মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শিশুদেরকে ভালবাসতেন গভীর মমতায় - ইতিহাস তা সাক্ষ্য দেয়। হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বিশ্বাস করতেন, গভীর ভালবাসায় শিশু বান্ধব পরিবেশে আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করতে পারলেই গড়া যাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। কিন্তু শিশুদের প্রতি দরদীয়া বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন পূরণে আমাদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
১। ছোট থাকতে আমরা ঘুম থেকে উঠেই মক্তবে যেতাম।
কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মুল্যবোধ, নামাজ, দোয়া-দুরুদ ইত্যাদি শিখার সুন্দর একটি পরিবেশ বজায় ছিল। কিন্তু এখন দেখি, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই আমাদের বেশিরভাগ সন্তানদের খেয়ে-না খেয়ে দৌঁড় দিতে হয় কিন্ডারগার্টেনে কিংবা হাজিরা দিতে হয় কোন গৃহ শিক্ষকের কাছে। এটি ঘটছে আমাদের শিক্ষাক্রম ও সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে – অস্বীকার করার জো নেই। ফলে, কিছুটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সকাল বেলা কোরআন ও নৈতিক মুল্যবোধ শিক্ষা। এভাবে বেড়ে উঠে আমাদের শিশুদের কেহ কেহ হয়ে উঠছে রাজীবের মত পথভ্রষ্ট তরুণ, বিষিয়ে উঠছে আমাদের সমাজ।
২। আমাদের সময়ে মাগরিবের আযানের পরে কোন শিশু বাড়িতে ঢুকবে এমন সাহস কারো হতো না। মাগরিবের আযানের পরে প্রথমেই কোরআন পড়ে তারপর স্কুলের পড়া রেডি করতাম আমরা। চমৎকার সময় কাটছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অযাচিত ব্যবহারের কারণে শিশুরা সে পরিবেশ থেকে বঞ্চিত।
গ্রামে-গঞ্জের প্রতি দোকানে এখন টিভির পাশাপাশি, ভিসিআর কিংবা ডিসেন্টিনা রয়েছে। আমরা দেখি, স্কুলে যাওয়ার পথে দোকানের টিভিতে চোখ আটকে যায় আমাদের সন্তানদের। মাগরিবের আযানের পরে যাদের টেবিলে বসার কথা তারা তখন দোকানে বসে বসে টেলিভিশন দেখছে। আশ্চয্য হই এদের হিন্দি ভাষা বুঝে হাসাহাসিতে। শিশুরা বাড়ির প্রয়োজনে দোকানে যাক্ সমস্যা নেই।
কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পরে শিশুরা দোকানে বসে থাকবে কেন। ব্যবসায়িক প্রয়োজনটা বড় হওয়ায় দোকানদারও কোন শিশুকে তাড়িয়ে দেয়না। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বলি, এই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা না করলে ভবিষ্যতে একটি ওয়ার্ডের বিচার সামলানোর জন্য ৩জন মেম্বারের দরকার হবে। বোধোদয় হয়না জনপ্রতিনিধিদের, আফসোস! সেদিন এক দোকানদারকে স্কুলে যাওয়ার পথে বলি, এখন স্কুলের সময়ে টিভি চালু রেখে এই ছোট্ট শিশুদের বসিয়ে রেখেছ ভাল। কিন্তু পড়াশোনা করতে না পারলে এরা বড় হয়ে চোর-ডাকাতে পরিনত হতে বেশি সময় লাগবে না এবং এদের প্রথম চুরি-ডাকাতিটি বোধ হয় তোমার দোকান দিয়েই শুরু হবে! দোকানী হাসে।
সন্দেহ নেই আমাদের শিশুরা ধীরে ধীরে পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্টদের তদারকি আমাদের কষ্ট দেয়।
৩। আমাদের শিশুরা আজ শাহবাগে যাচ্ছে। কঁচি কন্ঠের ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ স্লোগানে বিশ্ববিবেক আবেগাপ্লুত হচ্ছে।
কড়া প্রটেকশনের উৎসবে শিশুরা যাক্ সমস্যা নেই। কিন্তু এরা বড় হয়ে যখন জানবে, এই শাহবাগের কিছু পথভ্রষ্ট ব্লগার আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে অপমানকর কথা বলেছিল এবং তার বাবা-মায়ের আন্দোলনের প্রভাবে নাস্তিকদের শাস্তি প্রদানে বিলম্ব হয়েছিল, তখন তাদের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হলে বড় হয়ে তারা তাদের বাবা-মায়ের আন্দোলনের নৈতিকতাকে সন্দেহের চোখে দেখবে না – কে নিশ্চয়তা দেবেন!। কারণ আমাদের ছেলেরা যত বুদ্ধিমান ও প্রযুক্তিজ্ঞান সমৃদ্ধ হবে ততই পরওয়াদেগারের প্রতি কৃতজ্ঞতাভাজন হবে। যেটি শিশু সহজে বুঝবে, যেটি তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতিতে কাজে আসবে কেবল সেখানেই আমাদের শিশুদের নিয়ে যাওয়া ভাল- আমাদেরকে এ প্রবোধ কে দেবেন!
৪। শিশুদেরকে যে বইগুলো সরকার ফ্রিতে দেয় সে বইগুলো ছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশনীর অনেক বই আমরা শিশুদের জন্য পাঠ্য করি।
বইয়ের ভারে আমাদের শিশুরা নুয়ে পড়ে, গাদা গাদা বই পড়তে গিয়ে আমাদের শিশুরা মুখস্থ বিদ্যায় পারদর্শি হয়ে ওঠে কিন্তু টাকার প্রতি আমাদের অধিক মোহ তা আমাদের দেখতে দেয়না।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, আমাদের ছেলেরা জ্ঞানে গরিমায় আদর্শের সৈনিক হবে, ভিন্ন মতকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে, দলমত নির্বিশেষে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। কিন্তু আমাদের চলমান রাজনীতির সাংঘর্ষিকতায় আমাদের শিশুরাও আজ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ আলোকিত হৃদয়ের সব মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর শিক্ষা আমাদের শিশুরা কি পাচ্ছে – সন্দেহ থেকে যায়। আমরা চাই, আমাদের শিশুরা নৈতিক মূল্যবোধে মানবিক মানুষে পরিনত হোক, আমাদের সবার আন্তরিকতায় শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হোক।
বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনাসহ পৃথিবীর সব শিশুর জন্য ভালবাসা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।