বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ First in war, first in peace, first in the hearts of his countrymen.
আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন সম্বন্ধে মার্কিন জেনারেল রবার্ট ই.লি (১৮০৭-১৮৭০)
এখন এই মধ্যাহ্নে ম্যারিল্যান্ডের আকাশে কালো মেঘ জমে আছে। সকাল থেকে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন একটি সাদা রঙের স্প্যানিশ মাসটাং ঘোড়ার পিঠের উপর বসে ফোর্ট কাম্বারল্যান্ডের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পটোম্যাক নদীর দিকে চেয়ে আছেন।
তার মুখে উদ্বেগের গাঢ় ছাপ ফুটে আছে । তার কারণ আছে। পেনসালভানিয়ায় হুইস্কি উৎপাদনকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে। পেনসালভানিয়ায় বিদ্রোহ দমনের জন্য ফোর্ট কাম্বারল্যান্ডে সৈন্যরা সমবেত হয়েছে। সৈন্যদের সে সমাবেশ পরিদর্শন করছেন প্রেসিডেন্ট ।
১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ। জুলাই মাসের মাঝামাঝি। ক’দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছে। আর তাতে পটোম্যাক নদীর পানি উপচে উঠেছে । নদীর পাড়ের সারিবদ্ধ উইলো গাছগুলি বিষন্ন ম্লান আলোর ভিতর চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজছে।
মাঝে-মাঝে অশান্ত বাতাসে কাঁপছে উইলো পাতারা । অবিরাম বৃষ্টির ফলে ফোর্ট কাম্বারল্যান্ডের সামনের রাস্তায় কাদা জমেছে। ফলে সৈন্যদের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। অথচ অবিলম্বে পেনসালভানিয়ায় ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে বিদ্রোহ দমন করতে হবে, নইলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সরকারের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে ...
এ সব কারণেই প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন-এর মুখে উদ্বেগের গাঢ় ছাপ ফুটে উঠেছে ।
অশ্বারোহী প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন-এর ঠিক পাশেই একটি বাদামী রঙের মর্গান ঘোড়ার পিঠে সওয়ার জেনারেল রোনান্ড স্টিভ ।
তিনি প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্ট। প্রেসিডেন্টের ওপর সব সময় তীক্ষ্ম নজর রাখেন রোনান্ড স্টিভ । প্রেসিডেন্টের মাথায় দু’পাশে ভাঁজ করা কোঁকড়ানো শুভ্র চুল। ঈষৎ লম্বাটে ফরসা মুখ। চোখ দুটি গভীর অর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন ।
নাকটি তীক্ষ্ম । পরনে ঘিরে রঙের টিউনিকের ওপর ছোট কালো সামরিক কোট। কোটের দু-কাঁধের ওপর সোনালি ঝালর। মাথায় কালো সোনালি ঝালর বসানো ক্যাপ, পায়ে কালো বুট।
প্রেসিডেন্টকে গভীর শ্রদ্ধা করেন জেনারেল রোনান্ড স্টিভ ।
তার কারণ আছে ...
...ব্রিটেনের কাছ থেকে আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য গত আট বছরে (১৭৭৫-১৭৮৩) মরণপণ সংগ্রাম করেছেন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন; তারই যোগ্য নেতৃত্বে গ্রেট ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে আমেরিকা । শুধু তাই নয় স্বাধীনতা লাভের পর তেরোটি অঙ্গরাজ্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নতুন আমেরিকান ফেডারেল সরকারকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন প্রেসিডেন্ট; আর এ ক্ষেত্রে অভাবনীয় সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে। জেনারেল রোনান্ড স্টিভ এর কানে প্রেসিডেন্টের একটি কথা বাজে: I walk on untrodden ground... কথাটি সত্য ... নজীরবিহিন পথেই হাঁটছেন প্রেসিডেন্ট: যেমন নিজস্ব দক্ষতায় মার্কিন সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছেন প্রেসিডেন্ট; এরাই ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৩ সালের আমেরিকান বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আট বছর তীব্র লড়াইয়ের পর ব্রিটিশ সৈন্যরা ইয়র্কটাউন এবং ভার্জিনিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়। গ্রেট ব্রিটেন আমেরিকাকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়।
এর পর পরই আমেরিকার জনসাধারণের চোখের মনিতে পরিনত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট । প্রেসিডেন্ট ইচ্ছে করলেই নিজেকে আমেরিকার সামরিক শাসক কিংবা রাজা বলে ঘোষনা করতে পারতেন। কিন্তু, প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন-এর চিন্তাচেতনা অতটা সংকীর্ণ নয়। আমেরিকায় গনতন্ত্র সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস এবং সংবিধানকেই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট; এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ কর্মচারী হিসেবে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্টের চোখে ইউনাইটেড স্টেটস অভ আমেরিকার স্বপ্ন।
তবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয়। এই মুহূর্তে পেনসালভানিয়ার হুইস্কি উৎপাদনকারীরা বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে। পেনসালভানিয়ার হুইস্কি উৎপাদনকারীদের ওপর করারোপের সিদ্ধান্তটি ট্রেজারি সেক্রেটারি আলেকজান্দার হ্যামিলটন-এর । জাতীয় ঋনের পরিমান হ্রাস করার লক্ষে করারোপ না- করে উপায় ছিল না। অথচ, সদ্য গঠিত জাতীয় সরকারটি পূর্বাঞ্চল ভিত্তিক হওয়ায় পেনসালভানিয়ার হুইস্কি উৎপাদনকারীরা একে পশ্চিমের ওপর পুবের শোষণ হিসেবে দেখছেন।
... গভীর শ্বাস টানলেন জেনারেল রোনান্ড স্টিভ । প্রেসিডেন্ট অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের জটিল সমস্যা মোকাবেলা করে আসছেন । জেনারেল রোনান্ড স্টিভ-এর বিশ্বাস ... প্রেসিডেন্ট এবারও জয়ী হবেন ...
হঠাৎ জেনারেল রোনান্ড স্টিভ দেখতে পেলেন রাস্তায় ওপর কাদায় একটি ঘোড়ার গাড়ি আটকে গেছে। পেনসালভানিয়া অভিমুখি সৈন্য দলটি দাঁড়িয়ে পড়েছে। কয়েক জন সৈন্য অবশ্য ঘোড়াগাড়ির চাকা ধরে ঠেলছে আর ‘মারো টান হেইয়ো’ বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে।
জেনারেল রোনান্ড স্টিভ প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালেন। দৃশ্যটি প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের চোখেও পড়েছে। তিনি ক্ষিপ্র গতিতে ঘোড়া থেকে নেমে দ্রুত পায়ে কাদা মাড়িয়ে ঘোড়াগাড়ির কাছে পৌঁছলেন। তারপর সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে সাধারণ সৈন্যদের সঙ্গে কাদা মাখা চাকা ঠেলতে লাগলেন। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।
ভিজে যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তার কালো রঙের বুট জুতায়, ঘিয়ে রঙের টিউনিকে কাদা মেখে যাচ্ছে।
পটোম্যাক নদীর পাড়ের সারিবদ্ধ উইলো গাছগুলি বিষন্ন ম্লান আলোর ভিতর চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজছে।
মাঝে-মাঝে অশান্ত বাতাসে কাঁপছে উইলো পাতারা ...
ম্যারিল্যান্ডের মেঘলা মধ্যাহ্নের ক্ষীন আলোয় ওই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে জেনারেল রোনান্ড স্টিভ অভিভূত হয়ে পড়লেন।
গভীর শ্বাস টানলেন জেনারেল রোনান্ড স্টিভ ।
তার মনে হল: ভবিষ্যতের মার্কিন প্রজন্ম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন কে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচে গুরুত্বপূর্ণ নেতার মর্যাদা দেবে । ... আর, আমেরিকা যে অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হতে যাচ্ছে ... আজ সাধারণ সৈন্যদের কাতারে নেমে কাদা মাখা চাকা ঠেলে প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন সেই উন্নতির অটল ভিতটি গড়ে দিলেন ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।