আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিলখানার ঘটনা ও কিছু প্রশ্ন.... (২)

© ২০০৬ - ২০১১ ত্রিভুজ

আগের পর্ব পর্ব -- পিলখানার ঘটনার সময় বিরোধী দলের হৈ চৈ আশা করেছিলো সরকার? সংসদে দেখলাম সরকার দলীয় সাংসদরা পিলখানার ঘটনার সময়ে বিরোধীদলের চুপচাপ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আওয়ামী মননের বুদ্ধিজীবি ও ব্লগারদেরও এখন একই প্রশ্ন... ঘটনার সময়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় তারা মনে হচ্ছে হতাশ। বিরোধী দলের কাছ থেকে তারা কী আশা করেছিলো? সংকটময় মূহুর্তে এমন কোন বিবৃতি যা সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারতো? পিলখানার ঘটনায় সরকারের সবগুলো পদক্ষেপই যে ভুল ছিলো সেটা এখন সবাই বুঝতে পারছে। এই ভুল পদপক্ষেপের বিরুদ্ধে বিরোধীদল তখন কোন বক্তব্য দিলে সেটা নিয়ে কী হতে পারতো তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। বিরোধীদল এই ক্ষেত্রে নীরবতা পালনের জন্য ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

কিন্তু সেই নীরবতাই এখন তাদের দোষ হয়ে গিয়েছে। যারা এখন বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা ঐ সময় সরকার কী বিরোধীদলকে ডেকেছিলো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য? আমরা সকলেই জানি সরকার নিজের বুদ্ধিতেই সকল কাজ করেছে। গত কয়েক মাসের বিভিন্ন কাজ থেকে তো এটা প্রমাণীত যে সংসদে নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকার কাউকেই তেমন তোয়াক্কা করছে না। পিলখানার ঘটনার বেলায়ও সেটাই হয়েছে। এখন সরকার কিভাবে বিরোধীদলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে? কোন পরিস্থিতিতে সেনা কর্মকর্তারা প্রশ্ন করেছেন? সেনাকর্মকর্তারা কিভাবে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন এটা নিয়ে অনেকে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন।

সেনা কর্মকর্তাদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মিটিং এর অডিও শুনে আসল বিষয় বাদ দিয়ে "প্রশ্ন করা"টা গুরুত্ব পায় কিভাবে তা ভাবছি। ঘটনার দিন থেকেই একটা উড়ো খবর এসেছিলো যে সেনা কর্মকর্তাদের বউ ও মেয়েদের উপর পাষবিক নির্যাতন হয়েছে। সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সম্মান রক্ষার্থেই হোক বা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্যই হোক এই খবরটি মিডিয়ায় তেমন ভাবে আসেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মিটিং এ এক সেনাকর্মকর্তার বক্তব্য থেকে মোটামুটি বর্বরতা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এরকম বর্বরতা যাদের চোখের সামনে হয়েছে তাদের ভেতরে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? ভিকটিম সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে এটাও পরিষ্কার যে নিহত কর্মকর্তারা ঘটনার ঘটার অনেক আগেই সাহায্য চেয়েও পাননি।

কর্মকর্তারা অপেক্ষায় ছিলেন সেনাবাহিনীর অপারেশনের। অপারেশন চালাতে না দেয়াটা সরকারের সিদ্ধান্তে হয়েছে। এমতাবস্থায় ক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সরকার কেমন আচরণ আশা করে? পুরো ঘটনায় সেনাবাহিনী যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে সেটা কেউ মূল্যায়ণ করছে না, বরং মিটিং এ সেনা কর্মকর্তাদের প্রশ্নগুলো সমালোচনা ওঠতে শুরু করেছে! মিটিং এর অডিওতে সরকারের যে ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেছে সেনাকর্মকর্তারা সেগুলো নিয়ে আলোচনা না করে সেনা কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করা নিয়ে আপত্তি তোলাটা কতটুকু সমীচিন? কারা সেনা বিদ্বেষী? 'বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর দরকার নাই', এধরনের বক্তব্য অতীতে কারা দিয়েছে তা আমরা দেখেছি। পিলখানার ঘটনার দিন থেকে কোন মহলের পোষা বুদ্ধিজীবিরা সেনাবাহিনীর সমালোচনা চালিয়ে গিয়েছে তাও আমরা দেখেছি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চরম বিষেদাগার ও সেনা কর্মকর্তাদের মৃত্যুতে কারা আনন্দ প্রকাশ করেছে তাও আমরা দেখলাম পিলখানার ঘটনার পরে।

এ থেকে আমরা কী বুঝতে পারি? পিলখানার ঘটনা থেকে প্রাপ্তিগুলো(!) কী কী আসুন একনজরে বুঝে নেই- ১) পিলখানার ঘটনার সাথে সাথেই ওপার বাংলার (ভারতীয়) মিডিয়া এটা নিয়ে রাজনীতি করতে শুরু করেছে। আমাদের অভ্যন্তরিন এত সেনসেটিভ বিষয়ে ভারতীয় মিডিয়ার এই ভূমিকা আমাদের জন্য নিশ্চই একটা বড় প্রাপ্তি! বলুন জয় বাংলা... (এপার বাংলা+ওপার বাংলা) ২) পিলখানার ঘটনায় কিছু হোক আর নাই হোক বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সীমান্ত প্রহরীদের পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। রৌমারী পাদুয়ার সহ আরো অসংখ্য ঘটনার প্রতিশোধ নেয়া হলো? (একটা প্রতিশোধ অবশ্য আগেই নেয়া হয়ে গিয়েছে... রৌমারী পাদুয়ার সেই কমান্ডারের বিরুদ্ধে তৎকালীণ আওয়ামী সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো... সীমান্ত রক্ষার উত্তম পুরুষ্কার(!) স্বরুপ!) ৩) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিছু চৌকষ অফিসার হারিয়েছে যে গ্যাপ পুরন হতে এক যুগেরও বেশী সময় লাগতে পারে। উপরের সারির অনেক অফিসারের পদ খালি হওয়াতে সুবিধাই হয়েছে বলতে গেলে..... ওখানে আরো কিছু দলীয় লোক বসানো যাবে! ৪) বিডিআর ও সেনাবাহিনীকে পরস্পরের শত্রু ও দেশপ্রেমিক বিডিআরকে জনগণের শত্রু বানানো শেষ। এখন বাকী আছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

আলামত দেখে বুঝা যাচ্ছে ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের সাথে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জড়িত করে সেগুলোকেও পঙ্গু করার চেষ্টা চলবে... ....আরো অনেক প্রাপ্তি(!) আছে.... আমরা অসহায় জনগণ শুধু দেখেই যাচ্ছি। আরো কত দেখতে হবে কে জানে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.