জীবনের উল্টো পিঠেও আমি বৃত্তের মত বাস্তবতার কাছে বন্ধী আমাদের চারপাশে উড়ছে অসংখ্য হিংস্র শকুন আর আমরা নির্বাক হয়ে আপেক্ষা করছি কখন সেই শকুনগুলো ঠুকড়ে ঠুকড়ে ছিড়ে খুড়ে খাবে আমাদের হাড়, মাংস, মজ্জা, দেহ। ব্যাপারটা কাল্পনিক বলে মনে হলেও যদি ইতিবাচক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করা হয় তাহলে আমার মনে হয় দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ভিজ্যুয়াল চিত্রটা ঠিক এরকমই হবে। আর যেভাবে আমরা নিজেদের মৃত বলে ভাবতে পারায় অভ্যস্ত হতে শুরু করে দিয়েছি তাতে ঐ সত্যিকারের স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণটাকে এক নজর দেখতে পাওয়ার আগেই হয়ত শকুনে ছিড়ে খুড়ে খাবে আমাদের সব রক্ত মাংস ! পরাধীনতার ধুম্রজাল থেকে আজও আমরা একটা মুহুর্তের জন্যও কি মুক্ত হতে পেরেছি ? আমি জানি না বাংলার মানুষ কোন স্বধীনতার সুখে নির্লিপ্ত ভাবে এখনও ঘুমিয়ে থাকতে পারে, কোন স্বাধীনতার গর্বে নিজেকে গর্বিত মনে করতে পারে, যেখানে বাংলা আজও সত্যিকার ভাবে কখনই স্বাধীন হতে পারেনি, স্রেফ পরাধীনতার হাত বদল হয়েছে মাত্র !!
১৫৭৬ সালে সম্রাট আকবরের বাংলা দখলের মধ্য দিয়ে বাংলায় মোগল আমলের যাত্রা শুরু হয়। মোগল শাসনামলের দীর্ঘকাল বাংলাদেশ পরাধীনতার মধ্যে থেকে শাসিত হয়েছে। ঠিক কবে থেকে বাংলার পরাধীনতা, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ আমার জানা নেই।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির শাসনের পর সুলতানি শাসনামল, মোগল শাসনামলে যাঁরা বাংলা শাসন করেছেন, তাঁরা কেউই বাঙালি ছিলেন না। নবাব সিরাজদ্দৌলা যদি বাঙালি হতেন, তাহলে আমরা বলতে পারতাম বাঙালির স্বাধীনতা-সূর্য অস্তমিত হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে নবাব ছিলেন একজন তুর্কমেন। তাঁর পিতামহ আলীবর্দী খানও ছিলেন তুর্কমেন। তারই ধারাবাহিকতায় সিরাজদ্দৌলা ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
ফলে যৌক্তিকভাবেই বলা যায়, পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের কাছে বাংলার পরাধীনতার হাতবদল হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার পর নব্য ঔপনিবেশিক শাসক হিসেবে শোষণের শক্ত থাবা নিয়ে উপস্থিত হয় পাকিস্তানের পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী। একের পর এক আমাদের শাসক বদলেছে আর শোষণের মাত্রা বেড়েছে। যেমন মোগলদের তুলনায় অনেক বেশি শোষণ করেছে ব্রিটিশরা। আবার ব্রিটিশদের শোষণকে শুধু নয়, সব কালের শোষণকে হার মানিয়ে শোষণের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে ছিল পাকিস্তান সরকার।
আমাদের শাসক বদলেছে, অধীনতা দূর হয়নি। কুশাণ, গুপ্ত, শশাঙ্ক, পাল, সেন, খিলজি, সুলতান, মোগল, ব্রিটিশ, পাকিস্তানি সবার হাত বদল হয়ে যখন বাংলার মানুষ ১৯৭১ সালে ভোরের কুয়াশার মত আবছা-আবছা স্বধীনতা অস্তিত্ত অনুভব করতে শুরু করেছিলো ঠিক তখনি ঐ শকুনের দল বাংলার আকাশটাকে তাদের সম্রাজ্যবাদ আর পুঁজিবাদ তন্ত্রের কালো ডানায় ঢেকে দিতে থাকলো। দুরে থেকেই তারা বাংলার পরাধীনতার গুরুভার ন্যাস্ত করল বাংলার শাষক দালালদের হাতেই, আর তখন থেকেই শুরু হল আরেক বিভীষিকাময় অধ্যায়।
"তোমার ঘরের মধ্যে উড়ছে শকুন
তার ভয়ঙ্কর ডানা ঝাপটানির শব্দে
থরথর কাপছে পুরো বাড়ি, ছাদ, ঘরের আসবাব
তবে কি মাংসের গন্ধ পেয়ে ছুটে এলো
সুদূর পাহাড় থেকে এত দূরে, তোমার বাড়িতে
সেও খায় মাংস, ঠোট দিয়ে ছিড়ে-খুড়ে ঠুকরে ঠুকরে......
অবিকল তোমার ভঙ্গিতে
শকুন মানুষ খায়, মৃত
তুমি খাও সবকিছু, এই কথা শকুনও জানে না" !!
শুরু হয়ে গেল বাংলার শোষিত হওয়ার আরেক নতুন অধ্যায়। আর এ অধ্যায়ে পুরনো শকুনলোর সাথে যুক্ত হল আরো নতুন এবং অতীতের চেয়ে আরও ভয়ানক কিছু ছ্দ্দবেশি ভালো মূখোষধারী হিংস্র শকুন।
ওরা বুনতে থাকলো বাংলার শাখায় প্রশাখায় পুঁজিবাদের জাল, কারন সম্রাজ্যবাদই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর এই পুঁজিবাদী সমাজতন্ত্র এমনই এক ফাঁদ যার মাধ্যমে নাকি দুরে থেকেই একটা দেশের কলকব্জা নিজের মত করে ইচ্ছামত নাড়াচাড়া করা যায়, একটা রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করা যায়,এবং তাতে নেপথ্যের গুটিবাজদের গায়ে কোন দাগও লাগে না। এককথায় যাকে বলা যায় সম্রাজ্যবাদের মোক্ষম হাতিয়ার। ততকালিন সময়ে তাজউদ্দীন আহমেদ চাননি বিশ্বব্যংক ও সাহায্যদাতা গোষ্ঠী বাংলাদেশে সহজে গেড়ে বসুক। তার জন্য তাকে তার নিজের দল আওয়ামী লীগের কাছেও গুনাহগার হোতে হয়েছে।
শেখ মুজিবও তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি। ফলস্বরুপ বিশ্ব ব্যংক ও আইএমএফ যেদিন থেকে বাংলাদেশে পা ফেলেছে তারপর ১৫ আগষ্ট ঘটতে খুব বেশি একটা সময় লাগেনি। তাদের কর্মকান্ড কখনই থেমে নেই, ধারাবাহিক ভাবেই তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আমাদেরই স্বজাতী দালালের মাধ্যমে।
এত-এত জ্ঞানীদের ভীড়ে যদিও আমি এক অকাট মূর্খ তবুও কেন যানি আমার আশঙ্কা হচ্ছে বর্তমানে দেশে সম্রাজ্যবাদী শকুনগুলো আমাদের প্রত্যেকটা বিষয়ে যেভাবে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে তাতে দেশে ১৫ আগষ্টের চেয়েও ভয়াবহ কিছু না ঘটে যায় !!
কারা এদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে, কারা এই বাংলার আকাশটাকে শকুনমুক্ত করবে.......???
তবে হ্যা, শকুন তাড়িয়ে বাংলার আকাশটাকে মুক্ত করার মত বাঙালী তখন যেমন ছিলো, এখনও আছে। কিন্তু তাদের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যারা কাজ করছে সেসব স্বনামধন্য গন্যমান্য ব্যক্তিরা ঐ শকুনদের সাহায্যের কারনেই বিখ্যাত হতে পেরেছেন, তাই ঐ শকুনদের বিরুদ্ধে মুখ খোলাটা তাদের জন্য খুব একটা স হ জ কাজ নয়।
আর আমাদের এই স্বদেশি দালালরা দিনের পর দিন আমাদের বোকা বানিয়ে তাদের প্রভু শকুনদের আহারের মুখে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে যেখানে আমাদের কিছুই করার থাকছে না। আমরাই আমাদের নিজের পায়ে কূড়াল মারছি এবং এ কথা বোঝার পরও আমরা আমাদের হাতকে বাধা দিতে পারছিনা। আর এটাই সম্রাজ্যবাদ কবলিত রাষ্ট্রের ভয়ানক পরিনতি। তাইতো সরকার পরিবর্তন হবে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতি ও চুক্তির ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো অনৈক্য দেখা যাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, রাশিয়াসহ দেশি-বিদেশি লুটেরাগোষ্ঠী বাংলাদেশকে ভাগবণ্টন করে নেবে আর দেশের মানুষ দারিদ্র্য এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে বিপর্যস্ত হতেই থাকবে এবং হতেই থাকবে—
এমএলএম বিজনেসের নাকি একটা সূক্ষ বিজনেস পলিসি আছে, তারা তৃনমূল পর্যায়ে অথবা বাজারে তাদের বিজনেস এডভার্টাইজ যতটা না করে তার চেয়ে বেশি এডভার্টাইজ করে তাদের নিজেদের এমপ্লয়দের কাছে কারন তারা যদি একজন এমপ্লয়ের মাথাটা কিনতে পারে তাহলে ঐ একজনই তাদের আরও একশ বা হাজারটা কাস্টমার এনে দেবে আর এভাবেই এমএলএম বিজনেসের প্রসার ঘটে।
বর্তমানে মশা-মাছির চেয়ে ভয়াবহ যন্ত্রনাদায়ক হয়ে যেভাবে এমএলএম এর প্রসার ঘটেছে চারিদিকে তাতে এইসব 'এমপ্লয় প্রডাক্ট' দের সম্মন্ধে আপনারাও হয়তো দু-এক কথা জানেন। এই 'এমপ্লয় প্রডাক্ট' দের সবচেয়ে বিশেষ বৈশিষ্ট হল এরা এদের সৃষ্টিকর্তার বদনাম শুনতে রাজী আছে কিন্তু এমএলএম এর বিন্দু মাত্র কোন সমালোচনা তারা মেনে নিতে নারাজ। যদি তাদের প্রমান সহ ও বলা হয় তবুও বিচার মানলেও তালগাছটা তারা কোনভাবেই হাতছাড়া করবেনা। যাকে এক কথায় বলাযায় 'অন্ধ' !!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলের অবস্থাও যে এর ব্যতিক্রম কিছুই নয় তা একটু সূক্ষভাবে দৃষ্টিপাত করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন ধরুন, যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক তাদের যদি বলেন কনোকোফিলিপস এর সঙ্গে চুক্তি করলে আমাদের ভাগে কোনোদিন মার্কেটেবল গ্যাসের ২০ শতাংশের বেশি হবে না।
৮০ শতাংশই তারা বিনিয়োগ উশুল করার নামে নিয়ে যাবে। তারা এলএনজি করে রপ্তানি করবে, কিন্তু আমাদের অংশের গ্যাস এলএনজি করে দেবে না। ফলে তা আনতে আমাদের ব্যয় হবে অনেক বেশি,,,তখন দেশের ভাল-মন্দ বিচার না করেই তাদের দলীয় টান টেনে এর উত্তরে তারা বলবে, পিএসসিতে জনস্বার্থবিরোধী কিছু নেই। রপ্তানির যে প্রক্রিয়ার কথা এতে আছে, তা সুদূরতম সম্ভাবনা। আবার যদি বিএনপি সমর্থিত কোন ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেন, নিজের বাড়ির আর ছেলেপুলের অপকর্ম ঢাকার জন্য হরতাল করে দেশের অর্থনীতিটাকে পঙ্গু কারার নামই কি রাজনীতি(?),,,তখন এর উত্তরে তারা আওয়ামী সমর্থকদের মতোই দলীয় টান টেনে বলবে, আমরা জনগনের অধীকার আদায়ের লক্ষে রাস্তায় নেমেছি এবং হরতালের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি এবং প্রয়োজন হলে এই রকাম কর্মসূচি আরো নেব।
অর্থাৎ এদের মত 'এমপ্লয় প্রডাক্ট'দের কাছে আগে দেশ নয় আগে দল.......... এভাবে ব্যাপারটা আপনারাই একটু যাচাই করে দেখুননা, তাহলে সত্যটা আপনারাও উপলব্ধি করতে পারবেন !!
আমরা যদি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটাকে এই প্রক্রিয়ায় একটু সুক্ষ ভাবে বিচার করি তাহলে আমার মনে হয় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিকে 'এমএলএম রাজনীতি' বললে কোনভাবেই ভূল বলা হবে না। কারন ঐ এমএলএম বিজনেস আর রাজনীতির মধ্যে এখন খুব একটা পার্থক্য নেই। পুরো বাংলাদেশটাই দুইটা রাজনৈতিক বৈশিষ্টে বিভক্ত হয়েগিয়েছে এবং এই দুই পক্ষের সব সমর্থকরাই যে এক একটা আদর্শ 'এমপ্লয় প্রডাক্ট' তাতে কোন সন্ধেহ নেই। এবং এইসব 'এমপ্লয় প্রডাক্ট'রা যার-যার নিজের দলের অন্ধ ভক্তিতে ভাল-মন্দ বিচার করার নুন্যতম ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছে।
তাই রাষ্ট্রকে 'অকার্যকর' করার প্রক্রিয়াটা বোঝা এবং তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর দায়িত্বটা আমাদেরই।
সেই অপরাধে শুধু হাসিনা আর খালেদাকে দায়ী করে গেলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। কারন এরা কেউই আমাদের ক্ষতির দায়ভার নেবে না। আজ যদি বাংলাদেশ 'রাষ্ট্র' হিসেবে টিকে থাকুক এটাই আমরা চাই তাহলে আমার মিনতি হলো 'অকার্যকর রাষ্ট্র' সংক্রান্ত ধারনা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির আলোকেই আমাদের বিচার করতে হবে। কারন সমস্যাটা আমাদের তাই সমাধানটাও আমাদেরই খুজে বের করতে হবে। আসুন আমরা ঐ শকুনগুলোর দালালদের 'এমপ্লয় প্রডাক্ট' না হয়ে মিথ্যা আর ভ্রমের ময়লা চোখ থেকে পরিষ্কার করে একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সত্যটাকে দেখার চেষ্টা করি আর আমার বাংলার এই ভয়াভহ পরিস্থতিটাকে একটু উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি।
সেই সাথে মাথা থেকে এই চিন্তাটাও দুর করে ফেলি 'আমি এক নিতান্তই সাধারন মানুষ তাই রাজনীতি আমার জন্য নয়'।
আসুন বাংলার স্বাধীনতাকে ঐ শকুনগুলো আর তাদের দালালদের হাত থেকে মুক্ত করে সত্যিকারের স্বাধীনতাটাকে তুলে দিই আমার বাংলা মায়ের হাতে !!!!!!!!!
আমি এক অকাট মূর্খ, তাই না বুঝে কোন ভূল করে ফেললে একটু ক্ষমার দৃষ্টিতে
দেখার চেষ্টা করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।