আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঘে ঢাকা তারার শহর



ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযুক্ত বুঝেও উপায়হীনতার এই মেট্রোপলিস কারাগারে নাগরিকেরা আটকে আছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যারা মেয়র হবার জন্য দৌড় ঝাঁপ করছেন,তাদের হয়তো ধারণা নাই তাদের জন্য সুইসাইডাল হতে পারে মেয়র পদটি। গণশত্রু হবার আশংকা শতভাগ। কারণ একজন মেয়রের পক্ষে এতো বড় শহর চালানো প্রায় অসম্ভব। ঢাকার জন্য দরকার চারজন মেয়র।

চারটি ক ঢাকা খ ঢাকা গ ঢাকা ঘ ঢাকা করে চারজন মেয়র দিয়ে ঢাকাটাকে বসবাসের উপযোগী করা সম্ভব যদি নগর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকে। শুধু রাজনৈতিক নেতাদের জীবনী আর নিউজপেপার পড়ে মেয়র হলে এবার ভদ্রলোক বিপদে পড়বেন। কারণ এখন যারা ঢাকার নাগরিক,তারা বেশ অধিকার সচেতন। মেয়র তাদের নগর সেবক। তাই জবাব দিহিতার চাপ বাড়বে।

নাগরিক প্রতিরোধ বাড়বে। ঢাকার মানুষ আক্রোশে ঐক্যবদ্ধ। আইনশৃংখলা রক্ষকদের ভক্ষক প্রবণতা কমছে। বোকা পুলিশেরাই ঘুষ নেন। কারণ ইউটিউবে উনাদের ঘুষ গ্রহণের দৃশ্য উঠে গেলে সখাত সলিল অথবা খাগড়াছড়ি।

ঘুষ ব্যাপারটা আর খুব বেশীদিন চলবে না। ইগভর্নেন্স বাস্তবায়িত করতে যে কোন সরকারী সার্ভিস পেতে অনলাইনে ফর্ম পূরণ প্রথা চালু হচ্ছে। তাই ফাইল আটকে দিয়ে ঘুষের জন্য শরীর মোচড়ানোর দিন শেষ। ধীরে ধীরে বেতনের টাকায় সংসার চালানো শিখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে সার্ভিস সেক্টরে আমলার সঙ্গে আমের আর দেখা হবার দরকার নাই।

অনলাইন আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত ৭২ঘন্টার মধ্যে নিষ্পত্তি করে আমলার চিঠি ডাকযোগে আমের কাছে পৌঁছে যাবে। নাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গোপাল ভাঁড়ের এনালগ কেচ্ছা হয়ে দাঁড়াবে। ঢাকায় একটা সরকারী ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা বি আর টিসির মতো ব্যর্থ না হয়ে যদি অন্তত ভলভো বাস গুলো চালু রাখতে পারতো,তাহলে আমজনতার আজকের দুর্গতিতে পড়ার দরকার হতো না। বাস সার্ভিস পর্যাপ্ত আর সুশৃংখল হলে প্রত্যেক পরিবারকে গাড়ি কিনে ট্র্যাফিক জ্যামে ঘন্টা চারেক হারাতে হতোনা। ঢাকায় গাড়ী চলাচলের ওপর লন্ডনের মতো সিটি ট্যাক্স ধার্য করে মেয়র কিছু টাকা উপার্জন করতে পারেন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খাতে সাবসিডি দিতে।

ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার ট্রাম চালু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা সম্ভব। ঢাকা থেকে উত্তরা যাবার তিনটা প্যারারাল রাস্তা দরকার,সেটা ছাড়া এই ট্র্যাফিক ফাঁদে বাকী জীবন কাটাতে হবে। আর যারা একের পর এক গাড়ি কিনছেন,তাদের ব্যাপারে আমরা ইম্প্রেসড। উনারা আর গাড়ী না কিনলেও আমার উনাদের সফল বলবো। স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলক বাস চালু হলে,জ্যাম কমবে,স্টারপ্লাস আফাদের পার্লার খরচ বাঁচবে।

সামাজিক অশুভ প্রতিযোগিতার পরচর্চা-বিনোদনের সূতিকাগার বাচ্চাদের স্কুলের সামনে মাম্মীদের ফ্যাশন প্যারেড। অবশ্য ঢাকা শহরটাকে আমরা আমজনতাই আরো দোজখ বানাচ্ছি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে,শর্টকার্ট খুঁজে,নিজের অধিকার বুঝে না নিয়ে,পুলিশ বা ছিনতাইকারীদের ভয় পেয়ে। ভয় পেয়ে পেয়ে বেঁচে থাকার আপোষ আজকের নিরুপায় ঢাকা শহর। বিত্তের বিশাল ব্যবধান ট্র্যাফিক বাতিতে,প্রাডোর ভেতরে সিনডেরেলা,বাইরে অনাহারী শিশু কিশোর। অসম্ভব নির্লিপ্ততায় আমরা শুনতে থাকি ব্রেকিং নিউজ।

আমজনতা মানেই বানর খেলার দর্শক,ছিনতাই দৃশ্যের সাক্ষী গোপাল,তিনজন সোনার ছেলের ভয়ে তিনশোজন পুরুষ মানুষ দাঁড়িয়ে দেখে হত্যা-ঘুষ-অমানবিক আচার আচরণ। কেউ কারো ভাগ্য বলদায় না,শ্লোগানেও কারো পেট ভরেনা, তাই আমজনতাকে কোন মেয়র এসে ঢাকা গুছিয়ে দেবে এরকম ভাবলে দ্য লস্ট সিটির হানা মানুষ হতে হবে সম্ভবত। আমজনতা যতক্ষণ পর্যন্ত রাস্তাঘাটে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহস করে না দাঁড়ায়,একে অপরের নিরাপত্তা না হয়ে ওঠে, ঠিক ততক্ষণ মেঘে ঢাকা তারার শহর মন খারাপের হাওয়া নিয়ে আসে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.