আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্ন চূড়া- ৪--- তারেক মাহমুদ

পর্ব---১ স্বপ্ন চূড়া- ১--- তারেক মাহমুদ পর্ব---২ স্বপ্ন চূড়া- ২--- তারেক মাহমুদ পর্ব---৩ বপ্ন চূড়া- ৩--- তারেক মাহমুদ পর্ব---৫ স্বপ্ন চূড়া- ৫--- তারেক মাহমুদ আমরা একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম । এবারের পথে কোন গাছ গাছালি নেই । পাথুরে পথ, উপরে খোলা আকাশ, উত্তপ্ত সূর্য্যের আলো, কাঁধে ভারি ব্যাগ আর সারাদিনের ক্লান্তি । বোতল বের করে কিছু পানি খেলাম আর কিছু পানি মাথায় ঢাললাম । কিছু দূর চলার পর আমরা আবার পেলাম এক ঝিরি ।

তবে এই ঝিরিতে পানি খুব কম । এবার অবশ্য আমাদের ঝিরিতে নামতে হচ্ছে না । আস্তে আস্তে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ঝিরির পাশ দিয়ে । এই ঝিরিটা পাথরে পরিপূর্ণ ছিল । এই ঝিরির পর বগালেক পর্যন্ত আর কোন ঝিরি বা পানির উৎশ্য নেই।

তাই আমরা ঝিরির শেষ দিকে এসে আমাদের খালি বোতল গুলি ঝিরির পানিতে ভরে নিলাম । বগালেকের পাহাড়েরর নিচে এসে আমরা একে একে জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করলাম । আমার কাছে মনে হচ্ছিল এই পথটা কেমন যেন ঘুরে ঘরে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে । আমার ব্যাগ প্যাকটার জন্য একটু কষ্ট হচ্ছিল । যাই হোক আস্তে আস্তে উপরে উঠছি আর বোতল থেকে একটু একটু করে পানি খেয়ে নিচ্ছি ।

প্রায় আধা ঘন্টার উপরে হবে এই জংলা পথে উপরে উঠছি । এদিকে বোতলের পানি প্রায় শেষের দিকে । আরএকটু উঠেই একটা বাঁক পেলাম । এই বাঁক পেরুতেই পেয়ে গেলাম গাড়িতে করে বগালেকে যাবার রাস্তা । রাস্তাটি ছিল কাঁচা ।

হাটু সমান ধূলা । আর একদম ঢালু (প্রায় ৪৫ ডিগ্রি)। প্রথম পাঁচ মিনিট হাঁটার পর পুরপুরি ক্লান্ত হয়ে গেলাম । বোতল বের করে একটু পানি খেলাম । আর এই ফাঁকে আমাদের দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল ।

প্রথম ভাগে মনা ভাই, সৌম্য ভাই, বকর ভাই, শরিফ ও মেহেদী । আর এদিকে পিছনে পরে রইলাম আমি ইস্তি, শামিম ভাই, জাকারিয়া ও রাকিব ভাই । আমরা আস্তে আস্তে এগুচ্ছি । সামনে থেকে মনা ভাই আমাদের জানালেন আর পাঁচ মিনিটের ভিতরে আমরা আর্মি ক্যাম্প পৌঁছে যাব, তারাতারি পা চালান । আর এদিকে আমরা আর এক ইঞ্চিও চলছে না ।

আমরা পথের এক পাশে বসে রইলাম । এই সময় ইস্তি একটা টিপস দিল উল্টা দিক ঘোরে হাঁটলে কষ্ট একটু কম হবে। এই উল্টা হাঁটা দিয়ে রাকিব ভাই সামনে এগিয়ে গেলন। রাকিব ভাইয়ের পিছনে বসে ছিল শামিম ভাই আর ওনার কিছু পিছনে পরে রইলাম আমি । রাকিব ভাই বেশ কিছু পথ এগুনোর পর আমি উঠে দাঁড়ালাম ।

আস্তে আস্তে আমি শামিম ভাইয়ের কাছে চলে এলাম । এবার শামিম ভাই উঠে এলো। আমরা দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে উপরে দিকে এগুচ্ছি। আর এর মাঝে রাকিব ভাই, ইস্তি ও জাকারিয়া সামনে বসে পরল । আমিও আর পারছিনা, তাই আমিও বসে পরলাম ধূলার মাঝে ।

আমাকে দেখে শামিম ভাইও বসে পরল । মিনিট পাঁচেক পর শামিম ভাই উল্টা হাঁটা দিয়ে রাকিব ভাইদের ধরে ফেলল । আমি আরো কিছু সময় বসে রইলাম । বোতল থেকে শেষ পানি টুকু খেয়ে নিলাম । এবার উঠে দাঁড়ালাম, আস্তে আস্তে হেঁটে রাকিব ভাইদের কাছে চলে এলাম ।

এবার আমরা একসাথে আবার হাঁটতে লাগলাম । এ সময় উপর থেকে গাড়ির ভোঁ ভোঁ শব্দ ভেসে আসছিল । এই দুই দিনে আমার যে পরিমান কষ্ট হয়েছিল তার থেকে তিন চার গুন বেশি কষ্ট হয়েছে এই গাড়ির পথ বেয়ে উপরে উঠতে আর এই পথে যে শুধু আমারি কষ্ট হয়েছে তা ঠিক নয় । যখন দেখলাম দুইটা চান্দের গাড়িতে কিছু ফরেনার নেমে আসছে আর ওরা আমাদের এই করুণ অবস্থা দেখে হাসা-হাসি করছিল তখন আমার ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের গাড়ি থেকে নামিয়ে পথের এই ধূলার মধ্যে দুইটা ডিকবাজি দেওয়াই । চাঁন্দের গাড়ি ধূলা উড়িয়ে যখন নিচের দিকে নেমে গেল তখন আমাদের করুণ দশা দেখে কে ।

পথের ধূলার সাথে আমরাও মিশে গেলাম । আমাদের দেখে আর কেউ চিনতে পারবেনা । আমরা আবার হাঁটতে লাগলাম । হাঁটতে হাঁটতে আমি, শামিম ভাই ও রাকিব ভাই আবার পেছেনে পরে গেলাম । আর ইস্তি ও জাকারিয়া ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের একটি বাঁকের দিকে।

কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে শামিম ভাই আবার হাঁটা দিলেন। এর কিছু সময় পর রাকিব ভাই উঠে উল্টা হাঁটা দিলেন। শামিম ভাই সামনের বাঁকের আগে আবারও বসে পরল তবে এবার ধপাশ করে বসলেন। আস্তে আস্তে রাকিব ভাই শামিম ভাইয়ের কাছে চলে গেলেন। রাকিব ভাইও ওখানে বসলেন।

রাকিব ভ্ইয়ের বোতলের পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। শামিম ভাইয়ের কাছ থেকে পানি নিয়ে খেলেন। তারপর আবার উঠে হাঁটতে লাগলেন। আর আমি এদিকে অসহায় এর মত একা পরে আছি। দশ মিনিটের মত ধূলার মাঝে পরে ছিলাম্ আমি, বিশ্রাম নিয়ে এবার উঠে দাঁড়ালাম।

আস্তে আস্তে শামিম ভাইয়ের কাছে এলাম। শামিম ভাইয়ের পাশে পাহাড় ঘেঁসে দাঁড়ালাম। এই রোদের মাঝে কোথা থেকে যেন একটু একটু করে ঠান্ড বাতাস বইছিল। শামিম ভাই তার পানির ফ্লাক্স আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি ফ্লাক্স থেকে মুখে পানি ঢাললাম।

পানিটা মুখে দিয়ে মনে হলো যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম । আর এই পানিই শামিম ভাইয়ের শেষ স্টক । এখানেও মিনিট পাঁচেক বসে রইলাম । এর পর উঠে বাঁক ঘুরতেই দেখি ইস্তিরা একটু উপরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরে ছোট এক গাছের নিচে বসে আছে। আমরা প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে ওদের কাছে এলাম।

এবার কাঁধ থেকে আমার ব্যাগটা নামালাম । ইস্তি পানির বোতল এগিয়ে দিল। পানি টুকু আমি আর শামিম ভাই শেয়ার করে নিলাম। গাছের নিচে একটু ছায়া পেয়ে আমি একদম ফ্ল্যাট হয়ে শুয়ে পরলাম। ইস্তি আমাকে বলল- তারেক ভাই আর পাঁচ মিনিট লাগবে সামনেই বগালেক ।

আমি বলালম এক ঘন্টা আগে মনা ভাই বলেছিল আর্মি ক্যাম্পে যেতে আর পাঁচ মিনিট লাগবে । এখন আবার তুমি আরো পাঁচ মিনিট যোগ করলা । শুয়ে পরা থেকে উঠতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু পারছিনা । শুয়ে পরার কারনে শরীর একদম ছেড়ে দিয়েছে ।

এভাবে মনে হয় দশ মিনিটের মত পরেছিলাম । তারপর এল মনা ভাই । সে এসে বলল আপনারা এইখানে বসে আছেন । আর পাঁচ মিনিট হাঁটলেই উপরে বগালেকে চলে আসবেন উঠেন উঠেন………। মনা ভাই রাকিব ভাইয়ের ব্যাগ নিলেন আর আমার ব্যাগ চলে গেল ইস্তির কাঁধে ।

বাধ্য হয়েই এবার উঠে দাঁড়ালা । মনা ভাইয়ের পিছু পিছু হেঁটে ৫ মিনিটের মধ্যে চলে এলাম আমাদের বেসক্যাম্প বগালেক । বগালেকে এসে উঠলাম লারামের গেস্ট হাউজে । ড্রেস চেঞ্জ করে একটু বিশ্রাম নিলাম । সৌম্য ভাই ক্ষুধার জালা সইতে না পেরে মেহেদীর কাছ থেকে একটি কলা আর তার ব্যাগ থেকে নুডুলস বের করে কাচাই খাওয়া শুরু করে দিল ।

আর কয়েক জন কে দেখলাম ছিয়াম দিদির দোকান থেকে একটা মোবাইল নিয়ে দূরে গির্জার কোনায় দাড়িয়ে নেটওয়ার্ক খোঁজার বৃথ্য চেষ্টা করছে । এর পর চলে গেলাম বগালেকে ডোবাইতে (গোসল করতে) । বগালেকের পানি তেমন ঠান্ডা ছিলনা । তবে নিচে এলোমেলো পাথর ও শ্যাওলার কারনে পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে । গোসল শেষে লারামের খাবার হোটেলে দুপুরের রাক্ষসী ভোজ দিলাম তিনটার দিকে ।

রাক্ষসী ভোঁজ এই কারনে বললাম- সকালে সুপ মিক্স আর পথে চকলেট, বিস্কুট, চাটনি আর শেষ বেলা গাছের পাকা তেতুল আর সব সময় সংঙ্গে ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম ও টাগরা যোয়ান সূর্য্যটা, এত কিছুর পর যা খেতে পাব তাই….। খাবারের মেনু ছিল মোটা লাল চালের ভাত, ডিম ভাজি, আলু ভর্তা, ডাল আর সাথে মিষ্টি শুকনা মরিচ ভাজা । মনা ভাই আমাকে বলল এই মরিচগুলা একটু মিষ্টি মিষ্টি, ভাতের সাথে একটু খেয়ে দেখেন। আমি তাকে বললাম মনা ভাই আমি কিন্তু একদম ঝাল খেতে পারি না। সে আবার বলল আরে এটা মিষ্টি মরিচ, খেয়ে দেখেন কত মজা, একবার খেলে বার বার খেতে মনে চাইবে ।

আমি তার কথা মত একটা মরিচ খেলাম । তার কথার সত্যতা খুজে পেলাম। আমাদের খাওয়া বলতে গেলে শুরুই হয়নি আর এর মাঝে লারাম এসে বলল দাদা খাবার শেষ…. বলে লজ্জীত্ব ভাবে একটা হাসি দিলেন । আসলে আমরা এক এক জন তিন থেকে চার প্লেট ভাত খেয়ে ফেলেছি ! কিন্তু মনে হচ্ছে আরও দু’এক প্লেট ভাত হলে খাবারটা জমপেশ হতো । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি সাধারণত এক থেকে দেড় প্লেটের বেশি খেতে পারি না ।

আর প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এই রকম । সারাদির পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের কারনেই আজ দুপুরের খাবার নিয়ে এই ব্যাহাল অবস্থা । খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে আমরা রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম । এর পর ৫টার দিকে মনা ভাই, সৌম্য ভাই, বকর ভাই, আমি ও মেহেদী চলে গেলাম বিকালের বগালেক এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে । আশেপাশে বেশ কিছু ছবি তুললাম ।

গির্জার সামনে বগালেকের পরিচিতি দিয়ে বিশাল এক সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম । সাইনবোর্ডটা পড়ে জানতে পারলাম প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে পাহাড়ের চূড়ায় এই লেক তৈরি হয় । এর আয়তন ১৫ একর আর এর উচ্চতা সী লেভেল থেকে প্রায় ২৭০০ ফুট উপরে (আর জিপিএস এ রিডিং পাওয়া গেছে ১২০০± ফিট!!!)। বগালেক নিয়ে অনেক মিথ প্রচলিত আছে। স্থানীয় আধিবাসীরা বিশ্বাস করে এই লেকের ভিতর ড্রাগন দেবতা বাস করত ।

অবশ্য এর গঠন দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটা মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালা-মুখ । সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায় । আর লেকের সাথে সাথে আশে পাশের নদীর পানিও ঘোলাটে রং ধারন করে । আমার ধারনা বগালেকের নিচ দিয়ে নদী গুলোর শাখা বের হয়েছে । আর তাই লেকের পানির সাথে সাথে নদীর পানিও ঘোলাটে হয়ে যায়।

আসলে পুরা বিষয়টিই ঘোলাটে । লেকের ওপারে মুরং পাড়া । গির্জার পাশ দিয়ে বগা লেকের পাড় ধরে সামনে এগিয়ে গেলাম বগা লেক দেখতে দেখতে । সামনে দেখি ইস্তি আর জাকারিয়া । ওদের বললাম চলো মুরং পাড়া থেকে ঘুরে আসি ।

কিন্তু ওরা যেতে আগ্রহী না বলে জানাল । আর এদিকে সূর্য্যটাও যাই যাই করছে, খুব বেশি সময় পাবোনা মুরং পাড়া ঘুরে দেখার জন্য তাই তারাতারি হাঁটা দিলাম । মুরং পাড়ার রাস্তাটা লেকের পাশ থেকে একটু উপরে উঠতে হয় তারপর সুতার মত রাস্তা ধরে আস্তে আস্তে নিচে নেমে যেতে হবে । বগালেক থেকে একটু উপরে উঠতেই দেখা পেলাম মুরং পাড়ার । পাড়াটা বেশ সুন্দর, গুছানো ।

আমরা আস্তে আস্তে সরু পথ ধরে পাড়ার মাঝে চলে আসলাম । পাড়ার এক পাশে ছিল ধান ভাঙ্গানোর মেশিন । দূর থেকেই আমরা এর ভট… ভট শব্দ শুনতে ভেঁসে আসছিল । আর ধান ভাঙ্গানোর মেশিনের ঠিক সামনেই ছিল ঢেকি । ঢেকিতে ধান ভানছে তিন মুরং রমণী ।

তাদের ছবি তোলতে গিয়ে বেকায়দায় পরে গেলেন সৌম্য ভাই । মাঝের মুরং মেয়েটি কোন ভাবেই সৌম্য ভাইয়ের ক্যামেরা বন্দি হবেনা । আর আমরাও নাছোর বান্দা । মনা ভাইকে ডানে রেখে সৌম্য ভাই গেলেন ঢেকির সমনে আর আমি গিয়ে উপস্থিত হলাম মেয়েটির ঠিক সামনে। বাঁশ কাটায় ব্যস্ত এক মুরং পুরুষ এরপর আমরা তিনজনে তিন দিক থেকে ক্যামেরার সাটার ফেলতে শুরু করলাম।

সে যেদিকে তাকায় সে দিকেই ক্যামেরা তাক করা । সে ধরা পরে গেল আমাদের ক্যামেরায় । এরপর আমরা পাড়ার পিছন দিকে চলে গেলাম । একজনকে দেখলাম ঝুড়ি বানানোর জন্য বাঁশ কাটছে । এরপর সোজা উপরের একটা ট্রেইল ধরে উঠে যাচ্ছি বগালেকের উদ্দেশ্যে ।

আমরা যে সরু পথ ধরে মুরং পাড়ায় নেমে ছিলাম তার থেকেও ভয়ানক রাস্তা ছিল এটা । কোথাও কোথাও রাস্তাই ছিলনা আর এক যায়গাতে বিশাল আকৃতির পাথর খারা ভাবে ২৫-৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে । অনেকটা বসে বসেই পাথরের পথটুকু পার হলাম । আর এদিকে আধাঁর ঘনিয়ে আসছিল । পাহাড় আর গাছ গাছালির জন্য চাঁদটাকেও দেখা যাচ্ছিলনা ।

আমরা পাড়া থেকে বের হয়ে বগালেকের ওপাশেই বসলাম চাঁদের আলোয় বগালেক দেখার জন্য । মনা ভাই তাদের ডি এসএলআর ক্যামেরা দিয়ে পূর্নীমার রং মাখা চাঁদের ছবি তুলছিল ঠিক এই সময় পাহাড়ের উপর থেকে ঝোপ ঝার মাড়ানোর শব্দ ভেসে আসছিল । আমরা গয়ালের দল ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম আর দৌড় দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের অবাক করে উপর থেকে নেমে এল তিন ভদ্র লোক। তারা আমাদের দেখে আমাদের পাশেই বসলেন।

আলাপ চারিতায় জানতে পারলাম এরা নোয়াখালীর এক কলেজের টিচার। বান্দরবানের এক গার্লস কলেজে কি এক কাজ নিয়ে এসেছেন। সেই গার্লস কলেজের টিচারদের মুখে বগালেকের রহস্যময় কথা শুনে ওয়াল্যোসদের মত চলে এসেছেন । আর উঠেছেন ছিয়াম দিদির হোটেলে । আমরা আগামীকাল কেওকারাডং যাচ্ছি শুনে তারা আমাদের সাথে যেতে ইচ্ছুক বলে জানালেন ।

মনা ভাই তাদেরকে আমাদের দলে স্বাগত জানালেন। আর আমাদের দলটাও একটু ভারি হল । তাদেরকে আমাদের আগামী কালকের প্ল্যান বলা হলো; আমরা সকাল ৬টায় বের হয়ে যাব পাহাড়ি চড়াই উৎরাই পথে ৯টা কি সাড়ে ৯টার মাঝে আমরা কেওকারাডং এর চূড়ার পৌছে যাব । এর মাঝে মেহেদী ও বকর ভাই রুমে চলে গেলেন নামাজ পড়ার জন্য। এখানে আরো বেশ কিছু সময় বসে থেকে আমরা আস্তে আস্তে রালামের গেস্ট হাউজের দিকে এগুলাম।

রুমে এসে বিশাল এক আড্ডা বসালাম সবাই মিলে। আমাদের সাথে ঐ তিন টিচারও যোগ দিলেন। আড্ডার মাঝে মনা ভাই আমাদের কফি বানিয়ে খাওয়ালেন। আর এদিকে শামিম ভাইকে বেশ ক্লান্ত ও বেশ আশা-হত মনে হল। আড্ডার মাঝে লারামের ডাক………খাবার রেডি।

আমরা রাত ৯টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে বগালেকের পাড়ে বিশাল আকৃতীর পাথরের উপরে বসে আবারো আড্ডায় মত্ত হলাম । আমরা রাত ১০টার দিকে রুমে গিয়ে শুয়ে পরার জন্য বিছানা তৈরি করে মোবাইলে ভোর ৫টার এলাম দিয়ে শুয়ে পরলাম । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.