আশির দশকের পর "বাড়তি জনসংখ্যা" কথাটা নিয়ে আবার ইদানিং মিডিয়ায় হৈ চৈ ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে এবার একটা বাড়তি বিশেষত্ত্ব হলো ঢাকার জনসংখ্যার দিকে, আরও স্পষ্ট করে বললে ঢাকার গরীব বস্তিবাসীদের দিকে আঙ্গুল তুলে একে সব সমস্যার কারণ বলে তুলে ধরার চেষ্টা। বাইরে থেকে দেখে ঢাকার জনসংখ্যা সমস্যা হিসাবে হাজির বলে আমাদের মনে হতে পারে। কিন্তু জনসংখ্যা নিজেই সমস্যা নাকি অর্থনীতি পরিচালনায় পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির মারাত্মক অভাবটাই জনসংখ্যা সমস্যা হিসাবে হাজির - সেটা চিন্তা ভাবনা করে খুঁজে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই দাবীর কোন ভিত্তি নাই। যেমন আমাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় হিউম্যান রিসোর্স বা শ্রম সম্পদের বর্তমান চাহিদার ট্রেন্ড কেমন, আগামী দশকগুলোতে চাহিদা কী দাঁড়াবে এনিয়ে কোথাও কোন গবেষণা হয়েছে আমরা শুনিনি।
পণ্য রপ্তানীতে আমাদের যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তার প্রায় সমান (বছরে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার) আয় আসে শ্রম রপ্তানী থেকে। ফলে গ্লোবাল অর্থনীতিতে শ্রম চাহিদার অভিমুখ কী সেটাও ঐ গবেষণাও অন্তর্ভুক্ত হবে, সে সবের খবর রাখাটা জরুরী। এরপরের মুল প্রশ্ন হলো জনসম্পদকে দেশে অর্থনীতি পরিচালনায় পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে সংগঠিত করা। বিস্তর গবেষণা থেকে লাভ করা এই সামগ্রিক চিত্রটা যদি আমাদের থাকে তবেই আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি ইতোমধ্যেই আমাদের জনসংখ্যা অধিক হয়ে গেছে নাকি ঘাটতিতে আছি। সেসবের কোন খবর নাই অথচ প্রতিষ্ঠিত কোন ফ্যাক্টস ফিগার ছাড়াই আন্দাজে দাবী করা হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যা নাকি মারাত্মক সমস্যা হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পপুলেশন সাইন্স নামে এক নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। ওর চেয়ারপারসনকে আজকাল দেখা যাচ্ছে ঢাকার গরীব বস্তিবাসীদের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলতে। তিনি প্রথম আলোতে Click This Link এক নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি কী করে জনসংখ্যার আধিক্য বুঝতে পারেন তার সে বুঝের এক মাপকাঠি আমাদের জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,
"একদিন কারওয়ান বাজার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে আমার এক ঘণ্টা সময় লাগল।
১০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে কেন এক ঘণ্টা লাগবে? জনঘনত্ব বেশি হলে কী ঘটতে পারে, এটা তার একটা ছোট্ট দৃষ্টান্ত। "
পাঠক নিশ্চই বুঝতে পারছেন এনিয়ে আমাদের কথা বলতে লজ্জা লাগছে হয়ত কিন্তু ঘটনা হলো, লেম্যানের মতামত একজন প্রফেসরের কাছ থেকে আসা করতে পারি না।
তাঁর কথা অনুযায়ী টাউন প্লানিং বা ঢাকার রাস্তা ও ট্রাফিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা কোন সমস্যা নয়। ঢাকার সমস্যা হলো জনসংখ্যা। তাও আবার বিশেষ করে ঢাকার গরীব বস্তিবাসীরা।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পা না রেখেও যে কারো পক্ষে বুঝতে পারা সম্ভব যে প্রতিদিন ঢাকা শহরকে চালিয়ে রাখতে যে শ্রম ও শ্রমিকের প্রয়োজন তা মিটে ঐ গরীব বস্তিবাসীদের শ্রমে, শহরে তাদের উপস্থিতির কারণে।
এছাড়া খামোখা গরীব বিদ্বেষী তাঁর এই ভাবনাকে রেসিষ্ট বললে কম বলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স এলাকায় প্রবেশের আগে যে কারও প্রথম শর্ত হলো, সবার আগে তিনি রেসিজম ভাবনা মুক্ত হবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।