজনের ইচ্ছা হয়েছিলো নক্ষত্রমন্তলীর গতিবিধি লক্ষ্য করার। শুধু তা-ই নয়,বিশ্বের স্রস্টাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়ার জন্য গোয়ার্তুমী করে ফারাও রাজা বানিয়ে ফেলেøন পর্বতের মতো উঁচু এক স্থাপত্য। যা তারাদের সাথেই কেবল কিছু দূরত্ব কমায়নি বরং অনেকের ধারণা এ স্থাপত্যটি চাঁদের বুক থেকেও দেখা যাওয়া সম্ভব।

এ স্থাপত্যটিই হলো পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি ‘দ্যা গ্রেট পিরামিড গীজা’। মিশরের পিরামিডের সংখ্যা ১০০ টিরও বেশি, এর মাঝে সর্বোচ্চ এবং শ্রেষ্ঠ পিরামিড হলো গীজা। মিশরের গীজা ব-দ্বীপে অবস্থিত পিরামিডগুলোর মাঝে এটি সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক পরিচিত। তাই এ পীরামিডকেই বলা হয় গীজা। গীজাতে উলেøখযোগ্য আরো তিনটি পিরামিড রয়েছে, এগুলো হলো গ্রেট পিরামিড অব খেফরান, গ্রেট পিরামিড অব মেনকিউর এবং ফিনিক্স।

ফিনিক্সের আকৃতি এক বিশাল মানবপশুর মতো। সিংহের দেহ ও মানুষের চেহারার আকৃতিতে এটি নির্মীত। পিরামিড সমাধিসৌধ হিসেবেই পরিচিত। সত্যিকার অর্থেই তা। এ সৌধগুলোই হলো স্লাভ সৈন্যদের সৌর্য-বীর্যের প্রতীক।

প্রাচীন মিশরীয় ফারাও রাজারা মারা গেলে তাদের জন্য গ্রেট পিরামিড গীজা’র আদলে পিরামিড নির্মাণ করা হতো এবং এর ভেতর সংরক্ষণ করে রাখতো তাদের লাশ। প্রাচীন মিশরীয়দের ধারণা ছিলো পিরামিডের ভেতরই রাজার পরবর্তী জীবণ অতিবাহিত হবে। আর পরবর্তী জীবন সুখে শান্তিতে অতিবাহিত করার জন্য এগুলোর ভেতর রাখা হতো রত্নাগার। পীরামিডের ভেতর লাশ রেখে আসার সময় অনেক ধন-রত্নও দিয়ে আসতো রত্নাগারে। নিয়মিত সেখানে খাবার দেয়া হতো লাশের জন্য।

ফরাওদের স্মৃতিস্তম্ভগুলো পৃথিবীর উপর এমন সমাধিস্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো যেগুলোতে খাবার দেয়া এবং ভক্তি করা পূণ্য কাজ বলে মনে করা হতো। পিরামিড বলতে পৃথিবীব্যাপী যেটি পরিচিত সেটি হলো, মিশরের গীজায় অবস্থিত সবচেয়ে উঁচু পিরামিড গীজা। অন্যগুলোর মতো গীজার ভেতর কোন ফারাও রাজার মৃতদেহ নেই। আর স্বাভাবিকভাবেই এ কারণে কোন রত্নাগারও নেই। কিন্তু অনেক চোরদের ধারণা ছিলো গীজার ভেতরও রয়েছে অঢেল রত্ন ভান্ডার।

এ কারণে বিভিন্ন সময় কাঙ্খিত সে রত্নগুলোকে সরিয়ে ফেলার জন্য গীজার ভেতর ঢোকতো তারা। কিন্তু গীজার ভেতরকার সুড়ঙ্গগুলোর বিন্যাস ও গতিপথ ছিলো খুবই জটিল। ফলে চোরেরা পথ হারিয়ে ফেলতো, গীজাকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় নেয়ার আগে বহু চোর এবং কৌতুহলীদেরকে লাশ হতে হয়েছে এর ভেতর। ‘পিরামিড’ এর শাব্দিক অর্থ খুঁজতে গেলে দেখা যায় ইংরেজী পিরামিড শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ পীরামিস থেকে। মিশরীয়রা এক্ষেত্রে ‘মের’ শব্দটি ব্যবহার করতো।

পিরামিস বা মের শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো আরোহণের স্থান। পিরামিড চারকোনো ভ‚মির উপর স্থাপিত বিশাল আকৃতির স্থাপনা। এটি পাহাড়ের মতো আরোহণযোগ্য বলে হয়তো একে আরোহণের স্থান বলা হতো। প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিডকে বেহেস্তের পথ বলে মনে করতো। আর বেহেস্তের পথকে আরোহণের স্থান বা পীরামিড বলাটাই স্বাভাবিক।

কে নির্মাণ করেছিলেন গীজা সব মহলেই একথা স্বীকৃত যে ফারাও রাজাদের মাঝে কেউ গীজা নির্মাণ করেছিলেন। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত অনেক গবেষণা হয়েছে পিরামিড নিয়ে। বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থেও এর কথা রয়েছে। পবিত্র কোরআন এবং বাইবেলেও পিরামিডের ইঙ্গিত রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ফারাও রাজাদের মাঝে কে এই পিরামিড নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন এবং কে-ইবা এর স্থপতি।

ধারণা করা হয় এ সৌধটি ৪,৬০০ বছরেরও আগে নির্মীত। ফারাও রাজাদের সংখ্যা হিসেব করলে ১৭০ জন বা এর কাছাকাছি কোন সংখ্যা হবে। বিভিন্ন মুসলিম চিন্তাবিদগণ কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী সাল গণনা করে ধারণা করছেন ফারাও রাজা খুফু-ই ছিলেন কোরআনে বর্ণিত সেই ফিরআউন এবং খুফুর সভাসদদের মাঝে খুব কাছের লোক এবং তার চাচাত ভাই হামান ছিলেন গ্রেট পিরামিড গীজা’র প্রকৌশলী। আবার আরেকটি ধারণা রয়েছে যে হামান ছিলেন খুফু’র প্রধানমন্ত্রীও। নির্মাণশৈলী ১৩.৬ একর জমির উপর ভীত নির্মিত হয়েছে ‘দ্যা গ্রেট পিরামিড গীজা’র।

এর প্রতিটি দিক বর্তমানে ৫ একর জমি দখল করে আছে, ৭৫৬ ফুট প্রশস্ত এবং ৪৫৭ ফুট উঁচু। এর সমগ্র অবয়ব কম্পাসের পয়েন্ট দিয়ে ওরিয়েন্টেড। ১৯ শতকের পূর্বে এটিই ছিলো পৃথিবীর বৃহত্তম স্থাপত্য। ধারণা করা হয় গীজা’র বয়স ৪,৬০০ বছরেরও বেশি। গ্রীক ভ্রমণকারী হীরুডাটাস ক্রীস্টপূর্ব ৪৫০-এ মিশর ভ্রমণ করে পিরামিড সম্বন্ধে লিখেন, পিরামিড তৈরি করতে এক লক্ষ স্লাভ সৈন্যকে ২০ বছর কাজ করতে হয়েছিলো।

অনেকে আবার মনে করছেন, পিরামিড নির্মাণকারী শ্রমিকরা স্লাভ বা বিদেশী ছিলোন্ াএরা মিশরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলো। এদের মাঝে অনেকেই ফারাও রাজাদের স্থায়ী কর্মচারী ছিলেন, যাদের একমাত্র কাজ ছিলো পিরামিড নির্মাণ। আর অন্য অনেকেই পিরামিড নির্মাণের কাজে খন্ডকালীন সময় দিতো। গ্রামের বাসিন্দা পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি ছিলো অনেক মহিলাও। ১৬৩৮ সালে ইংরেজ গনিতবিদ জন গ্রেভস পিরামিড পরিদর্শন করে দেয়ালের ভেতর একটি সরু গলিপথ আবিষ্কার করেন যা ৮ ফুট প্রশস্ত।

এটি গ্রান্ড গ্যলারির সাথে সংযুক্ত। গ্যালারির উপরের দিকে অর্থাৎ শেষ অংশ এবং ্িনচের প্রবেশমুখটি ছিলো কঠিনভাবেব সীল করা। পীরামিডের অভ্যন্তরীন গুরুত্বপূর্ণ ফাঁকা স্থান হলো কিংস চ্যাম্বার। উত্তর দিক থেকে কিংস চ্যাম্বারে প্রবেশ করার জন্য অনেকগুলো করিডোর ও গ্যালারি রয়েছে। প্রকৌশলীদের ধারণা এই সরু পথগুলো ফারাও রাজারা সমাধিসৌধ থেকে বেরুনোর জন্য ব্যবহার করতো।

অনেকে মনে করেন গীজা নির্মাণ করা হয়েছিলো কেবল জ্যুতিষ্কমন্ডলী পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে। রিচার্ড প্রক্টরের মতে, সরু গলিপথের উপর দিক থেকে তারাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হতো। তাছাড়া উপরের গ্রান্ড গ্যালারি নির্মাণ করা হয়েছিলো এক-ই উদ্দেশ্যে। পিরামিড পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে একটি উঁচু স্তম্ভ। এটি পৃথিবীর পূর্ব পশ্চিম অক্ষে সমান্তরালভাবে আছে।

গ্রেট পিরামিড গীজা ২,৩০০,০০০ পাথরের বøক দিয়ে ঢাকা রয়েছে। যেগুলোর প্রতিটির ওজন ২.৫ টন। এ পর্যন্ত এর উপর যত গবেষণা হয়েছে এর মাঝে ১৯২৫ সালে সঠিক একটি গবেষণায় পীরামিডের বিভিন্ন দিকের যে পরিমাপ উঠে এসেছে, সেগুলো হলো দক্ষিণ দিক = ২৩০.৪৫৪ মিটার (+৬মি.মি) উত্তর দিক = ২৩০.২৫১ মিটার (+১০ মি.মি) পশ্চিম দিক = ২৩০.৩৫৭ মিটার পূর্ব দিক = ২৩০.৩৯১ মিটার চার দিক মিলিয়ে এর আয়তন ৯২১.৪৫৩ মিটার ৩০২৩.১৪ ফুট। পীরামিড যখন তৈরি হয়েছিলো তখন এর উচ্চতা ছিলো ৪৮০.৯৪ ফুট (১৪৬.৫৯ মিটার)। বর্তমানে সেটি আগের অবস্থানে নেই।

এখন এর উচ্চতা ৯.৫ মিটার (৩১ ফুট) কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ ফুট (১৩৭.৫ মিটার) এ। ধারণা করা হয় এর উপরের অংশটি চুরি হয়ে গেছে। কারো মতে চূড়ার পাথর ছাড়াও আরো কিছু পাথর চুরি হয়েছে, আবার অনেকে মনে করছেন, বাকী সব এখন পর্যন্ত অক্ষত অর্থাৎ পূর্বের অবস্থায় রয়েছে। এত বছর পরও যে স্থাপত্যশৈলীটি এখনো নিজস্ব অবস্থানেই টিকে রয়েছে, তার উপাদান নিয়ে কৌতুহল জাগাটাই স্বাভাবিক। কি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো এটি? পবিত্র কোরান, বাইবেল এবং বিভিন্ন গবেষকদেরকে সূত্র হিসেবে ধরে তার সমন্বয় করলে এ সিন্ধান্তে আসা যায় যে পীরামিড তৈরির প্রাথমিক উপাদান হলো কাঁদা মাটি।

ফারাও রাজা খুফুর জন্য পিরামিড নির্মাণ করতে গিয়ে নীল নদের পানি এবং নীলের ব-দ্বীপ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করেন হামান। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এতো টেকসই স্থাপনা তৈরি করতে কেবল মাটি যথেস্ট নয়। ধর্মীয় গ্রন্থ এবং শিল্পীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি থেকে বুঝা যায় মাটিকে শুকিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে ইটের মত করে এর প্রাথমিক অবয়ব দাঁড় করানো হয়। এরপর চুনাপাথর দিয়ে এর উপর একটি নান্দনিক খোল তৈরি করা হয়। ১০০ ইঞ্চি পুর্ োএ খোলটিই প্রকৃতির বৈরী উপাদান থেকে রক্ষা করে পিরামিডকে।

মাঝে এবং সীমান্তে পিরামিডকে অবস্থানগতভাবে বলা হয় ভ‚মির মাঝে এবং সীমান্তের উপাসনাবেদী। প্রশ্ন থেকে যায় একই সাথে মাঝে এবং সীমান্তে এর অবস্থান হয় কিভাবে? গ্রেট পিরামিডের অবস্থান মিশরের গীজায়। এ কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে গীজা। আরবী ‘গীজা’ শব্দের অর্থ ‘সীমান্ত’। নীল নদের সৃস্ট ব-দ্বীপে এটির অবস্থান।

এটি উচ্চতম এবং নিম্নতম মিশরের সীমান্ত। এ কারণে মানুষের তৈরি অন্য যে কোন স্থাপত্যের চেয়ে অবস্থানগতভাবে পীরামিড গুরুত্বপূর্ণ। পিরামিডের অবস্থান যে ব-দ্বীপে সেই ব-দ্বীপটির অবস্থান আবার গাণিতিকভাবে মিশরের মাঝখানে। তাই গ্রেট পিরামিড গীজাকে অবস্থানগতভাবে বলা হয় মাঝে এবং সীমান্তে। পিরামিড এবং বাইবেল বর্তমানে খ্রীস্টানদের অনেকেই তাদের বিশ্বাসকে পুক্ত করতে ধর্মীয় নিদর্শন খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

যীশু খ্রীস্টের অস্পষ্ট ছবি এবং ঈশ্বরের বার্তা বাহক এঞ্জেলার নিদর্শনেই তারা সন্তুষ্ট নন। স্বাভাবিকভাবেই কোন একটি সূত্র পেলে তাকে ঘিরে অনেক কল্পনা তৈরি করা মানুষের বৈশিষ্ট্য। যদিও বাইবেল এসব বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। তবে খ্রীস্টানদের নিদর্শন প্রাপ্তির আকাঙ্খা বেশ ভালোভাবেই মিটিয়েছে গ্রেট পিরামিড গীজা। বাইবেলে এ সম্বন্ধে যেসব ভাষ্য রয়েছে সেগুলো খুব নাটকিয়।

খ্রীস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী যীশুকে পিরামিডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের পাথরের সাথে তুলনা করা হয়। পিরামিডের সবার উপরের পাথরের অনুরূপ অন্য পাথরগুলো। স্বাভাবিকভাবেই এ পাথরটি এর ভীত। পিরামিডের পুরো অবয়ব দেখতে উপরের পাথরটির মতো। ঈশ্বর জগতকে স্বার্থক করেছেন যীশুর মাধ্যমে।

অপরদিকে পিরামিডের শৃঙ্গের পাথরটি গৌরবময়। জগতের জন্য গৌরবময় যীশু আর পীরামিডের জন্য শৃঙ্গ পাথর। সে কারণেই এ শৃঙ্গ পাথরকে যীশুর সাথে তুলনা করা হয। এটি কেবল খ্রীস্টের জন্য যথার্থ প্রতীক-ই নয় বরং সম¯Í নবী ও ধর্মপ্রচারকদের প্রতীক। ইসায়ী ২৮:১৬ তে খ্রীস্টকে ‘মূল্যবান শৃঙ্গের পাথর’ এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

জাকারিয়া ৪:৭ এ বলা হয়েছে “ সে শৃঙ্গের পাথরের উপর অবস্থান করবে …..”। যীশু খ্রীস্ট গীজা’র শৃঙ্গের পাথর যখন ত্যাগ করেছেন, তখন থেকে পাথরটিও তার স্থান ত্যাগ করেছে, এরকম বিশ্বাসই খ্রীস্টানদের। এ বিশ্বাসকে খ্রীস্টানরা সত্য বলে বিশ্বাস করেন, কারণ গ্রেট পীরামিডের শৃঙ্গ পাথর বর্তমানে এর জায়গায় নেই এবং এটির সন্ধানও পাওয়া যায়নি। “আমি তোমাকে বলছি, যদি তারা (জনগণ) তাদের শান্তি ভঙ্গ করে, তৎক্ষনাৎ অবশ্যই পাথরগুলো প্রতিবাদী হবে (লোক: ১৯:৪০)। ইসায়ী ১৯ এর বর্ণনা অনুযায়ী গ্রেপ পীরামিড সদা প্রভুর প্রমাণ হিসেবে বিস্ময়কর একটি পাথর।

পিরামিড এবং পবিত্র কোরআন পিরামিড সম্বন্ধে পবিত্র কোরআনে সরাসরি কোন ভাষ্য নেই। কিন্তু এমন আয়াত রয়েছে, যেখানে ফিরআউন তার সভাসদদেরকে উচু একটি ইমারত নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। “আর ফিরআউন বললো: ‘হে সভাসদবৃন্দ! আমি তো নিজেকে ছাড়া তোমাদের আর কোন রবকে জানিনা। হে হামান! আমার জন্য ইট তৈরি করে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করে দাওতো! সম্ভবত আমি এতে আরোহণ করে মূসার রবকে দেখতে পাবো, আমি তো তাকে মিথ্যা মনে করি। ” (সুরা আল কাসাস-৩৮) এ ভাষ্যমতে বুঝা যায়, ফিরআউন নিজেকে ছাড়া আর কোন খোদার অস্তিত্ত¡ স্বীকার করতে চাননি।

তাই মুসা (আ) এর খোদার অস্তিত্ত¡ নেই ঘোষণা করে মুসা (আ) কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চাইছিলেন। আর এ কারণেই হামানকে এমন একটি সূউচ্চ ইমারত তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে আরোহণ করে মুসার (আ) খোদাকে দেখার চেস্টা করা যায়। এ ভাষ্যমতে বুঝা যায় যে, হামান ছিলেন ফিরআউনের প্রধানমন্ত্রী বা আরো কাছের কেউ এবং এ হামানই ছিলেন তার প্রধান প্রকৌশলী। আর হামান পোড়ানো মাটি দিয়ে তেরি ইট বসিয়ে নির্মাণ করেছিলেন পিরামিড। এর উপরে দিয়েছিলেন পাথরের আবরণ।

কোন ঐতিহাসিকদের মতে ফিরআউনই প্রথম ইট ও পাথরের ব্যবহার করেছিলেন। পবিত্র কোরানে রয়েছে “ফিরআউন বললো: ‘হে হামান আমার জন্য একটি সুউচ্চ ইমারত বানাও, যেন আমি (উর্ধ্বলোকের) পথসমূহ পর্যন্ত পৌঁছতে পার্ িআকাশ মন্ডলের পথসমূহ পর্যন্ত এবং মুসার ইলাহকে উকি মেরে দেখতে পারি। আমার চোখে তো এই মুসাকে মিথ্যাবাদী বলে মনে হয়। ” (সূরা মুমিন ৩৬-৩৭) এ বিষয়ে ইমাম বাদাবি লিখেন, ফিরআউন সম্ভবত এমন একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন যেখান থেকে নÿত্রমন্ডলী এবং তারাদের গতিবিধী পর্যবেক্ষণ করা যায়। যেন তিনি সেচ ও কৃষির সঠিক সময় হিসেব করতে পারেন।

তাছারা এতে আরোহণ করে মুসা (আ) কি সত্যিই আলøার নবী ছিলেন কিনা তা জানার আগ্রহ ছিলো ফিরআউনের। তিনি নিজেকে যেহেতু একমাত্র স্রস্টা বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাই তিনি চেয়েছিলেন রাজ্যের জনগণকে জানিয়ে দিতে, তিনি সঠিক এবং মুসা (আ) ভুল। বর্তমানে গবেষকরা পীরামিডের ভেতর অনেক সুরঙ্গ আবিষ্কার করেছেন। এসব সুড়ঙ্গগুলোর গন্তব্য যেখানে, সেখান থেকে খুব ভালোভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করা যায়। পবিত্র কোরআনে যে উঁচু ইমারতের কথা বলা হয়েছে, যা নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন ফিরআউন, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে গ্রেট পিরামিড-ই সেই স্থাপত্য।

একমাত্র গীজার সাথেই সঠিক সময় সঠিক উচ্চতার দিক দিয়ে কোরানের ভাষ্যের মিল রয়েছে। প্রখ্যাত মুফাচ্ছিরে কোরান ইমাম বাগবী লিখেছেন “সুউচ্চ ইমারত নির্মাণ হয়ে যাবার পর আলøাহ জনগণকে পরীÿা করতে চাইলেন। ফিরাউন এবং তার সৈন্যদল ইমারতের চূড়ায় আরোহণ করে বেহেস্তেÍর উদ্দেশ্যে তীর নিক্ষেপ করলেন। তারপর তীরগুলো রক্তমাখা অবস্থায় যখন ফিরে এলো, তখন ফিরাউন জনগণের কাছে গিয়ে চিৎকার করতে লাগলো “আমি মুসা (আ) এর খোদাকে হত্যা করেছি। ” কোরানের ভাষ্যমতে একথাটি ইসলামিক পন্ডিতগণ পরিষ্কার করেছেন যে পিরামিড তৈরি করতে প্রথমে ব্যবহার করা হয়েছিলো মাটি।

পরবর্তীতে চুনাপাথর দিয়ে তা ঢেকে দেয়া হয়। আর এটিও গবেষকরা বের করেছেন যে, খুফু হলো সেই মিশরের রাজা বা ফিরআউন, যার বর্ণনা রয়েছে কোরআনে এবং (ঈড়ঁংরহ) হামান ছিলেন পীরামিডের স্থপতি। স্ফিংস স্ফিংস হলো মিশরের গীজা এলাকার অভিবাবকতুল্য একটি পিরামিড। খুফু নির্মীত গীজার সর্বোচ্চ পিরামিডটির আয়ত্তের মাঝেই এটির অবস্থান। এর বিপরীতেই রয়েছে খাফরে পিরামিড।

পূর্ব দিকে মুখ করা এ স্থাপনাটিকে দেখলে মনে হবে এক বিশাল সিংহ মানব সামনে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে। স্ফিংস হলো মিশরের গীজা এলাকার অভিবাবকতুল্য একটি পিরামিড। খুফু নির্মীত গীজার সর্বোচ্চ পিরামিডটির আয়ত্তের মাঝেই এটির অবস্থান। এর বিপরীতেই রয়েছে খাফরে পিরামিড। পূর্ব দিকে মুখ করা এ স্থাপনাটিকে দেখলে মনে হবে এক বিশাল সিংহ মানবী সামনে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে।

স্ফিংস এর নিচের অংশ দেখতে সিংহেরর মতো এবং উপরের অংশ বা মাথা তৈরি করা হয়েছে মানব নারীর চেহারা দিয়ে। এটি নির্মাণ করতে চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়েছে। স্ফিংস ৫৭ মিটার (১৮৫ ফুট) লম্বা এবং প্রশ¯Í ৬ মিটার (২০ ফুট)। এর উচ্চতা ২০ মিটার (৬৫ ফুট)। দুই পা ছড়িয়ে নখর বিশিষ্ট থাবা মেলে রাখা এ সিংহ মানবির মূর্তিটির গভীর অভ্যন্তরে রয়েছে মন্দির।

প্রবেশ করতে হয় মেলে রাখা দুই পায়ের মাঝ দিয়ে। বর্তমানে স্ফিংস এর নাক অক্ষত অবস্থায় নেই। ধারণা করা হয় নেপোলিয়নের সৈন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নাক হারা হয়েছে সিংহমানবি। স্টেপ পিরামিড অব ডিজুজার ডিজুজার ছিলেন ফারাও খুফুর দাদা। স্টেপ পিরামিডটি তৈরি করেন তিনি এবং তার মমি-ই উদ্ধার করা হয় এ পিরামিড থেকে।

পিরামিড ডিজুজার মূলত ৬টি ধাপ বিশিষ্ট। একবারে খাড়া হয়ে এটি উঠে যায়নি। এ কারণেই একে স্টেপ পিরামিড বলা হয়। এর অবস্থান মিশরের সাক্কারাতে। ফারাও ডিজুজার এটি নির্মণ করেন ২৬৩০ খ্রীস্টপূর্বে।

এর উচ্চতা ২০৪ ফুট (৬২ মিটার)। তখনকার সময় এটিই ছিলো পৃথিবীর বৃহৎ স্থাপনা। ডিজুজারের মমি চ্যাম্বারটি মাটির নিচে। সেখানে পৌঁছতে হলে পাড়ি দিতে হয় একটি সুড়ঙ্গের জটিল পথ। ফারাও নেফরুর তিনটি পিরামিড নেফরু ছিলেন ফারাও ডিজুজারের ছেলে এবং ফারাও খুফুর বাবা।

তিনি রেড পিরামিড, বেন্ট পিরামিড এবং মাইদুস পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন। এ তিনটি পিরামিড থেকেই তিনটি মমি পাওয়া গেছে। এগুলোর মাঝে কোনটি ফারাও নেফরুর, তা আলাদা করা যায়নি। কেউ মনে করেন রেড পিরামিড থেকে প্রাপ্ত মমিটিই নেফরুর, আবার কেউ বলেন বেল্ট পিরামিড থেকে প্রাপ্ত মমিটিই তার। রেড পিরামিড নির্মীত হয়েছে খ্রস্টিপূর্ব ২৬০০ তে।

মিশরের দুসুর এ অবস্থিত এ স্থাপনাটির উচ্চতা ৩৪১ ফুট (১০৪ মিটার)। নেফরু জীবদ্দশায় এটি নির্মাণের কাজ শেষকরতে পারেননি। তার পুত্র খুফু এসে অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। বেল্ট পিরামিডটিও দাসুর-এ অবস্থিত। এর উচ্চতা ৩৪৪ ফুট (১০৫ মিটার)।

মাইদুস পিরামিডটি মিশরের মাইদুস-এ অবস্থিত। এর উচ্চতা ৩০৬ ফুট (৯২ মিটার)। বেল্ট, মাইদুস এবং রেড এ তিনটিই নির্মীত হয়েছে সমসাময়িক সময়ে। ধারণা করা হয় তিনটি পিরামিড থেকে প্রাপ্ত মমিগুলোর একটি তার এবং অপরগুলো তার ঘনিষ্ট আত্মীয়দের। খাফরে, মেনকিউর এবং পেপী-২ নির্মীত পিরামিড খাফরে এবং মেনকিউর ছিলো খুফুর অধস্তন।

আর পেপী-২ ছিলেন একজন দূর্দান্ত শাসক। যদিও তার শাসনামলে পুরাতন ফারাওদের ক্ষমতা কমে এসেছিল। কিন্তু খাফরের মমি যে পিরামিডে সংরক্ষিত ছিলো সেটির অবস্থান গীজাতে। খাফরেও খুফুর পীরামিডের আয়ত্বের ভেতরে এবং ফিনিক্সের বিপরীতে। এটি ফারাও খাফরে নির্মাণ করেন ২৫২০ খ্রীস্টপূর্বে।

উচ্চতা ৪৭১ ফুট (১৪৪ মিটার) মেনকিওরের মমির ধারক পিরামিড অব মেনকিউরের অবস্থানও গীজাতে। ২৪৯০ খ্রিস্টপূর্বে গীজাতে এটি নির্মাণ করেন মেনকিউর। উচ্চতা ২১৩ ফুট (৬৫ মিটার)। ১৮০০ সালে মেনকিউর এর মমিটি সেখান থেকে উদ্ধার করে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। পিরামিড অব পেপী-২ র্মিাণ করেন ফারাও পেপী-২।

মিশরের সাক্কারাতে ২২৫০ খ্রীস্টপূর্বে নির্মীত এ পিরামিডটির উচ্চতা ১৭২ ফুট (৫২ মিটার)। এর মমি চ্যাম্বারে পেপী-২ এর মমিকে রক্ষা করার জন্য একটি কালো রঙ্গের পাথর ছিলো। কিভাবে করা হতো মমি পিরামিড যেমন একটি বিষ্ময়ের বিষয় তেমনি পিরামিডের ভিতরে মমি রয়েছে। তাও আধুনিক কালের মানুষকে বিষ্মিত করে তুলেছে। মমি, এক আশ্চর্যের নাম।

কিভাবে করা হতো মমি, আর এটি করার চিন্তাইবা এলো কিভাবে? মমি বলতে বোঝায় পিরামিডের ভেতর সংরক্ষিত লাশ। মিশরীয় মমি বিখ্যাত হলেও চীনদণি এমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সন্ধান পাওয়া গেছে মমির। মমি হলো কোন ব্যক্তি বা পশু-পাখির মৃত্যুর পর তার সংরক্ষিত দেহ। মানুষ মারা যাবার পর স্বাভাবিকভাবে লাশ রাখলে তাতে ব্যক্টেরিয়া এবং অন্যান্য জীবানূ আক্রমণ করে। নস্ট করে দেয় নরম চামড়াকে।

মমিকরণের জন্য প্রয়োজন লাশকে ব্যক্টেরিয়া মুক্ত রাখার। আর ব্যক্টেরিয়ার জন্ম হয় পানির উপস্থিতিতে। তাই মৃতের দেহকে যদি দ্রæত পানিমুক্ত করা যায় তবে ব্যক্টেরিয়া ভীরতে পারেনা। সেটা হোক শুকিয়ে বা বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করে। প্রাচীন মিশরিয়রা দেহতে এক ধরনের ক্যামিকেল দিয়ে রোদে শুকাতো এবং ধূঁয়ার মাধ্যমেও পানি শুকিয়ে নিতো।

এ কাজে তারা সুগন্ধিও ব্যবহার করতো। মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিলো যে, তারা মারা যাবার পর যদি তাদের লাশ মমিতে পরিণত হয়, তবে পরবর্তী জীবণ হবে শান্তির। তাই নিজেকে মমিতে রূপান্তরের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েই তারা ক্ষান্ত হতো না, বরং চাইতো মৃত্যুর পরও ধন-সম্পদের মাঝে ডুবে থাকার মতো নিরাপদ আশ্রয়। এসব কারনেই মমি প্রক্রিয়াকরণ ছিলো ব্যয়বহুল। সবার সামর্থও ছিলোনা।

তাই ফারাও রাজা, রাণী ও তাদের উচ্চপদস্থ দাপ্তরিক কর্মকর্তাদের মমি প্রক্রিয়া এবং সমাধিস্ত করণ হতো জাকজমকভাবে। মমি করার পদ্ধতিটি ছিলো দীর্ঘমেয়াদী। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুগন্ধি ক্যামিকেল দিয়ে একটি দেহ মমি করতে ৭০ দিন লেগে যেতো। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো অনেকগুলো ধাপে। প্রথমে দেহকে ভালোভাবে ধূয়ে জীবানূমুক্ত করা হতো।

২য় ধাপে দেহের বাম দিকে চীরা হতো লম্বালম্বিভাবে এবং অভ্যন্তরীণ নারিভ‚রিগুলোকে বের করে কেবল হার চামড়া অবশিষ্ট রাখতো। মাথার মগজ বের করা হতো নাকের ভেতর হুক ঢুকিয়ে। এরপর যত্নসহকারে তা ব্যক্টেরিয়ারোধক স্থানে শুকানো হতো। পরবর্তীতে দেহের প্রতিটি অঙ্গকে আলাদা আলাদাভাবে গুছিয়ে সরু ফালির মাধ্যমে সোজা করে রাখা হতো। সরু ফালিগুলো লাশের অবয়ব ঠিক রাখার কাজ করতো।

এরপর এগুলোকে একটি ধারক বা জারে রাখা হতো। মমি করার জন্য চার ধরনের কেনোপিক জার ছিলো। এগুলো হলো কেবিসেনুয়েফ, দুয়ামুটেফ, হেপি এবং ইমসেটি। কেবিসেনুয়েফ এর উপরের অর্থাৎ মাথার অংশ ছিলো বাজপাখি আকৃতির, দুয়ামুটেফ ছিলো শিয়ালের মতো, হেপি বেবুনাকৃতির এবং ইমসেটি মানবাকৃতির। কেনোপিক জারে কিছুদিন রাখার পর সুগন্ধি ক্যামিকেল লাগানোর জন্য নির্দিস্ট স্থানে নেয়া হতো।

সেখানে দেহটাকে কাপর জাতীয় সরু ফালি দিয়ে ভালভাবে ব্যান্ডেজ করার কাজ করা হতো। ব্যান্ডেজের অনেকগুলো ভাজ দেয়া হতো। এসব ভাজের ফাঁকে ফাঁকে সুগন্ধি তো থাকতোই, পাশাপাশি স্বর্ণ দিয়ে ঢেকে দিতো দেহ অক্ষত রাখার জন্যে। প্রতিটি আঙ্গুলে লাগানো হতো স্বর্ণের ক্যাপ। স্বর্ণ, সুগন্ধি এবং ব্যন্ডেজ করা হয়ে গেলে কিছুদিন সেখানে সুরক্ষিতভাবে লাশ রেখে দেয়া হতো।

অন্তেস্টিক্রিয়ার সময় গড়িয়ে এলে কেনুপিক জারের ভেতর রাখা দেহকে ¯েøডের ওপর রেখে তা টেনে নেয়া হতো পিরামিড বা এর জন্য নির্বাচিত সৌধে। সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে কান্নাকাটি করে ধর্মীয় যাগযজ্ঞের মাধ্যমে বিদায় জানাতো মরদেহকে। এ পদ্ধতিতে মমিকরণকে মিশরীয়রা মনে করতো মুখ্য লাভের উপায়। তাই এর চাহিদা ছিলো ব্যাপক এবং কিছু নির্দিস্ট লোক এ প্রক্রিয়াকরণে সবসময় ব্যস্ত থাকতো। মানুষ যেমন মারা যেতো তেমনি মমিও করা হতো প্রচুর।

তিন হাজার বছরে ৭০ মিলিয়নের মতো মমি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এসব মমি গেলো কোথায়? এর পেছনে দায়ী মানুষের সম্পদের লোভ। বিভিন্ন পিরামিড ও সমাধিসৌধগুলোতে ঘুর ঘুর করতো রত্নলোভীরা। তারা সৌধগুলোতে সংরক্ষিত রত্ন লুট করার পাশাপাশি মমির দেহের ব্যন্ডেজ উল্টে পাল্টেও খোঁজ করতো স্বর্ণ। হাতের আঙ্গুল মোড়ানো স্বর্ণও লোট করে নিয়ে যেতো তারা।

পরবর্তীতে লোপাট হয়ে যাওয়া মমি চ্যাম্বারগুলোর মমি পঁচে যেতে লাগলো ব্যক্টেরিয়ার আক্রমণে। তারপর নিশেঃস হয়ে গেলো এসব। এমনকি মমির গায়ের ব্যান্ডেজগুলো খুলে এনে কাগজ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হতো এবং দেহকে ব্যবহার করা হতো জ্বালানি হিসেবে। এভাবেই ধ্বংস হয়ে যায় মিলিয়ন মিলিয়ন মমি। কিন্তু ফারাও রাজা ও অভিজাতদের মমি সংরক্ষিত ছিলো যেসব জায়গায়, সেগুলো ছিলো খুব সুরক্ষিত।

সেসব স্থানে পৌঁছার পথ জটিল। সে কারণেই অবশিষ্ট থাকতে পেরেছে হাতেগুনা কয়েকটি সংরক্ষিত দেহ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।