ছোটবেলা থেকেই ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করি। একটু বড় হয়ে এর সাথে যুক্ত হ’লো পড়া ও লেখালেখি, তারপর ফোটগ্রাফি। বাইরে ছাইরঙা বিকেল। কম্বলের ভেতর থেকে শুধু মাথাটা বের করে জানালার দিকে তাকালাম। আকাশে মেঘ আছে কিনা বুঝলাম না।
সস্তা হোটেল, রুম হিটারের ব্যবস্থা নেই। তাই শার্শি বন্ধ থাকলেও এমন শীত করছে যে মনে হচ্ছে প্রবল জ্বর এসেছে বুঝি! একেবারেই ভালো লাগছে না। গ্যাংটক যেতে না পারার দুঃখটা ক্ষণে ক্ষণে বুকে মোচর দিচ্ছে। ধীরে ধীরে বাইরের ছাইরঙা বিকেলটা মরে পোড়া কয়লার মতো হয়ে এলে, ভেতরের বিরক্তি আর গোপন অবসাদ নিয়ে বিছানা ছাড়লাম। ঘটি অর্থাৎ কলকাতার আদিবাসিন্দা জানা বাবুর হোটেলে উঠেছি আজ দুপুরেই।
শিলিগুঁড়ি থেকে যে জিপে দার্জিলিং এসেছি তারই ড্রাইভার শচিন এই হোটেলের সন্ধান দিয়েছে। বিনিময়ে অবশ্য আমার কাছ থেকে না হলেও জানা বাবুর কাছ থেকে রোজগার করেছে নগদ ত্রিশ রুপি। দার্জিলি; দার্জিলিংই বা বলি কেন, আমার দেখা সব ট্যুরিস্ট প্লেসেই টাকা ছাড়া ফ্রি সার্ভিস নেই। গিজার আগেই চালানো ছিল, উত্তপ্ত জলে স্নান সেরে ভারি জামা কাপড় চাপিয়ে বাইরে বেরুলাম।
ম্যাল এ রোদ পড়ে এসেছে।
লোকজনের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাঙালি চেহারার যুবতিকে দেখতে পেলাম। শুধু মুখশ্রীর প্রতিই আমার আকর্ষণ বেশি। একটা আধভেজা ঠাণ্ডা বেঞ্চে বসে সিগারেট ধরালাম। যা ঠাণ্ডা পড়েছে তাতে এই মুহূর্তে খানিকটা ব্র্যান্ডি পেলে ভালো লাগতো; কিন্তু সূর্যাস্তের ঠিক এই মুহূর্তটাতে লিকার শপে ঢুকতে ইচ্ছে হলো না।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
লাল আকাশটার কোনো একদিকে সূর্য! এই সময় সূর্যের রশ্মিগুলো আলাদাভাবে দেখতে পাওয়া যায়। একটু কল্পনা করলাম- সন্ধ্যা বেলার সূর্য থেকে অসংখ্য লাল রঙের স্বপ্ন পৃথিবীতে ঝরে পড়ছে মনে হলো।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বেশিক্ষণ বসা গেল না। শচিনের নির্দেশিত পথে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় ঠিকই খুঁজে নিলাম শিরিং এয়ামোদের উডেন হোম কাম রেস্টুরেন্ট। বিশ বছর বয়সী সুন্দরী নেপালি যুবতি শিরিং শিলিগুঁড়ির এক নার্সিং হোমের ছাত্রী, শচিনের কাজিন।
যে ক’দিন দার্জিলিং আছি এখানেই সস্তায় খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। নেপালি এই পরিবার গত বিশ বছর যাবত দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা। শিরিংয়ের মা যথারীতি হাউজ ওয়াইফ, বাবা জিপ ড্রাইভার, বড় বোনের বিয়ে হলেও ছেলেপুলেসহ সে এখন বাপের বাড়িতেই। আধ কাঠা জমির ওপর কাঠের নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটাই এদের বাসস্থান ও অর্থ উপার্জন কেন্দ্র। ভর সন্ধ্যাবেলাতেই ডিনার সারলাম প্রচণ্ড ঝাল দেয়া চিকেন ও চীনে মূলার সালাদ দিয়ে।
অ্যাডভান্স দেয়া ছিল, খাওয়া শেষে শিরিংয়ের বড় বোন ডেজার্ট হিসেবে নিয়ে এলো ছোট্ট গ্লাস ভর্তি ঘরে তৈরি ওয়াইন। আমার ইতস্তত ভাব দেখে হিন্দি ভাষায় সে যা বোঝালো বাংলা তর্জমা করলে তার অর্থ দাঁড়ায় ‘ইহা পান করিলে খাদ্য ভালো হজম হইবে, শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাইবে, প্রাতঃকৃত্যে স্বস্তি লাভ করা যাইবে . . .’ এত গুণাবলী বিশিষ্ট তরল পান না করে পারা যায়! আগ্রহ ভরে গলায় ঢাললাম; বিস্বাদ তরল জ্বলতে জ্বলতে নেমে গেল পেটে। নির্মাতা অর্থাৎ শিরিংয়ের বোন সাংকেতিক ভ্রু উঁচিয়ে ‘কেমন’ জানতে চাইলে, তর্জনি ও বৃদ্ধাঙ্গুল এক করে সন্তুষ্টির সিগনাল দিলাম, যদিও ততক্ষণে বিস্বাদে ছেয়ে গেছে ভেতরটা। শুভ রাত্রি জানিয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ভেতর কুঁজো হয়ে দ্রুত হাঁটলাম। হোটেলে ঢোকার মুখেই জানা বাবু ধরে বসলেন, ‘আরে মশাই এই সন্ধ্যা বেলাতেই (তখন রাত আটটা) ঘুমাবেন কি? আসুন একটু গল্প সল্প করা যাক।
অনেকদিন পর একজন বাংলাদেশি ভাইয়ের দেখা পেলাম। ‘অনেকদিন’-প্রশ্নবোধক চোখে তাকাতেই জানা বাবু জানালেন দার্জিলিং এখন বড্ড অশান্ত। পৃথক’ প্রাদেশিক সরকারের দাবিতে গোর্খারা এখন এখানে প্রায়শই বন্ধ ডাকছে। খুনোখুনিও হয়ে গেছে বেশ কয়েকটা। সব মিলিয়ে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
মনে মনে আমার শঙ্কিত হয়ে ওঠাকে লক্ষ করে তিনি জানালেন যে বিদেশি বোর্ডার হিসেবে ইতোমধ্যেই তিনি আমার পাসপোর্ট কপিসহ অন্যান্য তথ্য স্থানীয় থানায় জমা দিয়েছেন নিরাপত্তার খাতিরে। এ সময় মি. সিন্হা (নামটি যদিও পরে জেনেছি) ঢুকলেন হাতে হুইস্কির বোতল নিয়ে। পরিচয় পর্ব শেষে জানতে চাইলেন দার্জিলিংয়ে এই প্রথম কিনা? জানালাম এ নিয়ে তৃতীয়বার। দার্জিলিং কী খুব ভালো লাগে জানতে চাইলে তাকে গ্যাঙটক ভ্রমণের বিফল নাটকটি সংক্ষেপে বললাম। মি. সিনহা প্রস্তাব দিলেন যে উনি অনায়াসেই আমাকে গ্যাংটক নিয়ে যেতে পারবেন।
উৎসুক হলাম, জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে। উত্তরে তিনি যে উপায় বললেন তা মোটেও পছন্দ হলো না আমার। পরিবর্তে আমার অদেখা কোনো জায়গায় নিয়ে যাবার অনুরোধ করলাম। এ জায়গা ও জায়গা হয়ে শেষে কালিমপঙ ও লাভার কথা এলো। এর মধ্যে মি. সিন্হা লাভার যে বর্ণনা দিলেন তাতে তখনই রওনা হতে ইচ্ছে হলো।
অবশেষে ঠিক হলো আগামীকাল সকাল ৯টা নাগাদ রওনা হবো। হোটেল রুম দু’দিনের জন্যে বুকিং ছিল। তাই জানা বাবু খানিকটা বুঝি অসন্তুষ্টই হলেন একদিনের বুকিং বাতিলের কারণে; বিশেষত: এখন যখন পর্যটকের ভয়াবহ সংকট।
রুমে ফিরে জিনিসপত্তর গুছিয়ে রেখে পুরু কম্বলের তলায় ঢুকলাম। চোখ বুজলাম ঘুমাবার উদ্দেশ্যে, কিন্তু অদ্ভুত! লক্ষ করলাম- ঘুম আসছে না।
শুধু এলোমেলো ভাবনা বিপুল জলরাশির মতো ভিড় করছে মাথায়। সুন্দর একটি মুখ বুকের আয়নায় উঁকি দিচ্ছে বার বার। চিনতে পারছি না। এ পৃথিবীর কাছ থেকে কি যে আমার চাওয়ার আছে সেটিই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমার এই বেঁচে থাকাটা যেন কেমন অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে ইদানীং! জানি, আমার এই অনির্দিষ্টতার পরিণাম ভয়াবহ।
এই আড্ডা, ঘোরাঘুরি, কবিতা লেখার জন্যে আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। তবে কেন বেঁচে আছি? কার জন্যে? সিনারার জন্যে? এশার জন্যে? কিছুই ভেবে পাই না। মাঝে মাঝে মনে হয়ে শুধু কয়েকটা প্রতিশোধের জন্যে আমার এই বেঁচে থাকা।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না, উচ্চস্বরে ইন্টারকম বেজে উঠতেই ঘুমের বারোটা বাজলো। সকাল আটটা।
এর আগের দু’বারই টাইগার হিলে গিয়েছিলাম সূর্র্যোদয় দেখতে, তাই এবারের জন্যে আয়োজন ছিল না। আধ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে নামতেই জানা বাবু জানালেন মি. সিনহা বিশেষ কাজে কলকাতা গেছেন। অবশ্য চিন্তার কোনো কারণ নেই কারণ তিনি অর্থাৎ জানা বাবু আমার লাভা ও কালিমপঙ যাবার বন্দোবস্ত করেই রেখেছেন। সাড়ে ন’টায় আমার জন্যে নির্ধারিত গাড়ি আসবে, আমি যেন তার আগেই ব্রেকফাস্ট সেরে আসি।
সকালের ধোঁয়াশে দার্জিলিং ভেদ করে যখন শিরিংদের রেস্টুরেন্টে পৌঁছলাম তখন তাদের রুটি বানানো শেষ হয়নি।
মিনিট পনের তাই বসতেই হলো। নাস্তা সেরে বিদায় নেবার সময় এ নেপালী পরিবারের নিখাদ আন্তরিকতা হৃদয় ছুঁলো আমার। শিরিংকে সাথে করে নিকটস্থ সুভেনিয়র শপে গেলাম; দোকানগুলো তখন সবেমাত্র খুলছে। মাঝারি দামের এক সেট স্টোনের অর্নামেন্ট গিফট দিলাম শিরিংকে। তার চোখের কোণা তখন চিকচিক করছে; কিন্তু হায় ভালোবাসার মতো দুঃস্বপ্ন দেখার নেশা আমার আর নেই।
মাঝে মাঝে যদিও মন খারাপ হয়, ভীষণ একা লাগে। কবিতা লেখার চেয়েও ভালোবাসায় যে কষ্ট বেশি। বিদায় নিলাম, জানি না আর কখনও দেখা হবে কিনা।
কাঁটায় কাঁটায় দশটায় রওনা হলাম কালিমপঙয়ের উদ্দেশ্যে। সতের’শ রুপির চুক্তিতে দার্জিলিং-কালিমপঙ-লাভা-কালিমপঙ।
দার্জিলিং থেকে সড়ক পথে কালিমপঙয়র দূরত্ব পঞ্চান্ন কিলোমিটার। পুরো পথটাই উঁচু নিচু পাহাড়ের মাঝে বসানো। মেঘমুক্ত দিন তাই প্রায় মিনিট দশেক ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের সঙ্গ দিলো/বরফ শুভ্র চূড়া মাঝে মাঝে ঝলসে উঠছে সূর্যের তির্যক রশ্মি লেগে। মিনিট পনের পরে ড্রাইভার একটি ছোট্ট হীল স্টেশনে চা বিরতি দিলো। অনেকটা টং-ঘরের স্টাইলে নির্মিত টি স্টলের জানালার ধারে বসেছি।
গয়ালের ঘনদুধের চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে আশেপাশের ঘন জঙ্গলের সবুজ দেখতে লাগলাম। চড়া রোদের কারণে ঠাণ্ডা ভাবটা অনেক কমে এসেছে। ঠিক এই মুহূর্তের অনুভূতি আসলে ব্যাখ্যাতীত। আমি একা, সুবিশাল এ পাহাড়ি অরণ্যে; অদ্ভুদভাবে এই নিঃসঙ্গতাই ভালো লাগতে লাগলো।
বিরতি শেষে গাড়ি আবার চলা শুরু করলে পিছনের সিটে হেলান দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
ড্রাইভারের ডাকাডাকিতে চোখ মেলে দেখলাম খুব বেশি চওড়া নয়- এমন চারটি রাস্তার সঙ্গমস্থলে গাড়ি দাঁড়িয়ে। আশেপাশে আরও অনেকগুলো গাড়ি, দোকান পাট, মানুষের ভিড়। জিজ্ঞেস করে জানলাম এটাই কালিমপঙ বাস স্টেশন। কালিমপঙয়ের বিভিন্ন গ্রাম এখান থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে বিভিন্ন দিকে। গাড়ি রিঙফুয়েলিং হবে এখানে।
পেটেও খিদে জানান দিচ্ছে। তাই ভেজিটেবল রোল ও খানিকটা চাউমিন সহকারে লাঞ্চ সারলাম। তারপর প্রথমে ফ্লাস্কের গরম জলে তারপর ঠাণ্ডা জলে মুখ হাত ধুয়ে নিলাম। একেবারে তরতাজা অনুভূতি হলো।
আমার এবারের গন্তব্য কালিমপংয়ের পঁয়ত্রিশ মাইল পূর্বের পাহাড় চূড়া ‘লাভা’।
যেহেতু আমি কালিমপঙয়ের অন্যান্য জায়গায় যাইনি বা কালিমপঙয়ে থাকিনি তাই কালিমপঙ নিয়ে বিস্তারিত কিছু লিখছি না। দু’পাশে ঘাসের সবুজ গালিচা সদৃশ ক্ষুদ্র প্রান্তর মাঝে সাপের মতো লকলকিয়ে উঠে গেছে পিচ ঢালা মসৃণ কালো রাস্তা। পুরোটা পথই একেবারে খাড়া উঠে গেছে লাভা অব্দি। বাইরে থেকে যা দেখলাম তাতে লাভাকে পাহাড় চূড়ার একটি উদ্যান মনে হলো। টিকেট কেটে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়লাম ভেতরে।
ঢুকেই নিঃশ্বাস আটকে গেল রকমারি পুষ্প উদ্যানের শোভা দেখে। দেশি-বিদেশি অজস্র ফুলের ফুলেল গালিচা কেউ যেন বিছিয়ে রেখেছে পার্কওয়ের দু’পাশ জুড়ে। একটু উঁচুতে হেঁটে উঠে দেখলাম সবুজ ঘাসে মোড়া ছোট একটি মাঠ যার একপাশে tudor Revivel আর্কিটেকচারে গড়ে তোলা তিন তলা একটি হোটেল কাম রেস্টুরেন্ট। প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্যের একপাশে এই একমাত্র মূর্ত দালান যা ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে। যদিও থাকবার কোন সুযোগ নেই, তাও স্রেফ কৌতুহলে হোটেলটিতে ঢুকলাম।
স্কটিশ ঢঙে ইন্টেরিয়র করা চমৎকার ভেতরের পরিবেশ। সময় স্বল্পতার কারণে একটু পরেই চলে এলাম আবার উদ্যানের মাঝে। হাঁটার জন্যে উন্নত পেভিং ব্লকে নির্মিত ওয়াকওয়ে, দু’পাশে উজ্জ্বল রঙের ফুলের গাছ। আর তারই মাঝে মাঝে সারিবদ্ধ ফারট্রির সমারোহ। এবার আসা যাক লাভার আসল সৌন্দর্যের বর্ণনায়।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে লাভার উচ্চতা ও সূচালমুখী গঠন আয়তনের কারণে বাতাসের চাপ এখানে অপেক্ষাকৃত কম। ফলে মেঘের দল প্রায়শই থাকে হাতের নাগালে। কখনও কখনও পা ভেদ করে যায়। লাভাকে এক কথায় মেঘরাজ্য বা মেঘকন্যাও বলা যায়। প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে পার্কের বেঞ্চের আশেপাশে ভাসতে থাকা কয়েকটি মেঘের মধ্যে ঢুকে গেলাম।
পরক্ষণেই বেড়িয়ে এলাম স্যাঁতস্যাঁতে অনুভূতি ও লেপটানো কাপড় নিয়ে। খেলাটা বেশ জমে গেল কিছুক্ষণের জন্যে। পাহাড়ের চূড়া বেয়ে ধীরে ধীরে মেঘেরা উঠে আসে উদ্যানে আর সে মেঘের মাঝে ফুড়ণ্ডৎ করে ঢুকে যাই আমি। বেড়াতে আসা আশেপাশের অনেক তরুণ তরুণীও আমার দেখাদেখি এই মেঘস্নানে যোগ দিলো। এরপর বেশ কিছুক্ষণ ছবি তোলা হলো।
তারপর অনুমতি নেই তবুও পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে শুয়ে ধোঁয়াশে আকাশ দেখতে লাগলাম।
এভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানি না, ড্রাইভার এসে ডাকতেই ঘড়ি দেখলাম, বেলা তিনটা। সমতলে অর্থাৎ শিলিগুড়িতে পৌঁছুতে পৌঁছুতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। উঠে এলাম, ড্রাইভারের পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম মূল ফটকের কাছাকাছি। এতক্ষণ যা চোখে পড়েনি এবার তা দেখলাম।
বামদিকে ঢালুতে বিশাল এক কৃত্রিম জলাশয়, যদিও বৃষ্টির অভাবে জল তখন নিঃশেষ প্রায়। পাড়ের ছোট ছোট রঙিন বোট দেখে বুঝলাম এখানে রাইডিং এর ব্যবস্থাও আছে।
কালিমপঙয়ে গাড়ি বদল করে শেয়ারিং জিপে চড়ে যখন শিলিগুড়ি পৌঁছালাম তখন সন্ধ্যা নামছে তার অন্ধকারের পাখা মেলে। গতকাল রাতেই ফোনে টিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাই হাতে অঢেল সময় কাটাতে কিছু খুঁজে না পেয়ে দু’তিনটে শপিং মল ঘুরে ঘুরে দেখলাম।
কিছুক্ষণ সময় কাটালাম সাইবার ক্যাফেতে। রাত আটটা বেজে এলে রিকশা ধরে পৌঁছে গেলাম নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন স্টেশনে। প্ল্যাটফর্মেই এক দোকান থেকে রুটি ও আলুর সুস্বাদু তরকারি সহযোগে ডিনার সারলাম। ডেজার্ট হিসেবে খেলাম দু’পিস পাহাড়ি সুমিষ্ট পেঁপে।
মধ্যরাত্রি উতরে গেছে কখন।
লালচে আভার আকাশ দেখে ঝড় আসবে মনে হলো। প্ল্যাটফর্মে লোকের আনাগোনাও কমে গেছে। পাশের বেঞ্চে বসে থাকা কয়েকটি পরিবার গল্পরত, এলোমেলো হাওয়া তাদের আলাপচারিতার শব্দাংশ উড়িয়ে নিচ্ছে। অন্ধকারে কারো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎই নিজেকে খুব একা মনে হলো।
এভাবে নিঃসঙ্গ ঘোরার চেয়ে Charts Only তে পরিচয় হওয়া আমার বন্ধুদের সাথে নিয়ে পরবর্তী ট্যুরের পরিকল্পনা করতে করতে ট্রেন ঢুকলো প্ল্যাটফর্মে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লেট।
জানালার ধারে বসে দেখলাম মেঘেদের ভিড়, জ্যোৎস্না রাত, অবতল চাঁদের ছেঁড়া ছেঁড়া জ্যোৎস্না। ট্রেন চলার ধারাবাহিক শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই। শহরের কোলাহল এখানে পৌঁছোয় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।