প্রতিদিন নতুন নতুন দুঃসংবাদ জনমানুষের হতাশা বাড়াচ্ছে। মিডিয়ার বিকাশের কারণে দুঃসংবাদগুলো দ্রুত আমাদের কানে আসে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা,পুলিশের অনাচার,রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে আমজনতাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে ব্যর্থ মন্ত্রীদের নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে মিডিয়ায় হাস্যকর সব মন্তব্যের ফুলঝুরি জনতার আক্রোশে ঘৃতাহুতি দেয়।
অভিজ্ঞ নেতাদের পাশ কাটিয়ে নতুন মুখের হাইব্রিড নেতাদের মন্ত্রী করে শেখ হাসিনা যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন তা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলে তা অনুধাবন করা যায়। জনপ্রিয়তার ঢেউয়ে কলাগাছ শুধু সাংসদ হয়নি মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছে। কথায় এবং কাজে কলাগাছেরা নিজেদের কলাগাছ প্রমাণে সফল হয়েছে। সাধারণ মানুষ জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছে শুধু মার্কা দেখে ভোট দিলে তার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়াটি কীরকম হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আড়াই বছরের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় নেতা তৈরীতে দলটি কিভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
কথায় এবং কাজে কোন ক্ষেত্রেই এই নতুন নেতারা সফল হননি। বরং বেদনা এবং কৌতুক এই দুয়ের জোগান দিয়ে চলেছেন তারা জোরেশোরে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভোট কিনতে হয়। বঙ্গবন্ধু বা তাজউদ্দিনের মতো নেতাদের ভোট কিনতে হয়নি। কিন্তু জিয়াউর রহমান পলিটিকস ডিফিকাল্ট করে ফেলায় রাজনীতিতে কালোটাকা বড় জায়গা দখল করেছে।
এরশাদ রাজনৈতিক দুর্বত্তায়নকে রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়ে ফেলেছেন। আর যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত শিবির ধর্মীয় আবেগ আর টাকাপয়সা এই দুইকে পুজি করে ভোটের রাজনীতিকে আরো ডিফিকাল্ট করে ফেলেছে।
এর ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে ভোটে জেতা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান নিয়ে আলোচনায় রাজনৈতিক অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাটি না করতে চাইলেও যেহেতু সামরিক শাসকদের অপকর্মের ফলাফল আজো দৃশ্যমান; তাই জিয়া-এরশাদ-জামাতের রাজনৈতিক দুর্বত্তায়ন প্রসঙ্গটি উল্লেখ করতে হলো। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসার ধারাটিও বিএনপি নেতা তারেক রহমানের হাতে প্রোথিত হয়েছে।
এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকেও ব্যবসায়ী হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে ২০০৮ এর নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হয়েছে।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের অসুবিধা হলো তারা মুনাফা ছাড়া আর কোন কিছুতেই আগ্রহী নন। ফলে নির্বাচনে লগ্নি করা টাকা সুদে আসলে তুলে নিতে তারা ততপর হয়ে পড়েছেন। রাজনীতি এবং ব্যবসাকে গুলিয়ে ফেললে দেশের পরিণতি যা হবার কথা তাই হচ্ছে। ফলে একা শেখ হাসিনার পক্ষে চোরের খনিটিকে সামাল দেয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঠিক একিরকম সমস্যায় পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। চোরের খনিতে একা হয়ে পড়ায়, পাকিস্তান ও মার্কিন মদতে মোশতাক এন্ড গংদের হাতে নিহত হন তিনি। তারপর বাংলাদেশ চলতে থাকে অদ্ভুত উটের পিঠে।
বর্তমান সরকারের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সুযোগে খালেদা জিয়া আশায় বুক বাঁধছেন। বলছেন জনগণ নাকি বিএনপির জন্য অপেক্ষা করছে।
২০০১-০৬ যে ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার নজির বিএনপি-জামাত তৈরী করেছে তাতে জনগণ যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে না সেটা খালেদা জিয়াকে কে বোঝাবে।
এদিকে জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে এটা বুঝেও শেখ হাসিনা না বোঝার ভান করছেন। তানাহলে অনাহারী মানুষকে কম খাওয়ার উপদেশ দিয়েও বানিজ্যমন্ত্রী ফারুক এখনো পতাকা উড়িয়ে ঘুরছেন। নৌমন্ত্রী শাহজাহান, যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল কর্তব্যপালনে ব্যর্থ হয়েও এখনো মন্ত্রী। আর পুলিশের এত অপকীর্তি ধরা পড়ার পরেও সাহারা খাতুন আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে আছেন।
গত মাসদুয়েকে যেসব ঘটনা ঘটেছে এরপরেও সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মন্ত্রীরা কেন পদত্যাগ করেননি বা শেখ হাসিনা মন্ত্রীপরিষদের রদবদল করলেন না তা বোধগম্য নয়।
দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি,যোগাযোগ অব্যবস্থা,পুলিশী অপকর্ম, সাংসদদের সরকারী বরাদ্দ নয়ছয় মিলিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। অথচ শেখ হাসিনা ব্যর্থ মন্ত্রীদের পারস্পরিক ব্লেমগেমের মাঝে বসে মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট করছেন। যোগাযোগ মন্ত্রী বলছেন অর্থমন্ত্রী টাকা না দেয়ায় মহাসড়কগুলো মেরামত করা যায়নি। অর্থমন্ত্রী বলছেন টাকা দেয়া হয়েছে,যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।
আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে বানিজ্যমন্ত্রী ডায়েটিং এর পরামর্শ দিচ্ছেন। সাহারা খাতুন পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিচার বিভাগের আগ্রহে কিছু পুলিশী অপরাধের বিচার হচ্ছে। এখানে নির্বাহী বিভাগের কোন সাফল্য নেই।
রোজার মাসে আমজনতা দ্রব্যমূল্যের ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বিপর্যস্ত।
মহাসড়কগুলোর বেহাল দশার কারণে ঢাকার বাইরে ঈদ করতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর প্রতিদিন অপঘাতে মৃত্যুর খবর। এরপরেও যদি শেখ হাসিনা সজাগ না হোন, তার চারপাশে জুটে যাওয়া অপদার্থগুলোকে চিহ্নিত করে পত্রপাঠ বিদায় না করেন,তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে সহজেই অনুমেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।