¤ রাষ্ট্রের বেলায় নয়,প্রেমের বেলায় স্বৈরাচার হও। -অখ্যাত লেখক আবিদুল ইসলাম রিমন
আমাদের মেসের কাজের বুয়া অনেকটা আপডেটেড। নতুন কোনো মোবাইল বের হবে আর তিনি সেটার চায়না ভার্সন কিনবেন না, সেটা কল্পনা করা যায় না। যথারীতি তিনি এবার হালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিনেছেন থ্রিজি মোবাইল। যেটাকে তিনি টিজি মোবাইল বলে সম্বোধন করেন।
যদিও আমি এর তীব্র প্রত...িবাদ করে বলেছিলাম, 'বুয়া, এটা টিজি না, থ্রিজি। '
- আমার লাহান তোমার মোবাইল আছে? বুয়া জানতে চাইলেন।
- নেই।
- হে হে, তাইলে বুঝলা ক্যামনে এইডা টিরিজি? পারলে আগে আমার লাহান মোবাইল কিনো। হের পর ভুল ধইরো।
বুয়ার সঙ্গে আর কথা বাড়ালাম না। কী লাভ শুধু যেচে অপমানিত হয়ে। তার চেয়ে ভালো অপমানের ব্যাপারটা ফান হিসেবে নেওয়া। এতে মিথ্যা করে হলেও মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার সিস্টেম থাকে। অবশ্য এই নতুন মেসে আসার পর থেকে আমি এবং আমার রুমমেট বন্ধুরা প্রতিনিয়ত বুয়ার দ্বারা অপমানিত হচ্ছি।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমরা কেউ এ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করছি না। তা ছাড়া আমরা সবাই জানি, বুয়ার বিরুদ্ধে কিছু বললেই মেস ছাড়তে হবে। কারণ বুয়া এর আগে এ ব্যাপারে আমাদের সাবধান করে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বক্তৃতার কথাগুলো অনেকটা এ রকম...
ভাইজানেরা, শ্রেণীমতো সালাম ও শ্রদ্ধা নিবেন। মোর নাম আফিয়া খাতুন।
আফনারা আমারে বুয়া কইয়া ডাইকেন। আমি আফনাগো কাজকর্ম কইরা দিমু। তয় আফনারা আমার কাজের ভুল ধরলে অসুবিধা অইব। বড় রকমের অসুবিধা। এই মেসের দারোয়ান আমার জামাই লাগে।
হে হইল এই মেসের মালিক সাহেবের খুব কাছের লোক। হে যেইটা কইব, মালিক অইটা হুনব। এখন আফনারা মোর কাজে ভুল ধরলে কিংবা মোর লগে বেয়াদবি করলে মুই মোর জামাইর কাছে উল্টাপাল্টা নালিশ করমু। পরে আফনাগো মেস ছাড়তে অইব। আর এইডা তো জানেন, আমাগো মেস এই শহরের সেরা মেস।
এই মেস ছাড়লে সারা জীবন পস্তাইবেন।
বুয়া ঠিকই বলছিল। আমাদের মেসটা এই শহরের সেরা মেস। সাধ্যের মধ্যে সব কিছু, তার ওপর চমৎকার পরিবেশ। সব মিলিয়ে দশে দশ দেওয়া যায়।
তবে প্রথম প্রথম আমিসহ আমাদের রুমমেট বন্ধুরা বুয়ার কথাবার্তা কিংবা কাজে বেশ বিরক্তিবোধ করতাম। অবশ্য এখন করি না; বরং সব কিছু ফান হিসেবে নেই এবং এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে পরে অনেক মজা করি। তা ছাড়া বুয়া কাজকর্মে মোটামুটি ভালো। তবে একটু এঙ্ট্রা কথা বলার অভ্যাস আছে।
সেদিনের একটা ঘটনা ধরা যাক।
দুপুরে আমি ল্যাপটপে বসে গান শুনছিলাম। হঠাৎ রুমে ঢুকল বুয়া। বলল, ভাইজান কার গান হুনেন?
- কেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের!
- হে হে, আমারে মূর্খ পাইয়া মিছা কথা কইতাছেন!
- মিথ্যা বলব কেন? সত্যি বলছি। এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ছিল।
- এইডা কী কন! কবিরাজ গান গাইত! বড়ই আচানক ঘটনা।
- কবিরাজ মানে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তোমার কবিরাজ মনে হয়!
- আফনে তো দেহি পুরাই বেকুব! হে কবিরাজ নয় তো কী। আমার মাইয়া কইছে; রবীবাবু মস্ত বড় কবি। মানে কবিগো রাজা। কবিরাজ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।