একটা সময় ছিল তেঁতুল কেবলমাত্র মেয়েদের খাবার হিসেবে গণ্য হতো। অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে সহজে মেদ জমতে পারে না।
এতে টারটারিক এসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। তেঁতুল এমনই এক ভেষজ, যার সব অংশই কাজে লাগে। কয়েক হাজার বছর আগে এই গাছ বণিকদের সূত্রে এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান প্রায় সকল মহাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই গাছ কমবেশি দেখা যায়।
তেঁতলের আদি নিবাস আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়া। ধারণা করা হয় সুদান থেকেই তেঁতুল বাংলাদেশের মাটিতে এসেছে।
তেঁতুল,ইংরেজি নামঃ Tamarind tree.আয়ুর্বেদিক নাম যমদূতিকা। ভেষজবিদগণ একে অভিহিত করেছেন প্রাণদায়িনী ও শক্তিধারিনী হিসাবে। তেঁতুল সুবৃহৎ ও সুদৃশ্য চিরসবুজ বৃক্ষ।
গাছ প্রায় ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্য-শক্তি ২৮৩ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম। সাধারণভাবে তেঁতুলকে একটি উৎকৃষ্ট ফল হিসাবে গন্য করা যায় না, তবে ব্যবহার, বৈচিত্র ও জনপ্রিয়তার বিচারে ইহা বাংলাদেশের একটি অতি সমাদৃত ফল। তেঁতুলের কাঠ খুবই শক্ত, ভারী, দৃঢ় টেকসই ও সহসা ঘুন ধরে না। কাঠ দেখতে রক্তাক্ত বাদামী বর্ণের।
গরুর গাড়ীর চাকা, ঢেঁকি, ঘানি, আসবাবপত্র বানাতে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলের পাতা থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়।
তেঁতুলের কচিপাতার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে এমাইনো এসিড। তেঁতুল চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে। তবে তা দেহের কোষে নয়, রক্তে।
পুরোনো তেঁতুলের কার্যকারিতা বেশি। যদি পেট ফাঁপার সমস্যা থাকে এবং বদহজম হয়, তাহলে পুরোনো তেঁতুল এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে সামান্য লবণ, চিনি বা গুড় দিয়ে খেলে অসুবিধা দূর হয়। আবার হাত-পা জ্বালা করলেও এই শরবতে উপকার পাওয়া যায়। হাঁপানি ও দাঁত ব্যথায় তেঁতুলগাছের ছাল চুর্ণের রস খেলে উপশম পাওয়া যায়। তেঁতুলের প্রধানত দুরকমের জাত দেখা যায়।
টক জাত ও মিষ্টি জাত।
আমারদের দেশে বিভিন্ন ধরনের তেতুল আছে। তেতুলের চাটনী, তেতুলের আচার, তেতুল ভর্তা, তেতুলের ডাল, তেতুলের টক এই শব্দগুলো আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। আমার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটা বইয়ের নাম- তেঁতুল বনে জোছনা । এই বইটি আমি দশ বার পড়েছি ।
অনেক ভালো লেগেছে । "তেঁতুল বনে জোছনা" বইটা উৎসর্গ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হায়াৎ মাহমুদ সম্পর্কে লেখক বলেছেন, "কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন"।
চিরল চিরল তেতুল পাতা, তেতুল বড় টক
তোমার সঙ্গে ভাব করিতে আমার বড় শখ
পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়। পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়।
কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাত পাওয়া স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সারে। তেঁতুল গাছের শুকনো বাকলের প্রলেপ ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষত সারে। পুরনো তেঁতুল খেলে আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা ও পেট গরমে উপকার পাওয়া যায়। পটাশিয়াম ও অক্সালিক এসিডের আধিক্যের জন্য কিডনি রোগীদের তেঁতুল খাওয়া নিষেধ। জন্ডিসের ক্ষেত্রেও তেঁতুল নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে।
প্রতি ১-২ কাপ তেঁতুল থেকে ১৪০ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়, যার মধ্যে থাকে ৩৪ গ্রাম শর্করা, ৩ গ্রাম খাদ্যআঁশ ও ২ গ্রাম আমিষ। তেঁতুলে ফ্যাট নেই একেবারেই। এ ছাড়া এটি ভিটামিন সি এবং আয়রনের ভালো উৎস।
এক সময় এ দেশ তেঁতুলের চাহিদা মেটাতে স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিল কিন্তু ইটের ভাটায় তেঁতুলের কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং বাড়ির আশে-পাশে ও জঙ্গলে তেঁতুলের গাছ থাকায় এবং তেঁতুলের গাছে ভুত থাকা নিয়ে কুসংস্কারের কারণেও অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ কারণে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার তেঁতুল আমদানি করতে হয়।
কেউ কেউ মনে করেন তেঁতুল বুদ্ধি কমিয়ে দেয়। এগুলো সব ভূল ধারণা। এ ছাড়া হারবাল মেডিসিনে তেঁতুলকে রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এ বছরের জানুয়ারী মাসে ফরিদপুরে তেঁতুল গাছে উঠার অপরাধে সাব্বির (১১)নামে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছেন গাছের মালিক সজল কান্তি ভৌমিক নামে এক কলেজ শিক্ষক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।