৬ জুলাই ১৯৮৪। কেউ একজন কি বললেন? লাইট! সঙ্গে সঙ্গে টুপ করে পশ্চিমে ডুব দিল সূর্য। ক্যামেরা! রোলিং....। কৃত্রিম নয়, শুরু হল একদম অরিজিনাল ঝম ঝম বৃষ্টি। অতঃপর... একশান! 'ওঁয়াঁ, ওঁয়াঁ ওঁয়াঁ..(ধুত্তুরি ভালই তো ছিলাম, এ কোথা এলেম আমি!)'
এ আমার আত্মজীবনী নয়, আত্মজীবনীর মত করে লেখা অসংলগ্ন প্রলাপ মাত্র।
বস্তু আছে কিনা... নাহ্, সঞ্জীবের লোটাকম্বল কমবেশি সবাই পড়েছেন, তাই আর টুকলিফাই করলাম না। নিজের কথা নিজের মত করেই লিখি। এ তো আমারই কথা। বস্তু, বাস্তব সবই থাকবে আশা করি। মজা পাওয়ার দায় পাঠকের।
আমার জন্মের পর টানা তিন দিন বৃষ্টি। এ শুনে আমার একমাত্র বান্ধবী শোভা বলেছিল, আহা রে! বেচারা আকাশটা বুঝি তার সবচে স্মার্ট তারাটা হারাইল। যাই হোক, শৈশব আগে, পরে 'ওসব'।
শৈশবের বেশিরভাগ ঘটনা মায়ের মুখে শোনা। সেই শোনা কথায় সুতো বেঁধে একটা ঢলঢলে মালা তৈরির প্রয়াস আমার অনেক দিনের।
আজ কিছু না ভেবেই শুরু করলাম। যেহেতু ব্লগ, তাই ঘষামাজা অনাবশ্যক।
আমার শৈশবে ওজিফা'র মায়ের ভূমিকা বেশ গৌণ। কিন্তু শৈশবের কথা ভাবতে গেলে সেই প্রয়াত বৃদ্ধার চেহারাই সবার আগে ভেসে ওঠে। কারণ আমার জন্মের পরদিন ভোরেই ষাটোর্ধ্ব ওজিফা'র মা মাথাভর্তি বৃষ্টি নিয়ে ছুটতে ছুটতে বলেছিলেন, 'আফার হুত (পুত্র) অইছে, আফার হুত অইছে'।
সেই 'আফা' মানে আমার মা যে অফিসের স্টোরকিপার ছিলেন (এখন এসিসট্যান্ট অফিসার), ওজিফার মা ছিলেন সেই অফিসের একজন আয়া। আমি বড় হয়ে বৃদ্ধাকে আরও অনেক বছর শক্তসমর্থ অবস্থায় দেখেছি। তাকে আমার কখনও কান্ত মনে হতো না। তিনি কবে মারা গেছেন বলতে পারবো না। তবে এখনও কল্পনায় সেই পুকুর পাড়ের জঙ্গলে ছেয়ে যাওয়া মাটির সরু পিচ্ছিল রাস্তায় বৃদ্ধার উচ্ছাস স্পষ্ট দেখি।
বয়স তখন দুইয়ের একটু বেশি। তখন মা'কে মনে হতো পৃথিবীর সবচে নিষ্ঠুর নারী। বিছানায় শুয়ে চেঁচিয়ে গলা ফাটাতাম। কিন্তু রান্নাঘর থেকে মা ফিরেও তাকাতেন না। কারণ? কারণ আমি নাকি বড় হয়ে গেছি! ঐ বয়সে এক রাতের একটা দৃশ্য শুধু মনে আছে।
বিছানায় উবু হয়ে জানালা দিয়ে বাইরের রান্নাঘরে মাকে দেখছিলাম আর চেঁচাচ্ছিলাম, 'দুদ্দা দে..'। সাড়া না পেয়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কান্ত হয়েও তাকিয়ে ছিলাম উনুনের পাশে বসে থাকা মায়ের দিকে। মায়ের মুখে কমলা আগুণের প্রতিফলন। কী সুন্দর! নিজেকে মনে হয় মকবুল ফিদা হুসেন।
দৃশ্যটা এত চমত্কার রঙে মনের ভেতর এঁকেছি কী করে!
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।