আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেইসব দিন-রাত্রি - ১

ত থার্ড ইয়ার ফাইনাল চলে। সামনে এলগরিদম এক্সাম। রানা স্যার কোশ্চেন করবে এবং বাঁশ দিবে। এটা মোটামোটি কনফার্ম। সবাই তাই চোখ-মুখ বন্ধ করে পড়ছে।

এক্সামের আগে ৫ দিন বন্ধ। দ্বিতীয় দিন উঁকি দিলাম রতন ভাই এর রুমে। দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে কোরম্যানের এলগরিদম বইটা পড়ছে। কাছে গিয়ে দেখি যে পেজটা রতন ভাই পড়ছে সেটা PREFACE। জিগ্গেস করলে গম্ভির ভাবে বল্লো, "রাইটার বইয়ে কি বলতে চাইলো তাই যদি না জানলাম ঐ বই পড়ে এট লিস্ট আমি কিছু বুঝবো না!!!" ভালো কথা।

পরের দিন উঁকি দিলাম, দেখি ভাই খুব মনোযোগ দিয়ে বইয়ে ব্যবহার করা সিম্বল পরিচিতি পড়ছে। কোন সিম্বল এর কি মিনিং তা না জানলে নাকি এলগরিদমই বুঝা যাবে না !!! PREFACE আর SYMBOL পরিচিতি পড়তে পড়তে রতন ভাই এর তিনদিন শেষ। বাকি দুইদিনে আগামাথা কিছু করতে না পেরে ইম্প্রুভমেন্ট রাখা হলো। তার যুক্তি, "লাভ একটাই, পরেরবার আর PREFACE আর SYMBOL পরিচিতি পড়তে হবে না। পড়া আগায়া থাকলো!!!" রতন ভাই এর ডান হাতে ছিলো দুটো বুড়ো আঙ্গুল।

বড়টার পাশে ছোট আরেকটা। দুটো একসাথে দেখতে অনেকটা "V" এর মতো। আমাদের নাকি "V" দেখাতে মধ্যমা ও তর্জনী রেখে বাকিগুলো বটে দিতে হয় আর আল্লাহ নাকি তাকে পাঠিয়েছেই বিল্ট ইন "V" দিয়ে!!!মাঝে মাঝে আমি গম্ভীর ভাবে জিগ্গেস করতাম, বলেন দেখি মানুষ কত প্রতিসম ? "কেনো ? দ্বি-প্রতিসম ?"। আমি তাঁর "V" এর দিকে আন্গুল তাক করে বলতাম , আপনি তো অরীয় প্রতিসম !! তাইলে কি আপনি মানুষ না ? বেচারা হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো !!রতন ভাই ছিলো আমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র। প্রথমবার ভর্তি হলো বুয়েটে।

ছয়মাস মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং পড়ে বিরক্ত হয়ে এসে ভর্তি হলো মাইক্রোবাইলোজিতে। কিছুদিন পর সেটাও ভাল্লাগলো না। এরপর এসে ভর্তি হলো আমাদের সাথে সি,এস,ই তে। প্রথম প্রথম ব্যাচমেট ভেবে রতন বলে ডাকতাম, গম্ভীর ভাবে বলতো আমি তোমাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র!!! ডিমার্টমেন্টে এক টিচার ছিলো (নিরাপত্তা বিবেচনায় নাম প্রকাশ করা হলো না ) যিনি আমাদের সাথে কোনো কারণ ছাড়াই খারাপ ব্যবহার করতেন!!! ভালো বল্লেও ঝাড়ি আর খারাপ কিছু বল্লে তো রক্ষাই নাই!! স্যারের কাছে কোনো হেল্পের জন্য গেলে স্যার মুখের ভাব টা এমন করতেন যেন স্যারের কাছে টাকা চাইতে গিয়েছি। তো একবার আমার এক ফ্রেন্ড (আবারও নিরাপত্তা বিবেচনায় নাম প্রকাশ করা হলো না ) গেলো স্যারের কাছে প্রজেক্ট প্পপোজাল নিয়ে কথা বলতে।

তখন আমাদের ফোরথ্‌ ইয়ার ফাইনাল প্রজেক্টের কথাবার্তা চলছে। গিয়েই খেলো ঝাড়ি!!! "এত তাড়াহুড়া কিসের ???" এরপর গেলো এক মাস পরে , আবার ঝাড়ি, "এতদিন কই ছিলা ?? সবাই একমাস আগে টপিক ঠিক করেছে !!!" বেচারা হতাশ। আসলো আমার কাছে , "কি করা যায় মামা ক তো ? " । আমি বল্লাম কিছু করার নাই, ইউনিভার্সিটির টিচারদের অনেক ক্ষমতা। একটা বুদ্ধি আসছে!! , হটাৎ করে বলে উঠলো।

বল্লাম, কি ? প্রতিদিন একদম ভোরে স্যারের রুমের দরজার নিচ দিয়ে আমরা লিফলেট ঢুকায় দিবো । "চিকন স্বাস্হ্য মোটা করা হয় ","আল্লাহ্‌র দান, মুশকিলে আসান" টাইপ যে লিফলেট গুলা আছে ঐগুলা !!!আমি বল্লাম , মানে ??? সে বল্লো , হুম। এটাই হবে উপযুক্ত চিকিৎসা এবং এই চিকিৎসা চলবে যতোদিন আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার চলবে ততোদিন !! আর স্যার তো সব ব্যাচের সাথেই খারাপ ব্যবহার করে সো সে বুঝবেও না একাজ কে করেছে !! যখন তার উপলব্ধি হবে যে, স্টুডেন্টরা ভাবে তার এই ধরনের স্বাস্হ্যগত সমস্যার কারণে সে খারাপ ব্যবহার করে তখন সে অটোমেটিক ব্যবহার ভালো করবে !!প্ল্যানমাফিক অনেক কষ্ট করে মতিঝিল থেকে ঐ জিনিষ যোগাড়ও করা হয়েছিলো কিন্তু প্ল্যান শেষ পর্যন্ত এক্সিকিউটেড হয় নাই এবং স্যারের ব্যবহারও ঠিক হয় নাই । লোটাসের রোল ছিলো ৪২। ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম থেকেই আমরা লক্ষ্য করতাম, টিচাররা রোল কল করার সময় ৪২ কল করলে সে দুইবার প্রেসেন্ট স্যার বলতো।

একবার মিডিয়াম ভয়েসে আরেকবার চিৎকার করে। তারপর রোল কল শেষে স্যারের ডায়াসের সামনে গিয়ে কনফার্ম করে আসতো ৪২ তে প্রেসেন্ট দেয়া হয়েছে কিনা !! ফয়সাল তো এ ব্যাপারটাতে মজা পেয়ে গেলো !! এরপর থেকে লোটাসের দায়িত্ব ও নিয়ে নিলো। লোটাস একবার প্রেসেন্ট স্যার বল্লে ও দুইবার বলতো !! তারপর রোল কল শেষে চিৎকার দিয়ে, "স্যার, ৪২ !!", "স্যার, ৪২"। এরপর আমরাও একসাথে শুরু করতাম। স্যারেরা আবার চেক করে বলতো , দেয়া হয়েছে তো!! এভাবে কয়েকদিন চলার পর টিচাররা বিরক্ত হয়ে বলতো, এই ৪২ টা কে ? লোটাস দাড়াতো।

"তোমার প্রব্লেম কি ??", প্রতিদিন তুমি তিন চার বার রোল কল দাও !!! আজকে তোমার এটেনডেন্স বাতিল!!! বেচারা সইতেও পারে না কইতেও পারে না !!! কইলে যদি আবার আমরা মাইন্ড করি !! হতাশ হয়ে আমাদের দিকে তাকায়া থাকতো। শুধু রোল কলের ব্যাপারে না , সব ব্যাপারেই তার তিন চারবার কনফার্ম হওয়া লাগতো। একবার ফারহান স্যার বল্লেন, তোমাদের এই শনিবারের ক্লাশটা সোমবারে অমুক টাইমে হবে , আমার এই শনিবারে একটু কাজ আছে। হাত তুলে লোটাসের জিগ্গাসা, "স্যার, শুধু এই শনিবারের ক্লাসটাই সোমবারে হবে নাকি প্রত্যেক শনিবারের ক্লাসগুলোই সোমবারে হবে !!! " আমরা কনফার্ম শব্দটাকে রিপ্লেসই করেছিলাম ৪২ দিয়ে। আমরা আর বলতামই না , "কনফার্ম কর।

"। বলতাম , "৪২ কর !!, ৪২ করে নিয়ে আয়। " মুনাকে আমি ডাকতাম অসুস্হ !! কারণ তার ক্লাশ লেকচার আমার পরীক্ষার খাতার চেয়েও পরিপাটী থাকতো। তার কাজই ছিলো ক্লাশ লেকচার সুন্দর করে তোলা। কারণ আমরা যারা ক্লাশ করতাম না তাদের কাছে মুনার লেকচার ছিলো "শেষ সম্বল গাইড" এর মতো।

পরীক্ষার আগে মুনার লেচটার সিরিজ ফটোকপি করা হতো সমানে ......পরীক্ষার বন্ধের মাঝখানে বেইলী রোড থেকে ডিপার্টমেন্টে এসে মুনা না পড়ালে ফোর্থ ইয়ার টা কিভাবে পার করতাম কে জানে!! এখনও চোখে ভাসে, মুনা পড়াচ্ছে আর ওয়ালী পাশে বসে বিরক্ত হয়ে হাই তুলছে!! কিছু বলারও নাই, জনসেবা চলছে, মানা করে কেমনে !! মনে মনে বলতাম, ভাই , তোমার এতো পেইন লাগলে তুমি বাসায় গিয়া ঘুম দাও না ক্যান !!!পরীক্ষার আগের রাতেও তাকে তিনটা-চারটার দিকে ফোন করে ডিস্টার্ব করা হয়েছে। সে ধড়মড় করে উঠে বলতো, "প্রব্লেম বল্‌!!" আমি প্রব্লেম বলতাম, সে সলভ্‌ করে দিতো!! চলবে ...............  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।