আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও ইশ্বর বিশ্বাসে অপযুক্তি( Fallacy of religion and God)

প্রবাসী ধর্ম এবং ইশ্বর বিশ্বাসের বিতর্কে আপনি যদি সাক্ষ্য, প্রমানাদি বা নিরপেক্ষ মতামত চান তখন যে সমস্ত অপযুক্তির সম্মুখিন হতে পারে্ন সে গুলো হলঃ- ১) যুক্তি কে রেখে ব্যাক্তিকে আক্রমন। ল্যাটিন শব্দ ad hominem এর অর্থ হল “মানুষকে” যখন কেউ কোন বিতর্কে গ্রহনযোগ্য যুক্তি উপস্থানে ব্যর্থ হয় তখন ব্যাক্তিগত ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেস্টা করে। যেমনঃ- কাফের, নাস্তিক, মালাউন ইত্যাদি। ২)b অজ্ঞতাকে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপনঃ- ল্যাটিন শব্দ argumentum ex silentio। পৃথিবীতে আমাদের অধিকাংশ জিনিসই অজানা, যেমন, পৃথিবী, গ্রহ নক্ষত্র, ইত্যাদি কোথা থেকে এল? মৃত্যুর পর কি ঘটবে ইত্যাদি।

যেহেতু আমরা উত্তর জানি না সেহেতু ইশ্বর বা আল্লাহ সৃস্টি করেছেন। অথবা ভিন গ্রহে প্রানী আছে কিনা? যেহেতু কেউ দেখেনি সেহেতু নেই বা যেহেতু আমরা অন্য গ্রহ নক্ষত্রে যেতে পারি নি তারা কোন না কোন গ্রহ নক্ষত্রে নিশ্চয়ই আছে। বস্তুতঃ অজ্ঞতা কোন কিছুই প্রমান করে না বা অস্বীকার ও করতে পারে না। অজ্ঞতাকে পুজি করে মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপনকে বলা যেতে পারে ,argumentum ad ignorantiam" যা কাম্য নয়। ৩) সর্বজ্ঞতাকে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপনঃ-সার্বজনীন বিশ্বাস বা জ্ঞানকে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন।

যেহেতু পৃথিবীতে অধিকাংশ লোক ইশ্বরকে বিশ্বাস করে সুতরাং ইশ্বর আছেন। ৪) বিশ্বাসঃ- বিশ্বাসীরা নাস্তিকদের কে বলে থাকেন” আপনি ইশ্বরে বিশ্বাস করেন না আপনি কিছু জানবেন না শিখবেন ও না” প্রকৃত পক্ষে ইশ্বরের উপস্থিতি, যুক্তি বা সাক্ষ্য প্রমানাদির চেয়ে বিশ্বাসের উপর বেশী নির্ভরশীল। যুক্তিহীন বিশ্বাসীর কাছে তার বিশ্বাসের বাইরে কিছুই গ্রহনযোগ্য নয়। ৫)ঐতিহ্য বা প্রচলিত ধ্যান ধারনাঃ-একে বলা যেতে পারে "bandwagon fallacy” বা কাতারে সামিল হওয়া। হাজার হাজার বছর ধরে সবাই ইশ্বরে বিশ্বাসী, আমার মা বাবা পুর্ব পুরুষেরা সবাই ইশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন সুতরাং ইশ্বর আছেন।

যেহেতু অধিকাংশ লোকে বিশ্বাস করে সুতরাং তা নির্ভুল। ৬) ফলাফলের যুক্তিঃ- ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিশ্বাস স্থাপন। যদি কোন কর্মের ফল আশাকৃত ফলের সাথে সামঞ্জস্য পুর্ন না হয় তা গ্রহন করা উচিত নয়। যেমন অনেক বিশ্বাসীর কাছে অভিব্যাক্তিবাদ বা Evolution সম্পর্কে জ্ঞান লাভ নীতিবিরোধী এবং সেহেতু অভিব্যাক্তিবাদ ভুল। বস্তুতঃপক্ষে অভিব্যাক্তিবাদ নীতিবিরোধী হলেও তা ভুল বলা সমীচীন নয়।

৭) অভিজ্ঞ বা জ্ঞানী ব্যাক্তির উদাহরনঃ- (argumentum ad verecundiam): এটি খুব জোরালো যুক্তি নয়। প্রকৃতপক্ষে যখন বক্তব্যের পক্ষে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমানাদি পাওয়া যায় না তখনই পন্ডিতজনের বক্তব্যকে গ্রহন করা যেতে পারে। কোন মনিষী বলেছেন সুতরাং তা নির্ভুল, এটি কিন্তু নয়। “দুস্ট বলদের চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল” যেমন সত্যি, “নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো” ও তেমনি সত্যি। ৮) দুর্ভোগ বা দুর্যোগের যুক্তিঃ-অভিযুক্ত দোষী কিনা তা বিচার না করে তাকে দোষী ধরে নিয়ে বিচার করা।

উদাহরনঃ- প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারন হল আল্লাহ অবিশ্বাসীদের শাস্তি দেন, একে উদাহরন হিসেবে উপথাপন করা কতটা সঠিক? প্রকৃতপক্ষে দুর্যোগ ইশ্বরের অস্তিত্বের কোন সমর্থন যোগ্য যুক্তি হতে পারে না এবং ইশ্বরের উপাসনা দুর্যোগ থেকে রক্ষাও করে না। যেহেতু নাস্তিক সেহেতু নৈতিকতাহীন এবং অপরাধী। এটিও সমর্থন যোগ্য বক্তব্য নয়। ৯)ভয়ের যুক্তি( argumentum ad baculum), ঈশ্বরকে বিশ্বাস কর, না করলে অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। ১০) জনপ্রিয়তা এবং যুক্তিঃ (argumentum ad populum)যা জনগনের কাছে প্রিয় তাই সঠিক।

ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্নে বাস্তবতা বা যুক্তি অগ্রাহ্য করে জনপ্রিয় হওয়ার লক্ষ্যে অর্থাৎ ইশ্বরের উপস্থিতির সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন। ১১)প্রশ্নের অবতারনা বা সতঃসিদ্ধ উত্তরঃ- আমরা কি নৈতিকতাবোধ জাগিয়ে তুলতে আমাদের ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা দেব না? নিশ্চয়ই দেব। এখানে নৈতিকতাবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ম অপরিহার্য্য ধরে নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। ১২) বৃত্তাকার যুক্তিঃ- বক্তব্যের সমর্থনে অন্য বক্তব্যের অবতারনা এবং তার সাহায্যে প্রথম বক্তব্যে কে নির্ভুল প্রমান করা। ধর্মগ্রন্থ নির্ভুল কারন ইশ্বর তা প্রেরন করেছেন, এবং ইশ্বর আছেন কারন ধর্মগ্রন্থে ইশ্বরের উপস্থিতি বর্নিত আছে।

অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থ বলছে যে ধর্মগ্রন্থ সঠিক? ১৩) একক কে সার্বিক, বা সার্বিক কে একক ধরে নিয়ে যুক্তি উপস্থাপন। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি আছে এবং মানুষের শরীর লক্ষ কোটি অনু পরমানুর সমস্টি সুতরাং অনু পরমানুর ও জ্ঞান বুদ্ধি আছে। ১৪) পক্ষপাতগ্রস্থ যুক্তিঃ-শুধুমাত্র সপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন এবং বিপক্ষের যুক্তিগুলো উপেক্ষা। বিশ্বাসীরা ভক্তি, ঐতিহ্য সংস্কারের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন কারন তারা সেগুলোকে বিশ্বাস করেন। যেমন প্রার্থনার সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলা হয়ে থাকে ইশ্বর প্রার্থনা মঞ্জুর করে থাকেন।

মঞ্জুরকৃত প্রার্থনাকে উদাহরন স্বরুপ উপস্থাপন করা হল অথচ অধিকাংশ প্রার্থনা যেগুলো মঞ্জুর হয় না, তার কোন হিসেব করা হয়না। এমন ও তো হতে পারে প্রার্থনা ছাড়াই তা মঞ্জুর হত। ১৫) সঙ্গতিকে কারন হিসেবে উপস্থাপনঃ এটি এক অপযুক্তি। কাক উড়ে গেলে বেল পড়লো । সেখান থেকে উপসঙ্গহার যে “কাক উড়লেই বেল পড়ে” কাক না উড়লেও বেল পড়ে আর ওড়ার ফলে গাছে যে ঝাকুনি হয় তা থেকেও বেল পড়তে পারে।

১৬) মধ্যপন্থা কে উপেক্ষাঃ-পৃথিবীর সব কিছুই দুই বিপরিত মেরুর নয়। আদালতের প্রশ্ন “দোষী” না “নির্দোষ” এমন প্রশ্ন সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। ঘটতে পারে আবার নাও পারে। সম্ভাবনা কে উপেক্ষা করা এক অপযুক্তি। বিশ্বাসীর বিশ্বাস সঠিক না ও হতে পারে, সে সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়।

১৭) অর্ধ সত্যঃ সম্পুর্ন না জেনে অংশের ভিত্তিতে গোটা জিনিষের মুল্যায়ন। ১৮) উল্টোযুক্তিঃ- প্রমান করুন ইশ্বর নেই। কেউ প্রমান করতে পারবে না। সুতরাং ইশ্বর আছেন। ১৯) দুর্বো্ধ্য ভাষা ও প্রশ্নঃ-সমস্ত প্রশ্নের সরাসরি উত্তর সম্ভব ন্য়।

যেমন সবকিছুই কি সম্ভব? উপর বলতে কত উপর বুঝি?সম্ভবের পাশাপাশি আছে অসম্ভব, উপর বলতে ১ মিমি থেকে শুরু করে কয়েক শ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং প্রশ্ন সঠিক না হলে উত্তর ও সঠিক হবে না। ধর্ম গ্রন্থে দুর্বোধ্য ভাষা বযবহার করে, সঠিক ব্যাখার কথা বলা হয় যা বস্তুত প্রতারনা। ২০) অন্যের অন্যায়কে উদাহরন হিসেবে উপস্থাপন করে নিজের অন্যায় কে জায়েজ করা। বস্তুত দু জনেই দোষী।

নাস্তিক গালি দিচ্ছে সুতরাং আমিও গালি দেব?আমি গালি দিলে কি আমিও দোষী নই। ২১) বিমুর্ত বিশ্বাসকে বাস্তব এবং ত্রুটিহীন বিবেচনা করা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.