উৎসর্গঃ
আমার বন্ধুসকল। বিশেষ করে '"আমার বন্ধু তামিম"কে
আমার কথাঃ
আমি ঘুমাতে যাবার আগে প্রতিরাতে নিজেকে নায়ক ভেবে স্বপ্ন বানাই। প্রতিটি মানুষ ই বানাই বলেই আমি মনে করি। সে ক্ষেত্রে এটা নিশ্চই পাঠক অপরাধ হিসেবে নেবেন না। প্রতিটি মানুষ ই নিজের কল্পনায় নায়ক থাকে।
কেউ সাইড নায়ক হতে চান না। যা হোক.........এরকম টুকরো টুকরো অনেকগুলো স্বপ্ন জোড়া দিয়ে লেখেই ফেললাম গল্পটি............
গল্পের শুরুতেই নিজের পরিচয় দিয়ে দিচ্ছি। আমি শুভ্র। । শরতকালে জন্ম বলে এই নাম।
কাশফুলের শুভ্রতার জন্য...।
আমি কিছুই করি না। আমার এইম ইন লাইফ ছিলো কিসু(?) একটা হওয়া। । এখন আমার কোন এইম ইন লাইফ নেই।
আমি যা করি তা হল সকালে ঘুম থেকে উঠেই পথে নেমে যাই...কবি একলা চলতে বলেছেন যদি ডাক শোনার মত কেউ না থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ডাক শোনার মত কেউ না থাকলেও আমি একা নই। আমার পাশে অনেকেই হেটে যায়। ষোলো কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে,প্রায় এক কোটি মানুষের এই ঢাকায় একলা হওয়ার উপায় নেই। তবু হেটে যাই।
। গান গাই মনে মনে"হেটে যাই আমি,ধুসর ছাড়িয়ে........."। । ধূসর ছেড়ে যাবার উপায় নাই...তাই গান পাল্টাই...ইংলিশ গান গাই ...ইংলিশ গানের ভাব ই আলাদা। ।
ব্যাপার আছে na??গান গাইতে গাইতে হাটতে থাকি.....iwalk a lonely road..the only one that i have ever known, donno where it goes but it's home to me and i walk alone ...মনে হয় যেন গানটা আমার জন্যই গাওয়া হইসে...
আমি থাকি একটা মেসে। চার পাচ জন এক রুম এ। । কঠিন অবস্থা। ।
আমি কোন কাজ করি না। এটুকু বলার মাঝে কোন বীরত্ব না থাকলেও আমি একথা বলার সময় গর্ব বোধ করি। আমার মতে কিছু না করাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ..all in all আমি পথ হণ্টক বা পরিব্রাজক। । আশা করি পাঠক আমার সম্বন্ধে ভাল ধারণা পেয়ে গেছেন ইতিমধ্যে...এবার মূল গল্পে যাওয়া যেতে পারে মনে করছি...
১.
শুভ্র ভাই উঠেন ।
। আর কত ঘুমাবেন...। শ্লার মেস মালিক আয়া ভাড়া খুইজা গেসে গা। । কইসে তারে মুক্তি দিবার।
ঘুম ভেঙ্গে রঞ্জুর সরব উপ্সথিতি দেখলাম। । আমার চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোটই হবে...ওর অভ্যাস শালা কে শ্লা বলা!
-ও তাই নাকি?আড়মোড়া ভাংতে ভাংতে বললাম
-হ। । হালার পুতে কয় 'গো টু হেল"।
। কুত্তার বাচ্চা আর কারে কয়। ?....... পুতে আমার লগে ইংলিশ .....
যেন আমি মুরুক্ষো...........পুত......আরো কিসু গালি দিল সে... বললাম কাজটা ঠিক করে নাই। । তুমি ক্লাস ফাইভ পাস।
। বেটা বেয়াদপ.........ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ওরে সান্তনা দিলাম। ও কিসুটা থান্ডাও হইসে মনে হয়......
যা হোক পথে নেমে পড়া যাক...নেমেই সিগারেট ধরালাম। কিনলাম(?) পথে ফেরী করে সিগারেট বেচক এর কাছ থেকে। সিগারেট বেচক না বলে বিক্রেতা বললেই বোধ হয় ভালো হত but নিজের বানানো শব্দের ভাব ই আলাদা...যা হোক পোলার বয়স খুব একটা বেশি না।
। সিগারেট শেষ। । ছেলে টেকা চায়। ।
আমি হো হো করে হাসতে হাসতে বললাম তোর নাম কি?
-শিহাব
-সুন্দর নাম। এহন একটা গান শুনা
-মশকরা করেন?(চোখ মুখ কঠিন করে রাখসে)
-আজ্ঞে হ্যা।
-ভাই ঝামেলা না কইরা টেকা দেন। (আরো কঠিন)
-দিমু না। টেকা নাই।
কি করবি??মাইরা ভচকায়ালাম(আঞ্চলিক ভাষার একটা পাওয়ার আসে। । সেটা use করার চেষ্টা আমার। )
হুমকিতে কাজ হল। ।
কাদ কাদ চেহারা হয়ে গেসে ছেমড়ার।
-ভাই এরকম করেন কেন??টেকাটা দেন না...(এবারে মিনতি ঝরলো)
-i am sorry to say that i have to go now, kid..আজকের দিনে ইংলিশ বলার দাম অনেক। । আলাদা ভাব লুক্কাইতো থাকে......বলে ছেলেটাকে আর কিসু বলার সুযোগ না দিয়ে পা চালালাম। ।
হতাশ চোখে ছেলেটা আমার চলে যাওয়া দেখল। । মানবজাতির নিষ্ঠুরতায় স্তব্ধ!
ফুটপাতে উঠলাম। আজব এই দুনিয়ার সবচেয়ে আজব প্রানি হল মানুষ। তাদেরকে দেখতে দেখতে এগুচ্ছি।
আজকে হটাৎ খালার বাসায় যেতে ইচ্ছা করল। আমি মাঝে মাঝেই আমার আত্নীয় স্বজন দের বাসায় গিয়ে তাদের বিরক্ত করি।
খালার বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
২.
আমার খালার নাম ফারিয়া । খুকি টাইপ নাম।
বয়স বেশি না। হয়তো বা তাই এই নাম। । আমার এক মাত্র খালা। ।
উনার একটা মেয়ে আছে। বয়স ৭ বা ৮। নাম পৃথী। পরি টাইপ। দেখলেই একটা ইংলিশ গানের কথা মনে পড়ে যায়।
you're beautiful,ur beautiful it's true......ক্লাস ওয়ান এ পড়ে।
খালার বাসায় গিয়ে ঢুকতে গিয়ে বিরাট এক ধাক্কার মত খেলাম। ব্যাপক পরিবর্তন।
-খালা কেমন আসেন?
-আসি ভালো। তোর কি অবস্থা?
-ভালো।
-ভাল মানে???তুই তো মনে হয় না কোন সময় ভালো থাকস।
-ভাল মানে ভাল। ইংরেজিতে যাকে বলে ফাইন।
-আমার সামনে ইংরেজি কপচাইতে মানা করসি না তোরে??
-স্যরি খালা ভুল হইসে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
আপনার পদযুগল বাড়ান। পা ধরে মাপ চাই।
-মুশকরা করস??
(খালা মশকরা বলতে পারে না)
-জি না খালা । আমার এত সাহস হবে কেন?
খালাকে ব্যাপক রাগিয়ে দিচ্ছি এমন ই সময় পৃথী কোথা থেকে দোউড়ে এসে বলল,কেমন আছ শুভ্র মামা?(এই মেয়েটা আমাকে কখনোই ভাইয়া বলতে পারে না। )
-ভালই আছি।
তুই কেমন আছিস রে?
-এই তো ভালো।
-তোর পড়াশুনার কি অবস্থা?
-এই তো মামা ভাল।
এমন সময় খালা এই মামা ভাগ্নির(?) কথায় বাধা দিলেন
-অই এতো পটর পটর কিসের। পৃথী পরতে যা।
-সারাদিন তো পড়ার উপর ই আসি।
-ফের মুখে মুখে কথা!যা ভাগ
মুখ কালো করে চলে গেল সে।
খালার বাসা থেকে বেরোতে হল। বের করে দিল খালা। অবশ্য তার আগে ৫০০ টা টাকাও দিল। খালার নাকি আমার উল্টাসিধা চাল চলন পছন্দ না।
৩.
রাস্তায় নেমে পড়লাম। কোথায় যাব চিন্তা করতেসি। রমনায় গেলে কেমন হয়?কপোত কপোতী তো আছেই। গোটাকয়েক প্রস্টিটিউটও আছে। আমার অবশ্য এসবের কোনোটাতেই আগ্রহ নেই।
মানুষকে বিরক্ত করেই মজা পাই।
-এই যে ভাই আপানারা কি প্রেম করছেন??
কন্ঠে মধু ঢেলে প্রশ্ন করলাম।
-আপ্নে কে?
-আমি একজন মানুষ,প্রেমিক মানুষ। আপনি যদি উনার সাথে প্রেম না করে থাকেন তাহলে আমি করব ভাবছিলাম।
-কি কস??তুই আমারে চিনস??
-জি!
-তাইলে এহন অ খাড়ায়া আছস কেলা???ফুট
-ফুটব ফুটব।
আগে ভাবি কে বউ বানায়া নেই। দেন ফুটব।
-তুই অহন যাবি কিনা ক।
-নাহ
ঠাশ করে আমারে থাপ্পর মেরে দিসে সে।
আমি হাহাহা করে হেসে বললাম
-ভাইজানের রাগ কি কমসে??
অবাক দুই জোড়া চোখ কে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম।
-ওই ভালা কইরা পাত্তি দিয়া এক কাপ চা দে তো।
পাত্তি শব্দটা কেবল চায়ের সঙ্গেই যায়।
এর মানে কি আমি জানি না। হয়ত অনেকেই জানে না। তবু দিনের পর দিন এই শব্দ ব্যবহার করে চলেছে।
-নেন ভাই।
চুমুক দিলাম। কুসুম গরম চা। কিন্তু বেশ ভালো হইসে এটা। চা দ্রুত শেষ করা উচিত।
কিন্তু আমি রসিয়ে রসিয়ে চা-টা খেলাম এবং বেশ সময় নিলাম।
৫০০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলাম
দে চারশো টাকা ফেরত দে।
চা খুব ভালো হইসে। চা ফেরিয়ালার চোখে সন্দেহ। জাল নোট কিনা পরিক্ষা করে দেখল।
পড়ে ফিরত দিতেসি বলে টাকাটা নিয়া দোউর দিল
ভাবলাম আর ফিরত পাব না। কিন্তু মিনিট খানেকের মধ্যেই ফিরে এল ছোকড়া।
চার শ টাকা নিয়ে হাটা দিলাম।
৪.
আমি হেটে যাচ্ছি শিহাবের খোজে। ছোকড়া যথেষ্ট ভোগালো।
বিকেলের দিকে পেয়ে গেলাম তাকে।
আমাকে দেখে ভাবলাম ভয় পেয়ে যাবে। কিন্তু দেখি ছোকড়া হাসছে।
আমি তার কাছে গেলাম।
জানতে চাইল
-সিগারেট খাবেন?মাগনাই দিমু।
-নাহ, বলে তার হাতে ৪০০ টাকা গুজে দিয়ে আবার রাস্তায় নেমে পড়লাম..
মেসে ফিরে যাব কিনা ভাবছি। মেস ছাড়া আর কোথায় যাওয়া যায় তাই ভাবছি।
হাটছি আর ভাবছি।
এমন সময় চিন্তার সুতো ছিড়ে গেল পেছন থেকে ডাক দিল আমাকে কে যেন।
সুন্দর সুরেলা কন্ঠে বলছিল,এই যে শুনুন।
আহ! বহু দিন এত সুন্দর করে কেউ ডাকে নি। তাকালাম তার দিকে
কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
-বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত.এখন যে প্রশ্ন করব তার জন্যেও। আমার ছোট বোনটা জানতে চাচ্ছিল যে আপনি দু পায়ে দুরকম স্যান্ডেল পরেছেন কেন?
হাসি পেয়ে গেলো। হাস্তে হাস্তে বললাম আমার দুই জোড়া জুতাই খুব পছন্দ।
কিন্তু পা তো এক জোড়া। তাই......
-আপনি মানুষটা অদ্ভুত
-আমরা সবাই ই যার যার জায়গায় অদ্ভুত।
-কিন্তু আপনি একটু বেশি অদ্ভুত।
-হতে পারে হতে পারে। তা আপনার ছোট বোনটা কই?
-উপরে দেখুন।
তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা মেয়ে দুষ্টু দুষ্টু হাসি নিয়ে আমাদের দেখছে।
আমি তাকে দেখে হাত নাড়লাম।
-ওর নাম?
বড় বোনকে জিগ্যেস করলাম
-রিদি। আপনার?
-শুভ্র
-ও
কিছুক্ষন নিরবতা। কথা আছে......মৌনতা হীরন্ময়।
ভালই লাগছে এম্ন সুন্দরীর পাশে নীরবে থাক্তে। কিন্তু বেশিক্ষন থাকা গেল না। মেয়েটা বলে উঠল
-আমার নাম জানতে চাইলাম না যে?
-জেনে কি হবে?
-না মানে.........
-আচ্ছা ঠিকাসে, আপনার নাম?
-সামান্থা।
-সুন্দর নাম। আচ্ছা তা হলে আজ যাই।
। ।
-আপনার মোবাইল আছে?
-নাহ।
-ও...
-আপনার নাম্বার টা দিন। পরে হয়ত ফোন দিতে পারি।
আশা করি আপনি বিরক্ত হবেন না।
-না না কি যে বলেন! ০১.........
-ধন্যবাদ। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগল
-আচ্ছা!ফোন দিবেন কিন্তু।
আমি পিচ্চি রিদির দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপে দিয়ে হাটা শুরু করলাম।
পিছে তাকালাম না।
আসলে আমি নিজেই নিজের জন্য কিছু নিয়ম তৈরি করেছি।
তার মধ্যে একটি হল কখনো বিদায়ের সময় পিছু তাকানো যাবে না।
কারন এতে কেবলি মায়া বাড়ে।
কি দরকার শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে?
5.
শুতে চলছি। ঘুম ঘুম ভাব চারদিকে।
মনে হয় আমি ছাড়া সবাই ঘুম
নিজেকে কেমন নিশাচর নিশাচর লাগছে।
(বাকিটা আরেকদিন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।