আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারতন্ত্র ! - ৬

আগের পর্ব- Click This Link ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পরিচিত ছিলেন জ্ঞানতাপস হিসাবে। তাঁর জ্ঞানের উচ্চতা বোঝাতে তাঁর এক প্রতিবেশীর রসিকতাময় উক্তিটিকেই আমি মোক্ষম বিবেচনা করি। তাঁর জ্ঞানের বহর বোঝাবার জন্য প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে বলছেন, আমগো পুঁটির যেই মাস্টর তার যেই মাস্টর তার যেই মাস্টর এই রকম কইরা ৭০ তালা উইট্যা যা সেই খানে গিয়া যারে পাইবি তিনিই ডাক্তার শহীদুল্লাহ (তখন অনেকের কাছেই ডক্টর আর ডাক্তারের তফাত পরিষ্কার ছিলো না। শহীদুল্লাহ সাহেবের কাছে প্রায়ই লোক জন রোগী নিয়ে হাজির হতেন)। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র তকীয়ুল্লাহ ভাষা সৈনিক।

তকীয়ুল্লাহর জ্যেষ্ঠা কন্যা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী বিজ্ঞাপন জগতের এক শীর্ষ নাম (এডকম), ছিলেন গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। তাঁর বর নাজিম কামরান চৌধুরী সাংবাদিক যিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের ফলাফল সঠিকভাবে আগাম অনুমান করে রিপোর্ট লিখে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছেন। তকীয়ুল্লাহর আরেক কন্যা শান্তা মারিয়া কবি ও সাংবাদিক। শহীদুল্লাহর আরেক পুত্র মুর্তাজা বশীর আমাদের অগ্রজ শিল্পীদের এক জন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো বশীর উল্লাহ।

পিতার সাথে জেদ করে আপন পরিচয়ে পরিচিত হবার জন্য তিনি নাম বদলে ফেলেছেন। বশীর বেশ কিছু চমৎকার উপন্যাসও লিখেছেন। কবি আহসান হাবীব গত শতকের চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি। রাত্রি শেষ, ছায়া হরিণ, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো, দু'হাতে দুই আদিম পাথর, বিদীর্ণ দর্পনে মুখ প্রভৃতি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। ছিলেন কিংবদন্তী সাহিত্য সম্পাদক।

তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা কেয়া চৌধুরী আমাদের গুনী অভিনেত্রীদের এক জন। কবির পুত্র মইনুল আহসান সাবের লেখক ও প্রকাশক। লেখক নেয়ামাল বাসির, কবি জিয়া হায়দার, কবি রশীদ হায়দার ও কবি দাউদ হায়দার এ চার জন সহোদর। কবি গোলাম মোস্তফার লেখা মহানবীর জীবনীগ্রন্থ বিশ্বনবী বহুল পঠিত বই। তাঁর দারুন কিছু কবিতা স্কুল পাঠ্য আছে।

কবি নজরুলের পর তিনিই বেশ কিছু সুন্দর হামদ নাত লিখেছেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মুস্তাফা মনোয়ার আমাদের অসাধারণ চিত্রশিল্পীদের এক জন। কবির অপর পুত্র মোস্তফা আজিজও নামী চিত্রশিল্পী। শওকত ওসমান (প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান) আমাদের পথিকৃত লেখকদের এক জন। তাঁর উপন্যাস ক্রীত দাসের হাসি আইয়ুবী জামানায় দারুন প্রতিবাদের রসদ যুগিয়েছিলো।

তাঁর পুত্র বুলবন ওসমান চিত্রশিল্পী, চারুকলার অধ্যাপক ও লেখক। আরেক পুত্র ইয়াফেজ ওসমান ছড়াকার। বর্তমান সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্য যোগাযোগ প্রতি মন্ত্রী। ৫০ এর দশকে তরুন ফজলে লোহানী মাসিক অগত্যা বের করেছিলেন। যা মূলত: ফান আর স্যাটায়ারের খনি ছিলো।

অগত্যার প্রশ্নোত্তরের পাতাটি ছিলো সব চেয়ে মজার। যেমন পাকিস্তানের তাবেদারী করে যারা লিখতো তাদের কি শাস্তি দেয়া উচিৎ ? এর জবাবে সম্পাদক জানাচ্ছেন- উপায় রয়েছে জানা, মাথার উপরে সুপারি রাখিয়া কাষ্ঠ পাদুকা হানা। আরেক জন প্রশ্ন করেছেন, ঢাকার মশার উৎপাতে অতীষ্ট। এর থেকে বাঁচার কি উপায় ? সম্পাদক সে কালের বিখ্যাত এক গানের কলি দিয়ে জবাব দিলেন- হামসে না পুছো, পুছো বাহার সে পুছো বাহার সে। অর্থাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করো না, বসন্তকে জিজ্ঞাসা করো।

কিন্তু সে সময় পূর্ত ও নগরায়ন মন্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত লেখক হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী (শামসুন নাহার মাহমুদ তাঁর বোন, সংবাদ পাঠক ইকবাল বাহার চৌধুরী তাঁর পুত্র)। সম্পাদক বাহার বলতে সেই বাহারকেই খোঁচা দিলেন। বাহার এমন রাগা রাগলেন যে ঢাকা থেকে মশা তাড়িয়ে ছেড়েছিলেন। ঢাকার চার শ' বছরের ইতিহাসে মশা তাড়াবার এটাই ছিলো সেরা সাফল্য। সেই ফজলে লোহানী বিটিভিতে যদি কিছু মনে না করেন নামে দুর্দান্ত একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করেছিলেন।

লেখালেখিও করতেন। তাঁর এক ভাই ফতেহ লোহানী ছিলেন লেখক, অনুবাদক ও শক্তিমান অভিনেতা। আরেক ভাই তাসাদ্দুক হোসেন খান লোহানী ছিলেন শিক্ষক ও লেখক। তাদের চাচাতো ভাই কামাল লোহানী খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক।

গোলাম মুস্তফা ছিলেন আমাদের শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের এক জন। আমার বিবেচনায় তিনি ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, উৎপল দত্তদের কাছাকাছি মানের অভিনেতা ছিলেন। আমরা তার অভিনয় ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারিনি। তিনি আমাদের সেরা আবৃত্তিকারদেরও একজন। তাঁর কন্যা সুবর্না মুস্তফা মঞ্চ ও টিভি নাটকের সেরা অভিনেত্রীদের এক জন।

সুবর্নার বর হুমায়ুন ফরিদী অতি উঁচুমানের অভিনেতা। সুবর্নার বর্তমান বর বদরুল আনাম সৌদ একজন নাট্য নির্মাতা। সুবর্নার বোন ক্যামেলিয়া মুস্তফাও এককালের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী ছিলেন। সুবর্নার চাচাতো বোন প্রজ্ঞা লাবনী এবং তার বর কাজী আরীফ আমাদের সেরা আবৃত্তিকারদের অন্তর্গত। সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন আমাদের পথিকৃত সাহিত্য সম্পাদক।

নাসির উদ্দিন কন্যা নূর জাহান বেগম মহিলাদের পত্রিকা বেগম এর সম্পাদক। নূর জাহান বেগমের বর রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই) ছড়াকার ও শিশু সংগঠক (কচি কাঁচার আসরের পরিচালক ছিলেন বহুদিন)। তাঁর বাক বাকুম পায়রা ছড়া পড়েননি গত চল্লিশ বছরে লেখা পড়া শেখা এমন শিশু পাওয়া যাবে না বাংলাদেশে। সুরকার আলতাফ মাহমুদ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী-এ গানের সুর করেই অমরত্ব ক্রয় করে রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী সারা মাহমুদ গান করতেন।

তার শ্যালিকা শিমুল বিল্লাহ ওরফে শিমুল ইউসুফ গায়িকা ও মঞ্চাভিনেত্রী। শিমুলের বর নাসিরুদ্দিন ইউসুফ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাদের কন্যাও সম্প্রতি পা রেখেছেন মিডিয়া জগতে। নাট্য ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক থাকার সময় তৈরী হয় বিখ্যাত ভাস্কর্য অপরাজেয় বাংলা। সেই ভাস্কর্যের নারী মডেলটির নাম ফাল্গুনী দে।

তিনিই আমাদের অতিপ্রিয় ফাল্গুনী হামিদ। তাঁর অভিনয় প্রতিভার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। তাদের কন্যা তনিমা হামিদও অভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয়। তনিমার বর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জনপ্রিয় টিভি সংবাদ উপস্থাপক। (চলবে) পরের পর্ব- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.