প্রবাসী
আমি তখন ছাত্র। পড়ি সিলেটে। গ্রামের বাড়ী যশোরে। সেই সময়ে সিলেট থেকে গ্রামের বাড়ী ফেরা চারটি খানি কথা ছিল না। সিলেটের বাস গুলো কুমিল্লার ময়নামতি হয়ে ব্রাক্ষনবাড়ীয়া হয়ে, ৫/৬ টা ফেরী পার হয়ে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা লাগিয়ে ঢাকা থেকে সিলেট পৌছাত।
আবার ঢাকা থেকে যশোর কিছুটা কম সময় লাগলেও ৩/৪টা ফেরী ছিল, ওখানেও প্রায় ১০ ঘন্টা লাগত। এই দীর্ঘপথ একবারে পাড়ি দেওয়া ছিল ঝামেলার। দু একদিন আগে না কাটলে ভাল বাসের টিকিট পাওয়া যেত না ফলে ঢাকায় দু এক দিন বন্ধুর মেসে কাটিয়ে রওয়ানা দিতাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে । বন্ধুর মেস ছিল কমলাপুরে। কমলাপুর স্টেশন থেকে বেরিয়ে রেল হাসপাতালের পাশের রাস্তা দিয়ে শর্টকাট রাস্তা মতিঝিল যাওয়ার।
সেই রাস্তার পাশে গলির মধ্যে ব্যাচেলর বন্ধুর মেস।
তখনও রেল হাসপাতাল হয় নি। কমলাপুর- নারায়নগঞ্জ রেল লাইনের ওপারে মুগদাপাড়া আর এপারে কমলাপুর, মাঝে কোন জনবসতি নেই, ধু ধু মাঠ। পায়ে হাটা কাচাপথ ধরে রেল লাইন পেরিয়ে মুগদাপাড়ায় আরেক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি এক সন্ধ্যাবেলা। তখন ঐ যায়গায় জনবসতি গড়ে ওঠে নি , অল্প দুই একজন আসা যাওয়া করছে ।
ছিনতাইকারীদের সংখ্যা কম থাকলেও মাঝে মাঝে দু একটা ছিনতাই হত ওখানেই । অন্ধকারের রাস্তা টুকু পেরিয়ে ওপারে মুগদাতে পৌছে গেলেই ঝামেলা শেষ।
বেশ দ্রুত হেটে যাচ্ছি। কাচা রাস্তার পাশে বসে গল্প করছিল ৫/৬ জন মেয়েছেলে। গরীব ঘরের মেয়ে তা ওদের পোষাক আশাক দেখলেই বোঝা যায়।
ওদের মধ্য থেকে ১৮/২০ বছরের এক মেয়ে উঠে এসে আমার সামনে দাড়ালো। মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম। নির্জন, অপরিচিত যায়গা কি না কি বিপদ ঘটে, মেয়ে হলেও ভরসা কি? যাই হোক সাহসে ভর করে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম”কি ব্যাপার”। -কই যান সাহেব, এই দিকে একটু আসবেন? পালাতে পারলে বাচি আবার কোন দিকে যাবো? বললাম “না” মেয়েটা হাসছিল। এবার হাসি থামিয়ে বলল “ স্যার না খেয়ে আছি দুই দিন, আমাকে কিছু দিন” তাড়াতাড়ি পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটাকা বের করলাম।
ঐ সময় একটাকা আমার কাছে অনেক, ভিক্ষা দিতাম ১০ বা ৫ পয়সা, পালানোর খাতিরে ঐ একটাকা দিয়ে দিলাম। টাকা পেয়ে পথ ছেড়ে দিল মেয়ে। দু পা এগোতেই শুনি হেসে উঠলো সব মেয়েগুলো । মেয়েটা অন্যদের কাছে ফিরে গিয়ে হেসে হেসে বলছে “ গাধা মিনসে কিছু বোঝে না” অন্য মেয়ে বলছে “ভীতু একটাকে ধরলি , ওর কামের মুরোদ নেই , কিছু না বুঝে পালিয়ে বাচলো”
কারা ছিল ঐ মেয়েগুলো আর আমি কি বুঝতে পারি নি সেদিন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।