আগের পর্ব-
Click This Link
ঢাকার ভানু (বন্দ্যোপাধ্যায়) টালিগঞ্জে গিয়ে ভালোই জায়গা করে নিয়েছেন। ওখানে বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব বঙ্গ বা বাংলা) নিয়ে যে উন্নাসিক ভাব ছিলো (এখনো কমবেশী আছে) ভানু সেটাকে পাত্তাই দিতেন না। উল্টা আক্রমন করেছেন। ঢাকার ভানু শীর্ষক কৌতুক থেকে উদ্ধৃত করি-
ভানু- আমি ত বাঙাল। আপনে কি ?
কলকাতাবাসী- আমি আবার কি ? বাঙালী।
ভানু- তাইলে কি খারাইল ?
কলকাতাবাসী- কি আবার খারাইল ?
ভানু- কতাডারে ব্যাকরণে ফেলান। আমি অইলাম বাঙাল আর আপনে অইলেন বাঙালী। তার মানে আমি অইলাম পুং লিঙ্গ আর আপনে অইলেন স্ত্রী লিঙ্গ।
কলকাতাবাসী-ধুর মশাই !
রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস গান গাইতেন প্রমিত উচ্চারণ মেনে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার বাইরে একটা শব্দও বলতেন না।
ভানু সে বালাইও রাখেননি। সর্বত্র ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলেই রাজ্য জয় করে গেছেন। বিক্রমপুরের ভানু জগন্নাথ থেকে বিএ পাশ করে কলকাতা চলে যান অভিনয়ে। কৌতুকের সাথে মনীষা আর সমাজ সচেতনতার যে অপূর্ব প্রয়োগ তিনি করেছেন তা তুলনাহীন। তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।
যমালয়ে জীবন্ত মানুষ, ভানু পেল লটারীর মত অসাধারণ কিছু ছবি পরিচালনাও করেছেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বেড়াতে এলে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইন্টেলেকচুয়াল বলতে আপনি কাদের বোঝেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- যাগো বেবাক ইনটেলেক্ট চোয়ালে আইসা জমা অইছে তারাই ইন্টেলেকচুয়াল। (এ সংজ্ঞা কি বাংলাদেশে এখনো প্রযোজ্য নয় ?)
ভানুর ভাই কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা। পথের পাঁচালি ছবিতে হরিহরের চরিত্রে (অপু,দূর্গার বাবা) অবিস্মরীয় অভিনয় করেছিলেন।
নাজির আহমেদ ছিলেন এফ ডি সি'র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
লাহোরের চোখ রাঙানী উপেক্ষা করে ঢাকাকে চলচ্চিত্র নির্মানের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে যারা শ্রম দিয়েছেন তিনি তাদের অন্যতম। তার ভাই সাঈদ আহমেদ ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যগুরু। আরেক ভাই হামিদুর রহমান স্থপতি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি হিসাবে বিদ্যমান।
এখন যাদের মুম্বাই ফিল্মে আইটেম গার্ল বলে এক সময় এদের নাম ছিলো ভ্যাম্প।
নামী হিরো সালমানের মা( সৎমা) হেলেন এক কালের বিখ্যাত ভ্যাম্প। মাঝে নায়িকারা ভ্যাম্পদের কাজটা (খোলামেলা পোষাকে নাচ)সেরে দিতে শুরু করায় ভ্যাম্পরা উচ্ছেদ হয়ে যান। এখন আবার নতুন নামে ফিরেছেন। ঢাকার সিনেমায় এই কাজ করতেন শর্বরী। (নূতনও করতেন।
পরে নায়িকা হয়ে যান। ) শর্বরীর মেয়ে তমালিকা কর্মকার ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। আরেক মেয়ে চয়নিকা চৌধুরী এবং তার বর অরুন চৌধুরী নাট্যকার।
নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে- গীতা দত্তের এই গান এখনো শ্রোতাদের আলোড়িত করে। গীতার বর গুরু দত্ত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক।
কবি, লেখক, সম্পাদক হিসাবে বুদ্ধদেব বসু আমাদের হৃদয়ে অনেক উঁচু মর্যাদায় আসীন। তাঁর স্ত্রী প্রতিভা বসু (রানু সোম) এক কালের হার্টথ্রব গায়িকা। স্বয়ং নজরুল রানুকে গান শিখিয়েছেন।
ড. নিলীমা ইব্রাহীম শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক হিসাবে সুপরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে বীরাঙ্গনাদের জন্য সীমাহীন মমতাময় শ্রম দিয়ে এই মহিয়সী নারী ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তাঁর কন্যা ডলি আনোয়ার (ইব্রাহীম) ছিলেন উঁচু মানের অভিনেত্রী। সূর্য দীঘল বাড়ি ছবিতে জয়গুন চরিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। ডলির বর আনোয়ার হোসেন আমাদের সেরা ফটোগ্রাফারদের এক জন। যদিও তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিলো। পরে ডলি মারা যান (১৯৯২ সালে)।
নৃত্যশিল্পী গনেশ নাথ অভিনেত্রী রওশন জামিলকে বিয়ে করে হয়ে গেলেন গওহর জামিল। তাদের কন্যা কঙ্কা জামিল সরকারী চাকুরী করেন। তবে ভালো গানও করেন।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্রের ভাই সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ''পালামৌ'' লিখে মাত করে দিয়ে গেছেন। (এখন আমরা যে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস পড়ি তিনি ভিন্ন ব্যক্তি)
''আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
''
এই অনন্য কবিতাটি লিখেছেন কুসুম কুমারী দাশ। তার পুত্র জীবনানন্দ দাশ আমাদের শ্রেষ্ঠ কবিদের এক জন।
গীতিকার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই গীতিকার রফিকুজ্জামান।
সমাপনী
শুরুতে পরিকল্পনা ছিলো আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারের ইতি ও নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে লিখবো। পরে ভাবলাম নেতিবাচক লেখার জন্য আমাদের পুরো মিডিয়া মুখিয়ে থাকে।
আমি আর সে পথে গেলাম না। সবার কথা বলে গেলাম। যারা পড়বেন তারা নিজ বিবেচনায় বুঝে যাবেন।
এই দীর্ঘ সিরিজে যারা আমার সাথে ছিলেন, উৎসাহ দিয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
পুনশ্চ- আর কোন নতুন তথ্য পেলে কোন একটা পর্বে সেটা আপডেট করে দেব।
এর ভেতরও আগের কিছু পর্বে আপডেট করা হয়েছে। অনেক পাঠক তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। তাদের জন্য শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
(শেষ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।