নারায়ণগঞ্জ শহরের আল জয়নাল প্লাজার মালিক, সন্ত্রাসীদের গডফাদার, ভূমিদস্যু জয়নাল আবেদিন এখন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ২০ বছর আগে ফুটপাতে যে জয়নাল আবেদিন হাফপ্যান্ট বিক্রি করতো, সেই এখন শহরে ছয়টি বহুতল মার্কেট আর অগাধ সম্পত্তির মালিক। শহরের একাধিক এলাকায় বহু মানুষের জমি ও বসতবাড়ি জোর করে দখল করে রেখেছে। প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে।
মার্কেটের দোকান মালিক কিংবা জমি মালিক প্রতিবাদ করলে লেলিয়ে দেয়া হয় সন্ত্রাসীদের। তার অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পড়ছে মানুষ।
শহরের নারায়ণগঞ্জ থানার সামনে জয়নাল আবেদিন ১৪ তলার অনুমতি নিয়ে আল জয়নাল প্লাজা নামে ১৭ তলা ভবন গড়ে তোলে। এ ভবনে দখল করে রাখা হয়েছে পৌরসভার জমি। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ লাখ টাকা করে ১০০ বর্গফুটের দোকান বিক্রি করা হয় ১৬০ জনের কাছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেছে চুক্তি ভঙ্গের। কথা থাকলেও মার্কেটে ব্যবহারের জন্য লিফট দেয়া হয়নি। সেন্ট্রাল এসি চলে না। হাঁটার সিঁড়ি তৈরি করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এসকেলেটর প্রায়ই খারাপ থাকে।
দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই। তিনবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দোকান মালিকরা বিদ্যুৎ বিল দিলেও তা পরিশোধ করা হয় না। এ বিষয়ে দোকান মালিকরা থানা ও জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে এবং তারা বিভিন্ন সময় প্রতিবাদও জানায়। এখন আবার আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান তৈরির পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
জয়নাল আবেদিনের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলে দোকান মালিকদের ওপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়া হয়। টানবাজারের কুখ্যাত সন্ত্রাসী জোসেফকে ভাড়া করে দোকান মালিক সমিতির এক নেতার ওপর হামলা চালানো হয়। দোকান মালিকরা প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার পায় না। কারণ এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা জয়নাল আবেদিনের পক্ষে দোকান মালিকদের প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। দোকান মালিকদের অভিযোগ, পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্য। তার অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ থাকে নারায়ণগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসারের জন্য।
টানবাজারে খাল দখল করে আল জয়নাল অলঙ্কার প্লাজা গড়ে তোলা হয়েছে। পৌরসভা থেকে নোটিশও দেয়া হয়েছে। ভূমিদস্যুতার অনেক অভিযোগ রয়েছে জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে।
সে ফতুল্লা, চানমারী, সস্তাপুর, জালকুঁড়ি, ভুঁইগঞ্জ, সৈয়দপুর, কাচপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় বহু মানুষের জায়গা ও মুক্তারপুরের নদীর পাড় দখল করে নিয়েছে। এছাড়াও নিরীহ লোকজনের জমি জোর করে দখল করে জাল দলিল তৈরি করা হয়। ভুক্তভোগী এক আইনজীবী জানান, জেলা কারাগারের পাশে তার জমি ছিল। জমি তার দখলে। কাগজপত্রও রয়েছে।
কিন্তু জয়নাল জোর করে অন্যায়ভাবে তার জমি দখলের চেষ্টা করে।
জয়নাল আবেদিনের উত্থান বিস্ময়কর। সে কীভাবে মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে এতো বিপুল সম্পত্তির মালিক হলো তা রহস্যজনক। ’৮৮ সালে ২নং রেলগেট এলাকায় সে হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি বিক্রি করতো ফুটপাতে। এর আগে মদনগঞ্জে আনোয়ার মিয়ার মুদি দোকানে কাজ করতো।
এক সময় রিকশাও চালাতো বলে জানা গেছে।
জয়নাল আবেদিন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একের পর এক অপকর্ম করেও বহাল তবিয়তে আছে কীভাবে? এ প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। বিপুল সম্পত্তির মালিক জয়নালের কর ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তদন্ত হলে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলছে না।
সাধারণ মানুষ বাঁচতে চায় এ ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যুর হাত থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।