কোন এক দুঃস্বপ্নের শেষে হয়ত দেখা হয়ে যাবে আবার!! গত ১৯ জুলাই ছিল বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু সেদিন দেখলাম এক অদ্ভুত জিনিস। কেউ কেউ ব্লগ আর ফেসবুকে তাকে মিস করা অনেক লেখা লিখেছে আবার অনেকে তার ১৪ গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছেড়েছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে কিছু লিখতেই হল।
প্রথমেই বলে নেই আমি আহামরি কোন হুমায়ুন ভক্ত না।
হুমায়ুন বলতে আমার দৌড় ওই হিমু সিরিজের কিছু বই, সুন্দর কিছু মুভি আর শাওনের কণ্ঠে গাওয়া হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা গান "যদি মন কাঁদে, তবে চলে এস এক বরষায়। " পর্যন্ত। কেন জানি না এর বেশি পড়া হয়নি। এটা হয়ত তার ব্যর্থতা অথবা আমার অজ্ঞতা। এর আরেকটা কারন হতে পারে হয়ত বয়সের আগেই জুল ভার্ণের হাত ধরে ডেল কার্নেগী হয়ে ম্যাক্সিম গোরকি বা গরসিয়া মার্কোজ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছি।
যাক সে কথা বাদ দেই। এদেশে অনেক হুমায়ূন ভক্ত আছেন। যারা হুমায়ূন বলতে পাগল। যতদূর জানি বাংলাদেশে প্রতি বছর যেই পরিমান বই বিক্রি হত তার অর্ধেকই ছিল হুমায়ূন আহমেদের। আরও যতদূর শুনেছি এই মানুষটিই বাংলা বইয়ের রাজধানী কোলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
। তার ভিতরে যদি কিছু নাই থাকত তাহলে নিশ্চয়ই এত কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব হত না। ।
এখন আসি মূলকথায়। সেদিন থেকেই দেখছি একদল মানুষ হুমায়ূন আহমেদ এর সমালোচনায় মুখর।
কারণটা ঠিক ধরতে পারিনি। কারন তাদের যুক্তিগুলো অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত।
তাদের প্রথম কথা হল হুমায়ূন আহমেদ একজন নাস্তিক। যদিও নাস্তিক মানে হল যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এর মানে দাঁড়িয়েছে যারা ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করে তারা নাস্তিক। আমি জানি না তারা কোন দিকের হিসেবে তাকে নাস্তিক বলছে।
যদিও আমার অল্প জ্ঞানে কোথাও কোন ধর্ম নিয়ে তাকে কটূক্তি করতে দেখিনি। তারপরও হোক তিনি নাস্তিক বা আস্তিক, তাতে কি আসলেই আমাদের কিছু আসে যায়? একজন সৃষ্টিশীল মানুষের বিচার হয় তাদের সৃষ্টি দিয়ে, তাদের ব্যাক্তিগত জীবন দিয়ে নয়। তারা বেঁচেও থাকে তাদের সৃষ্টির মাঝে। আপনাদের কি ধারনা ম্যাক্সিম গোরকি বা লিও তলস্তয় বা গোর্সিয়া মারকোজরা সবাই আস্তিক ছিল? তাদের বই পড়লে তো ঠিকই উহু আহা করবেন। যাক মূলকথা হল তিনি আস্তিক বা নাস্তিক হন তার জবাব তিনি দিবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।
এটা আমার আপনার ব্যাপার না। তার লেখা ভালো না লাগলে তা নিয়ে সমালোচনা করুন শুধু শুধু একজনের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানি করে পাপের বোঝা কেন বাড়াচ্ছেন?
পরের যুক্তিটা হল তার বাবাকে ৭১ এ খুন করা হল কিন্তু তখন তো তিনি তাগড়া জোয়ান। তাহলে তিনি যুদ্ধ করলেন না কেন? তাহলে আমাকে বলুন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ মারা গেল যুদ্ধে। ধরলাম ৬ জন মানুষের এক একটা পরিবার, এক পরিবার থেকে একজন যুদ্ধে আসল তাহলে তো কম করে হলেও ৫ লাখ মানুষের যুদ্ধ করার কথা! আসলেই কি ৫ লাখ মুক্তিযোদ্ধা আছে? বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা আছেন প্রায় ২ লাখের কিছু বেশি!! তাও বছর বছর সংখ্যাটা বেড়ে বেড়ে এখানে এসে ঠেকেছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমি কি বলতে চাইছি।
এবার আসি ৩য় যুক্তিতে। তার মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে তিনি নাকি বিশাল অপরাধ করে ফেলেছেন। আসলেই কি তাই? কই তিনি তো চাইলেই শাওনকে গুলশানে ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে মনের সুখে লিভ টুগেদার করতে পারতেন। তিনি তা না করে বিয়ে করে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে ঘর সংসার করেছেন এটাই কি তার অপরাধ? জানি বলবেন তার পুরনো ঘর ভেঙ্গে গেছে, আমি আপনাকে বলি তাতে আপনার কি? তার সাথে আপনাদের পারিবারিক সম্পর্ক না বরং সেটা লেখক পাঠক সম্পর্ক আর সে এমন কিছু করেও ফেলেনি যাতে আমাদের সমাজ বা ধর্মের উপর বিশাল আঘাত হয়ে এসেছে। তাই বলি পারলে তার লেখার সমালোচনা করুন যুক্তি দিয়ে, তার ব্যাক্তিগত জীবনটা তার কাছেই রেখে দিননা, ! আপনি আপনার সংসারের দিকে নজর দিন, আপনার অনেক উপকার হবে।
সবশেষে সবার জন্য একরাশ শুভকামনা!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।