আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোকা মানুষের গল্প-০১

কিছু মানুষ থাকে যারা জন্মগত ভাবে বোকা। জীবন তাদের কোনো ভাবেই বুদ্ধিমান বানাতে পারে না। যাই হোক আমার জীবনের গল্প শুরু ১৯৯০ এর অক্টোবর থেকে। জীবনে যে কতো বোকামি করছি তার লিস্ট খানি বিশাল । একদম লেটেস্ট টা দিয়েই শুরু করি।

আমি প্রেমে পরেছি। প্রেম জিনিসটা সিনেমা তে দেখতে ভালই লাগে কিন্তু নিজেকে কখনো সেরকম অবস্থাতে কল্পনা করতে পারি নাই। মারাত্তক ন্যাকামি মনে হত । বিশেষ করে ইংরেজী মুভিতে নায়ক যখন নায়িকার সামনে হাটু গেড়ে প্রপোজ করত তখন আমার মাথাতে আগুন ধরে যেত। একটা মেয়ের জন্য কেউ এতটা পাগল হবে এটা মেনে নিতে পারতাম না।

বন্ধুদের GF দেখে নাক সিটকাতাম। যাই হোক বেশ চলে যাচ্ছিল কিন্তু গোলটা বাধল তখনই যখন আমি জীবনের প্রথম ছাত্র পড়াতে গেলাম। ভুল লেখছি ছাত্র না ছাত্রী । আমি তো প্রথম দেখাতেই কাত। যদি বন্ধুদের চোখে দেখি তাহলে তাকে খুব বেশি সুন্দরী বলা যাবে না কিন্তু ভালবাসা অন্ধ।

আমার চোখে সে পৃথিবীর একমাত্র সুন্দরী। আসলে যে দেখেই ভাল লেগে গেছে সেটা বলা টা ভুল হবে। ওর কথার মধ্যে একটা যাদু আছে। যখন বলা শুরু করে তখন আমার পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। ওর যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করল সেটা হচ্ছে ও যা বলে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করে আর এতো সহজ চিন্তা করে যা ওকে ভাল না বেসে কোনো উপায় নেই।

প্রথম দিন আমরা দুই বন্ধু গেছিলাম। আমি পড়াবো আর আমার বন্ধু আবার ওর ও বন্ধু । এখন একটু বলা দরকার যে আমার মতো বোকা মানুষ এই মেয়েকে কি পড়াবে???আমি জীবনে একটা জিনিসই একটু মন দিয়ে শিখছি প্রোগ্রামিং। তো তাকে এই জিনিসেরই একটা ক্র্যাশ কোর্স করিয়ে দিতে হবে। সি প্রোগ্রামিং এর সহজ পাঠ ।

পরদিন আসতে পারব না কিন্তু এর পর থেকে প্রতিদিন আসব এই কথা দিয়ে চলে আসলাম। পরদিন কিন্তু ঠিকই বান্দা হাজির। ল্যাব না করে পড়াতে চলে আসলাম । আসার পথে অল্পের জন্য মরার হাত থেকে বাচলাম। বাসে জায়গা না পেয়ে হ্যান্ডল ধরে ঝুলে যাচ্ছিলাম তো আরেকটা বাস এসে সুন্দর করে আমাকে স্যান্ডউইচের মধ্যেকার কিমা বানায় দিল।

পিঠে সাংঘাতিক ব্যাথা পাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই হয় নি। যাই হোক শেষমেস পৌছলাম। আমার আসার কথা না তাও যে আসছি এইটা তার মধ্যে কোনো কৌতূহল তৈরি করল না দেখে একটু কষ্ট লাগলো। মনে হইলো জিবনটা হাতে নিয়ে পড়াতে আসলাম একটু মিষ্টি কথা শুনলে ভালই লাগতো। তারপর ও ভালবাসা অন্ধ,তার এই ভাবলেশহীন আচরণ ও আমার ভাল লাগা স্কোয়ার করে দিল।

আজ তার বাম দিকে বসছি। সে তার লাল রঙের ল্যাপটপের সামনে আর আমি পাসে। আজ ওকে ভাল করে দেখলাম। দুইজনের মধ্যে দুরত্ব ১২ ইঞ্চি বা একটু কম। বাম কপালের কাটা দাক টা স্পশট।

চোখে বাজতেছে। ইচ্ছা করছে দাকটার উপর হাত রেখে বলি...সেলাই করার সময় কি বেশি ব্যাথা লাগছিল। কিন্তু তা আর বলা হয় না। আমি পড়িয়ে যাই। লুপ পড়াই ফাংশন পড়াই...।

লুপ পড়াতে পড়াতে নিজে যে তার লুপে পরে গেছি সেটা আর বলতে পারি না। আমার ঘুম ভাঙে ওর কথা ভেবে আবার চোখ বন্ধ হয়ও ওর কথা ভাবতে ভাবতে। ওর হাসি টা না শুনলে এখন আর আমার ভাল লাগে না। অ্যালগরইদম ল্যাবে কোড না করে ওর কথা মনে ক্রি। যখন ও কোনো প্রবলেম শলভ করতে পারে না তখন চীৎকার করে বলে "......মিলে না কেন??help me"...আমার নাম ধরে যখন ডাক দেয় আমার হার্ট বিট দুই একটা মিস হয়ে যায়।

বাম নাকের পাশের ছোট্ট তিল টা আমার মন জুড়ে পরে থাকে সারাদিন । যখন আজান দেয় তখন ও ওড়নাটা মাথাতে দেয়। এত্তো পবিত্র লাগে তখন ওকে...। মনে হয় একটা পরী বসে আসে আমার সামনে। ইচ্ছা হয় ওকে বলি তুমি কি আমার হবে?কিন্তু তা আর বলা হয় না।

দুইজন এতো কাছাকাছি তবুও দূরত্ব অনেক... ও মনে করে আমি ওর কোনো কথা বুঝিনা কারন ও যাই বলে তা আমি শুনে বলি যে কিছুই বুঝি নাই আবার বল। আসলে ওর কথা শুনতে এত ভাল লাগে যে আরো কয়েকবার শুনতে ইচ্ছা করে । কলমটা নিতে গিয়ে,কীবোর্ডের কী চাপতে গিয়ে হাতে ছোঁয়া লাগে। পুরোই ক্ল্যাসিক প্রেম আমার। যাই হোক আমার ছাত্রী কিন্তু পুরোই dc signal।

সে সি শেখার প্রাণাত্মক চেষ্টা চালাই যাচ্ছে। আমি যা তার প্রেমে ডুবে প্রায় মরেই গেছি তা তার নজরে পরে নাই। তাকে বেশ কিছু এস এম এস করি প্রতিদিন। প্রোগ্রামিং এর আড়ালে একটু মনের কথা । কয়েক দিন ভালই চলল।

এস এম এস এর উত্তর দেখে মনে মনে বাচ্চা কাচ্চা পর্যন্ত পয়দা করে ফেল্লাম...নাম ও ঠিক ( সব আমার মনে )। তারপর হঠাৎ একদিন বলল আর মেসেজ না করতে । ওর বাবা নাকি ওর মোবাইল ওনার কাছে রাখে। মেনে নিলাম...। ভদ্র ভাবে না করলে আর কি করা...সবার তো আর সবাইকে ভাল লাগে না।

বুদ্ধিমান মেয়ে আর আমি একটা বোকা ছেলে। তাই এতদিন অসম্ভব কে সম্ভব করার স্বপ্ন দেখেছি। আগামিকাল ওকে শেষ বারের মতো পড়াবো...। বাড়ি চলে যাচ্ছে। আর হয়তো দেখা হবে না এই জীবনে...।

যদি ভালবাসা বলে কিছু থাকে তাহলে আমি ওকে ভালবেসেছি...অনেক বেশই বেসে ফেলেছি...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.