আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেইসব শৈশব-২



'...কাঠের দরজার তলা দিয়ে দুটো টিঙটিঙে ফর্সা পা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যে লুকিয়েছে সে তা টের পাচ্ছে না। সে আছে প্রচণ্ড ভয়ে। ধরা পড়লে কম্ম সারা। চ্যাংদোলা করে সোজা ইশকুলে নিক্ষেপ।

' ধরা পড়তাম ঠিকই। তবে আমার আকুতি দেখে স্বরসতী লজ্জায় লাল। ফলে বড় আপু আর ঘন ঘন হুঙ্কার ছাড়তেন না। মা'ও বলতেন, 'থাক, আজ আর যাওয়া লাগবে না। ' সবে সাড়ে তিন বছর বয়স।

ইশকুলকে মনে হত যমালয়। যে কদিন যেতাম, বাধ্যতামুলকভাবে কাউকে সঙ্গে থাকতেই হত। তা না হলে স্যার-ম্যাডামদের থোড়াই কেয়ার। বীরদর্পে ক্লাশরুম ত্যাগ। কল্পনার প্রজেক্টরে শৈশবের আরেকটি ছবি দেখলেই মনে হয় আমিও টাইসন গে'র মত রেকর্ডধারী দৌড়বিদ হতে পারতাম।

ছবিটা জলরঙে আঁকা। মানে, সেদিন হাল্কা হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাকে ক্লাশে রেখে বাবা গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। একদম টের পাইনি। পেছন থেকে কোনও এক শুভাকাংখী বলল, 'এই তোর আব্বা চলে যাচ্ছে!' (স্লো মোশন ইফেক্ট) ধীরে ধীরে ঠোঁট জোড়া ফুলে উঠলো।

অভিমানের রিয়েল এক্সপ্রেশন। (মনে মনে) পৃথিবীর কেউ আমায় ভালবাসে না! তা না হলে কেউ আমাকে এভাবে স্কুলে একা রেখে চলে যেতে পারে? ইম্পসিবল। এ মেনে নেয়া যায় না! ডান হাতে সজোরে ব্যাগ আঁকড়ে ধরে উঠে দাঁড়াতেই চোখ ভিজে গেল। স্যার হা করে তাকিয়ে আছেন। বাধা দেয়ার সাহস পেলেন না।

মাঠভর্তি সবুজ ঘাস। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ঝাপসা দৃষ্টিতে মাঠের শেষ প্রান্তে দেখলাম বাবাকে। অপরাধীর মতো মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। রান ফয়সল রান! শুরু হল আমার জীবনের সেরা দৌড়।

উড়ে উড়ে যাচ্ছিলাম, তাই আছড়ে পড়িনি। কতো দশমিক কতো সেকেন্ডে বাবার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম তা মনে নেই। তারপরের দৃশ্যও বেশ ঘোলাটে। বাবা আমাকে কোলে তুলে খুব হেসেছিলেন। আমার অভিমান তখনও কাটেনি।

(ফেড আউট) (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।