ভুল করেও যদি মনে পড়ে...ভুলে যাওয়া কোন স্মৃতি.. ঘুমহারা রাতে..নীরবে তুমি কেঁদে নিও কিছুক্ষণ...একদিন মুছে যাবে সব আয়োজন...
তিনটার সময় পৌঁছার কথা। সাড়ে তিনটা বাজে। তবে খুব একটা চিন্তিত হই না। সবাই তিনটার মধ্যেই পৌঁছবে বলে কঠিন প্রতিজ্ঞা করলেও প্রায় কেউই যে আমরা তা রক্ষা করতে পারবো না তা সবাই জানি। আমরা তো আমাদেরকে চিনি।
ঠিক তা-ই। সাফওয়ানের বাসায় এসে দেখি মাত্র তিনজন এসেছে। রুমে ঢোকার সাথে সাথেই গালাগালির তুবড়ি ছোটায় ওরা। আমল দেই না। পরে যারা আসবে, তাদেরকেও একইভাবে সম্বর্ধনা দেয়া হবে, আমিও দেব।
একজন একজন করে আসে, আর আমরা বাকীরা মনের সুখে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করি। কিন্তু আদতে কেউ-ই কারো উপর রাগ করি না। স্কুলে একসাথে ছিলাম। কলেজে উঠেও খুব বেশী ভাগ হয়নি। এক গ্র“প নটরডেমে আর এক গ্র“প ঢাকা কলেজে।
কিন্তু এইচএসসির পর আঠারো-বিশ জনের গ্র“পটা অনেকগুলো টুকরায় ভাগ হয়ে যায়। কেউ ঢাকা মেডিক্যাল, সলিমুল্লাহ, ময়মনসিংহে, কেউ বুয়েটের কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল-এ, কেউ ঢাকা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে।
অনেকের সাথে দেখা হয় না বহুদিন। কারো আইটেমের চাপ, কারো পিএলের নাভিশ্বাস, কারো টার্ম। আমাদের মধ্যে মৌখিক চুক্তি হয়, আমরা এবার রোজার ঈদে সবাই একত্র হবো।
তিন-চারদিন আগে থেকে ফোনে সবার সাথে যোগাযোগ করা হয়। সাফওয়ানের রাজারবাগের বাসাটাই সবার মিলনকেন্দ্র। আন্টির উপর দিয়েই যায় খাবার-সংক্রান্ত ঝড়-ঝাপটা। আন্টিও হাসিমুখেই আমাদের অত্যাচার সহ্য করেন।
অন্যদের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারবো না বলে নাস্তা শুরু করে দেই।
আমরা টিভি দেখি, গল্প করি। যারা তখনো পৌঁছেনি, তাদের বাসায় ফোন করি; তাগাদা দেই অথবা শুনি ও রওয়ানা দিয়েছে। পাঁচটা পার হয়ে যায়। আমরা আর সহ্য করি না। এরপর যারা আসবে ,তারা খাওয়া পাবে না- শাস্তি।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা নিচে নেমে আসি।
কোথায় যাবো এ নিয়ে কিছুক্ষণ বাক-বিতন্ডা। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, সংসদ ভবন। আমরা আরো দুএকজনের আসার জন্য অপেক্ষা করি।
ওরা এলে পরে বেবীট্যাক্সি ঠিক করি।
সংসদ ভবনে পৌঁছে আমরা দল বেঁধে হাঁটি, গল্প করি। এতদিনের জমে থাকা গল্প বলি। একেকবার একেকজনকে পঁচাই। আমরা আমাদের নতুন ক্যাম্পাসের গল্প করি, পুরনো স্কুল-কলেজের স্মৃৃতির জাবর কাটি। আমাদের ভাল লাগে।
আমরা আমাদের আত্মার বন্ধন অনুভব করি।
আমরা প্রতিজ্ঞা করি, প্রতি বছরে অনন্ত এই দিনটিতে সবাই দেখা করবো। ঐ দিনটা হবে শুধুই আমাদের। এর মধ্যে কারো গার্লফ্রেন্ড হলে তাকে আনা যাবে না। এরও পরে, কেউ বিয়ে করলেও আমাদের এই মিলনমেলায় কারো বউয়ের স্থান হবে না।
আমরা ফুচকা খাই, চটপটি খাই, বাদাম খাই। ছোটবেলার মতো ওয়াই-ও-ইউ খেলি। গুলি করে বেলুন ফুটানোর খেলা খেলি।
রাত নয়টা বেজে যায়। আমাদের বেশীরভাগের কাছে ওটাই অনেক রাত।
রাত দশটার ভেতরে আমাদের বাড়ি ফিরতে হয়।
আমরা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নেই। কথা দেই, আবার পরের বছর একই দিন একত্র হওয়ার। ট্যাক্সি নিয়ে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।
..................................
সেরকম ঈদ এখন আর আসে না আমাদের জীবনে।
সাফওয়ান, মেরাজ, শাওন, সামিউল, সায়েম, ফাহিমরা কয়েক বছর ধরেই দেশের বাইরে। আসিফ, অনি, সাকিব, রবিন, জাহাঙ্গীররা এখন আর ‘সিঙ্গেল’ নেই। ঈদের দিনে তাই তাদের শতেক কাজ থাকে। আক্ষরিক অর্থেই ওজনদার জন-ইমন-জিয়ারা বেসরকারী কোম্পানীতে কাজের চাপে ব্যস্ত, আরিফ নামী হাসপাতালে। ঈদের তিনদিন বন্ধে তা-ই বিশ্রাম নেয়াই তাদের কাছে বেশী আনন্দের।
রানা, রুবেলদের সময় এদিন অন্য কারো জন্যই বরাদ্দ এখন। আমার ঈদ তাই খুব ম্যাড়ম্যাড়ে কাটে। আমি আমাদের সেইসব দিন খুব মিস করি।
.......................................................................................................
'রহস্যপত্রিকা' নভেম্বর, ২০১০ সংখ্যায় প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।