আমি ক্ষত বিক্ষত............... রেলওয়ের ২৭ দশমিক ৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ প্রতিষ্ঠানের চারটি প্রকল্পের জন্য ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রেলওয়ের হিসাবে অধিগ্রহণ করা জমির বাজারমূল্য ১২২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে রাজউক এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। টাকা চেয়ে গত তিন বছরে রেলওয়ের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার রাজউককে চিঠিও দেয়া হয়েছে, কিন্তু রেলওয়ের পাওনা বুঝিয়ে দিতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি রাজউক।
এ প্রসঙ্গে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুব-উল আলম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ডিসি অফিসের মাধ্যমে। রেলওয়ের পাওনা অর্থও এখনও ডিসি’র কার্যালয়ে জমা আছে। তাদের কোন আপত্তি থাকলে তারা সেখানে জানাতে পারেন। কিন্তু তা না করে রেলওয়ের পক্ষ থেকে রাজউককে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। রাজউকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন লাভ হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অভিযোগ, ‘উচিত মূল্য’ পরিশোধের কথা বললেও রাজউক তার কথা রাখেনি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর মূল্য পরিশোধের নাম নেই। শুধুমাত্র চিঠি চালাচালি করছেন তারা। ফলে রেলওয়ে ও রাজউকের মধ্যে চলছে টানাপড়েন। ইতিমধ্যে রাজউকের দেয়া ১০ লাখ টাকা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রেলওয়ে।
ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েই এখনও পড়ে আছে এ অর্থ। প্রয়োজনে রাজউকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে রেলওয়ে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য রেলওয়ের প্রায় ১০ দশমিক ১ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আদেশে ওই বছরের ২৯শে সেপ্টেম্বর জমি হস্তান্তর করে রেলওয়ে। হস্তান্তরের সময় এর মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৪৪৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বাজারমূল্য অনুযায়ী রাজউক এ অর্থ পরিশোধের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ডিসি অফিসের মাধ্যমে এ জমির বিপরীতে মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। রেলওয়ে এ অর্থ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে রাজধানীর যানজট ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পটি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ কাজটি করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাজউক।
এ জন্য ২০০৮ সালে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি রেলওয়ের প্রায় ৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করে সংস্থাটি। এ জমির দাম ধরা হয় ৬৯৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আদেশে ওই বছরের ২৮শে মে এ প্রকল্পের বিপরীতে জমি হস্তান্তর করে রেলওয়ে। জমি হস্তান্তরের পর জমির মূল্য বাবদ ডিসি অফিসের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করে রাজউক। এ অর্থও নেয়নি রেলওয়ে।
একই ভাবে ২০০৮ সালে তেজগাঁও থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য রেলওয়ের দশমিক ৯৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আদেশে ওই বছরের ১৮ই মে জমি হস্তান্তর করা হয়। জমির হস্তান্তরমূল্য ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও রেলওয়েকে দেয়া হয় মাত্র এক লাখ টাকা। এর আগে ২০০৪ সালে দয়াগঞ্জ থেকে জুরাইন পর্যন্ত নতুন সংযোগ সড়ক নির্মাণে রেলওয়ের ছয় দশমিক ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজউক। ওই সময় জমির অধিগ্রহণমূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০০৪ সালের ২৮শে জুলাই ওই জমি হস্তান্তর করা হয়। বাজারদর অনুযায়ী জমির মূল্য পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও এখন পর্যন্ত কোন অর্থ পরিশোধ করেনি রাজউক। চার প্রকল্পে রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণ ও মূল্য পরিশোধ না করা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুব-উল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পগুলোর বিপরীতে জমি অধিগ্রহণ বাবদ যে অর্থ বরাদ্দ ছিল, তা পরিশোধ করা হয়ে গেছে। জমির পরিমাণ অনুযায়ী ব্যক্তিমালিক ও রেলওয়েকে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। রেলওয়ে ইচ্ছামতো দাম চাইলে তা দেয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণে ১৯৯৮ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করা হয়েছে। যে কোন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেই তা অনুসরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজউকের কাছে জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে জমির মূল্য নির্ধারণ করে রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু তাহের এ প্রসঙ্গে বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে নামমাত্র অর্থ গ্রহণ করা কোনমতেই সম্ভব নয়।
রেলওয়ে ও রাজউক দু’টোই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। তাই কেবল সরকারি আদেশেই রাজউককে ছাড় দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় এ অর্থ আদায় করা হবে।
সুত্রঃমানবজমিন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।