আজ আমার প্রিয় পোস্টগুলো ঘাঁটার সময় অনেক পুরানো এই লেখাটা চোখে পড়লো। রিপোস্ট দিলাম পিলখানার সেই মাস চলছে বলে।
বাঙ্গালীরা গণিতে কাঁচা বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। একথা শুনার পর শেরে বাংলা ফজলুল হক সাহেব মাত্র এক মাসের প্রস্তুতিতে অন্য বিষয়ের পরিবর্তে গণিতে এম.এ. পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে দেখিয়েছিলেন যে, বাঙ্গালী গণিতকে ভয় পায়না। কিন্তু সবাই তো আর ফজলুল হক নন।
বর্তমান বংলাদেশীরা দুয়ে দুয়ে কত হয়? তা শতকরা কতজন বাংলাদেশী সঠিক বলতে পারবেন? সে কথা আমি বলতে পারবোনা।
যা বলতে চাচ্ছি, বাংলাদেশে বোমা হামলার সংস্কৃতি উদীচি,রমনার বটমূল দিয়ে প্রথম আওয়ামী লীগ আমলেই শুরু হয়েছিল। বিগত আওয়ামীলীগ আমলে বোমা হামলার সঠিক তদন্ত, হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার তাদের বিচার তো আমরা দেখতে পেলাম না। উপরন্তু বোমা হামলা, অন্যান্য হামলার পর তারা তা রাজনৈতিক ভাবে তাদের বিরোধী দলের উপর চাপানোর সর্বত্র প্রচারনায় লিপ্ত ছিল। পিলখানার ঘটনায়ও আমরা এর ব্যতিক্রম দেখছিনা।
স্বাধীনতা যুদ্ধে নয় মাসে মাত্র পঞ্চান্ন জন বিভিন্ন সামরিক অফিসার আমরা হারিয়েছি। অথছ মাত্র একদিনে স্বাধীন বাংলাদেশে পিলখানার অভ্যন্তরে একশোর উপরে সেনাবাহিনী এবং বিডিআরের অভিজ্ঞ অফিসারকে রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের আশায় বসে থেকে আমরা হারালাম। বাংলাদেশের এমন কোন লোক নেই, যে জানেনা ভারতের সাথে আওয়ামীলীগের মধুর সম্পর্ক চিরন্তন সত্য হিসেবে বিদ্যমান। তাই ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের জয় লাভের সাথে সাথে তারা দাদাদের খুশি করতে করিডোর ও টাস্কফোর্স চুক্তিতে সায় দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। ২৫শে ফেব্রুয়ারী পিলখানার জিম্মি হত্যা ঘটনায় বাংলাদেশী মিডিয়ায় আসার আগেই ভারতীয় মিডিয়ায় বিডিআরের ডিজি শাকিল আহমেদ স্বস্ত্রীক নিহত হওয়ার ঘটনা প্রচারিত হওয়া রহস্যজনক।
এটা ভারতীয় বেসরকারী চ্যানেল “এন ডি টিভি”তে দুপুর ১২ টা ১৩ মিনিটে প্রচারিত হয়। অথচ তখনো বাংলাদেশের মিডিয়া তা জানে না। দুয়ে দুয়ে চার মেলালে বুঝতে কি খুব অসুবিধা হয়ে যায় যে, ভারতীয় মিডিয়া ও আওয়ামীলীগ একই সুরে তাদের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ সমূহকে দোষারূপ করে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে? কারো যদি মনে হয়, এই অঙ্ক শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সাহেব ছাড়া আর কেউ বুঝবে না; তাহলে আমার কিছুই বলার বা করার নেই। আর গনিতে খুব ভাল কারো যদি বুঝতে অসুবিধা হয়, তাদের উদ্দেশ্যে এতটুকুই বলব- জেগে থাকা মানুষের ঘুম ভাঙ্গানো খুবই কঠিন।
পিলখানার ঘটনায় এবং ঘটনার পর সরকারের সফলতার দাবিতে সবার মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম হয়েছে যা জনগন বর্তমান সরকারের কাছে জানতে চায়।
প্রশ্ন ১- আপনারা (আওয়ামী সরকার) এতগুলো অফিসারকে বাঁচাতে পারলেন না এবং হত্যাকারীদের পিলখানার দেয়াল ঘেরা এলাকা থেকে পালানো ঠেকাতে পারলেন না, তাহলে আপনারা কোন দিকে সফল হয়েছেন?
প্রশ্ন ২- ঘটনার রাতে পিলখানার ভিতরে ও বাইরে অন্ধকার ছিল কার স্বার্থে?
প্রশ্ন ৩- সেনা বাহিনীকে ঘটনার সময় ট্যাংক নিয়ে দেয়াল ভেঙ্গে বিডিআরের দরবার হলের সামনে এসে জিম্মিদেরকে রক্ষা করা হলোনা কেন?
প্রশ্ন ৪- জঙ্গি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে স্লিপিং গ্যাস নিক্ষেপ করে কিংবা কমান্ডো নামিয়ে বিদ্রোহী ও কিলারদের হটিয়ে তাৎক্ষনিক উদ্ধার তৎপরতা চালানো হলো না কার স্বার্থে?
প্রশ্ন ৫- আলোচনা ও সময়ক্ষেপন করা হলো কার স্বার্থে?
প্রশ্ন ৬- ২৫শে ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে শেখ হাসিনা প্রণব বাবুর সাথে কথা বলতে পারেন, কিন্তু সব দলের অংশ গ্রহনের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য কেন সৃষ্টি করা হলোনা?
প্রশ্ন ৭- ২৫শে ফেব্রুয়ারি একটি অপরিচিত পিকআপভ্যান এলো-গেলো কিভাবে?
প্রশ্ন ৮- রেড ক্রিসেন্টের গাড়িগুলো বেশ কয়েকবার ঢুকলো-বেরুলো, হাসপাতালে আহত মানুষ এলো না; সেই গাড়িতে তাহলে কারা ছিল?
প্রশ্ন ৯- প্রধানমন্ত্রী ২৬শে ফেব্রুয়ারি পিল খানার দাওয়াত কেন ২২ তারিখেই বাতিল করলেন?
প্রশ্ন ১০- ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার কলকাতাগামী ফ্লাইটটি কার হুকুমে ৪ঘন্টা দেরীতে রাত ১টায় ছাড়ল এবং যে ৪জন সেনা কর্মকর্তাসদৃশ ব্যক্তি ওঠার পর ফ্লাইটটি ছাড়া হল তারা কারা?
এতবড় ঘটনার পরেও শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে দোষারূপ করার কালচার বন্ধ হচ্ছে না। পিলখানার ঘটনার সময় গোলাগুলির মধ্যে দুপুরের দিকে প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন রাত দশ/এগারটার দিকে পিলখানার অভ্যন্তরে নিরাপদে ঢুকলেন ও বের হলেন কিভাবে তাও জাতি জানতে চায়? নাকি গোলাগুলি, বিদ্রোহীরা ও কিলাররা আপনাদের জীবনের জন্য হানিকর নয়। কেন সরকার রাজনৈতিক সমাধানের নামে কালক্ষেপন করে রাতে অফিসারদের স্ত্রী ও কন্যাদের বেইজ্জত হওয়ার সময় দিলেন, তা ও আমার মত সমগ্র দেশবাসী জানতে চায়। যদি সরষের মধ্যে ভূত থাকে তাহলে তদন্ত সঠিক হবে না। এটা অন্ধের ভাই কানাও বোঝে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বললেন, “বিডিআর বাঙ্গালী জাতির গর্ব” উনি বাঙ্গালী জাতি বলতে পশ্চিম বাংলা না পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশ-নাকি উভয়ই বুঝিয়েছেন। তা ব্যাখ্যা করা উচিৎ। আমরা তো অবিভক্ত ভারতের পশ্চিম বাংলার অংশ নই। তাহলে বাংলাদেশের গর্ব কি বলা যায় না? পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্ক যে চিরবৈরী তা সবাই জানে। তাহলে পিলখানার ঘটনায় এতগুলো কমান্ডিং অফিসারের পরিকল্পিত হত্যাকান্ড কিলারদের মাধ্যমে তা কার স্বার্থে করা হয়েছে।
এতটুকু বোঝার ক্ষমতা প্রত্যেক বাংলাদেশী জনগনের থাকা উচিৎ। তা না হলে হয়তো আরো বড় বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বিডিআর সদস্য তৌহিদের সাথে সরকারের ফোনালাপে ১১০ বার ২৩শে ফেব্রুয়ারি হতে ২৮ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কি কথা হয়েছে তা জাতি বিস্তারিত জানতে চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ৩রা মার্চ সংসদে বললেন, “ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে আমাদের স্বার্থ বিরোধী কাজ করবে না। ” আমরা মাননীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই ভবিষ্যতে যে ভারত তা করবে না উনি তার গ্যারান্টি দিতে পারবেন কিনা? আর দিলেও বিশ্বাস করব কিসের ভিত্তিতে, ফারাক্কা বাঁধের চুক্তির ভিত্তিতে? যা ১৯৭২সালে পরীক্ষামূলক আরম্ভের পর থেকে আজও “On Test”-এ আছে।
এ-ও জানতে চাই, ট্রাঞ্জিটে স্বার্থ কার? এ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের স্বার্থে কোন কোন কাজ করেছে তাও আমরা জানতে চাই? ‘ক্ষমতায় থেকে দালালী’ কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি তা সব বাংলাদেশী বুঝলে ভবিষ্যতে ভাল হবে।
উৎস
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।