nothing মিরসরাইয়ের ৩টি ইউনিয়ন মগাটিয়া,মায়ানী ও কৈয়াছড়ার প্রতিটি পাড়ায় লাশ আর লাশ। ঘরে ঘরে এলাকা জুড়ে চলছে কান্নার রোল। যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন এত মৃত্যুর ভার তারা কিভাবে সহ্য করবে? মুক্তিযুদ্ধের পর এখানে কোন এত লাশ তারা আর দেখেনি। সোমবার মিরসরাইয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের লাশের স্তুপ দেখে নির্বাক নিথর এলাকাবাসী।
মিরসরাইয়ের এ তিনটি ইউনিয়ন জুড়ে একটি বিচিত্র দৃশ্য চোখে পড়ছে। তা হলো- এখানে কবর আর শ্মশান একাকার হয়ে গেছে। একদিকে লাশ দাফনের জন্যে কবর খোড়াখুড়ি আর অন্যদিকে শ্মশানে লাশ দাহ করার প্রস্তুতি।
সোমবার সন্ধ্যায় মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি উদ্ধার কাজ সমাপ্ত বলেও জানান।
কৈয়াছড়া ইউনিয়নের ৯০ বছর বয়েসী আনোয়ার হক জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর এত লাশ আর দেখেনি। বৃদ্ধা শাহানা বেগম বললেন, এ এলাকার ছেলেরা কোনো মারামারি ও খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল না। এরা শুধু খেলা পছন্দ করতো। এদের ওপর কেন আল্লাহর গজব পড়লো ? এরা তো কোনও দোষ করেনি।
ভয়াভহ সড়ক দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারী মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, ওই গাড়ীর নীচে শুধু লাশ আর লাশ।
টেনে টেনে একের পর এক লাশ বের করেছি।
কৈয়াছড়া ইউনিয়নের নিহত সাইদুল ইসলাম আবু তোরাব ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্র। তারা তিন ভাই ও দুই বোন। সাইদুলের বড় বোন মরিয়ম ভাইকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, মায়ের বকুনির ভয়ে আমার ছোট ভাইটি কাউকে না বলে খেলা দেখতে গিয়েছিল।
আর জীবিত ফিরে আসল না।
শামসুদ্দিন রনী, আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল, তার বাবা নুরুল আমিন পূর্ব মায়নীর একজন দরিদ্র কৃষক। রনীর মা-বাবার একমাত্র ভরসা ছিল ওই ছেলেটি। ছেলেকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা।
মামার বাড়ীতে থেকে সে পড়ালেখা করতো।
তার মামা আনোয়ার হোসেনের ছেলে ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনও এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
আবু তোরাব-বড়বাতিয়া মহাসড়কে স্কুল শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি ট্রাক সোমবার দুপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা জানান ঘটনার পরপরই স্থানীয় নারী-পুরুষ দ্রুত ছুটে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
নিহতদের মধ্যে ২২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছে, ধ্রুব নাথ (১৭), রনি (১৫), ইমরান (১৭), ইফতেখার (১৬), আনন্দ দাস (১২), জাহিদুল (১৩), কামরুল (১৬), টিটু দাস (১৬), লিটন দাস (১৭), জাহিদুল ইসলাম (১৬), স্বপন দেবনাথ, রাজিব, রাজু, আনোয়ার (৩০), শুভ, সাজু, রাকিবুল, আরিফ, সাজ্জাদ, জুয়েল, মেজবাহ উদ্দিন ও জুয়েল।
উদ্ধারকারীদের একজন একরামুল বাংলানিউজকে বলেন, তারা অন্তত ৬৫ জনকে উদ্ধার করেছেন যাদের অনেকেই ছিল মৃত এবং কেউ কেউ গুরুতর আহত।
হতাহতরা সবাই আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় ও আঞ্জুমাননেসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনায় পড়ে তারা।
এর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ বাংলানিউজের কাছে ২৬ জনের ও পুলিশ সুপার জেড এম মোরশেদ ২৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার জানান মিরসরাই ক্লিনিকে ১১টি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩টি ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৩টি লাশ রয়েছে।
ক্লিনিকে ও হাসপাতালে রাখা ২৭টি মরদেহের পাশাপাশি আরও ১৫টি লাশ ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা নিয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করে স্থানীয় একাধিক সূত্র।
এদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন জানান, মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ছুটে এসে সন্তানদের দ্রুত নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর এরই মধ্যে নিহতদের স্বজনরা কেউ ঘটনাস্থলে, কেউ ক্লিনিকে আবার কেউ থানায় ভিড় করেছেন। এসব স্থানে সৃষ্টি হয়েছে হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি।
তাদের আহাজারিতে গোটা মিরসরাইয়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দুর্ঘটনায় নিহত একটি শিশুর বাবা থানা প্রাঙ্গনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
(সংগৃহীত, )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।