গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার ওপর ভ্রাম্যমাণ চর্মরোগের ওষুধের দোকানের সামনে দোকানদার ও ক্রেতার বাক-বিত-ার একপর্যায়ে এর কারণ জানতে চাইলে উৎসুক জনতা জানান, ৭ দিন আগে ক্রেতা ইদু মিয়া (৫৫) দাউদের সমস্যায় চুলকানির মলম নেন আজাদের (১৩) দোকান থেকে। আজাদ কথা দিয়েছিল ইদু মিয়াকে, ‘যদি ৩ দিনে চুলকানি না সারে এবং দাগ না যায় তবে টাকা ফেরত’। কিন্তু সহজ-সরল ইদু মিয়ার চর্মরোগ তো সারেইনি বরং চুলকানির ক্ষত আরো মারাত্মক হয়েছে। তাই এই হট্টগোল।
চর্মরোগের এসব ওষুধ বা মলমের কী কী উপাদান আছে তা দোকানি আজাদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলেন, ‘আমি জানি না।
’ কোথা থেকে আসে এ ওষুধ? আজাদ বলেন, ‘কোথা থেকে আসে তা আমি জানি না। তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আমাদের মালিকের ৫০০-৭০০ গাড়ি রয়েছে। প্রতিদিন হাশেম ভাই আমাদের মাল এবং গাড়ি বুঝিয়ে দেয়। সারাদিন বিক্রি করে যা আয় হয় নির্ধারিত দামের অংশ তাকে বুঝিয়ে দিয়ে লভ্যাংশ আমি নিই। প্রতিটি পণ্যের হিসাব আলাদা।
কোনোটির দাম বেশি, কোনোটির কম। যার কাছে যা পাই তাই বিক্রি করি। ’
বিএসটিআই বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমোদন আছে কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এটা আবার কী? মালিক মাল দেয়, আমি বিক্রি করি। ’ এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্রাম্যমাণ হোলসেলার বলেন, ‘ভাই, আমরা গরিব মানুষ। একটু আধটু ওষুধ বানিয়ে বিক্রি করি।
তাতে অনেক গরিব বাঁচে। ’ বিফলে মূল্য ফেরত, ওষুদের গুণাগুণ বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উপস্থিত জনতা সাইফুল, বাশার, আনিস এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিদিনই এখানে ওষুধ বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে।
ভ্রাম্যমাণ এসব মলম বা ওষুধের গুণাগুণ সম্পর্কে হলি ফ্যামেলি হাসপাতালের চর্ম-বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবজালুল করিম অপরাধকণ্ঠকে জানান, ‘মানুষের দেহের অসুখ এবং ওষুধ সম্পর্কে জ্ঞান রেখেই তা প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু ওই ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে যারা ওষুধ বিক্রি করছেন, তারা কতটুকু অভিজ্ঞ সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।
তাছাড়া প্রায়ই দেখা যায়, সহজ-সরল মানুষ উপকারের আশায় এসব মানহীন ওষুধ ব্যবহার করে। পরে চামড়ার মারাত্মক ক্ষতি করে আমাদের শরণাপন্ন হন।
আর রাস্তার পাশে এসব ওষুধের কোনো গুণাবলী আছে বলে আমার ধারণা নেই। ’ তিনি জনসাধারণকে এসব ওষুধ ব্যবহার না করারই পরামর্শ দেন। যত্রতত্র এসব ওষুধের বিক্রেতারা ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই হরেকরকম মলম ও ওষুধ বিক্রি করছে।
যেমন- ইঁদুর, তেলাপোকা, পিপড়া মারার বিষ বিক্রি হচ্ছে মাইক লাগিয়ে। ফলে সামান্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যুবক-যুবতীরা সহজলভ্য এ বিষ হাতের কাছে পেয়ে গোপনে কিনে নিয়ে তারা সংরক্ষণ করে।
দুশ্চিন্তা তীব্রতর রূপ নিলে কিংবা নিছক হালকা ঘটনায় তারা এ বিষ পান করে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটায়।
অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, অতিসত্বর ভ্রাম্যমাণ গাড়ি বা হেঁটে হেঁটে বিক্রি করা ক্ষতিকর এসব ওষুধ বা মলম বিক্রি রোধ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।