বন্ধু বলল চল টেবিল টেনিস খেলে আসি। যাইতে পারলাম না। বুয়া আসবে। আমি বাসা ত্যাগ করলে বুয়া বাসায় ঢুকতে পারবে না। বুয়াকে এটেন্ড করার জন্যে আমাকে বাসায় থাকতে হবে।
শুধু এটেন্ড না। সকালে আম্মার দিয়ে যাওয়া ইনস্ট্রাকশনও বুয়াকে পাস করতে হবে। এই ইনস্ট্রাকশনে আমি প্রায়ই গোলমাল করে ফেলি যদিও ৪ ক্রেডিট ঘন্টার একখান ইনস্ট্রাকশনাল টেকনোলজি কোর্স আমি করে ফেলেছি। কী রকম গোলমাল? একটু উদাহরণ দিই। আম্মা হয়তো বলে গিয়েছেন পেয়াজ কাটতে এবং রসুন বাটতে আমি সুন্দর মত বুয়াকে বলে দিলাম পেঁয়াজ বাটতে এবং রসুন কাটতে।
সামান্য ‘ব’ আর ‘ক’ এদিক ওদিক হওয়াতে বিরাট ক্যাঁচাল হয়ে যায় রান্না করার সময়ে। যাই হোক, আরেকদিন হয়ত মহা আরামসে ফেসবুকে বন্ধুর সাথে চ্যাট করছি ইন্টারকম ক্রিং ক্রিং করা শুরু করল। মেজাজ গেল গরম হয়ে। উঠে গিয়ে ধরলাম। পাশের বাসার চাচির কন্ঠ।
“বাবা, তোমাদের বাসায় বুয়া কি আজকে আসছে?” আমি বললাম,”না এখনও তো আসেনি”। এগেইন চাচি “বিল্ডিংয়ে বুয়া আসছে কিনা বলতে পার?” বিল্ডিংয়ে বুয়া এসেছে কিনা সেটা আমার পক্ষে জানা কীভাবে সম্ভব আমি জানি না। উত্তর দিলাম, “জ্বি না চাচি। ” আচ্ছা আরেকদিন চরম আরামে মুভি দেখছি। টান টান উত্তেজনার সিন চলছে।
ইন্টারকম মহা কর্কশ আওয়াজে আমাকে ডাকা শুরু করল। পজ দিয়ে উঠে ফোন ধরলাম। নিচ তলা থেকে ফুপু (প্রতিবেশি ফুপু না, আপন ফুপু) ফোন করেছেন। কী ঘটনা। ঘটনা পুরানো।
বাসায় বুয়া এসেছে কিনা, আমাদের বুয়া নিয়মিত আসে কিনা ইত্যাদি। বুয়া বিষয়ে কথা বলাটা যে আমার জন্য মোটেও সুখকর নয় তা নিশ্চয়ই পাঠক উপলব্ধি করতে পারছেন। বুয়া কাহিনী এখানে শেষ করতে পারলে আমি খুব খুশি হতাম কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বুয়া কাহিনী আরও আছে। আমার ঘরে আরামসে ফেসবুকে বসে আছি কিংবা মুভি দেখছি বা গান শুনছি ঠাস করে ফ্যানটা বন্ধ হয়ে গেল। কী ব্যাপার, কী ব্যাপার? বুয়া ঝাড়ু দিতে চলে এসেছেন।
লাগল উঠা। আচ্ছা ঝাড়ু দেয়া শেষ। বসলাম পিসিতে। খানিকবাদে আবারও বুয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম (ভয়াবহ রাগের ইমো হবে)! না, এবার ফ্যান বন্ধ হয় নাই। এবার বুয়া ঘর মুঝবেন।
আমার উঠতে হবে। আবারও পজ। বুয়া যাওয়ার সময়ে আমাকে তৃতীয়বারের মত স্পেসবার চাপ দিয়ে উঠতে হয় দরজা লাগানোর জন্য। জীবন এক্কেরে ফালাফালা।
বুয়া বৃত্তান্ত আরও বিস্তৃত।
বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানই হোক বা নিছক সামাজিক সাক্ষাত হোক পরিবারের নারী সদস্যদের মাঝে বুয়া ক্রাইসিস নিয়ে আলোচনা একটি মাস্ট ডিসকাসড টপিক। এই আলোচনা পরীক্ষার প্রশ্নে উল্লিখিত আলোচনার মত নীরব আলোচনা নয়। এই আলোচনা এতটাই জোরেশোরে হয়ে থাকে যে আমার মত বুয়া ইস্যু বিদ্বেষী মানুষের কানেও তা ফোর্সফুলি প্রবেশ করে। “বুয়া তো আজকাল পাওয়াই যায় না”। “বুঝলেম ভাবি, সব ঢুকতেসে আজকাল গার্মেন্টসে।
” “আমারটা যা বেয়াদব। মুখে মুখে তর্ক করে”। “আমারটা তো কাজ একটু বেশি থাকলে বলে পারুম না। সাহস দেখসেন?” আরেকজনের তখন মনে পড়ে স্বীয় বুয়ার কথা। তিনি বলে ওঠেন, “আর বলবেন না।
বিরাট ফাঁকিবাজ আমারটা। ঘর একদমই পরিষ্কার করে না। পাঁচ মিনিটে পুরা বাসা ঝাড় দিয়ে ফেলে”। আসলে বাসার মায়েরা এই বিষয়গুলা ফেস করেন বলেই তারা সমস্যাগুলো বোঝেন ভাল। বাস্তব অভিজ্ঞতায় তাদের অভিযোগগুলোর সত্যতাও মেলে।
আমাদের বুয়ার ক্ষেত্রে একবার চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হল। বুয়া অন্যদের বাসায় অনিয়মিত হলেও আমাদের বাসায় বেশ নিয়মিত। ঘটনা কী? বুয়ার মোবাইল সেট মোটোরোলা L-7. আমি তখন ভাবির ছাল-চামড়া উঠে যাওয়া L-7 টা ব্যবহার করি। বুয়া আমাদের বাসায় নিয়মিত আসে তার ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য। তার আবার চার্জার নষ্ট।
আমি যখন নোকিয়া 2525 Classic ব্যবহার করা শুরু করলাম বুয়াও অনিয়মিত হওয়া শুরু করল।
বিঃদ্রঃ এই লেখা লেখার সময়েও আমাকে একবার উঠতে হয়েছে বুয়ার বেল শুনে।
রেফারেন্সঃ যে দিনকাল পড়েছে দুইখান বাক্য লেখতে গেলেও রেফারেন্স দেয়া লাগে। পারলে নিজের নাম লেখে মানুষ বাপ-মায়ের রেফারেন্স দেয়। পাছে যদি জার্নালে লেখা না ছাপে।
তাই খুব ভাল হত যদি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিট কিংবা ইউনিভার্সিটি অভ গ্রিনিচের রেফারেন্স দেয়া যেত। কিন্তু দুঃখিত সে রকম কিছু দেয়া গেল না। সম্পূর্ণ লেখাই বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে।
আরও প্রকাশিত হয়েছে আমার ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।