অনেক দেখার বাকি সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পর ঢাকায় ফিরে আমাদের মোল্লা ইশতিয়াকের ভেতরে হঠাৎ শরীর গঠনের নেশা চাপলো। সঙ্গে বগল বাজাতে লাগল আমাদের তহসিন দা'। দু’জন মিলে ক্যাম্পাসে বলে বেড়াতে লাগল যে অতিশীঘ্রই তারা ভার্সিটির জিমনেশিয়ামে ভর্তি হয়ে যাবে আর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে জিম করবে। লাইব্রেরির রোয়াকে বসে ডজন খানেক তেলে ভাজা আর বেলালের ঘনীভূত গো-দুগ্ধ মিশ্রিত চা মেরে তহসিন দা’ আর মোল্লা বেশ আয়েশে ঢেঁকুর তুলে আমাদের পিঠে দু’চারটে কিল ঘুসি বসিয়ে বলল, “দেখে নিস ক্যাবলা…এই যে বাইসেপ আর ট্রাইসেপ দেখছিস না এদের ফুলিয়ে ঔষধি বৃক্ষ কলা গাছের মত করে ফেলব। আর তখন আমাদের পেছনে সব বিউটি ক্যুইনরা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরবে”।
ক্বারী সাঈদ বলল’ “সব গাঁজা!” তহসিন দা’ উত্তরে বলল, “মজা? হ্যাঁ মজা তো বটেই”। অন্যদিকে মোল্লা তার ব্যাগ থেকে গামছা বের করে মুখ মুছতে মুছতে বলল, “সব প্রিপারেশন নিয়ে নিয়েছি। এখন জাস্ট ভর্তি হবার পালা”। মোল্লা নিউমার্কেট থেকে হাফ প্যান্ট,কেডস আর কি কি সব কিনে নিলো। এদিকে তহসিন দা’ কোল্ড শোল্ডার দেখিয়ে দেবার পায়তারা শুরু করেছে।
আলসেমীর চূড়ান্ত তহসিন দা’ বিভিন্ন দিন বিভিন্ন অজুহাত তুলতে লাগল। জিম না করার ফন্দি হিসেবে সে প্রতিদিন কালো টি-শার্ট পরে আসতে লাগল আর মোল্লাকে বলল কালো টি-শার্ট পরে জিম চালালে সে নাকি মাথাঘুরে পরে যাবে। তহসিন দা’ মোল্লাকে বলল কিছু জিমের ড্রেস না কিনলে কি করে শুরু করি। মোল্লা তাকে প্রতিদিন ঠেলছে জিমে যাবার জন্য। তহসিন দা’ আজ না কাল করে করে আর গেলই না।
অগত্যা মোল্লা কলাবাগানের হোমোলাট রানাকে নিয়ে জিমে গেল একদিন। রানা শুটকি শরীর নিয়ে একদিন জিম করে পালিয়ে গেল। মোল্লা হয়ে গেল একা। কিন্তু তাতে কি। একলা চলরে নীতিতে মোল্লা রইল অটল।
ঘটনার এক পর্যায়ে মোল্লার মাসতুতো ভাই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির খোকন মোল্লার সাথে যোগ দিল। যদিও খোকন অন্য ভার্সিটির ছাত্র তবুও কেমন করে ভুজং ভাজং দিয়ে খোকন আমাদের ভার্সিটির জিমনেশিয়ামে জিম চালিয়ে যেতে লাগল। মোল্লা তার খাবারের মেন্যু চেঞ্জ করে ফেলল। মিলন চত্তরের খিচুড়ি আর বেলালের দোকানের তেলে ভাজা খাওয়া ছেড়ে দিল মোল্লা। মুনকে বলে দিল হল থেকে মুরগীর কিমা আর মুরগ মুসল্লাম করে আনতে।
রুটি দিয়ে সেগুলো লাঞ্চে ভরপেট মেরে দিতে লাগল মোল্লা। প্রতিদিন বিকেলে টানা দু ঘন্টা জিম মারতে লাগল। এদিকে তার ট্রেনার হলো আমাদের ক্লাশের বডি বিল্ডার সুমন। সুমন তাকে বিভিন্ন কসরত শেখাতে লাগল। মোল্লার শরীর ধরে টেনে হিচড়ে ব্যায়াম করাতে লাগল সুমন।
মোল্লাও একমনে জিম চালাতে লাগল। হপ্তা খানেক পর সুমন বলল, “ দেখ মোল্লা, শরীর হলো মন্দিরের মত। একে সবসময় পূজো দিবি। দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে কিছু ফ্রি হ্যান্ড করবি আর বিকেলে কাঁচা ছোলা খাবি”। মোল্লা বলল, “তথাস্তু”।
মোল্লা উদ্যানের ভেতরে দুপুরে ফ্রি হ্যান্ড শুরু করে দিল। আর বিকেলে হাবুল মামার দশ দিনের বাসী কাঁচা ছোলা গিলতে লাগল। দিন দু’এক পর ক্যাম্পাসে মোল্লার কোন খবর নেই। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মোল্লা কে। মুনকে দেখা গেল ক্যাম্পাসে মনমরা হয়ে বসে আছে।
আমরা গিয়ে জিজ্ঞেস করলুম মোল্লা কোথায়? মুন বলল মোল্লার নাকি আকাশ পাতাল জ্বর আর লুজ মোশন। আমরা ঠিক তখনই বুঝলাম সোহরাওয়ার্দীর ফ্রি হ্যান্ড আর হাবুল মামার বাসী কাঁচা ছোলার কি তেজ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।