আমি বাঁচতে ভালবাসি।
(যা লিখলাম তা সম্পূর্ণ আমার নিজ দর্শন,চিন্তাধারা,আদর্শ এবং সংগৃহীত তথ্য ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে)
Latin শব্দ cultura stemming from colere, meaning "to cultivate" অথবা ইংলিশ CULTURE ,জার্মান KULTUR,KULTURELL শব্দ এর বাঙলা অর্থ PURIFICATION,REFORMATION,PERFECTION,CONSECRATION এর সমার্থক,এর অর্থ বাঙলায় দাঁড়ায় পরিশুদ্ধায়ন,পুনর্গঠন, উৎকর্ষ । স্বাভাবিক অর্থে সংস্কৃতি বলতে বোঝায় এমন একটি ব্যবস্থা যার মধ্য দিয়ে একটি এলাকা বা জাতি বা ধর্ম বা গোষ্ঠীগত সাদৃশ্য, আচার্,সামাজিক রীতি, নীতি , মানসিকতা, অনুশাসন এবং অনন্যা স্বাতন্ত্র্য এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে, তাতে বিদেশি বা অপ সংস্কৃতির মিল অমিল দুটি ই থাকতে পারে।
বিদেশী সংস্কৃতি এবং অপসংস্কৃতি বলতে আমরা আপাত বুঝি অন্যান্য দেশি এলাকা জাতি বা ধর্ম বা গোষ্ঠীগত সংস্কৃতি , যাকে আবার অনেকে বলে অপসংস্কৃতি ।
জাতিগত দিক থেকে আমরা ইন্দো-ইউরো বা ভারতবর্ষীও, বাঙালি, বাঙালি (মুসলিম- অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ),বাংলাদেশি এবং এ ছাড়াও আরও ক্ষুদ্র গোষ্ঠী এর সমন্বিত একটি গোষ্ঠী,ভাষাগোষ্ঠী এবং পরবর্তীতে স্বতন্ত্র্য বাংলাদেশের অধিবাসী -বাঙালি(ও অন্যান্য) জাতি(বাঙ্গালি ও অন্যান্য জাতিগত সাংস্কৃতিক দলের সমন্বিত বাংলাদেশি জাতীয়তার নাগরিক)।
পাঠক,কঠিন কথা বলে ফেল্লাম নাকি? যাইহোক, এইগুলো সম্পর্কে অনেক তাত্ত্বিক আলাদা মত দেবেন,তার মধ্যে আমি যাব না । এখন আসাযাক মূল বিষয়ে; সংস্কৃতি প্রতিটি দেশে,জাতিতে, গোষ্ঠীতে, অঞ্চল ভেদে আলদা। কিন্তু প্রশ্ন হল তাহলে অন্যান্যর সংস্কৃতি আমাদের কাছে কি? আলদা সংস্কৃতি নাকি অপ সংস্কৃতি?নাকি অন্যকিছু? অনেকে আজকাল বলে যে দেশে নাকি অপ-সংস্কৃতি বেড়ে গ্যাছে!জাতি নাকি অপসংস্কৃতিতে ডুবে গ্যাছে!!আমি বলি কথাটি তে শব্দের ভুল প্রয়োগ আছে বা সব ক্ষেত্রে এই কথা খাটে না । এখানে আমাদের একটা বিষয় ক্লিয়ার হওয়া দরকার। অপসংস্কৃতি কি আর বিদেশি সংস্কৃতি কি? কখন কোনটা কি মিন করছে সেটা বিবেচনা করার দরকার আছে বৈকি।
এখন আসা যাক বাঙালি সংস্কৃতি আসলে কি?
বাঙালি-সংস্কৃতি হল বাঙালি জাতিগত ভাষা, উপভাষা, সাহিত্য-বিনোদন, খাদ্যাভ্যাস , ধর্ম, লোকাচার, কৃষ্টি, লোককথা, এবং সামাজিক রীতিনীতি ও অনুশাসন এর দ্বারা গঠিত ছোটবড় জাতি গোষ্ঠীর আদর্শ (কমন) অংশের সমষ্টি। বাঙালি সমাজ দ্বারা গৃহীত, স্থাপিত বা সংস্কারকৃত আচার ব্যবহার ই বাঙলা সংস্কৃতি ।
প্রশ্ন হলঃ-
১। বাঙ্গালিদের মধ্যে মুসলিম, হিন্দু, ক্রিস্টিয়ান, বৌদ্ধ, শিখ, সহজিয়া, বাউল, বৈষ্ণব, ব্রাহ্ম, ছাড়াও আরও অনেক ধর্মীও বৈচিত্র্য আছে তাহলে এখানে বাঙ্গালিরা কি জাতিগত ভাবে এক?
২। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত,নেপাল, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণআফ্রিকা সহ সারা পৃথিবীতে ৩০ কোটির কাছাকাছি মানুষ জাতিগত ও বংশধারার ভিত্তিতে বাঙালি এবং মিশ্র বাঙালি জাতি,যারা বাঙালি বা বাঙলা ভাষা-সংস্কৃতির সাথে কোন না কোন সূত্রে আবদ্ধ।
তাদের (বাংলাদেশ এর বাইরের বাঙ্গালিদের বাঙ্গালিয়ানা ) সংস্কৃতি কি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে?
৩। বাঙ্গালি সংস্কৃতির মূল কি? বাঙালি সংস্কৃতির মৌলিকতা আছে কি?বাঙ্গালি সংস্কৃতিতে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল, শাসক শ্রেণীর প্রভাব, ধর্মীও মতাদর্শ, বিদেশি ভাষা সাহিত্য লোকাচার এবং আদিবাসী দের প্রভাব কতখানি নেতিবাচক এবং ইতিবাচক?
মূল এই তিন বিষয়ে আমি আমার মতামত পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চাই।
***বঙ্গ ,বঙ্গাল, বগলা, বাংলা , বাংলাদেশ( স্বাধীনতার পূর্বে ব্যবহৃত বাংলা অঞ্চল বোঝাতে) এই টার্ম গুলো বিভিন্ন সময় ব্যবহার হয়েছে! মোটামুটি এটি দিয়ে যে এলাকা কে চিহ্নিত করা হতো সেটা হল সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সহ পার্শ্ববর্তী কিছু অঞ্চল । এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের ভাষা বহুদিন ধরে বাঙলা/প্রাকৃত এবং ধর্ম বৈদিক, প্রাকৃত। তবে অঞ্চল ভেদে উপভাষা ও শব্দচয়ন আলাদা এবং বিচিত্র ছিল।
আরিয়ান( আরয) রা এদেশে আসার পর তারা এই দেশের সংস্কৃতি এবং পরিবেশের সাথে নিজেদের সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটান। তুর্কি, মুঘল,সুলতানি, ইংরেজ, ছাড়াও ইউরোপ মহাদেশের অনেক জাতি দ্বারা বাঙালি তথা সমগ্র ভারতবর্ষ রুল হয়েছে শতশত বছর। যারা এদেশে ধর্ম প্রচার,ব্যবসা বা রাজ্য শাসন করতে এসেছিল তারা বাঙালি জাতির সাথে মিশে আস্তে আস্তে কয়েক পুরুষের মধ্যেই বাঙালি হয়ে ওঠে । তারা আমাদের সংস্কৃতি তে অনেক কিছু যোগ করে চলেছে আজ অবধি। সেটা গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে মেপে নিয়েছে বাঙ্গালিরা।
দিয়ে গেছে ধর্ম, দর্শন, নতুন সংস্কৃতি, শব্দভাণ্ডারে অসামান্য উপাদান। বর্তমানে সেই প্রেক্ষাপট (পার্শ্ববর্তী অঞ্চল,বিদেশি শাসক শ্রেণীর প্রত্যক্ষ প্রভাব) আর নেই । আমরা এখন স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেরাই প্রজা শাসন করছি।
***দেশভাগ এর সময় আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশে থেকেযান। তার নাম পুলিন বিহারী রয়- প্রবীণ পাঠকেরা তার নাম জানতে পারেন;তাই উল্লেখ করলাম আর কি।
যাইহোক, আমাদের দুইবাংলায় ই যথেষ্ট জমিজমা আর আত্মীয় স্বজন ছিল। দাদু ভেবেছিল দুই ভাগ করে বাঙলাকে আলাদা করা বেশিদিন বাঙলার মানুষ মেনে নেবে না। বঙ্গভঙ্গ রদ হয়েছিল। কিন্তু কিছু পুনরাবৃত্তি আর হোল না(দেশভাগ)। পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক-ধর্মীয় স্বার্থ এবং পূর্ববঙ্গের পশ্চাদপদ মানুষের সাথে ততদিনে পশ্চিমা বাবুসমাজ সব শংস্রব ত্যাগ করেছে।
মুসলিম নেতারাও চান নি তাদের আধিপত্য ছাড়তে। বাংলার জনগন কে বোঝানো হল হিন্দু মুসলিম আলাদা জাত!ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ এর স্বপ্ন পুরন হল চিরতরে(বঙ্গভঙ্গ ও দেশভাগ) । যাইহোক, তখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আলাদা আমরা আলাদা দেশের নাগরিক। কিন্তু আসলে কি আমরা জাতি হিসেবে( জাতীয়তা নয়) আলাদা? ভাগিরথীর দু পারের মানুষের বাঙলায় মূল পার্থক্য আছে( শব্দভাণ্ডারএ ফারসি আরবির তারতম্য) বলে একজন পণ্ডিত বাঙলাকে আলাদা বলেছেন। সাহিত্য সংস্কৃতি, গুনিমানি, পণ্ডিত,গায়ক, সমাজ সংস্কারক, ধর্মীয় সংস্কৃতি , সব দিক দিয়ে দুই বাঙলা একে অপরেরে সহায়ক ছিল ।
আমারতো মনে হয় যদি লতা মুঙ্গেস্কর বা আশা ভোঁস্লে, পণ্ডিত রবিশংকর কে বাঙলা গানের খাতা থেকে এখন বাদ দেওয়া হয় তাহলে জাতি হিসেবে আমি সন্দিহান নজরুল রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও পাঁচ কবির গান কেন বাঙালি সংস্কৃতি বলি? এ তো ইন্ডিয়া র অধিবাসীদের গান,তাতো বিদেশি হওয়া উচিৎ। আমাদের সংস্কৃতি তে এইগুলো তো এখন বিদেশি। মনে করা হয় দেশ স্বাধীন হওার সাথে সাথে আমাদের জাতিগত( জাতীয়তা নয়) আলাদা পরিচয় হয়েছে। বাঙ্গালির বদলে আমার বাংলাদেশি বলতে কোনরকম অশুবিধা হয়না। কিন্তু হাজার বছরের সংস্কৃতি কি দেশ দিয়ে আলাদা করা যায়? পণ্ডিতরা স্বীকার করে গ্যাছেন যে ভাষা ,সংস্কৃতি, নদীর মত হাজারো শাখা প্রশাখা, হাজার বাঁক, তাকে ধরে রাখা যেমন যায়না, ধরে রাখতে চেষ্টা করাও বৃথা।
আমার প্রবাসী এক আত্মীয় কিছু বাঙালি বন্ধুদের সাথে ভাত খান,বাঙলায় কথা বলেন, বাঙলা বই পড়েন,বাঙলা গান শোনেন, বাঙালি কায়দায় গরমকালে জামাকাপড় পরেন তার বাঙ্গালিত্তে ষোলোআনা নেই বৈকি মেনে নিলাম সেতো আলটিমেটলি বাঙালি। সেরকম ইউ কে, ইতালি,ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকা, বা অস্ট্রেলিয়া, তে যার জন্ম বা বসবাস করে এমন বাঙালি যারা কোনদিন কোলকাতা বা ঢাকায় আসেন নাই কিন্তু বাপ মা বাঙলার পাড়াগাঁয়ের ধুলোমাটিতে জন্ম সেই প্রবাসী মানুষদের কি বলবো তারা বিদেশি? তাদের সন্তান সন্ততিরা আবার বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয়তা পান,ষোলোআনা বাঙ্গালিয়ানা পান না। জাতি হিসেবে আমি এই দ্বন্দে পড়ি,তারা কি বাঙালি নাকি বাংলাদেশি? বাঙালি কালচার হিসেবে তারা ভাত খেলে সেটাকে কি বলবো, প্রবাসী বেঙ্গলি কালচার ?আমিতো ভেতো বাঙালি পৃথিবীর যে কোন দেশে গেলেও আমি এক বেলাও ভাত না খেয়ে থাকতে পারব না। নাড়ির টান এমন যা ছেঁড়া অসম্ভব। এই হল সংস্কৃতি এবং তার জোর।
***এ তো গেল বিদেশি বাঙ্গালিদের কথা। এখন আসাযাক স্বদেশ ভূমি বাঙলায়। বাঙলার মালু জলকে বলে জল, মোহামেডানরা বলে পানি, কেরেস্তান বলে জল/ওয়াটার। হিন্দু পরে ধুতি, মুসলিম পরে লুঙ্গি। হিন্দুরা মূর্তি পূজা করে, মুসলিম নামাজ পড়ে।
এরা আবার একজাতি হয় কিভাবে? সবার আলাদা রীতিনীতি, ভাষা। কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববাংলা ( তৎকালীন পাকিস্তান) যখন চরম মার খেল জাতভাই পাঞ্জাবি-বেলুচ মুসলিম দের কাছে, তখন স্লোগান দিল বাঙলার হিন্দু,বাংলার মুসলিম ,বাংলার বৌদধ, বাঙলার খ্রিস্টান আমরা সবাই বাঙালি। বাঙালি বুঝল ধর্মের টান কততুকু আর জাতিসত্তার টান কততুকু। হিন্দু ভোটার দের স্বার্থের কারনে আওয়ামী লীগ থেকে মুসলিম কেটে বাদ দেওয়া হয় অনেক আগেই। আমরা যতই আলাদা ধর্মের হইনা কেন মা কে কয়জন বাঙালি আম্মাজান বলে? লুঙ্গি কি মুসলিম এর পোশাক? তামিল দের থেকে বাঙলায় আসে যেমন শাড়ি, তেমনি লুঙ্গি; তাহলে তা দিয়ে কেন জাতি কে ভাগ করবো ,কোন যুক্তিতে?।
জল হিন্দুরা বলে,মানলাম,কিন্তু যখন বলি অশ্রুজল তখন মুসলিমরা কি বলবে অশ্রুপানি ? তা হোক বাঙালি হিন্দুরা তো ভাত খায় আদি মুসলিমরা রুটি খায় তো বাঙালি মুসলিম রা খায় না কেন? কারন তা সংস্কৃতি বিবর্জিত এবং উপযোগিতার অভাবদুষ্ট । পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রাচিনে ক্ষমতা ছিল ধর্মযাজক পুরোহিত দের হাতএ রাজারাও তাদের কব্জায় থাকতেন। তাদের কথা মানতেন। আজ কি সভ্যতার ছোঁওয়া আমাদের গায়ে লাগবে না? মহান নবি হাদিস এ বলেছেন জ্ঞান পেতে নাকি চৈনিক দেশে যাওয়ার অনুমতি আছে। সৈয়দ মুজতবা আলি এইরকম গোঁড়ামি দেখলেই বলতেন এই জন্যই হিঁদু রা তোদের ন্যাড়া মৌলবি বলে।
বাঙলা সংস্কৃতি তে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান দর্শন আমাদের সংস্কৃতি কে উর্বর করেছে, আমাদের ধর্মীয় সহমর্মিতা ও বৈচিত্র্য দিয়েছে। মুখের ভাষা বাঙলা এর চেয়ে বড় মিল জাতি হিসেবে আর আমরা কি চাই? যার মাতৃভাষা ফ্রেঞ্চ তাকে কি ফ্রান্স এর অধিবাসী না হলে ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষী বলা যাবে না? তাতো কখনো শুনিনি। আমাদের দেশে ও তো অবাঙ্গালি আছে তাদের তো কখনো বলতে শুনিনি আমি পাকিস্তানি,আমি মনিপুরি , আমি অসমি বলতে। তারা বাঙালি নয় বাংলাদেশি সুতরাং তারা বলে আমি মনিপুরি বাংলাদেশি,আমি খ্রিষ্টান বাংলাদেশি,আমি পাহাড়ি বাংলাদেশি। সুতরাং আমার সাথে সবাই একমত হবেন যে জাতি হিসেবে আমাদের ধর্ম বর্ণ গোত্র অবস্থান যাই হোক আমরা সবাই বাঙ্গালি।
বর্তমান বাঙ্গালি জাতির বৈশিষ্ট্য ই এর বিচিত্রতা। জনে জনে দেশে দেশে মুখের ভাষা যার বাঙলা সেই বাঙালি এবং তার সাথে আমারদের সংস্কৃতির মূল / ঈদৃশ অবস্থা হল বাঙ্গালিয়ানা,বাংলা সংস্কৃতি।
এখন আসাযাক বাঙলা সংস্কৃতির মূল ? প্রাচীন বাঙলা জনপদ এর জাতি বা ধর্ম বা গোষ্ঠীগত সাদৃশ্য, আচার্,সামাজিক রীতি, নীতি ,মানসিকতা, অনুশাসন বাঙালি সংস্কৃতির মূল। কিন্তু আজকের দিনে তার একমাত্র মূল জিনিস হল ভাষা, ভাষার সাথে ভাষাভাষীদের ধর্ম, গোষ্ঠী্ ,আচার ,রীতি, নীতি। বাঙলা সংস্কৃতিতে শাসকদের প্রভাব সম্পর্কে যতগুলো নেতিবাচক দিক আছে সেটা সবাই জানে আমাকে নতুন করে বলতে হবে না।
আসাযাক ইতিবাচক দিকে; অ্যারিয়ান শাসনামল থেকে পাকিস্তান শাসনামল পর্যন্ত আমরা ভাষায় বিপুল পরিমান বিদেশি অবিকৃত, বিকৃত, পারিভাষিক শব্দ পেয়েছি। আরজ শাসনামলে প্রাকৃত ধর্ম পরিমার্জন হয়েছে, মুসলিম শাসনামলে আমরা মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতি বাঙলায় গ্রহণ করেছি, ইউরো শাসনামলে পেয়েছি ইউরো সাহিত্য কলা ধর্ম ভাবধারা এবং সর্বোপরি তথাকথিত তৎকালীন সভ্যজনের সংস্কৃতি, সেই আমলে ধর্ম ও ধর্মীয় সংস্কারকগণের ধর্ম সংস্কার এবং সর্বোপরি বাঙলা সংস্কৃতিতে নবধারা আসতে শুরুকরে এক এক করে আলাদা আলাদা শাসনামলে। জানিনা একজন সংস্কৃতিক গবেষক পুরোপুরি আমার সাথে একমত কিনা। ধর্মীও মতাদর্শ, বিদেশি ভাষা সাহিত্য লোকাচার এবং আদিবাসী দের প্রভাব আমাদের পূর্বে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে শুধু তার প্রভাব বিস্তার এর নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে আছে এখন, পূর্বে তা জাতির হাতে নিয়ন্ত্রিত ছিল না, এর দুটি দিক ই আছে নেতিবাচক আর ইতিবাচক।
***সংস্কৃতি সভ্য সমাজ ধারণ করে এবং তা থেকে ভাল টা গ্রহণ করে খারাপ টা দূর করে দেয়।
গোঁড়ারা এটা মনে করে সংস্কৃতির বিলোপ হয় তাতে । কিন্তু প্রশ্ন হল তাকে তিনি কি জানেন না যে সংস্কৃতি তার কথার ধার ধারে না? চা খাওয়া আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ ছিলনা,এখন বাঙালি চা ছাড়া অচল। তাকে কি অপসংস্কৃতি বলি?বলিনা। বাঙলা সংস্কৃতিতে যা কিছু গ্রহণ করা সমাজের কাছে স্বাভাবিক তাকে অপ সংস্কৃতি বলে না। সময়ের সাথে সাথে যদি একসময় সমাজ- অংশিদারিত্তে নারির সমান অধিকার বাস্তবায়ন করে(সরকার নয়) তবে সেটা সংস্কৃতির অনুশাসনঅঙ্গে যোগ।
বহুবিবাহ বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে পূর্বে ছিল আবার পরবর্তীতে ইসলাম আসার পর তাকে উশকানি দেওয়া হয়। কিন্তু তা এখন সমাজ সংস্কৃতি বিবর্জিত। বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই প্রমান করে যে যদি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা চলে তাহলে বিপ্লব হয়, গ্রহণ করার উপযুক্তি এবং যোগ্যতা না থাকলে তা কেউ নেয় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংস্কৃতি রক্ষার প্রয়াস, তার মানে এটা নয় যে একছত্র বাঙলা সংস্কৃতি পালন পরন্তু বাঙলা সংস্কৃতি পরিমার্জন, পরিবর্ধন, সংযোজন, দরকার হলে কুসংস্কার কে বিলোপ। বাঙলা সংস্কৃতি হল এই।
বহতা নদীর মত বিশাল, মৌলিকতা শুধু বাঙলা ভাষা, আর উপযোগিতা স্থান, ধর্ম, গোত্র, সময় এসব দিক দিয়ে আলাদা আলদা । এটাকে ইস্যু বানিয়ে বলা হয়েছে বাঙালি জাতি আলাদা আলাদা। কিন্তু কথাটা ঠিক নয়। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জাতীয়তার সাথে জাতিসত্তা ভিত্তিক বাঙালি জাতি কে বাংলাদেশি বলাটা ভুল। বাংলাদেশি হিসেবে আমি একজন বাঙালি এবং বাংলাদেশি,কেউ ত্রিপুরি বাংলাদেশি,কেউ হতে পারেন হিন্দু বাংলাদেশি কেউবা ঢাকাই বাংলাদেশি।
একজন বাঙালি যে কোন দেশের বাঙালি জাতি হতে পারে বাঙালি ভাষাভাষী হতে পারেন, কিন্তু একজন বাঙালি হতে হলে বাংলাদেশি ই হতে হবে তাকে, এমন নয়। সুতরাং দেশ বিদেশে যত বাঙালি ,তাদের সংস্কৃতি বাঙ্গালির সংস্কৃতি(আমাদের সাথে তাদের কমন কালচার)। আবার বাংলাদেশের একজন মনিপুরি বাঙালি না হয়েও বাংলাদেশি। একজন সাধারন পাঠক বুঝতেই পারছেন আমাদের সংস্কৃতি কতখানি সমৃদ্ধ, কতটা ব্যপৃত , বিস্তর।
তাহলে বাঙ্গালির কাছে বিদেশি এবং অপ সংস্কৃতি কি? পূর্বে উল্লেখিত মূল বাঙালি সংস্কৃতি ছাড়া আর সব বিদেশি সংস্কৃতি যা পার্শ্ববর্তী অঞ্চল,বিদেশি শাসক, ধর্ম প্রচারক , ব্যবসায়ী শ্রেণীর প্রভাব, ধর্মীও মতাদর্শ, বিদেশি ভাষা সাহিত্য লোকাচার এবং আদিবাসী দের প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত এবং ক্রমে তা বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান।
আর অপ সংস্কৃতি হল তাই যা (দেশি/) বিদেশি হলেও আমাদের মতাদর্শের পরিপন্থী। আমার মত এ আমাদের উচিৎ বিদেশি আর অপ সংস্কৃতি কে আলাদা ভাবে দেখা, দুটি জিনিসকে আলাদাভাবে বিচার করা, এবং বিদেশি সংস্কৃতি থেকে উপযোগী ( সংস্কৃতি,ধর্মীও মতাদর্শ,সাহিত্য, লোকাচার) উপাদান ব্যাবহার করা এবং দেশি কালচার পালন করে এর ভাল দিকগুল দেশে বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া।
সময়ের উপযোগিতাই সংস্কৃতির মূল, , তাকে কিছু দিয়ে আটকানো যাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।