আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদিন, যিশু খ্রিস্ট ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ জেরুজালেম শহরের পুবদিকে জৈতুন পাহাড় । যিশু প্রায়ই শিষ্যদের নিয়ে জৈতুন পাহাড়ে যান । প্রিয় শিষ্যদের উপদেশ দেন ।

কখনও একত্রে সংগীত করেন। গতকাল রাত্রেও শিষ্যদের সঙ্গে জৈতুন পাহাড়ে গিয়েছিলেন যিশু। শিষ্যরা শলোমনের একটি পরমগীত গাইছিল: হে আমার প্রিয়! দেখ, তুমি সুন্দর, হাঁ, তুমি মনোহর, আর আমাদের শয্যা হরিদ্বর্ণ। এরস বৃক্ষ আমাদের গৃহের কড়িকাষ্ঠ দেবদারু আমাদের বরগা। আমি শারোণের গোলাপ তলভূমির শোশন পুষ্প।

শলোমনের পরমগীত শ্রবণ করে যিশু গভীর আমোদ বোধ করেন। আমি শারোণের গোলাপ তলভূমির শোশন পুষ্প। আহা। তাম্মুজ মাস। বেশ গরম পড়েছে।

অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি উষ্ণ হয়েছিল। বাতাসে ভাসছিল গন্ধকের কটু গন্ধ । পাহাড়ের ধাপে জলপাই কুঞ্জ । সে কুঞ্জে অবশ্য ঝিরঝির বাতাসে কাঁপছিল জলপাই পাতারা । পাহাড়ের ঢালে একটি প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্র এবং গেথসেমানি উদ্যান ।

সেসবের উপর ঝরে ঝরে পড়ছিল নক্ষত্রের নিষ্প্রভ আলো। ভোর। যিশু মন্থর গতিতে শিষ্যদের নিয়ে জৈতুন পাহাড় থেকে নেমে আসছেন। ভোরের বাতাসে জলপাই কুঞ্জে জলপাই পাতার ঘন গন্ধ ভাসছিল । বুক ভরে শ্বাস নিলেন যিশু।

মুখ তুলে একবার ভোরের আকাশের পানে তাকালেন। মনে মনে বললেন, সদাপ্রভু সবাইকে ভালোবাসেন। তারপর প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্রের সামনে এসে দাঁড়ালেন যিশু । যারা চলে গেছে তাদের জীবনের কথা স্মরণ করে বিষন্ন হলেন। মনে মনে বললেন, ধন্য যারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।

গেথসেমানি উদ্যান ফুটেছিল তাম্মুজ মাসের হরেক রকম ফুল । সেই বিচিত্র সৌরভের সঙ্গে যিশুর নিজস্ব পবিত্রতার সৌরভ মিশে একাকার হয়ে গেল । পাহাড় থেকে নেমে এসে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছেন যিশু। একবার জেরুজালেম নগরের প্রধান উপাসনালয়ে যাবেন। ভোরবেলা উপাসনালয়ে লোকেদের উপদেশ দেন যিশু ।

এই নগরের লোকেরা সব সীমাবদ্ধ গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে ; তাদের চেতনাকে এক আলোকিত স্তরে পৌঁছে দিতে চান যিশু । মানুষের এত সংকীর্ণ হলে চলবে কি করে? মানুষ এক মহৎ পরিকল্পনা ফসল, মহাকালের প্রতিবিম্ব, পবিত্র আত্মার আধার। মানুষ কেন নিজেকে সীমাবদ্ধ সীমানায় আটকে রেখে আত্মার অবমূল্যায়ন করবে ? যিশু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। যিশু উপাসনালয়ের প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গনে প্রবেশ করলেন। ...জেরুজালেম নগরটি রোমক শাসনাধীন।

রোমক শাসনে হিব্রুদের সঙ্কট দিন দিন ঘনীভূত হয়ে উঠছে। যে কারণে এত ভোরেও উপাসনালয়ে ভিড়। যিশু কে দেখেই লোকেরা ছুটে এল। রোমক শাসনে তারা ক্লান্ত। তারা মুক্তির পথ খুঁজছে।

যিশুর হাতে স্বর্গীয় আলোর অনির্বাণ মশাল। লোকে আজ আলো চায় ... আলো। মুক্তির আলো। তবে মুক্তিদাতাকে লোকে পরখ করেও নিতে চায় ... যিশু একটি পাথরখন্ডের উপর বসলেন। স্বর্গীয় যুবকের বসার ধরনটি অপূর্ব।

পরনে দীর্ঘ শুভ্র বসন। ঈষৎ লালচে দীর্ঘ চুল। নীলাভ চোখ। মুখময় ঈষৎ লালচে শ্মশ্রু । ভিড়ের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে যিশু বললেন, শক্রকে ভালোবেস।

আর, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে অযাথা উৎকন্ঠিত হয়ো না। উপস্থিত জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল। কি এর মানে? শক্রতো রোমকগন। কিন্তু, তারা তো নির্যাতনকারী। নির্যাতনকারী রোমানদের ভালোবাসা সম্ভব কি ভাবে? আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে নিষেধ করছেনই-বা কেন? তাহলে কি... তাহলে কি ... কোনও দিন নিষ্ঠুর রোমাকরা যিশুর বাণীকে গ্রহন করবে? হা, ঈশ্বর! সে রকম কি ভাবা যায়? যিশু বললেন, যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হবে।

আর ধন্য যারা দয়াশীল, কারণ তারা দয়া পাবে। উপস্থিত জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল। কথাগুলি কি সত্যি? একেবারে অজানা কথা নয়, তবে বলার ধরনে নতুনত্ব রয়েছে। যিশু আরামিয় ভাষায় নতুন প্রকাশ-ব্যঞ্জনা এনেছেন। যিশু বললেন, ধন্য যারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।

আর আর, সদাপ্রভু সবাইকে ভালোবাসেন। উপস্থিত জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল। অনেকেই ‘সাধু’, ‘সাধু’ বলে উঠল। যিশু কি বলতে যাবেন- ঠিক তখনই কয়েকজন ফরীশী কে আসতে দেখলেন তিনি। ফরীশীরা প্রাচীনপন্থি এবং অতিশয় ধর্মান্ধ।

এদের শাস্ত্রের বাইরে যাওয়ার সাহস কিংবা বোধবুদ্ধি নেই। ফরীশীদের সঙ্গে একটি মধ্যবয়েসি নারীও রয়েছে। দু’জন বৃদ্ধ ফরীশী নারীকে দু’দিক থেকে ধরে রেখেছে। তাতে নারীটির মাথার কাপড় সরে গেছে । এবং ঢেউ তোলা দীর্ঘ সোনালি চুল ছড়িয়ে পড়েছে ।

ভয়ার্ত ফ্যাকাশে মুখে নীলাভ চোখের মনি তিরতির করে কাঁপছিল । যিশু স্পষ্ট দেখলেন। যিশু কৌতূহল বোধ করলেন। একজন ফরীশী বলল, এই নারীটি ব্যভিচার করার সময় ধরা পড়েছে। যিশু নারীর দিকে তাকালেন।

নারীটি মাথা নামিয়ে নিল। যেন এতগুলি পুরুষের সামনে লজ্জ্বায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চাইছে। যিশু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মনে মনে বললেন, মানুষের এই অপ্রতিরোধ্য তৃষ্ণা ... একজন ফরীশী বলল, মোশি (মুসা নবী) এ ধরনের অপরাধে পাথর মারার আজ্ঞা আমাদের দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা আপনার মতামত জানতে চাই।

যিশু আপনমনে হাসলেন। এরা আমাকে পরখ করতে এসেছে। আমার মতামত যথাযথ মনে না- হলেই এরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করবে। এরা সব কপট, ভন্ড এবং ধর্মান্ধ! ফরীশীরা সমস্বরে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা এ ব্যাপারে আমরা আপনার মতামত জানতে চাই। জেরুজালেমের লোকে সামনে তাদের মুক্তিদাতাকে পরখ করার সুযোগ এসেছে।

তারাও সমস্বরে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা এ ব্যাপারে আমরা আপনার মতামত জানতে চাই। যিশু কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে একে পাথর মারুক। পুরুষেরা একে একে উপাসনালয়ের প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গন ছেড়ে চলে গেল। শূন্য চত্বরে রইলেন কেবল যিশু আর সেই নারী ... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.