আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তেঁতুল নিয়ে তোতলামো

তেঁতুল-এর একটা আলাদা জনপ্রিয়তা জ্ঞান হওয়া অবধি দেখে আসছি। তবে সেই জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বি। মুখে মুখে শুধু তেঁতুল আর তেঁতুল। টিভি-তে তেঁতুল নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন, তেঁতুল বিষয়ক মানব বন্ধন, আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক, পিনিং-পিঞ্চিং তেঁতুলকে বর্তমান সময়ের শীর্ষ বাংলা শব্দে রূপান্তরিত করেছে। তেঁতুল যতটা না টক, টক-শো হচ্ছে তার চেয়ে অনেক গুন বেশী।

কেন বাংলাদেশ আজ তেঁতুলে তেঁতুলে ছয়লাব তা সবার জানা। ৯০ বছর বয়সী অধ্যাপক সাহেব-কে বয়সের কারনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সহানুভুতি দেখালেও ৯০উর্ধ্ব বছর বয়সী মাওলানা সাহেবের বয়স বিবেচনায় আনা হয়নি। তেঁতুল-এর সাম্প্রতিক জনপ্রিয়তার উদ্যোক্তা তিনিই। পরিচিত জনৈক হাফেজ নাসির সাহেব-এর মতে খোলা তেঁতুল বলে মাওলানা সাহেব খোলামেলা পোষাকের মেয়েদের বুঝিয়েছিলেন, এবং তার বক্তব্য রসালো উপস্থাপনের মাধ্যমে বিটিভি-ই তেঁতুলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তা যে কারনেই হোক, তেঁতুল আজ ব্যাপক জনপ্রিয়।

তেঁতুল-এ মেয়েদের অধিকারই বেশী (তসলিমা নাসরিনের মতে) হলেও আজ তা সার্বজনীন। জানা দরকার কে বা কি সেই তেঁতুল ? জন্মের পরে যেই মেয়েটিকে প্রথম আপন করে জেনেছি- মমতাময়ী মা, দেখেছি কোমল পরশে মুছে দিতে সব যন্ত্রনা, সাম্য আচরন এবং স্নিগ্ধতার উপমা... তাকে কোনক্রমেই এই তেঁতুল সম্প্রদায়ভুক্ত করা যাবে না। যে মেয়ে ব্যবহার ও আচরনগতভাবে কর্কশ তা সে যত সুশ্রীই হোক তাকেও তেঁতুলের মতো টক-মিষ্টি একটি আকর্ষনীয় খাবারের বিষয়ভুক্ত করা যাবে না। তাকে তেঁতুল বা বাঘা তেঁতুল না বলে বরং বাঘা ওল কচু বললে মেনে নেয়া যেতে পারে... অভিজ্ঞজন মাত্রই স্বীকার করবেন, তা সে পুরুষের বেলায়ও। বাঙ্গালী রমনী বলতে আমাদের আদর্শ রবীন্দ্রনাথের, শরৎচন্দ্রের নায়িকারা- যাদের কথা প্রথমেই মনে আসে, যাদের ভাবতে ভালোবাসি- স্বপ্নে দেখি, তাদের কেউই বিশ্রীভাবে ঝগড়া করে না, হিংসুটে না, বিরক্তিকর কিংবা রুক্ষতা তাদের স্বভাবজাত না।

তারা স্বভাবে অনেকাংশে অন্তর্মুখী বলেই পোষাকে খোলামেলা না, সুতরাং সাধারন বাঙ্গালী নারীরা তেঁতুল থেকে বাদ। বাকী থাকলো কে ? বাকী থাকলো তেঁতুল..... এই তেঁতুল যে-ই হোক আমাদের ভালোবাসার কেউ না, বাঙ্গালী কেউ না- তাই বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের উত্তেজিত হওয়ার কারন নাই, অতএব তেঁতুল-এর মতো বিশেষ স্বাদের খাবারকে কচলে আর নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তেঁতুল দেখলে মুখে লালা আসার বিষয় উল্লেখ করা হলেও, তেঁতুলের অনিয়ন্ত্রিত ভক্ষন দাঁতকে যে টক করে তোলে এবং পরবর্তী যে কোন খাবারের ক্ষেত্রে তা বিপত্তির কারন করে তোলে, এ কথা উল্লেখ করেননি কেউ। না উদ্যোক্তা, না কোন ধারকগন। তাই তোতলাতে তোতলাতে জানিয়ে দিতে চাই, তেঁতুল ব্যবহারে আমরা যেন আরো সতর্ক হই।

চোখের দেখায়, মুখের স্বাদে কিংবা আলোচনায়... কারো মনের জটিলতায় আমাকে জটিল মনে হলেই কি আমি জটিল মানুষ হয়ে যাবো ? তাৎক্ষিনক বিরক্তি আসতেই পারে বিবেচনা ভেদে, তাই বলে দিনের পর দিন জটিলতাকে বয়ে বেড়ানো আর তা ছড়িয়ে বেড়ানো কি কোন কাজের কথা !! তেঁতুল-কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, তেঁতুল গাছের ছায়ায় পরে থাকা ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়া যেন চোখের আড়াল হয়ে না যায়.. কেউ কেউ যে তা চাচ্ছে না, এমনওতো নয় ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.