আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সংস্কৃতি জগতে পরিবারতন্ত্র ! -৩

আগের পর্ব- Click This Link ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর সঙ্গত কারণেই এদেশের হিন্দুসম্প্রদায়ের অনেক পরিবার আমাদের দেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমায়। সেই স্রোতের উল্টো গিয়ে কলকাতা থেকে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বারীণ মজুমদার। সে জন্য আমি তাঁকে বলি উজানের কৈ। সব মাছ ছোটে স্রোতের অনুকূলে। কৈ মাছ যায় স্রোতের উজানে।

উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী হিসাবে তাঁর স্থান বোঝাতে এই তথ্যটুকুই যথেষ্ট - তিনি বেঁচে থাকতে ভারত থেকে বাংলাদেশে সফরে আসা পণ্ডিত ভীমসেন জোসী আর পণ্ডিত যশরাজ তাঁর বাসায় গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করেছেন। বাংলাদেশে সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভিত্তিটি তৈরী হয়েছে বারীণ মজুমদারের সীমাহীন ত্যাগ আর সাধনায়। সরকারী সংগীত কলেজটি তাঁর সাধনার ফসল। যদিও আমরা তাঁর সীমাহীন ত্যাগের কোন স্বীকৃতিই তাঁকে দিইনি। তাঁর স্ত্রী ইলা মজুমদার (সদ্য প্রয়াত) আমাদের উচ্চাঙ্গ সংগীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

তাঁদের দুই পুত্র। জ্যেষ্ট পুত্র পার্থ মজুমদার সম্প্রতি সংগীত পরিচালক রূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তাঁদের কনিষ্ঠ পুত্র বাপ্পা মজুমদার এখনকার জনপ্রিয় শিল্পী। বাপ্পার স্ত্রী চাঁদনী অভিনেত্রী ও মডেল তারকা। বাপ্পা আর সঞ্জীব চৌধুরীর ভিন্ন ধারার ব্যাণ্ড দল ''দলছুট'' ব্যাণ্ড সংগীতের নতুন একটি মাত্রা এনেছিলো।

বাবীণের ছোট ভাই পার্থ প্রতীম মজুমদার বিশ্বের সেরা মূকাভিনেতাদের এক জন। নজরুল সংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী ফিরোজা বেগম। নজরুলের স্নেহধন্য তিনি। তাঁর পরিবারের সবাই সংগীত প্রেমী। তিনি গান শেখেন তাঁর বাবার কাছে।

ভাই সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলা গান করতেন। তিনি সাঁতারেও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। ফিরোজা বেগমের বিয়ে হয়েছিলো নজরুল সংগীতের গুরু কমল দাশগুপ্তের সাথে। নজরুল যে দু'জনকে তাঁর নিজের গানের পুনরায় সুরারোপ করার অধিকার দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন কমল দাশগুপ্ত আর দিলীপ কুমার রায় ( ডি.এল. রায়ের পুত্র)। ফিরোজা-কমল দম্পতির পুত্র হামিন শাফিন আর তাদের ব্যাণ্ড দল মাইলসের পরিচয় আমার চেয়ে আপনরাই ভালো জানেন।

গ্রামীণ ফোনের এক কালের ডাকসাঁইটে ডিরেক্টর রুবাবা দৌলা মতিন ফিরোজার ভাইয়ের মেয়ে। পঞ্চকবির বাইরে আমাদের দেশে যে সব গীতিকার বিপুল সংখ্যক গান লিখেছেন তাঁদের অন্যতম জেবুন্নেসা জামান। তাঁর কন্যা জিনাত রেহানা সত্তরের দশকের জনপ্রিয় শিল্পী। তাঁর বোন আঞ্জুমান আরা বেগম ষাট আর সত্তরের দশকের শীর্ষস্থানীয় শিল্পীদের এক জন ছিলেন। আঞ্জুমান আরার বর মাহবুব আনাম ছিলেন বাংলাদেশ টাইমসের সম্পাদক।

মাহবুবের ছোট ভাই মাহফুজ আনাম ডেইলী স্টারের সম্পাদক। এঁরা দুই ভাই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও লেখক আবুল মনসুর আহমদের পুত্র। কবি তালিম হোসেন ষাটের দশকে নজরুল একাডেমীর প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল চর্চার সূচনা হয়। নজরুল একাডেমী এখনো সক্রিয়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো নতুন নতুন শাখা খোলা হচ্ছে নজরুল একাডেমীর। তাঁর স্ত্রী মাফরুহা চৌধুরীও ছিলেন কবি ও লেখিকা। তাঁর সম্পাদনায় মাসিক মাহে নও পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের পরিচিত সাহিত্য পত্রিকা ছিলো। এ দম্পতির তিন কন্যা শবনম মুশতারী, পারভীন মুশতারী আর ইয়াসমীন মুশতারী নজরুল সংগীতের নামী শিল্পী। ষাট আর সত্তরের দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মাহমুদুন্নবী।

তাঁর দুই কন্যা সামিনা চৌধুরী আর ফাহমিদা চৌধুরী বিগত আশির দশক থেকে জনপ্রিয় শিল্পী। সামিনার বিয়ে হয়েছিলো সংগীত শিল্পী, সুরকার নকীব খানের সাথে। সামিনাদের ভাই পঞ্চমও গান করছেন। পপ গুরু আজম খান আজ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। ( গুরুতর অসুস্থ গুরুর আরোগ্য কামনা করি)।

তাঁর ভাই আলম খান আমাদের সেরা সুরকার আর সংগীত পরিচালকদের এক জন। আমাদের আরেক জন সেরা সুরকার আজাদ রহমান। তাঁর স্ত্রী সেলিনা আজাদ এক সময়কার জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন। ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় শিল্পী ও সুরকার বসীর আহমেদ। ঢাকা আর লাহোরের ছবিতে প্রচুর প্লে ব্যাক করেছেন তিনি।

তাঁর স্ত্রী নেপালী কন্যা মীনা বসীরও কণ্ঠশিল্পী। ও গো প্রিয়তমা আর তোমাকে তো না করেছি ফুলের তোড়া দিও না গো এই দুটি ডুয়েট গেয়েছেন বসীর মীনা। তাঁদের দুই ছেলে মেয়ে রাজা বসীর ও হুমায়রা বসীরও গান গাইতে শুরু করেছেন। মীনার বোন মালা সিনহা ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী ছিলেন। (চলবে) পরের পর্ব- Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.