খবরটা বাংলাদেশের হকির জন্য বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার মতোই। জাতীয় দল থেকে অকাল অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাসেল মাহমুদ জিমি! বাংলাদেশের হকির ‘মুখ’ হয়ে উঠেছেন, এই সময়ে তাঁকে ছাড়া জাতীয় দল কল্পনা করা যায় না। তবু হঠাৎ কেন লাল-সবুজের মায়া ত্যাগ করতে চাইছেন জিমি?
প্রশ্নটা তিনি নিজেই তুলে দেন কাল দুপুরে। তখন জিমি এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘এশিয়া কাপের আগেই হয়তো আমি জাতীয় দল থেকে অবসর নিতে পারি। নইলে এশিয়া কাপের পর।
তবে খুব সম্ভবত এশিয়া কাপে আমি যাব না। ’ স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতোই ঘোষণা। কী এমন হয়েছে যে জাতীয় দলকে এখনই বিদায় বলতে হবে?
সেই উত্তর খোঁজার আগে জিমি নিজেই কারণটা বলে দেন, ‘আমার মোবাইল ফোনে নানা রকম এসএমএস আসছে। আমাকে র্যাব দিয়ে তুলে নেবে। জার্মানি খেলতে যাওয়ার আগেও এমন হুমকি পেয়েছি।
পাত্তা দিইনি। তবে এখন দিতে হচ্ছে। আমি কীভাবে হকি খেলি, এটা নাকি দেখে নেওয়া হবে। ’
কারা এই হুমকি দিচ্ছে, তা বিরাট এক রহস্য। জিমি বলছিলেন, ‘আমাকে হুমকি দেওয়ার ব্যাপারটা টিভিতে দেখে আম্মা কান্নাকাটি করেছেন।
আমার বোনেরা, আব্বা (সাবেক হকি খেলোয়াড় ও কোচ আবদুর রাজ্জাক, বর্তমানে অসুস্থ) আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। পরিবারের চাপে থাকায় ভাবছি দুই-এক দিনের মধ্যে জাতীয় দল ছাড়ারঘোষণা দেব। ’
দলবদলের দাবিতে হকি খেলোয়াড়েরা আন্দোলন করছেন বেশ কদিন ধরেই। পরশু তৃতীয়বারের মতো তাঁরা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের সঙ্গে দেখা করেন। তখনই জিমি সাংবাদিকদের নিজের মুঠোফোনে আসা খুদে বার্তা দেখিয়ে তাঁর ওপর নানা দিক থেকে আসা হুমকি-ধমকির ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আনেন।
দলবদল নিয়ে গোলমাল, কিন্তু জাতীয় দলে খেলা নিয়ে তো জিমির কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত? বছর দেড়েক ধরে আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম কারিগর জিমি। জাতীয় দলে খেলছেন ২০০৩ সাল থেকে। কাল বিকেলে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে বসে জিমি বলেন, ‘১১ বছর তো খেললাম জাতীয় দলে। আর কত?’ পরক্ষণেই কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরে, ‘আমি শুনেছি তারা (ফেডারেশন) আমাকে বাদ দেওয়ার জন্য মিটিং করে।
হয়তোবা এশিয়া কাপে দরকার বলে এখন কিছু বলছে না। কিন্তু এশিয়া কাপের পর তারা আমাকে ছুড়ে ফেলবে জানি। তার আগেই বিদায় বলে দেওয়া ভালো। ’
শুধু তা-ই নয়, জিমির একমাত্র ছোট ভাই বিকেএসসির হকি খেলোয়াড় খালেদ মাহমুদ রাকিনকেও নাকি খেলা ছেড়ে দিতে বলেছেন তাঁদের মা, ‘আম্মা তো আমার ছোট ভাইকেও বলেছে খেলা ছেড়ে চাকরি বা ব্যবসা করতে। ’
এশিয়া কাপে জিমি না থাকলে দলে বাজে প্রভাব পড়বেই।
এটা জেনেও কেন এমন চিন্তা, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন জিমি, ‘প্রতিবছর দলবদলের সময় আন্দোলন হয়, জাতীয় দলের ক্যাম্প বর্জন করে খেলোয়াড়েরা। আমি নেতৃত্বের সারিতে থাকি। আমাকে কথা বলতে হয়। কিন্তু সব দোষ এসে পড়ে আমার ওপর। আমি নাকি গোলমাল করছি।
এখনকার কমিটির সময়ই শুধু নয়, অনেক আগে থেকেই এটা হয়ে আসছে। ’
জানালেন, দুই-এক দিনের মধ্যে হুমকির ব্যাপারটা নিয়ে থানায় জিডি করবেন। কোচ মাহবুব হারুনও সেই পরামর্শই দিচ্ছেন জিমিকে। তবে এই স্ট্রাইকারের জাতীয় দল ছাড়ার কথা শুনে স্তম্ভিত হারুন, ‘এটি হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি চাইব সে যেন এমন সিদ্ধান্ত না নেয়।
আর জিমিকে হুমকি দেওয়ার ব্যাপারটা দেখা উচিত ফেডারেশনের। ’
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ কাল অনুশীলন শেষে জিমির সঙ্গে কথা বলে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন। পরে এই প্রতিবেদককে রহমত বলেন, ‘আমরা ওর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেব। ’ জিমির জাতীয় দল ছাড়ার কথা শুনে অবাক রহমতউল্লাহও, ‘এমন সিদ্ধান্ত সে কেন নেবে? ওর নিজের ও জাতীয় স্বার্থে জাতীয় দলে খেলে যাওয়া উচিত। ’
জিমির মতো খেলোয়াড়কে আসলে কে হারাতে চায়!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।