নতুন নতুন ফেসবুক ইউসার তখন। বারবার কারেন্ট চলে যাওয়ায় নেট ডিসকানেক্ট হচ্ছিলো বলে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম। যন্ত্রণা যখন চরমে পৌছালো তখন ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। পাশের ঘরে আপু বললো,“খবর দেখনি?”আমি বললাম,“না। কি হয়েছে?”পরে যা শুনলাম তা মোটামুটি আমার চিন্তায় আলোড়ন তুলে দিলো।
বিডিয়াররা নাকি আর্মির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। বিডিয়ারের এতো সাহস কিভাবে হলো তা আমার বোধগম্য হলো না। তারা চলে আর্মির কমান্ডে। তাদের প্রিয়জনের অসুখ হলেও ছুটির জন্য তার কমান্ডিং চেইনের আর্মির যে অফিসার থাকে তার অনুমতি লাগে। এসব জেনেই কিন্তু বিডিয়ারে তারা যোগ দেয়।
বাঁচার তাগিদে আর মেধার স্বল্পতার কারণে আর্মি অফিসারদের কমান্ড তাদের শিরোধার্য। আর্মির সাথে বিদ্রোহ করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা—একথাটা বিডিয়াররা নিশ্চয় জানে। তাদের বুদ্ধি যতই খাটো হোক না কেনো,অন্তত সারভাইভাল ইনস্টিঙ্কট তাদের আছে। সুতরাং,সেই দিক বিবেচনা করেই বুঝা যায়,যত বড় বেইনসাফই আর্মিরা করুক না কেন, বিদ্রোহে যাওয়ার মতো বোকামী বিডিয়াররা করবে না। তার আরেকটা কারণ হলো,সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব তাদের কাঁধে।
এই দায়িত্ব পালনে তারা এক কদমও এগোতে পারবে না যদি না আর্মিরা কমান্ড দেয়। আর বিদ্রোহের পরবর্তী শাস্তি নিয়েও তারা ভাল করেই জানে। সুতরাং জীবিকার তাগিদ,সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব এবং বিচার-বুদ্ধি কোনো দিক দিয়েই তাদের এই বিদ্রোহ সূচনা করার [to take initiative] দুঃসাহস নেই। একটা উপায় অবশ্য আছে। তাদেরকে যদি উপযুক্ত পরিবেশ দেয়া হয়[তবুও সবাইকে জড়ানো যাবে না এটা নিশ্চিত] এবং অন্য কেউ যদি হত্যা বা বিদ্রোহটা শুরু করে দেয় তবে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ নেবার চেষ্টা চালাবে।
সুতরাং,কে বা কারা এই হত্যাকান্ড সূচনা করার পরিকল্পনা নিয়ে বিডিয়ারের কিছু জোয়ানকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তাতে জড়িয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ্য বা এতে লাভ কি সেটাই আমাদের আলোচ্য বিষয়।
তার আগে কিছু প্রশ্ন রইলোঃ
*আসলে বিডিয়ার না আর্মি কারা খারাপ ? নাকি তাদেরকে খারাপ দেখানো হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। [যেন তাদের পরষ্পরের প্রতি আস্থা কমে যায়]
*আসলে যে আর্মি জাতিসঙ্ঘের মিশনে এত সুনাম অর্জন করেছে,সে আর্মি এই সাধারণ বিদ্রোহ দমন করতে পারেনি কেন?
*বিডিয়ার মহাপরিচালকসহ আরো ১১ জনের মৃত্যুর সংবাদ বাংলাদেশের কোনো চ্যানেলের আগে ভারতের এনডিটিভি কিভাবে জানলো?
*সেনা বিদ্রোহ দমনে আসলে আধ ঘন্টা দরকার নাকি দুই দিন?
*ইতিহাসে কখনো সেনা বিদ্রোহ রাজনৈতিকভাবে সমাধান হয়নি। তবে এই বিডিয়ার বিদ্রোহ কেন হলো?তাহলে কি এটা সেনাবাহিনীর ইস্যূ?না রাজনৈতিক ইস্যূ?
*কেন বিষয়টি দেশবাসীর কাছে “বিডিয়ার জনতা ভাই ভাই” উপায়ে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হলো?
*সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার পরেও কেন এতোগুলো লাশ পাওয়া গেল?
এবং সবকিছু ছাপিয়ে সবচাইতে বড় প্রশ্নঃ
***হত্যাকারী,পরিকল্পনাকারী কারা ? তাদের উদ্দেশ্য কি?
এবারে আসা যাক,এই বিডিয়ার বিদ্রোহ কি ফলাফল নিয়ে আসবে এবং এর ফলে কারা বেশি উপকৃত হবে।
*বিডিয়ার-আর্মির সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
*ক্ষাণিক সময়ের জন্য হলেও সীমান্ত অরক্ষিত থাকবে।
*সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে অনেক সময় লাগবে,সে সময়ে সীমান্তে অনেক চোরাকারবারী,ফেনসিডিল পাচার করা যাবে অনায়াসে।
*দক্ষ অফিসার হত্যার ফলে আর্মিও দূর্বল হয়ে পড়বে। ফলে,দেশের সমগ্র প্রতিরক্ষা বিপদের মুখে পতিত হবে।
*দেশের দক্ষ আর্মির স্থলে অপেক্ষাকৃত কম চৌকস লোকেরা সেই পদে অধিষ্ঠিত হবে।
ফলে,পুরো ব্যবস্থায় একটা নেগেটিভ ইমপেক্ট পড়বে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।