আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারতন্ত্র ! -৪

আগের পর্ব- Click This Link বিবিসি জরীপের শ্রেষ্ঠ ২০টি গানের ৪টিরই শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তাঁর গানের চিরায়ত আবেদনের জন্য এ তথ্যই যথেষ্ঠ। গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের যোগ্য ছাত্রী তিনি একথা বলাই যায়। তাঁর ভাই জাফর ইকবাল আমাদের চলচ্চিত্রের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্মার্ট নায়ক। এবং অনেকগুলো জনপ্রিয় গানের গায়কও ছিলেন তিনি।

আরেক ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক। কাজী জসীম উদ্দিন কবি ও লেখক ছিলেন। আমাদের কালে প্রথম শ্রেণীতে তাঁর লেখা একটি গল্প পাঠ্য ছিলো-গনি মিয়া এক জন কৃষক। তার নিজের জমি নাই। অন্যের জমি চাষ করে।

--ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর পুত্র ডা.আবু হায়দার সাজেদুর রহমান সত্তরের দশকে চলচ্চিত্র ও বেতার টিভির এক জন নামী গীতিকার ছিলেন। কাজীর নাতি খুরশীদ আলম ছিলেন সত্তরের দশকের প্লে-ব্যাক জগতের মুকুটহীন সম্রাট। খুরশীদ আলমের বহু গান এখনো ব্যাপক জনপ্রিয়। আভা আলম ছিলেন আমাদের উচ্চাঙ্গ সংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী।

তাঁর আসল নাম আভা দে। কলেজে পড়ার সময় গীতিকার তরিকুল আলমের সাথে বিয়ের সুবাদে হয়ে গেলেন আভা আলম। তাঁদের কন্যা সাবেরী আলম অভিনয় করতেন। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন করে এসেই রাতারাতি তারকা বনে গেলেন। ''বাবুর কি গোঁফ থাকতো ? বাবুর বাবুটা কেমন হতো ?''-সাবেরীর কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী বর্ণনার এই পর্বে চোখের কোনে পানি জমেনি এমন মানুষ কমই মিলবে।

এখন মডেলিং আর অভিনয়ে তুমুল ব্যস্ত সাবেরী। ''শিল্পী আমি তো নই তবুও এসেছি আজ শোনাতে যে গান এই জলসায়'' সত্তরের দশকের এ রকম বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী সাইফুল ইসলাম। ছিলেন খুবই সুদর্শন। পরে গান ছেড়ে বনে গেছেন ব্যবসায়ী। কিন্তু তাঁর কন্যা সাদিয়া ইসলাম মৌ ( বাবার চেহারার ছাপ স্পষ্ট তার চেহারায়) বহুদিন ধরে মডেলিং আর নাচে ভরিয়ে রেখেছেন আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গন।

মৌ-এর মা রাশা ইসলামও এক সময় মযেলিং করতেন। মৌ-এর বর জাহিদ হাসান ছোট পর্দার প্রতিভাবান অভিনেতা। মৌ-এর চাচা আজমল হুদা মিঠু ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক। কাশি নাথ বসাক ছিলেন পঞ্চাশের দশকের ঢাকার মাঠের এক জন দারুন ফুটবলার। ষাট আর সত্তরের দশকে ছিলেন আমাদের ফুটবলের শীর্ষস্থানীয় রেফারী।

তাঁর কন্যা ঝর্না বসাক চিত্র পরিচালক এহতেশামের হাতে পড়ে বনে গেলেন অভিনেত্রী শবনম। শবনম রহমান আর রাজ্জাক কবরী ছিলেন আমাদের চলচ্চিত্রে দুই রোমান্টিক জুটি। রাজ্জাকের সাথে শবনমের লিপে ''আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন'' টিভির পর্দায় দেখে এখনো অনেকের হার্টবিট বেড়ে যায়। শবনমের বর রবীন ঘোষ ঢাকা এবং লাহোরের চলচ্চিত্রের অসংখ্য স্মরণীয় গানের সুরকার। দেবর অশোক ঘোষ ঢাকাই ছবির দাপুটে পরিচালক ছিলেন বহু দিন।

মমতাজ আলী খান ছিলেন আমাদের লোক সংগীতের বিশিষ্ট নাম। তাঁর কন্যা পিলু মমতাজ (সদ্য প্রয়াত) হয়ে গেলেন আমাদের পপ গানের অন্যতম পথিকৃত। তাঁর বোন রুকসানা মমতাজসহ ৬ বোনই কণ্ঠশিল্পী। পপ গানের আরেক তারকা ফেরদৌস ওয়াহিদ। তাঁর পুত্র হাবিব ওয়াহিদ এখনকার জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ও সুরকার।

ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাইয়ের মেয়ে শায়ান মনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ভিন্ন ধারার শিল্পী হিসাবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। শায়ানের বাবা খসরু ওয়াহিদও গান করতেন। ভাওয়াইয়া গানের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ হরলাল রায়। তাঁর সুযোগ্য পুত্র রথীন্দ্রনাথ রায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেরা শিল্পীদের এক জন। অপর পুত্র সুরজিৎ রায়ও গান করছেন।

আব্বাস উদ্দিনের পর আবদুল আলীম ছিলেন পল্লী গানের মুকুটহীন সম্রাট। তাঁর পুত্র জহীর আলীম, আসগর আলীমসহ অন্যান্য পুত্র কন্যারাও পল্লী গানে নিবেদিত রয়েছেন। নজরুল সংগীতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পী সোহরাব হোসেন। তাঁর কন্যা রাহাত আরা গীতি, রওশন আরা সোমা আর পুত্র মোহাম্মদ হান্নান নজরুল সংগীত শিল্পী। আবদুল জাব্বারের পুত্র মিথুন জাব্বার, সৈয়দ আবদুল হাদীর কন্যা তনিমা হাদীও গানের জগতে প্রবেশ করেছেন।

তপন চৌধুরী সোলসে গাইতেন। পরে একক শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর ভাতিজা অর্নব আর তার স্ত্রী শাহানা এখনকার জনপ্রিয় শিল্পী। লাকী আখন্দ আর তার অকাল প্রয়াত ভাই হ্যাপী আখন্দ দুজনেই সংগীতের বিশিষ্ট নাম। প্রবাল চৌধুরী আর উমা ইসলাম এই দুই সহোদরও অনেক স্মরণীয় গান উপহার দিয়েছেন।

তাঁদের বড় বোন কল্যাণী ঘোষও নামী শিল্পী। রবীন্দ্র সংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। তাঁর ভাই অপু সারোয়ার ছিলেন ঢাকাই ছবির ভিন্ন ধারার নায়ক। (চলবে) পরের পর্ব- Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.