আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিনেমার জাদুকর আলফ্রেড হিচকক

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ... আলফ্রেড হিচকক যাকে বলা হয় 'দি মাস্টার অব সাসপেন্স'। বিশ্ব চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি যিনি দর্শকদের মনস্তত্ত্বকে ভালোভাবে বুঝতেন আর সেটাকে কাজেও লাগাতে পারতেন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। একটি রোমহর্ষক দৃশ্যকে যেমন মর্মস্পর্শী হিসেবে তেমনি একটি ভালোবাসার দৃশ্যকে খুনের মতো করে উপস্থাপন করতে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তাই নিজের ব্যাপারে তিনি যথার্থই বলেছিলেন_ 'আমি দর্শকদের নিয়ে পিয়ানোর মতো খেলতে ভালোবাসি। ' আলফ্রেড হিচকক জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট লন্ডনের লেইটোনস্টোনে।

তার বাবা উইলিয়াম হিচকক শাকসবজি আর পোলট্রির ব্যবসা করতেন। মা এমা জেন হিচকক ছিলেন পুরোদস্তুর গৃহিণী। অল্প বয়সে বাবাকে হারানো আলফ্রেড গ্র্যাজুয়েশনের পাট চুকিয়ে ফিল্ম প্রোডাকশন ও ফটোগ্রাফির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তার জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয় যখন তিনি প্যারামাউন্ট পিকচার্সে টাইটেল ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর কয়েক বছর পরই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন।

১৯২২ সালে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র 'নাম্বার থার্টিন'-এর কাজ শুরু করলেও আর্থিক সংকটের কারণে তা শেষ করতে পারেননি। তার প্রথম দিককার চলচ্চিত্রগুলো ছিল নির্বাক এবং বেশিরভাগ ছিল ফ্লপ। ১৯২৭ সালে 'দ্য লজার : এ স্টোরি অব দ্য লন্ডন ফগ' দিয়ে তিনি থ্রিলার চলচ্চিত্র বানাতে শুরু করেন। তার হাত ধরেই থ্র্রিলার চলচ্চিত্রের ভাষা পাল্টে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে তিনি সাফল্যের মুখ দেখেন।

হিচককের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তার কাজের স্বকীয়তা ও মৌলিকতা। তিনি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতেন। তার চলচ্চিত্রগুলো রহস্য-রোমাঞ্চের পাশাপাশি প্রখর বুদ্ধিমত্তা, রসবোধ ও বিদ্রূপ প্রকাশেও সমানভাবে সফল। চলচ্চিত্রের টেকনিক্যাল ও ক্যামেরার কাজেও তিনি ছিলেন অনবদ্য, উদ্ভাবন করেছেন নতুন নতুন সব টেকনিকের। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে 'ভার্টিগো' চলচ্চিত্রটির কথা।

এ চলচ্চিত্রের ক্যামেরার কাজে তিনি এমন কিছু মুনশিয়ানা দেখিয়েছিলেন, পরবর্তীকালে বহু চলচ্চিত্র নির্মাতা এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন, যার নাম হয়ে গিয়েছিল 'হিচকক জুম'। আলফ্রেড হিচকক যুগ যুগ ধরে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীদের প্রেরণার উৎস। সাইকো ছবির একটি দৃশ্য চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আলফ্রেড হিচকককে কিংবদন্তি মানা হলেও তিনি তার প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক পরে। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র নির্মাণের পর ৬০ বছর বয়সে তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। তার চলচ্চিত্রগুলো জনপ্রিয় হলেও শৈল্পিক বিচারে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে গুরুত্ব পেত না।

এর প্রধান কারণ হচ্ছে হিচকক নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো ছিল মূলত রহস্য-রোমাঞ্চধর্মী। হিচকককে প্রথম আলোচনায় নিয়ে আসেন দু'জন ফরাসি। তারা হলেন লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও সমালোচক এরিক রোহমের এবং ফ্রান্সের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্লোদ শ্যাব্রল। তারা দু'জনই জার্মান চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রিডরিখ হিবলহেম মুরনাউ এবং রাশিয়ার বিখ্যাত চিত্রপরিচালক সের্গেই মিখাইলোভিচ আইজেনস্টাইনের সঙ্গে হিচককের তুলনা করে তাকে অনন্য ফিল্ম মেকার হিসেবে আখ্যা দেন। ফ্রান্সের আরেক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রাসোয়া ত্রুফো নিজের লেখা একটি বইয়ে হিচকককে 'উৎকণ্ঠার শিল্পী' আখ্যা দিয়ে দস্তয়ভস্কি, এডগার অ্যালান পো এবং কাফকার সঙ্গে তুলনা করেন।

রেবেকা ছবির একটি দৃশ্য দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মহান ফিল্মমেকার চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কারের জন্য ছয়বার মনোনীত হলেও একবারও জিততে পারেননি। বিশেষ যে ক'জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের অস্কার না পাওয়াটাকে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা অস্কার কমিটির ব্যর্থতা বলে মানেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আলফ্রেড হিচকক। তবে তার নির্মিত ‌'রেবেকা' চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ ছলচ্চিত্রের অস্কার জিতে নেয়। হিচকক নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো_ দি থার্টি নাইন স্টেপস [১৯৩৫], রেবেকা [১৯৪০], নটরিয়াস [১৯৪৬], সাইকো [১৯৬০], ভার্টিগো [১৯৫৮], রিয়ার উইন্ডো [১৯৫৪], নর্থ বাই নর্থ ওয়েস্ট [১৯৫৯], ডায়াল এম ফর মার্ডার [১৯৫৪], দি বার্ডস [১৯৬৩], দ্য ম্যান হু নিউ টু মাচ [১৯৫৬], ফ্যামিলি প্লট [১৯৭৬], স্পেলবাউন্ড [১৯৪৫], স্ট্রেঞ্জারস অন এ ট্রেন [১৯৫৯] প্রভৃতি কালজয়ী চলচ্চিত্র। হিচকক টেলিভিশনের জন্যও কাজ করেছেন।

তিনি ১৯৫৫ সাল থেকে টানা দশ বছর 'আলফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস' নামে ৩৬৫ পর্বের টিভি সিরিজ প্রযোজনা করেন, এর মধ্যে বিশটি পর্বের পরিচালক ছিলেন তিনি। দি বার্ডস ছবির একটি দৃশ্য মৃত্যুর তিন দশক পর সম্প্রতি হিচককের ১৯২৪ সালের একটি ছবির কয়েকটি রিল নিউজিল্যান্ডের ফিল্ম আর্কাইভে খুঁজে পাওয়া গেছে। 'দি হোয়াইট শ্যাডো' নামের এ চলচ্চিত্রটি কখনও মুক্তি পায়নি। হলিউডের এই কিংবদন্তি নির্মাতা ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। (তথ্যসূত্র: আইএমডিবি, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য ওয়েবসাইট এবং দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা) (১১ আগস্ট ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত) চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার যত পোস্ট  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.