.এইটাও জানিনা ! ইউরোপের খ্যাতনামা প্যারাসাইকোলজিস্ট, প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল মেটাফিজিক্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক কমিটির সদস্য এবং ফরাসী পত্রিকা রেভ্যু মেটাফিজিক্স এর সম্পাদক ডক্টর হিউবার্ট লারচার।
১৯৩২ সালে স্কুল থেকে ফেরার সময় একটা বড় দোকানের শো উইন্ডোতে একটা আজব জিনিস দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। সেটা ছিল একটা পিরামিডের ফাঁপা মডেল। তবে সেই মডেলটি দেখে অবাক হননি তিনি, অবাক হয়েছিলেন ওই ফাঁপা মডেলের নীচে কয়েকটা ছোট ছোট প্রানীর শুকিয়ে যাওয়া মৃতদেহ দেখে।
ব্যপারটা তিনি দোকানের মালিক আঁতয়ে বভিসের কাছে জানতে চান ... ব্যাপারটা বিস্তারিত ভাবে শুনে সহজ ভাষায় তার মাথা “আউলা” হয়ে যায়।
বভিস জানায়, মিশরের পিরামিড দেখতে গিয়ে এক অদ্ভুত চিন্তা ঢোকে তার মাথায়। আর সেই আজব চিন্তার ফলাফলই হল এই মডেল পিরামিড। দোকানের মালিক তখন ফাঁপা জিনিসের ভেতরের শূন্যস্থান নিয়ে গবেষণা করছেন। চারকোনা, তিনকোনা, ফানেল পাইপ ইত্যাদির ফাঁপা জায়গাটুকুর রাডিএস্থেসিয়া (বিভিন্ন আকৃতির শূন্যস্থানে ঘটমান ক্রিয়া বিত্রিয়া)মাপার একটা সূক্ষ যন্ত্রও তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তী কালে যার পেটেন্ট নিয়েছিলেন তিনি।
সেটার নাম দিয়েছিলেন স্পেশাল ম্যাগনেটিক পেন্ডুলাম।
শিঅপসের পিরামিডের ভেতরের রাডিএস্থসিয়া মাপার পর বভিসের ধারণা হয় যে এর আনুপাতিক মাপে পিরামিডের মডেল তৈরী করে তার নীচে মৃতদেহ রাখলে তা হয়ত পচবেনা। মমি হয়ে যাবে। এ চিন্তা থেকেই তিনি মডেল পিরামিড তৈরী করেন এবং এর রাডিএস্থেসিয়া মাপার পর দেখেলেন আসল আর মডেল পিরামিডের রাডিএস্থেসিয়া সমান। তারপর এর ভিতর তিনি কিছু মৃত ইদুরের দেহ রাখলেন, এবার তিনি অবাক হয়ে দেখলেন সেগুলোতে পচন ধরছেনা।
বভিসের এই মডেল পিরামিড, আর তার ম্যাগনেটিক পেন্ডুলাম ইউরোপ আর অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানী মহলে একেবারে হই চই ফেলে দেয়। অনেকের মতে বভিস “ল অভ রাডিএস্থেসিয়া” নামে একটি সূত্রও আবিষ্কার করেছিলেন। বভিসের এই পিরামিড মডেল আর রাডিএস্থেসিয়া তখন ডক্টর ক্যারেল ডরব্যাল নামক একজর রেডিও ইনজিনিয়ার কে ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট করল।
তিনিও শিঅপসের পিরামিডের অনুকরণে কয়েকটা ছোট ছোট মডেল কৈরী করে ফলাফল দেখে একেবারেই তাজ্জব হয়ে গেলেন। ব্যাং, টিকটিকি, সাপ কোন মৃতদেহই ওই মডেলের নিচে পচেনা।
এমনকি ফুল, ফল, ডিম, মাংস – এসবও পিরামিড মডেলের নীচে তাজা থাকে বহুদিন।
এবার নতুন এক পরীক্ষায় নামলেন ক্যারল। তিনবার শেভ করা একটা ব্লেড রাখলেন পিরামিড মডেলের নীচে। পরদিন সেই ব্লেড ব্যবহার করতে গিয়ে আবার অবাক হলেন। ধার তো কমেইনি বরং বেড়েছে।
একেবারে নতুন ব্লেড থেকেও ভালোভাবে কাজ করল সেটা। একই ব্লেড ব্যবহার করা গেল পঞ্চাশ বার। ক্যারল এর নাম দিলেন পিরামিড পাওয়ার।
ক্যারলের ধারণা পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্র আর কসমিক রে-এর সূক্ষ তরঙ্গ মিলে পিরামিডের মাঝে একটা রহস্যময় অদৃশ্য শক্তি সৃষ্টি করে অবিশ্বাস্য কান্ড কারখানা ঘটায়, সেটা শুধু পিরামিডের মাঝেই সৃষ্টি হয়। আমেরিকা তখনও ক্যারলের আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে পারেনি।
সে সময় ইউরোপে গিয়েছিলেন দু’জন আমেরিকান লেখিকা – শিলা অস্ট্রন্ডার আর লিম স্রোডার। তারা ক্যারলের পিরামিড পাওয়ারের আজব কান্ডকারখানা দেখেন ও দেশে ফিরে দু’জনে একটা বই লেখেন “সাইকিক ডিসকভারিজ বিহাইন্ড দ্য আয়রণ কার্টেন” নামে, আর এতে উল্লেখ করেন পিরামিড পাওয়ারের কথা। যার ফলে গোটা আমেরিকায় তখন এ পিরামিড মডেল হইচই ফেলে দেয়।
আমেরিকার ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারানারমাল ফেনোমেনা বিষয়ের অধ্যাপক জেমস রেমন্ড উলফ এ সময়ে পিরামিড মডেল নিয়ে খুব আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি কার্ডবোর্ডের পিরামিড মডেলের নীচে এক টুকরো বিফ রাখেন দশ দিন।
আর আরেক টুকরো বিফ রাখেন সাধারণ কার্ডবোর্ডের বাক্সের নীচে। পিরামিড মডেলের নীচে থাকা বীফ শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিলো, সামান্য চাপেই গুড়িয়ে যাবার অবস্থা। কিন্তু খাবার সময় কোন দুর্গন্ধ বা বিস্বাদ লাগেনি। আর সাধারণ কার্ডবোর্ডের নীচের টুকরার বীফে পাঁচ দিনেই পচন ধরেছিল।
ব্যাসিলাস ক্লস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামে এক প্রকার জীবানু জন্মায় বাসি মাংসে।
ওই খাদ্য খেলে বোটুলিজম নামক রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খাকে খুবই বেশী। কিন্তু পিরামিড মডেলের নীচে থাকা বীফে সেই জীবানু কোন প্রভাবই বিস্তার করতে পারেনি। অর্থাৎ মডেল পিরামিডের নীচে জান্তব প্রোটিন থাকলে তাকে কোন জীবানুই নষ্ট করতে পারেনা।
বীজের অংকুরোদগমে পিরামিড মডেল কোল ভূমিকা রাখতে পারে কিনা, এবার সেটা পরীক্ষা করলেন রেমন্ড। কিন্তু ঝামেলা হলো বীজের উপরে পিরামিড মডেল রাখলে তাতে রোদ, আলো লাগবেনা।
এতে সালোকসংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হবে। অনেক ভেবে পিরামিড মডেলের নীচে ছয় সপ্তাহ তিনি একটি এ্যালুমিনিয়ামের পাত চার্জ করলেন। ভিজে মাটিতে অংকুরোদগমের জন্য কিছু কিছু বীজ ছড়িয়ে কিছু বীজের ওপর রেখে দিলেন পিরামিড মডেলের নীচে থাকা এলুমিনিয়ামের পাত, আর বাকিগুলো সাধারণ এ্যালুমিনিয়ামের পাতে। দেখা গেল চার্জকৃত এ্যালুমিনিয়ামের নীচে থাকা বীজগুলোতে ভালো ফল হয়েছে।
এবার হাত দিলেন আরেকটি নতুন কাজে।
১০০ মিলিলিটার পানির দুটো বোতল নিয়ে একটা রাখলেন সাধারণ কার্ডবোর্ডের নীচে, অন্যটা পিরামিড মডেলের নীচে। কয়েকদিন পর পিরামিড মডেলের নীচে থাকা পানি চারায় ব্যবহার করে দেখলেন সাধারণ পানির থেকে পিরামিড মডেলের চার্জকৃত পানি ব্যবহার করলে চারা সতেজ থাকে বেশী, বাড়েও দ্রুত।
এবার নতুন এক চিন্তায় পেয়ে বসে তাকে। বসন্তের টিকা দেবার আগে রেকটিফায়েড স্পিরিট ঘষার মত করে তুলো দিয়ে ভালোমত আইসো-বিউটাইল এ্যালকোহোল হাতে ঘষে নিলেন। তারপর মাঝখানে বেশ ফাক রেখে ব্লেডের কোণ দিয়ে লম্বা করে হালকা ভাবে চিরে দিলেন।
অতি সূক্ষ রক্তের দাগ দেখা দিল দুটো চেরা অংশেই। পিরামিড পাওয়ার চার্জ করা পানিতে তুলো ভিজিয়ে একটা চেরা দাগের রক্ত মুছলেন, অন্য মুছলেন ডিস্টিলড্ ওয়াটারে ভেজানো তুলো দিয়ে। বেশী অপেক্ষা করতে হলোনা। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন, পিরামিড পানিতে ভেজানো দাগটা প্রায় শুকিয়ে গেছে, আর অন্যটির ওপর সাধারনত যা হয় তেমনি কালো দাগ পড়েছে। ২৪ ঘন্টা পর একবারে শুকিয়ে গেল চার্জ করা পানিতে ধোয়া কাটা দাগ।
আর অন্যটির কালো রেখা উঠে গেলেও পুরো শুকায়নি তখনও।
জেমস উলফ বলেছেন, শিঅপস্ পিরামিডের আকারে মডেল পিরামিড বানিয়ে নানারকম পরীক্ষা করেছি আমি। কখনও সফল হয়েছি, কখনও বিফল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পিরামিডের ভেতরের ফাঁপা জায়গা কোন রকম প্রচন্ড শক্তির আধার, যা পদার্থের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু সে শক্তি কোন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক শক্তি নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।