চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই !
প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত মহাকীর্তির এক সপ্তম আশ্চর্যের রহস্যময় নিদর্শন পিরামিড, যা এক বিরাট অবৈজ্ঞানিক স্থাপত্যশিল্প। এমন সব নির্মাণশৈলী মিসরবাসীর জন্য একমাত্র দুর্লভ প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রাজধানী কায়রোর অদূরে গিজা নামক স্থানে। বিস্ময়কর পিরামিডের জন্য সারাবিশ্বেই মিসরের সুখ্যাতি আছে, যা দেখার জন্য প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক আসে। মিসরের আরও বিখ্যাত যে ক’টি জিনিস আছে তা হলো—বিশ্বে সবচেয়ে বড় নদী ‘নীল নদ’, কারুনের অভিশপ্ত ধনসম্পদ মহান আল্লাহর গজবে ডুবে যাওয়ার স্থান, যা এখন হ্রদ, ফেরাউনের লাশ বা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর তৈরি একটা বিশেষ মামি, মুসা নবীর তুর পাহাড় ইত্যাদি। মুসা নবী ও আল্লাহর সাক্ষাতের স্থান তুর পাহাড়ে উঠতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা।
এই তুর পাহাড়ে আছে একটি মসজিদ ও একটি গির্জা। এর পাহাড় চূড়া বেশ ঠাণ্ডা। আর আল্লাহর তৈরি মামি ফেরাউনের লাশ হলো মুসা নবী ও মহান আল্লাহর নির্দেশিত ধর্ম বা তাদের অমান্য করার নিদর্শন। এটা মানুষের তৈরি করা অনেক মমির মধ্যে, মহান আল্লাহর তৈরি করা একটা অলৌকিক মামি। মিসরের সবচেয়ে বড় পিরামিডের উচ্চতা ৪৮০ ফুট ও প্রস্থ ৭৫৬ ফুট।
কীভাবে এত বড় বড় বেলে পাথর উত্তোলন করে ওই বিশাল আয়তনের পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল তার সঠিক মত পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, ফারাও রাজাদের হাজার হাজার যুদ্ধবন্দি চার পাশের বেলে মাটি দিয়ে উঁচু করেছিল। পরে বড় বড় পাথর খণ্ড ওপরে উঠিয়ে পিরামিড তৈরি করেছিল। শেষে পিরামিডের চারপাশ থেকে ওই বালি মাটি কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। আর এভাবেই ওই পিরামিডগুলো তৈরি হয়েছিল বলে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য মতবাদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এসব রহস্যময় পিরামিড ও মমি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় গবেষণা করা জার্মানি প্রত্নতত্ত্ববিদ এডিস ভনভনির নাম উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি বিশ্বের অনেক পিরামিড নিয়েই খনন কাজ ও গবেষণা করেছেন। ফলে অনেক রহস্য, নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন। আর পিরামিড মূলত প্রাচীন মানুষের সুরক্ষিত কবর। তবে পিরামিড ও মমি শুধু মিসর বা ইজিপ্টেই পাওয়া যায়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও পাওয়া গেছে।
বহু মমি এমন সুরক্ষিত ও সযত্নে রাখা হয়েছিল, যা দেখে মনে হবে আজও তারা জীবিত! যেন সেই ইতিহাস আজও ঐতিহাসিক কথা বলে। এর মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় মমি পাওয়া গেছে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু অঞ্চলে। যেগুলো তৈরি করেছিল প্রাচীন ইনকা সভ্যতার মানুষরা। ইনকারা এই মমিগুলো হিমায়িত করে রাখত, যাতে তারা পরকালে ওই দেহ থেকেই আবার জীবিত হয়ে উঠতে পারে।
তাদের দেহ অক্ষত থাকে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা দেশ গুয়েতেমালা ও মেক্সিকোর ইউকাটানের জঙ্গলে পাওয়া গেছে আরেক বিশাল পিরামিডের নগরী। যার সঙ্গে মিসরীয় সভ্যতা ও পিরামিড নগরীর হুবহু মিল রয়েছে। মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ৬০ মাইল বা প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত চেলুলার মালভূমি। আর এখানেই পিরামিড নগরীর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যা আয়তনে মিসরের গির্জা নগরীর পিরামিডের চেয়েও অনেক বড়। তবে সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো ওখানকার প্রতিটি পিরামিড গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়েছে।
সেখান থেকে পাওয়া গেছে নিখুঁত মায়া পঞ্জিকা বা বছর হিসাব করার ক্যালেন্ডার। সেই পঞ্জিকা অনুসারেই ওই পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি মিসরে যান তাহলে বিস্ময়ের সঙ্গে ভাববেন। কীভাবে প্রায় একজন মানুষের সমান বর্গাকৃতির সিমেন্টের মতো তৈরি খণ্ডগুলো এত ওপরে তুলে ওই পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছে? কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এতে? প্রযুক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে সহজ বালি প্রযুক্তি। তবে সবচেয়ে বেশি গবেষণা চলছে মামি নিয়ে।
আর এই গবেষণার ফলে নানা তথ্য আবিষ্কার হয়েছে। তবে জার্মানির প্রত্নতত্ত্ব বিজ্ঞানী এডিস ভনভনির ক্যান শ্রেষ্ঠত্ব আছে। তিনি এই পিরামিডের রহস্য আবিষ্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন পিরামিড়ের স্থান ভ্রমণ করেছেন। ইনকা সভ্যতার অট্টালিকা ও বিশাল পিরামিডগুলোর প্রাচীর নির্মাণ করতে ব্যবহার হয়েছিল প্রায় ১০০ টন ওজনের বেলে পাথরের খণ্ড। সেগুলো নিখুঁত জ্যামিতিক মাপে তৈরি।
১৯৫৩ সালে ককেশাশের উত্তর শাকারায় প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্রে এক বিরাট কবর স্থান আবিষ্কার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটা প্রথম রাজবংশ কোনো ফারাওদের কবর হতে পারে। প্রধান কবর ছাড়াও আরও ৭২টি কবর সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ১৯৫৪ সালে সেগুলো খনন কাজ করা সময় ওখানেই আরও একটি কবর আবিষ্কার হয়। কবরটি আগে কেউ দেখেনি।
তার মধ্যে সোনা-দানা মূল্যবান জিনিস সবই রাখা ছিল। ডক্টর গানিদ নামের এক অধ্যাপক কবরে রাখা ওই কফিন বক্সটি বহু কষ্ট করে খুললেন। কিন্তু কি আশ্চর্য সেই সমাধিটির কফিন বক্সটি ছিল ফাঁকা। কোনো মামি তার মধ্যেই পাওয়া যায়নি। রাশিয়ান বিজ্ঞানী রোবেংকো কুরগান একটি পিরামিড আবিষ্কার করেন চীনের উত্তরে চেঙ্গিস খানের দেশ মঙ্গোলিয়ার সীমান্তে।
ওই কবরের সবক’টি প্রকোষ্ঠ বরফ দিয়ে আটকানো। ভেতরের সব জিনিস হিমায়িত করে রাখা। প্রধান কবরে রয়েছে একটি পুরুষ ও একটি নারীর মামি।
দৈনন্দিন জীবনযাপনের সব উপকরণই রয়েছে কবরের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে অবস্থিত রয়েছে ৪৫ ফুট লম্বা ৩১ ফুট উঁচু ৩৯ ফুট চওড়া একটি পিরামিড।
আলপিছ নামক স্থানে পাওয়া গেছে একটি হিমবাহু কবর। সাইবেরিয়ার জমে থাকা তুষারের নিচে পাওয়া গেছে একটি হিমবাহু কবর। সাইবেরিয়াতে পাওয়া গেছে তুষারের মধ্যে কবর বা মামি জেরিকোতে রয়েছে পিরামিডের আদলে নির্মাণ করা ১০ হাজার বছর আগেকার কবর বা মামি। চীনের গোবি মরুভূমিতে পাওয়া গেছে অত্যধিক গরমে গলে যাওয়া কবর বা লাশ, যা প্রায় ১২ হাজার বছর আগের। নমুনা দেখে বোঝা যাচ্ছে, এ কবরে ছিল দুটি ধনী লোকের লাশ।
আফ্রিকার নরিয়া লাপাতা মরুভূমি অঞ্চলে আবিষ্কার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি পিরামিড, যা মিসরের পিরামিডের আদলে তৈরি করা। মধ্য আমেরিকাতে লাখ লাখ পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এদিকে আবার মেক্সিকোতে পাওয়া গেছে ১ লাখ পিরামিড। যার মধ্যে অনেক পিরামিড আছে, যা এখনও কেউ ধরেই দেখেনি। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের দেশ মেক্সিকোর চেলুলার মালভূমিতে যে বিশাল পিরামিড রয়েছে এগুলোই বিশ্বে সংখ্যাধিক পিরামিড, যা মিসরের সর্বাপেক্ষা বড় থিউপসের পিরামিডের দ্বিগুণ।
ওই পিরামিডের মধ্যে থেকেই ১৯৫২ সালের ১৫ জুন একটি মামিসহ সোনা-দানা, বিষয়-সম্পত্তি সবই আবিষ্কৃত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো কেন এই পিরামিডগুলো তৈরি করা হতো? কেন মৃত মানবদেহকে মামি করে পিরামিডের মধ্যে রাখা হতো? এটা কি মুসলমানদের মতো পরকাল বা আখিরাতের ওপর বিশ্বাস করে? না কি অন্য কোনো রহস্য রয়েছে এতে? অতি হিমায়িত করে কোষগুলোকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখার চিন্তাভাবনা, এই সে দিন মানুষের মাথায় এলো। অধ্যাপক এটিনজার যে ভবিষদ্বাণী করেছিলেন, ভবিষ্যতে মানুষের মৃতদেহকে নির্দয় ও অমানবিকভাবে পুড়িয়ে ফেলা হবে না, আবার কবরে পচিয়েও ফেলা হবে না। রেখে দেয়া হবে হিমায়িত করে। তারপর চিকিত্সা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে একদিন সেই মৃতদেহকে জীবিত করে তোলা হবে।
তাহলে খ্রিস্টপূর্ব ৬ হাজার বছর আগেকার লোকরা কি জানতো এই প্রক্রিয়া, যা আজও আবিষ্কার হয়নি? মামি রহস্যের পেছনে এমন একটা চিন্তাধারা থাকলে থাকতেও পারে। হয়তো তখনকার লোকরা জানতে পেরেছিল, শরীরকে হিমায়িত করে রাখা যায়। তারা এও জানত যে, সুদূর ভবিষ্যতের মানুষ একদিন এই মৃতদেহকে জীবিত করে তুলতে পাবে। তারপর মানুষ আবার ফের জীবিত হয়ে উঠতে পারবে। আর তখন ওই কবরে বা পিরামিডে রাখা জীবনযাপনের সব উপকরণ ও সোনা-রুপা, ধন-সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে।
সে জন্যই পিরামিডকে এমন অক্ষয় ও মজবুত করে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে সেগুলো সহজেই ধ্বংস না হতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।